খুব দ্রুত আবার ভাজ করে আমার ক্যাপসুলের ভেতরে ঢুকিয়ে রেখে দিলেন। অর্ডারকে এই ম্যাপের অস্তিত্ব সম্পর্কে কখনোই জানানো যাবে না। চিরতরে লুকিয়ে ফেলা সেই সিক্রেট লোকেশনের একমাত্র সূত্র হল এই ম্যাপ।
একবার ভাবলেন একেবারে ধ্বংস করে ফেলবেন। তারপর কী মনে হতেই নিজেকে থামালেন। একমাত্র উনিই জানেন এর অস্তিত্ব। তাই ভবিষ্যতে অর্ডারের সাথে কোনো ঝামেলা হলে হয়ত এ ম্যাগকে কাজে লাগানো যাবে।
তবে খুব সাবধানে আর চতুরতার সাথে লুকিয়ে রাখতে হবে, যেন তিনি ছাড়া আর কেউ না জানে এবং তাঁর মৃত্যুর পরেও কেউ খুঁজে না পায়।
ভালোভাবেই জানেন কোথায় লুকাতে হবে এই ক্যাপসুল।
.
জুন, ১৯৯০
সেন্ট জেমস কলেজ, ফিলাডেলফিয়া, ইউ এস এ
দাঁতে দাঁত চেপে ফটোকপিয়ার মেশিনটাকে আরো দ্রুত কাজ করার জন্য মনে মনে তাগাদা দিলেন মাইক অ্যাশফোর্ড। একেবারে লেটেস্ট মডেলের ব্র্যান্ড নিউ মেশিনটা প্লেইন পেপার ব্যবহার করেই ফটোকপি করতে পারে। কিন্তু তারপরেও তিনি যতটা চাইছেন কাজ ততটা আগাচ্ছে না।
দু-ঘন্টা আগের ফোন কলটার কথা মনে পড়তেই কপালের ভ্রু বেয়ে গড়িয়ে নামল ঘাম।
“মাইক অ্যাশফোর্ড?” জানতে চাইল অপর প্রান্তের লোকটা।
“ইয়েস। হু ইজ দেয়ার?”
“নেভার মাইন্ড, সেটা তেমন জরুরি না। তবে এখন যা বলব মনোযোগ দিয়ে শুনুন। আপনার কাছে এমন কিছু জিনিস আছে যা আমার দরকার। গতকাল যে জিনিসটা আবিষ্কার করেছেন, সেই প্যাপিরাস ডকুমেন্টস।”
দ্বিধায় পড়ে গেলেন অ্যাশফোর্ড। ক্ল্যাসিকস ডিপার্টমেন্টের ফ্যাকাল্টি ছাড়া লাইব্রেরির বেজমেন্টের একটা বাক্সে পাওয়া প্যাপিরাস জার্নালের কথা তো আর কাউকে বলেননি। তবে কি ডিপার্টমেন্টের কেউ খবরটা চাউর করে দিয়েছে? এমনটাও তো হবার কথা নয়। তাহলে কিভাবে জানে এই অজানা কণ্ঠ?
“কোন ডকুমেন্টস?” লোকটাকে পরীক্ষা করতে চাইলেন মাইক।
কঠিন হয়ে গেল ওপাশের কলার, “আমার সাথে চালাকি করার চেষ্টা করবেন অ্যাশফোর্ড। একটা ঠিকানা দিচ্ছি, সেখানে ডকুমেন্টসগুলো পাঠিয়ে দেবেন। মুখবদ্ধ খামে করে জার্নাল পাঠাবেন, প্যাপিরাসগুলো যেন ছিঁড়ে না যায়। যদি এগুলোর কন্ডিশন ভালোও হয় তারপরেও এভাবেই পাঠাবেন।” গড়গড় করে ফিলাডেলফিয়ার ডাউন টাউনের একটা অ্যাড্রেস বলে গেল লোকটা।
পাথরের মত জমে গেলেন অ্যাশফোর্ড। জার্নাল সম্পর্কে সবকিছুই জানে লোকটা। এমনকি প্যাপিরাসের কন্ডিশনও!
