কুণ্ডুলি পাকানো দেহটা ঠিক যেন সমাধিটাকে পাহারা দিচ্ছে। দৃশ্যটা দেখার সাথে সাথে এলিসের মনে হল, জীবিত অবস্থায় জীবন যেভাবে কাটিয়েছেন মৃত্যুর পরেও সেরকমই রয়েছেন এই রানি।
খাপছাড়া দৃশ্যটার সাথে আরো যোগ হয়েছে চেম্বারের বাকি দেয়ালের কারুকার্য। সর্বত্র কেবল সাপ আর সাপ। কোনোটা পাকানো, কোনোটা হিসহিস করছে। কিছু আবার চুপ করে শুয়ে আছে। আরো কয়েকটা একেবারে লম্বা করে খোদাই করা হয়েছে। ঝাপসা আলোতে মনে হচ্ছে পাথরের ছায়াগুলো দেয়াল থেকে লাফিয়ে পড়ার জন্য তৈরি।
পোল লাইটস নিয়ে দৌড়ে এলেও সমাধির এই অদ্ভুত সাজসজ্জা দেখে দোরগোড়াতেই থেমে গেছে মারকো।
“ওহ গড, এসব কী!” ফিসফিসিয়ে উঠল বিস্মিত ছেলেটা।
দুই সঙ্গীর দিকে তাকিয়ে উত্তেজিত হয়ে পড়ল এলিস, “কোনো সন্দেহই নেই। ইট ইজ হার টুম্ব!” আবিষ্কারের শিহরণে কাঁপছে গলার স্বর। গত বারো মাস ধরে কেবল আশাই করেছে যেন তাদের ধারণা সত্যি হয়। আর আজ তা একেবারে প্রমাণিত হয়ে গেল।
“উমম…এদিকে দেখুন” দেয়ালের কারুকাজ দেখতে দেখতে পুরো চেম্বারে হেঁটে বেড়াচ্ছে মারকো। বড় সড় চেম্বারটা কম করে হলেও পঞ্চাশ ফুট চওড়া। এবার গিয়ে দাঁড়াল মাথার উপরে টাওয়ারের মত উঁচু হয়ে থাকা বিশাল এক কুণ্ডুলি পাকানো সাপের ঠিক নিচে, প্রবেশ মুখের বিপরীত দিকের কর্ণারে।
কী পেয়েছে দেখার জন্য তাড়াহুড়া করে এগিয়ে গেল এলিস আর ড্যামন। সাপের পিছনেই দেয়ালের মাঝখানে একটা ভোলামুখ দেখা যাচ্ছে। পরস্পরের দিকে তাকাল সবাই। তৃতীয় আরেকটা চেম্বার আছে নাকি!! হেলেনিস্টিক সমাধিগুলোতত এরকমটা হবার কথা না।
মারকোকে কিছু বলতে হল না। তার আগেই হাতের বাতিটা উঁচু করে ধরে গোপন দরজাটায় আলো ধরল। ছোট্ট একটা চেম্বারে দুই সারি ভর্তি পাথরের মূর্তি আর বিভিন্ন সাইজের স্ল্যাব।
পরীক্ষা করে দেখার জন্য এগোল এলিস আর ড্যামন। “সাপ নিয়ে নিশ্চয় উনার বাড়াবাড়ি রকমের এক মুগ্ধতা ছিল।” পাঁচ ইঞ্চি লম্বা এক সুন্দরী তরুণীর মূর্তি হাতে নিয়ে মন্তব্য করলেন ড্যামন। নারীদেহের পা থেকে মাথা পর্যন্ত পেঁচিয়ে আছে এক বিশাল সাপ।
মাথা নাড়ল এলিস, “কেন শোনেন নি? তৃতীয় আলেকজান্ডারের পিতা তো নাকি একটা সাপ। আমার ধারণা, সাপ নিয়ে উনার প্রবল আকর্ষণের গল্পগুলো আসলে সত্যি।”
“সত্যিই বিস্ময়কর।” প্রায় দশ ইঞ্চি লম্বা চারকোণা একটা ট্যাবলেটের উপর খোদাইকৃত লেখা পড়ে জানালেন ড্যামন। “দ্য গ্রেট আলেকজান্ডারের মৃত্যুর পর প্রকৃতপক্ষে কী ঘটেছিল, সে সম্পর্কে এখান থেকে অনেক কিছুই জানা যাবে।”
সারির পর সারি মূর্তি আর ট্যাবলেটগুলো দেখে এলিসও সম্মত হল।
