“যাক। এখানকার, কাজ শেষ। চলো এগুলো কুঁড়েঘরে নিয়ে যাই।” এবার আগে আগে এলো এলিস। দুজনে মিলে কন্টেইনারগুলোকে বয়ে এনে একেবারে মাঝখানের টেবিলের উপর রেখে দিল। এলিসের ধারণা ডিরেক্টর দুজন এক্ষুনি এসে এগুলো দেখতে চাইবেন।
“ডান।” সাদা গ্লাভস খুলে এলিসের দিকে উৎসাহী চোখে তাকাল মারকো।
এলিসও মাথা নাড়ল। “চলো।” ঘরের দরজায় তালা লাগিয়ে দিল। সাইটে দুজন গার্ড আছে আর লোকালয় থেকে দূরে হওয়াতে এখানে কেই বা আর চুরি করতে আসবে। কিন্তু অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ এ আবিষ্কারের পর কোনো ঝুঁকি নেয়া যাবে না।
একগাদা মরচে পড়া ছোট ছোট ভিলা মিলে তৈরি হোটেলে ফিরে নিজের রুমের পথ ধরল এলিস, আর মারকো গেল ড্যামনের খোঁজে। “পাঁচ মিনিটের মাঝেই তোমাদের সাথে দেখা করব।” ছেলেটাকে জানাল এলিস। নিজে ভালভাবেই জানে যে কী করতে চাইছে। খনন কাজের পুরো সময়টুকুতেই যতদূর সম্ভব চেষ্টা করেছে যেন দুই ডিরেক্টরের মুখোমুখি না হতে হয়। ড্যামনই ওদেরকে ব্রিফ করে রিপোর্ট পাঠাতেন আর প্রয়োজনের সময় নির্দেশনা চেয়ে আনতেন। কিন্তু আজ রাতে তো এড়িয়ে যাবার আর কোনো উপায় নেই। মিশনের দুজন কো-ডিরেকক্টর স্ট্যাভরস আর পিটারকে নিয়ে সমাধিতে যেতে হবে। দুজনের একজনকেও দেখতে পারে না এলিস। জানে ওদের মনোভাবও একইরকম। কিন্তু এই মিশনের লিডিং অ্যার্কিওলজিস্ট হওয়াতে ওদেরকে এড়াবারও পথ নেই। সমাধিটার নির্মাণকালের উপর একজন এক্সপার্ট হওয়াতে এও জানে যে এলিসের কাছ থেকে নিশ্চয়ই এই উদ্ভট সমাধিচিত্রের ব্যাপারে ওর নিজস্ব মতামত ওরা জানতে চাইবে।
ভাবতেই বিতৃষ্ণায় ছেয়ে গেল মন। আর ঠিক তখনই এক ধরনের কড়কড় বাতাসে ভরে উঠল রাতের আকাশ। মাথার উপর খুব নিচু দিয়ে উড়ে গেছে একটা হেলিকপ্টার। খানিকক্ষণ একটানা শব্দ হবার পর হঠাৎ করেই আবার থেমে গেল আওয়াজ। যেন মেশিনটা কাছেই কোথাও ল্যান্ড করেছে।
কিন্তু এলিসের মাথায় ঘুরছে একটু পরের অস্বস্তিকর কাজটার কথা। দীর্ঘশ্বাস ফেলে ল্যাপটপ আর ক্যামেরা বের করে রুমের ডেস্কের উপর রেখে দিল। এরপর কোমরের পাউচে মোবাইল ফোন আর ক্যামেরার মেমোরি স্টিক রেখে উঠে দাঁড়াল ড্যামনের ভিলার উদ্দেশ্যে।
কিন্তু ভোরনবে হাত রাখতেই মনে হল বাগানের দিকে মুখ করে থাকা। জানালাতে কেউ শব্দ করছে। স্পষ্ট দেখা যাচ্ছে মারকোর ভয়ার্ত চেহারা। ছেলেটার চেহারা পুরো সাদা হয়ে গেছে; যেন কেউ সবটুকু রক্ত শুষে নিয়েছে। আবারো নক করে জানালাটা খুলে দেবার জন্য ইশারা করল মারকো।
এস্তপায়ে এগিয়ে গিয়ে মারকোকে ভেতরে নিয়ে এলো এলিস। “কী…” বলার আগেই চিৎকার করে কেঁদে ফেলল আতঙ্কিত ছেলেটা।
৩. তপ্ত কড়াই থেকে বাইরে…
“ওরা ড্যামনকে খুন করেছে মেঝের উপর ধপ করে বসেই হড়বড় করে বলে উঠল মারকো, “পিটার গুলি করেছে। যেন এটা কোনো ঘটনাই না।” মারকো যে কী বলছে কয়েক মিনিট ধরে এলিস তা বুঝতেই পারল না। কী বলছে এসব হাবিজাবি!! পিটার কেন ড্যামনকে খুন করবে?
