“হেডকোয়ার্টার থেকে অর্ডার এসেছে। ডিরেক্টরেরা আমাকে স্পষ্ট করে বলে দিয়েছেন যেন প্রতিটি আর্টিফ্যাক্ট নিরাপদে কুঁড়েঘরে নিয়ে জড়ো করা হয়।” উত্তর জানিয়ে কৌতূহল নিয়ে এলিসের দিকে তাকালেন ড্যামন, “আপনি এতক্ষণ কোথায় ছিলেন?”
নিজের অনুভূতিকে বুঝতে না দিয়ে মাথা নাড়ল এলিস, “মনে হচ্ছে আপনি বাকিদেরকে বাইরে পাঠিয়ে দিয়েছেন।” শ্যাফট দিয়ে আসতে আসতে অন্যান্য ছাত্র-ছাত্রী আর শ্রমিকদেরকে বিপরীত দিকে যেতে দেখে বুঝতে পেরেছে যে ড্যামন সমাধিতে একা ঢোকার প্ল্যান করছেন।
“ওদেরকে পাঠিয়ে দিয়েছি কারণ…” দাঁত বের করে হাসলেন ড্যামন, “ভেবেছি আপনি আর আমিই এটার দাবিদার।” ছেলেটার দিকে তাকিয়ে বললেন, “তবে মারকোর সাহায্যও পেয়েছি। লাকি গাই।” চোখ পিটপিট করে ইশারা করতেই পাল্টা দাঁত দেখাল মারকো।
“কিন্তু কোনো দরজা তো দেখা যাচ্ছে না” দ্রুভ্রু-কুঁচকে ফেলল এলিস, “অন্যান্য হেলেনিস্টিক (আলেকজান্ডার ও ক্লিওপেট্রার মধ্যবর্তি গ্রীক সভ্যতা) সমাধিগুলোতে দরজা আছে।”
কাঁধ ঝাঁকালেন ড্যামন, “চলুন তাহলে দেখি, কি বলেন?” চেহারায় ফুটে উঠল উদ্বেগ। এতটা মাসের পরিশ্রম না শেষে বৃথা যায়।
লম্বা দম নিল এলিস। এই সেই কাঙ্ক্ষিত মুহূর্ত!ড্যামনের উদ্দেশ্যে মাথা নাড়তেই মারকো’কে ইশারা করলেন গ্রিক অ্যার্কিওলজিস্ট। টান দিয়ে একটা পোল লাইট নিয়েই সমাধিমুখে দৌড় লাগাল ছেলেটা। এলিস আর ড্যামন ঢুকতেই দৌড়ে গেল আরেকটা ল্যাম্প আনতে, উত্তেজনায় চকচক করছে চোখ।
“এখানে দুটা চেম্বার আছে।” ফিসফিসিয়ে জানালেন ড্যামন। “ঠিক অন্য মেসিডোনিয়ান সমাধিগুলোর মতন গোলাকার ভল্ট। হেলিনিস্টিক যে তাতে কোনো সন্দেহই নেই।”
ছোট্ট একটা অ্যান্টিচেম্বারে নিজেকে আবিষ্কার করল এলিস। দেয়াল জুড়ে রঙিন পোশাক পরিহিত এক নারীর মুরাল; সেনাবাহিনিকে নেতৃত্ব এবং পুরুষদেরকে আদেশ দিচ্ছেন। অবয়বে ফুটে উঠেছে লিভারের সমস্ত গুণ।
ড্যামনের দিকে তাকাতেই স্পষ্ট চোখে পড়ল নোকটার অন্তরের উত্তেজনা। তাদের ধারণাই সঠিক। “এটি এক রানির সমাধি!” চেপে রাখা নিঃশ্বাস ফেললেন ড্যামন, “অবশেষে দুনিয়া তার শেষ আবাস দেখতে পাবে।”
অ্যান্টিচেম্বার থেকে সমাধি চেম্বারের দরজার দিকে এগোল এলিস। পিছু নিলেন ড্যামন।
কিন্তু চেম্বারে ঢুকতেই মনে হল দম বন্ধ হয়ে যাবে। ভেবেছিল কোনো একটা পাথরের শবাধার, কিংবা নিদেনপক্ষে একটা মমি পাবে। অথচ যা দেখল তাতে সরসর করে দাঁড়িয়ে গেল মাথার চুল।
২. আর. কে. পুরাম, নিউ দিল্লি
বাসায় ফেরার সময় সারাদিনের ঘটনাগুলো ভেবে দেখলেন ইন্ডিয়ান ইন্টেলিজেন্স ব্যুরোর স্পেশাল ডিরেক্টর ইমরান কিরবাঈ।