ঘড়ির দিকে তাকালেন ড্যামন। “হেডকোয়ার্টারকে ইনফর্ম করতে হবে। ওরা আমাদের জন্য অপেক্ষা করছে। নিশ্চয় এক্ষুনি এসে দেখে যেতে চাইবে সবকিছু।”
“উমম, আপনি না হয় হোটেলে গিয়েই ওদের জন্য অপেক্ষা করুন। এই ফাঁকে আমি সমাধির ছবি তুলে ফেলছি।” এর মাঝেই ব্যাগ থেকে ক্যামেরা বের করে হাতে নিয়ে নিয়েছে এলিস। “আর্টিফ্যাক্ট গুলোতে ট্যাগ লাগিয়ে কন্টেইনারে ভরে রেখে দেব।”
“থ্যাংকস। আমি মারকোকে পাঠিয়ে দেব আপনাকে সাহায্য করার জন্য।” ছেলেটাকে নিয়ে বেরিয়ে গেলেন ড্যামন।
চারপাশে তাকিয়ে দীর্ঘশ্বাস ফেলল এলিস। অ্যার্কিওলজিস্ট হিসেবে নিজের ক্যারিয়ারের হাই পয়েন্ট হতে চলেছে এ সমাধি। চেম্বার আর মুরালের ছবি নিয়ে তাই ব্যস্ত হয়ে পড়ল সে।
ক্যামেরার কাজ শেষ করে গোপন চেম্বারে মনোযোগ দিল। এখানেও খুব সাবধানে সবকিছুর ছবি তুলে ফেলল। তারপর প্যাডেড কন্টেইনারে ঢুকিয়ে রাখল।
“আরে, এটা আবার কী!!” একেবারে সবার শেষে হলুদ একটা কিউব নিয়ে হাতের মাঝে ঘুরিয়ে ঘুরিয়ে দেখতে গিয়ে পাঁচ পাশেই খোদাইকৃত লেখা পেল। এতক্ষণ মূর্তি আর মাটির ট্যাবলেটগুলোর পেছনে লুকিয়ে ছিল। প্রথমে মনে হল প্রাচীন হাড়ের তৈরি জিনিসটার এত শত বছর পরে রঙ নষ্ট হয়ে গেছে। কিন্তু আলোর নিচে নিয়ে হাত ঘোরাতেই বুঝতে পারল একেবারে সত্যিকারের আইভরি দিয়ে বানানো হয়েছে এ কিউব। এমনকি বাতির শক্তিশালী আলোতে আইভরির তরঙ্গায়িত প্যাটার্নটাও স্পষ্ট দেখা যাচ্ছে।
“দুই হাজার চারশ বছর আগে মেসিডোনিয়াতে আইভরী ছিল?” আপন মনেই বিড়বিড় করে উঠল এলিস, “অদ্ভুত তো। ওই অংশে তোত হাতিই নেই।”
হঠাৎ এতটাই চমকে গেল যে আরেকটু হলে হাতের কিউবটাই পড়ে যেত। পিছু ঘুরতেই দেখল যে মারকো হাসছে।
“তুমি আমাকে ভয় পাইয়ে দিয়েছিলে।” হালকা স্বরে জানাল এলিস, “প্রাচীন কোনো সমাধিতে একাকি থাকা আর কারো সাথে এমনটা করো না।” ||||||||||| “সরি,” আবার দাঁত বের করে হাসলেও বোঝা যাচ্ছে ছেলেটা কতটা উত্তেজিত হয়ে আছে। এরকম এক আবিষ্কারের অংশ হতে পারার মতন ঘটনা তো আর প্রতিদিন ঘটেনা। “আপনি একা একা কথা বলছিলেন দেখে নিজেকে আর সামলাতে পারিনি। ড্যামন হেড কোয়ার্টারের সাথে কথা বলেছেন। তারাও রওনা হয়ে গেছে। আরেকটা কথা, ড্যামন বলেছেন কিউবটা যেন আপনার কাছেই থাকে। ডিরেক্টরেরা দেখতে চাইবেন।” এলিসের হাতে ধরা আইভরি কিউবটার দিকে ইশারা করল।
“শিউর। শুধু এটার ছবি তুলে ট্যাগ লাগানো বাকি আছে।” কিউবটার প্রতিটা পাশের ছবি তুলে অন্যান্য আর্টিফ্যাক্টের মতই একটা কন্টেইনারে ভরে ক্যামেরাসহ ব্যাকপ্যাকে ঢুকিয়ে ফেলল। তারপর জানাল,