বহুকষ্টে নিজেকে সংযত করল এলিস। কেউ একজন তাকে এতটা অসহায় ভাবছে, তাকে নিয়ে খেলতে চাইছে ভাবতেই শক্ত হয়ে উঠল সমস্ত সত্তা।
“ওকে দোস্ত” কঠোর হয়ে উঠল গলার স্বর, “এই খেলাটা দুজনই খেলে। তুমি রুলেট চাইছো তো? তবে তাই হোক।” গিয়ার শিফট করে খানিকক্ষণের জন্য গতি ধীর করে আবারো স্পিড বাড়িয়ে সোজা হেলিকপ্টারের দিকে ধেয়ে চলল। মাটি থেকে মাত্র কয়েক মিটার উপরে ভাসছে উড়ন্ত দানব। “দেখা যাক কে আগে চোখের পাতা ফেলে।”
কয়েক মুহূর্তের জন্য গর্জন করতে করতে একে অন্যের দিকে ছুটল হেলিকপ্টার আর এস ইউ ভি। এই বুঝি সংঘর্ষ ঘটে।
যাই হোক, আজগুবি খেলাটা বাদ দিয়ে রাস্তার উপর ল্যান্ড করল পাইলট। এগিয়ে যাচ্ছে ল্যান্ড ক্রুজার। মনস্তাত্ত্বিক কলাকৌশল বাদ দিয়ে নিজের অস্তিত্ব জানান দিল হেলিকপ্টার।
রোটরের ঘূর্ণন থামতেই দেখা গেল ভেতরে একজন মাত্র লোক। এলিসও বুঝতে পারল যে পাইলটের সাথে আর কেউ নেই। জালের উপর মাছি দেখে অপেক্ষারত মাকড়সার মতই একপাশে দাঁড়িয়ে আছে পাইলট; যেন জানেই যে মাছিটা তার সিল্কের ফাঁদ ছেড়ে আর কোথাও যেতে পারবে না।
হন্যে হয়ে চারপাশে তাকাল এলিস। পালানোর জন্য উন্মাদ হয়ে উঠেছে। চোখের সামনে রাস্তার উপরে এতবড় হেলিকপ্টার দেখে কিছুতেই বুকের ধুকপুকানি থামাতে পারছে না। অথচ জানে যে আতঙ্কে অন্ধ হয়ে গেলে কোনো লাভই হবে না। যদি কোনো সম্ভাবনা থেকেও থাকে, তাও হারাবে।
চোখের পানি আটকে মনযোগ দিল সামনের দিকে। যদিও ভেতর থেকে একটুও উৎসাহ পাচ্ছে না।
তখনই চোখে পড়ল ব্যাপারটা। সুযোগটা ক্ষীণ হলেও মনে খানিকটা আশা জাগল। জানে সবকিছুই ওর বিরুদ্ধে; তারপরেও বিনা চেষ্টায় হার মানবে না।
গতি কিছুটা কমিয়ে এনে মনে মনে কয়েকটা হিসাব করে নিল। ভাবনাটা কাজে দিতেও পারে।
অন্যদিকে এলিসের গাড়ি ধীর হতে দেখে পাইলট ভাবল মেয়েটা বুঝি থামতে যাচ্ছে; তাই সেও সামনে এগোল।
.
জোনগড় কেল্লা, নিউ দিল্লি থেকে ১৩০ কি. মি. দূরে, ভারত।
“এরকম উন্নতিতে আমি যে খুব খুশি হয়েছি তা কিন্তু না” অসন্তুষ্ট হয়ে বিড়বিড় করে উঠল কলিন।
বিজয়ের পারিবারিক কেল্লার ব্যালকনিতে বন্ধুর সাথে দাঁড়িয়ে উপভোগ করছে চারপাশের চমৎকার দৃশ্য। শীত এখনো তেমন জাঁকিয়ে না বসলেও রাতের বেলা বেশ ঠাণ্ডা পড়ে। বিশেষ করে কৃষি জমির উপর টাওয়ারের মত উঁচু হয়ে থাকা পাহাড়ে অবস্থিত কেল্লাটাতে আর পাশের ছোট্ট গ্রামটাতে। দুৰ্গটা বিজয় পেয়েছে ওর আঙ্কেলের কাছ থেকে। বছর খানেক আগে নিষ্ঠুরভাবে খুন হয়েছেন রিটায়ার্ড নিউক্লিয়ার সায়েন্টিস্ট বিক্রম সিং। খুনের সূত্র ধরেই উন্মোচিত হয়েছে দ্য গ্রেট অশোক আর মহাভারতের এক গোপন রহস্য।
