আমি শুধু আশা করছি এসব শঙ্কাই আপনাদের রোমাঞ্চিত করে রাখবে আর কাহিনি শেষ হবার সাথে সাথে সমস্ত উত্তর পেয়ে যাবেন। তাই আমার সনির্বন্ধ অনুরোধ হল, ধৈর্য সহকারে পরবর্তী কয়েকটা বইয়ের জন্য অপেক্ষা। করুন। প্রতিজ্ঞা করে বলছি যে এই অপেক্ষা বৃথা যাবে না।
এই ফাঁকে এমন কিছু ঘটনা বইয়ে আছে যার ব্যাখ্যা আমার মনে হয় দেয়া উচিত। সেগুলো হল :
• বিজ্ঞানের ফাইল থেকে
এই বইয়ে অসংখ্য বৈজ্ঞানিক গবেষণার কথা লেখা আছে। যতদূর সম্ভব সহজভাবে তুলে ধরার চেষ্টায় খেয়াল রেখেছি যেন প্রয়োজনমত বর্ণনারও কোনো কমতি না হয়। তাই গল্পের বাকি অংশ উন্মোচিত না করেই কিছু কিছু ব্যাখ্যা এখানে সোজাসাপ্টাভাবে তুলে ধরা হল।
• পি সি আর পরীক্ষা : পলিমারেজ চেইন রিঅ্যাকশনের মাধ্যমে ডিএনএ’র সংক্ষিপ্ত অনুক্রম বিশ্লেষণ করা হয়। পি সি আ’রের মাধ্যমে আরএনএ’র পুনউৎপাদন ঘটে। এই অনুরূপ তৈরির কাজে ডিএনএ পলিমারেজ ব্যবহার করা হয়। পিসিআর প্রক্রিয়ার মাধ্যমে ডিএনএ নিজে নিজেকেই অনুরূপ তৈরির মাধ্যম হিসেবে ব্যবহার করে। আর চেইন রিঅ্যাকশনের মাধ্যমে ডিএনএ’র আরো অসংখ্য কপি তৈরি হয়।
• স্টিনশ্নে : নতুন এই প্রযুক্তির মাধ্যমে বহনযোগ যন্ত্রের সাহায্যে যে কোনো ধরনের যানবাহন, ঘর-বাড়ি আর দালানের মাঝেও সেল ফোনের সিগন্যাল খুঁজে বের করা যায়। সেল ফোনের টাওয়ার, আর ফোনের সমস্ত তথ্য এমনকি ই-মেইল, মেসেজ আর সেল সাইট তথ্য মুছে এই নজরদারির কাজ করা যায়। এর মাধ্যমে স্টিনগ্রে যন্ত্র ব্যবহারকারী চাইলে সেল ফোনের অবস্থান নির্ণয় করা ছাড়াও কাকে ফোন করল, কাদের সাথে সময় কাটাল সব বের করতে পারে।
• ভাইরাসের অনুরূপ তৈরি : বিভক্তির মাধ্যমেই সমস্ত কোষের অনুরূপ তৈরি হয়। নিউক্লিয়াসে অবস্থানরত ভিন্ন ভিন্ন ডিএনএ কপি তৈরি হয়। কিন্তু একটা ভাইরাস নিজে থেকে এ কাজ করতে অক্ষম। তাই প্রয়োজন আশ্রয়দাতা যা হতে পারে যে কোনো জীবন্ত প্রাণী। এমনকি ব্যাকটেরিয়া পর্যন্ত। সাধারণ একটা ভাইরাস ডিএনএ’কে আরএনএ’তে অনুবাদের মাধ্যমে বদলে যায় (রাইবো-নিউক্লিক অ্যাসিড)। এই আরএনএ আর কিছুই নয় প্রোটিন জড়ো করার জন্য কম্পিউটার প্রোগামের মত একগাদা নির্দেশ। এসব প্রোটিন সহযোগে তৈরি হয় নতুন ভাইরাস। ভাইরাস আশ্রয়দাতা কোষ সংক্রমণের মাধ্যমে এই কোষের অনুরূপ তৈরির কলকজা ব্যবহার করে নিজ ডিএনএ’কে আর এন এতে রূপান্তর করে। ফলে ভাইরাসের প্রোটিন নতুন আরেক প্রোটিনের জন্ম দেয়। শিশু ভাইরাসটাই তখন কোষের মাঝে বিস্ফোরিত হয়ে এটাকে মেরে ফেলে; আরো নতুন কোষে সংক্রমণ করে। পুরো প্রক্রিয়াটা আবার নতুন করে শুরু হয়। ভয়ংকর, তাই না?