ক্রন্দনরত ছেলেটার পাশে বসে কাঁধে হাত দিয়ে সান্ত্বনা দিতে চাইল এলিস। “খুলে বলো কী হয়েছে; নিশ্চয়ই তোমার কোথাও ভুল হচ্ছে।”
“আমি নিজের চোখে দেখেছি!” ফুঁপিয়ে উঠল মারকো। “ড্যামনের দিকে তাকিয়ে সমানে চিৎকার করছিল স্ট্যাভরস; জানতে চাইছিল কেন ছবি তোলার জন্য আপনাকে একা ছেড়ে এসেছেন। আর ওদেরকে দেখানোর জন্য ড্যামনই কেন কিউবটা আনেন নি সেটা নিয়েও ঝাড়ি দিয়েছে।” ভয়ে ব্যাকুল চোখজোড়া যেন ভাষা খুঁজে পাচ্ছে না।
এক বক্স টিস্যু এগিয়ে দিয়ে ধৈর্য নিয়ে অপেক্ষা করছে এলিস। হঠাৎ করেই মনে হচ্ছে যেন কোনো স্বপ্ন দেখছে। মনে মনে চাইছে এক্ষুনি এই দুঃস্বপ্ন ভেঙে যাক।
শব্দ করে নাক মুছে মারকো জানালো, “এর পর পরই পিটার পিস্তল বের করেছে। তারপর ড্যামনকে বলল যে নির্দেশ না মানাতে এখন আর উনাকে ওদের দরকার নেই। খানিক চুপ করে থেকে ড্যামনের ভিলার খোলা জানালা দিয়ে দেখা দৃশ্যগুলো স্মরণ করে নিল। “ড্যামন ও অনেক ভয় পেয়ে গিয়েছিলেন। আরেকটা সুযোগ দেবার জন্য পিটারকে অনেক অনুনয় করলেন। এত কাঁদছিলেন। কিন্তু পিটার কিছু শুনেনি। ঠাস করে গুলি করে দিয়েছে।” আবারো ফুঁপিয়ে উঠল মারকো।
ছেলেটার কথা শেষ হতেই এলিসের কানে এলো বেশ কয়েকজনের করিডোরে দৌড়ে আসার পদশব্দ। করিডোর দিয়ে ওর ভিলার কাছেই আসছে মনে হচ্ছে। স্ট্যাভরস আর পিটার নয়তো!! নিজের প্রকৃত অবস্থা উপলব্ধি করে মনে হল যেন শীতের মাঝে ঠাণ্ডা শাওয়ার নিচ্ছে। বুঝতে পারল কী করতে হবে।
দৌড় দিয়ে দরজার কাছে গিয়ে তুলে দিল জোড়া হুড়কো। কিছুটা সময় তো অন্তত পাওয়া যাবে। যদি ড্যামনকে মেরে ফেলে তাহলে তার আর মারকোর ভবিষ্যৎও আন্দাজ করা যাচ্ছে।
‘আমাদেরকে এখান থেকে বেরিয়ে যেতে হবে।” তাড়াতাড়ি মারকোকে জানালো, “এক্ষুনি।”
ব্যাকপ্যাকটা কাঁধে নিয়ে জানালা দিয়ে লাফিয়ে পড়তেই শুনতে পেল দরজায় কেউ এসেছে।
“তালা দেয়া!” বলে উঠল পিটার।
“ভেঙে ফেলো” জানালো স্ট্যাভরস।
দরজাতে আঘাতের শব্দও কান এড়ালো না। তবে ল্যাচটা কেঁপে উঠলেও খুলল না।
প্রথমে দরজার দিকে তারপর মারকোর দিকে তাকাল এলিস। জঙ্গলের রাস্তায় হেডলাইটের আলোতে ধরা পড়া হরিণের মতই তাকিয়ে আছে ভয়ে জমে যাওয়া ছেলেটা। বুঝতে পারছে হাতে আর বেশি সময় নেই। “মারকো!” চিৎকার করার সাহস হারিয়ে হিসহিস করে উঠল এলিস। পিটার যদি জানে যে ও সবকিছু টের পেয়ে গেছে তাহলে থামানোর জন্য যেকোনো কিছু করতে দ্বিধা করবে না। “ওখান থেকে বের হয়ে আসো, খোদার দোহাই মারকো।”