কলিনের দিকে তাকিয়ে দাঁত বের করে হেসে ফেলল বিজয়, “লোকটাকে তোমার পছন্দ হয় নি? আমার তো বেশ মজার মনে হচ্ছে।”
ভ্রু-কুঁচকে বন্ধুর দিকে তাকাল কলিন, “ঠিকই ধরেছ, ওকে আমার একটুও সহ্য হয় না। কিরবাঈ যখন জানালেন যে ইউ এস আর ইন্ডিয়ান গভর্নমেন্ট মিলে এই জয়েন্ট টাস্ক ফোর্স বানাচ্ছে, তখন তো ভেবেছিলাম আইডিয়াটা বেশ চমৎকার হবে।”
“হ্যাঁ, সেটাই তো” সম্মত হল বিজয়। নিজ নিজ ক্ষেত্রে বিশেষজ্ঞ একদল সায়েন্টিস্ট আর ইঞ্জিনিয়ারদেরকে জড়ো করে টেকনোলজি বেসড টেররিজমের তদন্ত করার জন্য সহায়তা দেবে দু’দেশের সরকার। এ সময়ে এরকম একটা আইডিয়ার চেয়ে ভালো আর কিইবা হতে পারে।”
“ইয়াহ্; কিন্তু এখন বুঝতে পারছি যে জঙ্গলে হাঁটার সময় রেড রাইডিং হুডের কেমন লেগেছিল। একটা নেকড়ে গায়ের উপর ঝাঁপিয়ে পড়ার আগ পর্যন্ত সবকিছুই ভাল লাগে।”
মিটিমিটি হাসছে বিজয়। গত বছর তাদের অ্যাডভেঞ্চারের সঙ্গী সি আই এ’র অপারেটর মাইকেল ব্লেকের সাথে দেখা করার জন্য দুই বন্ধুকে আজ সকালে ইন্টেলিজেন্স ব্যুরোর হেডকোয়ার্টারে ডেকে পাঠানো হয়েছিল। ব্লেকের সাথে ইউ এস প্রেসিডেন্ট কর্তৃক নির্বাচিত জয়েন্ট টাস্ক ফোর্সের আমেরিকান হেডও এসেছিল। আর এই মিটিংয়ের জন্যই মাত্র দুদিন আগে ইউএস থেকে উড়ে এসেছে কলিন।
৬ ফুট ৩ ইঞ্চি লম্বা পেশিবহুল বিল প্যাটারসনের মেধাও কম নয়। কেমিকেল আর মলিকিউলার বায়োলজীতে পি এইচ ডি আছে। প্রাক্তন আমেরিকান নেভী সিল এই আফ্রিকান-আমেরিকান বিল সবাইকে খোঁচা দিয়ে কথা বলতে ভালোবাসে। আর নিজের অধস্তন প্রত্যেককেই সন্দেহের চোখে দেখে।
স্বাভাবিকভাবেই বিদ্রোহী স্বভাবের কলিন তাই প্রথম দেখাতেই প্যাটারসনকে অপছন্দ করে বসে। সিদ্ধান্ত গ্রহণে কতটা স্বাধীনতা থাকবে সেটা নিয়ে তো দুজনের তুমুল ঝগড়াই বেঁধে গেছে। এখনো সে রাগ মাথা থেকে যায়নি। বলে উঠল, “শোনো, যদি ইউএস প্রেসিডেন্ট ভাবে যে সে খুব ভালো, ঠিক আছে তাতে কোনো সমস্যা নেই। কিন্তু কোনো কিছু করার আগেই তার কাছে ছুটতে হবে সেটার তো কোনো মানে হয় না।” রক্তচক্ষু নিয়ে বিজয়ের দিকে তাকাল কলিন।
“আরে দাঁড়াও, দাঁড়াও, আমার মাথা আবার চিবিয়ে খেও না! আর সবকিছুর জন্যই তার পারমিশন লাগবে তা তো না। শুধু যদি কোনো সামরিক কিংবা বিশেষ ট্রেনিং সম্বলিত কোনো কিছুর প্রয়োজন হয় তখন। চলল, এটুকু মেনে নেই। ৯-এর সিক্রেট নিয়ে যদি ফারুক পালিয়ে যেত তাহলে তোমার আমার কিছু করার ছিল না।” গত বছরের কথা মনে করিয়ে দিল বিজয়। “শেষ পর্যন্ত কমান্ডোরাই সবকিছু সামলেছে। এই টাস্ক ফোর্সের হয়ে আমাদের কাজ হবে বিভিন্ন ধারণাকে তদন্ত আর পরীক্ষা করে দেখা। যদি কোনো অ্যাকশনের প্রয়োজন হয় তাহলে যারা এ কাজে দক্ষ তাদের উপর ছেড়ে দেয়াই ভাল হবে।”