“আর যদি আমি তা না করি?” পাল্টা প্রশ্ন ছুড়লেন মাইক, “এই জার্নালগুলো কলেজের সম্পত্তি। লাইব্রেরিয়ান হিসেবে আমার দায়িত্ব হল এগুলোকে সুরক্ষিত রাখা। ফোন পেয়ে যার তার কাছে বিলিয়ে বেড়ানো নয়।”
অধৈর্য হয়ে উঠলেন কলার, “ফাইন। আপনাকে সুযোগ দেয়া হয়েছে কিন্তু সেটা আপনি গ্রহণ করেননি। ঠিক আছে।”
হঠাৎ করেই কেটে গেল ফোন। অ্যাশফোর্ডের কানে গুনগুন করে উঠল এনগেজ টোন।
এর পয়তাল্লিশ মিনিট পরে ভয়াবহ সেই নিউজটা না পেলে এটাকে একটা ভূতুড়ে কল হিসেবেই বাতিল করে দিতেন। নিজ বাড়ির সামনের রাস্তা ক্রস করতে গিয়ে একটা গাড়ির সাথে ধাক্কা খেয়েছেন ক্লাসিক ডিপার্টমেন্টের ফ্যাকাল্টি মেম্বার কার্ল ড্রন। উনাকেই সবার আগে প্যাপিরাস জার্নালের কথা জানিয়েছিলেন মাইক। ঘটনাস্থলেই মারা গেছেন ড্রন। উধাও হয়ে গেছে ঘাতক গাড়ি, কোনো প্রত্যক্ষদর্শী না থাকায় আর কখনোই এটাকে খুঁজে পাওয়া যাবে না।
খবরটা শোনার সাথে সাথেই অস্বস্তিতে পড়ে গেছেন অ্যাশফোর্ড। ব্যক্তি জীবনে অত্যন্ত ভালো মানুষ ছিলেন ড্রন। ধর্মপ্রাণ ক্যাথলিক হিসেবে জেসুইট লিবারেল আর্ট কলেজে ভালই মানিয়ে গেছেন। তাহলে কি সেই অচেনা কলারই ঘটিয়েছে এই অ্যাকসিডেন্ট!! কাকতালীয় বলে তো মনে হচ্ছে না।
একই সাথে মনে পড়ে গেল দুই সপ্তাহ আগে কলেজের ডীন আর ক্ল্যাসিকসের প্রাক্তন প্রফেসর লরেন্স ফুলারের রহস্যময় অন্তর্ধানের কথা। শিকাগো ইউনিভার্সিটির ওরিয়েন্টাল ইনস্টিটিউটের সেমিনার শেষে বাড়ি ফিরছিলেন ফুলার। কিন্তু হোটেল থেকে চেক আউট করার পরই যেন বাতাসে মিলিয়ে যান। হোটেলের ডোর ম্যান ও বেল বয় তাকে ক্যাবে উঠতে দেখলেও এয়ারপোর্টে পৌঁছাননি তিনি। এমপ্লয়মেন্ট কন্ট্রাক্টের শর্তানুযায়ী তার সমস্ত কাগজপত্র আর জার্নালের কাস্টডি পেয়েছে কলেজ। ক্যাটালগ না করে সাথে সাথে সবকিছু বাক্সে ভরে রেখে দেয়া হয়েছে বেজমেন্টে। জিনিসপত্রের বিস্তারিত বিবরণ লিখতে গিয়ে এরকমই একটা বাক্সে
প্যাপিরাসগুলো খুঁজে পেয়েছেন অ্যাশফোর্ড।
এবার তাহলে কার পালা? জেদি স্বরে কলারের অনুরোধ পায়ে ঠেললেও তিনিই কি এটার পরবর্তী লক্ষ্য?
খুব দ্রুত চিন্তা করে মনস্থির করে ফেললেন অ্যাশফোর্ড। কলারের চেয়েও তিনি এক ধাপ এগিয়ে আছেন। প্যাপিরাসের সাথে যে দুটো জার্নালও পেয়েছেন সে কথা কেউ জানে না। এমনকি ড্রন কিংবা অন্য কাউকেও বলেননি। দুটো জার্নালই ইংরেজিতে লেখা তারমধ্যে একটা আবার প্যাপিরাসের বিষয়বস্তুর অনুবাদ; জার্নালের প্রথম পাতায় যা সবিস্তারে স্বহস্তে লিখে গেছেন ফুলার। অনুবাদটা দেখে অবাক হলেও দ্বিতীয় জার্নালটা দেখে রীতিমত বাকরুদ্ধ হয়ে পড়েছেন অ্যাশফোর্ড। মনে হল মাথা ঘুরে পড়ে যাবেন।