পরস্পরের দুঃখ ভাগ করে নেয়ার জন্য কনফারেন্স হলের আধো-অন্ধকারে দাঁড়িয়ে আছে দুই পুরুষ। ঠিক সেই মুহূর্তে একই দিকে ছুটল নিজেদের অনুভূতি আর ভাবনার গতি।
৯. সমাপ্তি সংলাপ
সমাপ্তি সংলাপ
ডিস্টাবিং কল
হুইস্কি হাতে স্টাডিতে বসে আছে বিজয়। একেবারে একা ইউএসে ফিরে গেছে কলিন। টাস্ক ফোর্সের মিটিং সেরেই সোজা এয়ারপোর্ট চলে গেছে। সাথে এলিস। দুজনে একই ফ্লাইট বুক করেছে। ইউএসে এলিসের নিরাপত্তার জন্য সব ব্যবস্থা করে রেখেছেন প্যাটারসন। তবে কী ব্যবস্থা সে সম্পর্কে কেউ জানতেও চায়নি আর তিনিও কিছুই বলেন নি। এটাই ভালো হয়েছে।
জীবনে প্রথমবারের মত নিজেকে একা বোধ করল বিজয়। পিতা-মাতার মৃত্যুর পরে আঙ্কেলকে পেয়েছে। আঙ্কেল যখন খুন হলেন তখনো পাশে কলিন ছিল। পরে রাধা।
অথচ এখন সে সম্পূর্ণ একা। আপন মনে ভেবে দেখল যে এটাই সত্যি। মানুষ পৃথিবীতে একাই আসে আর সেভাবেই চলে যায়। কেন যেন হতাশায় ছেয়ে গেছে মন। সারাক্ষণ কেবলই মৃত্যুর কথা ভাবছে। তবে এতে অবাক হবারও কিছু নেই; বরাবরই মৃত্যু এসে তার প্রিয়জনদের ছিনিয়ে নিয়ে গেছে।
হাতের গ্লাসটাকে ডেস্কের উপর নামিয়ে রাখল। অন্য কিছু না হলেও এসব চিন্তাভাবনার হাত থেকে বাঁচার জন্যও নিজেকে ব্যস্ত করে ফেলতে হবে। তাই ক্লান্ত না হওয়া পর্যন্ত পাঁচতলায় উঠে কার্টনগুলো খুলে দেখাটাই ভালো হবে। তারপর না হয় ঘুমাতে যাবে।
আর ঠিক সেসময়েই ঝনঝন করে বেজে উঠল টেলিফোন। ভ্রু-কুঁচকে তাকাল বিজয়। কে হতে পারে? ঘড়ির দিকে তাকিয়ে দেখল এগারোটা বাজে। এত রাতে তো কারো ফোন করার কথা নয়।
নাম্বারটাও অপরিচিত। ঠিক করল ফোনটা ধরবে।
“ইয়েস?”
“বিজয় সিং?”
ভ্রুকুটি করল বিজয়। তার মানে পরিচিত কেউ। কিন্তু কণ্ঠস্বর তো চিনতে পারছে না।
“বলছি।”
“তুমি আমাকে চেন না।” খানিকটা দ্বিধায় পড়ে গেছে কণ্ঠস্বরের মালিক; বলা যায় গলাটা কাঁপছে। মনে হচ্ছে বুঝতে পারছে না বিজয়কে ফোন করাটা ঠিক হয়েছে কিনা। খুব সাবধানে, মেপে মেপে কথা বলছে।
“কে বলছেন?”
“আমি প্রতাপ সিংয়ের বন্ধু।” উত্তরে শুনল, “খুব কাছের বন্ধু।”
নড়েচড়ে বসল বিজয়। প্রতাপ সিং তো ওর বাবার নাম। “আপনার নাম কী?”
“আমি…আমরা কি একবার দেখা করতে পারি?”
“তার আগে জানতে হবে যে, আপনি কে?”
“আমাদের আসলে দেখা করা দরকার। লোকটা এবার বেশ জোর দিচ্ছে। সরে গেছে সব দ্বিধা। “তোমাকে কয়েকটা কথা বলতে চাই। তোমার বাবা মারা যাবার আগে আমাকে একটা জিনিস দিয়ে গেছেন। তারপর নিজেকে শুধরে নিয়ে বলল, “গাড়ি দুর্ঘটনার আগে।”
“কী সেটা?”