ছয় মাস আগে জি-টুয়েন্টি দেশগুলোর উপর সন্ত্রাসী হুমকি আর মহাভারতের মাঝে লুকায়িত এক প্রাচীন রহস্য আবিষ্কারের ধুলিঝড় থামার পর, টেকনোলজি বেসড় সন্ত্রাসবাদের মনিটর আর তদন্ত করার জন্য যৌথ টাস্ক ফোর্স গঠনে একমত হয়েছে ভারত আর ইউএস সরকার। মহাভারতের এক সিক্রেটের উপর ভিত্তি করে আধুনিক প্রযুক্তির প্রয়োগে বৈশ্বিক অর্থনৈতিক আর রাজনৈতিক আধিপত্য সৃষ্টির জন্য সন্ত্রাসীদের সাথে হাত মিলিয়েছিল এক গোপন গ্লোবাল গ্রুপ। সেখান থেকেই এই টাস্ক ফোর্স গঠনের আইডিয়ার সূত্রপাত। পুরো পরিকল্পনাটা ভেস্তে দেয়া সম্ভব হলেও শক্ররা কিন্তু এখনো টিকে আছে। সমস্ত ঘটনা থেকে এটা স্পষ্ট যে, নিজেদের হীন স্বার্থ চরিতার্থের জন্য প্রযুক্তি ব্যবহারেও এরা দ্বিধা করবে না।
তাই টাস্ক ফোর্সের ধারণাকে সানন্দে সম্ভাষণ জানিয়েছেন ইমরান। এর ফলে রাজনৈতিক স্বীকৃতি থাকায় টেকনো-টেররিজম সম্পর্কে তদন্ত করার অধিকার আর দায়িত্ব দুই-ই পাওয়া গেল। কিন্তু টাস্ক ফোর্সের লিডারদের সাথে আজই মাত্র প্রথম দেখা হল। এবং যা দেখলেন তা মোটেই পছন্দ হয়নি। জঘন্য ব্যাপার হচ্ছে এখন আর টাস্ক ফোর্স থেকে পিছিয়ে আসারও উপায় নেই। পুরো অবস্থাটাই অত্যন্ত কঠিন হয়ে পড়েছে এখন।
মনে পড়ে গেল ব্ল্যাকবেরিতে পাওয়া ইমেইল সতর্কবার্তার কথা। নাহ, আজ রাতে আর না। সাধারণত অফিস আওয়ারের পরের যেকোনো ইমেইলের চ্যালেঞ্জকে স্বাগত জানান ইমরান। যার মানে হল মাথা ঘামানোর জন্য নতুন একটা সমস্যা পাওয়া গেল। আর এ কাজে তার জুড়ি মেলা ভার। মিথুন রাশির জাতক হিসেবে এই ধরণের চ্যালেঞ্জ তার অনেক পছন্দের। এতে রুটিন ওয়ার্কের বাইরে গিয়ে নিজের প্রকৃতিকে কাজে লাগানোর যথেষ্ট সুযোগ পাওয়া যায়।
মেইল ইনবক্সে চোখ বোলালেন ইমরান। সাথে সাথে সিধে হয়ে বসলেন নিজের সিটে। ভূতুড়ে একটা ইমেইল এসেছে।
.
রানির সমাধি
দরজা দিয়ে বাইরের চেম্বারের একমাত্র ল্যাম্পের যেটুকু আলো ইনার চেম্বারে পৌঁছাচ্ছে সেই অস্পষ্টতার মাঝে চারপাশে আতঙ্কময় সব দৃশ্য দেখল এলিস আর ড্যামন।
রুমের একেবারে মাঝখানে পাথরের কেন্দ্রটা সাদাসিধে আর কারুকার্যবিহীন। এছাড়া আর কোনো কিছুই নেই। কিন্তু চেম্বারের শূন্যতা বা সাধারণ দিকটা কারো নজর কাড়েনি।
বরঞ্চ বিস্মিত হতে হবে দরজার দিকে মুখ করে থাকা চেম্বারের দেয়ালটা দেখে। সমাধির একেবারে মেঝে থেকে ফণা তুলে রেখেছে এক বিশাল পাথরের সাপ। চেম্বারের ছাদ আর দূরের দেয়াল অব্দি পৌঁছে গেছে কুণ্ডুলি পাকানো দেহ। মেঝের পাথরের উপর ঝুলে আছে তিন ফুট উঁচু পাঁচ-মাথাঅলা হূড। খোলা চোয়াল দিয়ে স্পষ্ট দেখা যাচ্ছে নগ্ন বিষদাঁত। অনাহুত অতিথিদেরকে দেখে যারপরণাই বিরক্ত।