• প্রো-ভাইরাস : আশ্রয়দাতার ডিএনএ’র মাঝে আবদ্ধ ভাইরাসের জেনেটিক কোড বা জিনগত সংকেত।
• ব্যাকটেরিওফেজ : এগুলো এমন সব ভাইরাস যা ব্যাকটেরিয়ার মাঝে সংক্রামিত হয়ে এর কোষকে উপরোল্লিখিত প্রক্রিয়ায় অনুরূপ তৈরির কাজে ব্যবহার করে।
• ভিরিয়ন : সংক্রামিত ভাইরাসের অংশ।
• রেট্রোভাইরাস অনুরূপ তৈরি প্রক্রিয়া : রেট্রোভাইরাস আরো চতুর আর জটিল। এগুলোতে আর এন এর তন্তু থাকে; ডিএনএ’র নয়। তাই যখন তারা আশ্রয়দাতা কোষকে সংক্রামিত করে তখন প্রথমে আর এন এ ডিএনএতে পরিবর্তিত হয়। প্রোটিনকে ব্যবহার করে এই পুরো প্রক্রিয়া ঘটে। ভাইরাস ডিএনএ সৃষ্টি হয়ে গেলে পর এটাকে আশ্রয়দাতা কোষের ডিএনএ’তে বসিয়ে দেয়া হয় ঠিক তাই! আশ্রয়দাতার অংশ হিসেবে মানব শরীরে ডিএনএ’র গুরুত্বপূর্ণ অংশও রেট্রোভাইরাস থেকে আসে। বিশ্বাস হোক বা না হোক ডিএনএ’তে চলে আসায় আমরাও অংশত ভাইরাসে পরিণত হই! ভাইরাস ডিএনএ তখন ভাইরাস আরএনএ’তে পরিণত হয়, যার ফলে প্রোটিনের উৎপাদন বেড়ে যায় আর নতুন ভাইরাস জড়ো হয়। এই বইয়ে উল্লেখিত রেট্রোভাইরাস এভাবেই কাজ করে। লেকের ব্যাকটেরিয়াতে সংক্রামিত হয়ে সেগুলোর ডিএনএ বদলে দিয়েছে। (ব্যাকটেরিয়ার ডিএনএ’র মধ্যে নিজের ডিএনএ ঢুকিয়ে দেয়ার মাধ্যমে)। এর ফলে ব্যাকটেরিয়া থেকে উৎপন্ন প্রোটিনের প্রকৃতি বদলে যায়-আর বাস্তব জীবনেও সত্যি তাই ঘটে।
• উপকারী ভাইরাস : রেট্রোভাইরাস মানবকোষে সংক্রামিত হবার পর পূর্বের নিষ্ক্রিয় জিনকেও সচল করে তোলে। এটা পুরোপুরি সত্যি। বইয়ে ব্যবহৃত উদাহরণগুলোও একেবারে সত্য। ভাইরাস কিভাবে আমাদের ডিএনএ আর জিনকে সংক্রামিত করে সে ব্যাপারে প্রতিদিন অসংখ্য নতুন নতুন জিনিস আবিষ্কৃত হচ্ছে। জিনগুলো আসলে অনেকটা কম্পিউটার প্রোগামের মতন। শুধু এই প্রোগ্রামগুলোই শরীরকে কর্মক্ষম রাখতে প্রোটিন উৎপন্ন করে। বইয়ে উল্লেখিত সমস্ত প্রোটিন যেমন পিফিফটি থ্রি একটা সত্যিকারের প্রোটিন। এমনকি এগুলোর কর্মক্ষমতাও সত্য। গোপন সব জিনকেও সক্রিয় করে তোলে ভাইরাস। এর ফলে প্রোটিনের উৎপাদন বেড়ে যায় যার ফলে শরীরে সব ধরনের প্রভাব পড়ে। আমরা হয়ত সেসব টেরও পাই না। এই কারণেই আজকের দুনিয়ায় সর্বত্র জিনশাস্ত্র নিয়ে চর্চা করা হয়। যে কোনো ওষুধের চেয়েও জিনগত চিকিৎসা বেশি কার্যকরী। বিভিন্ন ধরনের প্রোটিন আমাদের অনেক উপকারে লাগে। পিফিফটিথ্রি সত্যিই ক্যান্সারের কোষকে মেরে ফেলে। আর এমন অনেক জিন আছে যেগুলোর উৎপাদিত প্রোটিন ক্যান্সার, ডায়াবেটিস, অ্যালজেইমা আর কার্ডিওভাসকুলার রোগ নিয়ন্ত্রণ করতে পারে। এসব জিনের স্থানান্তর এ সমস্ত রোগের কারণ। যদি এমন কোনো পদ্ধতি আবিষ্কৃত হয় যার ফলে প্রোটিন উৎপাদনের জন্য এসব জিনের কর্মক্ষমতা বেড়ে যাবে তাহলে বৃদ্ধ হবার প্রক্রিয়া সত্যিই ধীর হয়ে যাবে। আমি যখন লিখছি তখন এ সম্পর্কে চারপাশে বিস্তর গবেষণা হচ্ছে আর কে জানে হয়ত আগামী বিশ বছরে কোনো একটা সমাধানও বের হয়ে যাবে!