“আমি…ফোনে বলতে পারব না দেখা করলে ভালো হয়।”
“আর আমার সাথে যোগাযোগ করার জন্য পনের বছর কেন অপেক্ষা করলেন?”
“তখন প্রয়োজন পড়েনি। এখন দরকার।”
মনে মনে ভেবে দেখল বিজয়। পনের বছর পরে এই রহস্যময় ফোনটা করার পেছনে কী কারণ থাকতে পারে?
“আপনি যে ধোকা দিচ্ছেন না সেটাই বা কিভাবে বুঝব? আমার বাবাকে চেনার ভান করছেন হয়ত?”
“তোমার ই-মেইল চেক করে দেখো।”
“দাঁড়ান।” ল্যাপটপ নিজের কাছে টেনে নিয়ে সুইচ অন করল বিজয়। তারপর দ্রুতহাতে মেইল চেক করে নিল। আসলেই কয়েক মিনিট আগে একটা ই-মেইল এসেছে। তবে অ্যাড্রেসটা অপরিচিত। মেইলে ক্লিক করল।
আর সাথে সাথে যেন জমে গেল। পর্দার ছবিটাকে যেন বিশ্বাসই হচ্ছে। এবারে বুঝতে পারল। বাবার কাগজপত্রের একটা ফাইল। সংবাদপত্রের কাটা অংশ আর বিভিন্ন আর্টিকেল। প্রত্নতাত্ত্বিক খনন কাজের উপর গবেষণা। চমকে গেল বিজয়। বাকিটা এখন জানতেই হবে।
“তুমি কি লাইনে আছো?” খানিকটা উদ্বেগের স্বরে জানতে চাইল ওপাশের লোকটা। কল্পনার জগৎ থেকে ফিরে এলো বিজয়, “হ্যাঁ, আছি। কখন দেখা করব?”
“এখন থেকে ছয় মাস পর। স্টারবাকস্। সাইবার হাব, গুড়গাঁও। দুদিন আগে ফোন করে তোমাকে সময় বলে দিব।”
“এত জরুরি হলে দেখা করার জন্য আরো অপেক্ষা করছেন কেন?” কিছুই বুঝতে পারছে না বিজয়।
“প্রস্তুতির জন্য আমার কিছু সময় দরকার।” সংক্ষিপ্ত একটা উত্তর দিল লোকটা।
কেটে গেল ফোন। বসে বসে ভাবতে লাগল বিজয়। পুরো মাথা যেন ঘুরছে। কে এই রহস্যময় লোক? পরিষ্কার বোঝা গেছে জরুরি ভিত্তিতে দেখা করতে চায়। অথচ আবার ছয় মাস পরের টাইম দিল। কেন? লোকটার ব্যাখ্যাটাও তত পছন্দ হল না। কোন ধরনের প্রস্তুতি নিতে হবে? আর দেখা হলে বিজয়কেই বা কী জানাবে? এত্ত এত্ত প্রশ্ন যেগুলোর কোনো উত্তরই নেই।
যাই হোক, আজ থেকে ছয় মাস পরে এই রহেস্যর জট খুলবে।
সে পর্যন্ত তাকে অপেক্ষা করতেই হবে।
চলবে…
*
লেখকের কথা
প্রিয় পাঠক
এই বই সম্পর্কে এত আগ্রহের জন্য ধন্যবাদ। এটা একটা সিরিজের প্রথম বই। আমার প্রথম উপন্যাস ‘দ্য মহাভারত সিক্রেটের’ মত সমাপ্তিতে এসে কাহিনিটা শেষ হয়নি, বরঞ্চ বলা যায় আরো বহুদূর চলবে।
এইমাত্র যা পড়লেন তা নিয়ে নিশ্চয় মনে অনেক প্রশ্ন জাগছে আর এসবের ব্যাখ্যাও জানতে ইচ্ছে করছে। বই পড়ার সময় অনেক ঘটনা কিংবা বর্ণনা অথবা চরিত্র সম্পর্কে হয়ত ভালোভাবে বুঝতে পারেন নি। তবে এসবই ইচ্ছেকৃত; কারণ এই কাহিনি এখানেই শেষ হয়নি। দয়া করে বিশ্বাস রাখুন যে আপনার সমস্ত প্রশ্নের উত্তর দেয়া হবে আর গল্পের বিস্তৃতির সাথে সাথে কেটে যাবে সমস্ত দ্বিধা।