যেমন করেই হোক পালাতে হবে।
পেছনে সচল হয়ে উঠল হেলিকপ্টার। জানে ঠিকই তাকে পিছু ধাওয়া করে মেরে ফেলা হবে। কিন্তু বুঝতে পারছে না এরা কারা আর কী চায়?
ফোঁপাচ্ছে এলিস। কাঁপতে কাঁপতে গাড়ি ছোটাল E-75 টোল রোড ধরে থেসালোনিকির উদ্দেশ্যে।
এদিকে হেলিকপ্টারের শব্দও কাছে চলে এসেছে। চেপে ধরল স্টিয়ারিং হুইল, যেন তাহলেই আরো জোরে ছুটবে ল্যান্ডক্রুজার।
এও জানে হেলিকপ্টারকে এড়াবার উপায় নেই। কিছুক্ষণের মাঝেই তাকে ওভারটেক করবে উড়ন্ত দানব।
.
আনোয়ারের খোঁজে
“অফিসে ফিরিয়ে নিয়ে চলো” ড্রাইভারের উদ্দেশ্যে হাঁক ছাড়লেন ইমরান, “বীকন অন্ করো!”
বাধ্য ছেলের মত ঘুরে গেল ড্রাইভার। গতি বাড়িয়ে জ্বালিয়ে দিল আলোক সংকেত। কর্মক্ষেত্রে প্রাপ্ত সুবিধা এভাবে কখনো ব্যবহার করেননা ইমরান। কিন্তু এ মুহূর্তের কথা আলাদা। যে মেসেজ পেয়েছেন সেখান থেকে একটা ব্যাপার স্পষ্ট যে তার বন্ধু বিপদে পড়েছে।
তাই সাহায্য করার জন্য যা কিছু সম্ভব তিনি করবেন।
ঝড়ের বেগে আইবি হেডকোয়ার্টারে ফিরতে ফিরতেই ফোনে বিভিন্ন আদেশ দিয়ে দিলেন। গাড়ির উপর লাল আলো জ্বলতেই পথ ছেড়ে দিল অন্যান্য যানবাহন। কাকতালীয়ভাবে যেন সরে গেছে সব ট্রাফিক জ্যাম; মহাপ্লাবনের তোড়ে ভেসে গেছে তুষার।
অফিসে পৌঁছেই নিজের দলকে ডেকে পাঠালেন।
“তো, আমাদের হাতে কী কী আছে?” অসম্ভব শান্ত শোনাচ্ছে তার গলা। প্রচন্ড রেগে থাকলেও আপাতদৃষ্টিতে শান্ত ভাব দিয়ে ঢেকে রেখেছেন নিজের উদ্বেগ; খুব বেশি দেরি হয়ে যায় নি তো! বুঝতে পারছেন বাধা পেয়ে মেসেজটাও ঠিকভাবে টাইপ করতে পারে নি অনোয়ার।
“আইপি অ্যাড্রেস ট্রেস করতে পেরেছি” রিপোর্ট করল এক অধস্তন। “দিল্লির সার্ভার। সম্ভাব্য একটা লোকেশনও জানা গেছে।” রেডমার্ক দিয়ে লোকেশন চিহ্নিত করা একটা ম্যাপের প্রিন্টআউট তুলে দিল ইমরানের হাতে, “কিন্তু এ জায়গাটার ৫০ কি. মি. রেডিয়াসের যেকোনো লোকেশনও হতে পারে।”
চোখ তুলে তাকালেন ইমরান, “আমি সঠিক লোকেশনটাই জানতে চাই। আই ওয়ান্ট দ্য ফিজিক্যাল অ্যাড্রেস।”
“স্যার, আপনি তো জানেন, সেক্ষেত্রে কোর্টের অর্ডার লাগবে। আমি অবশ্য আই এস পি’কে ফোন…”।
“কোর্ট অর্ডারের জন্য অপেক্ষা করা যাবে না” লোকটাকে থামিয়ে দিলেন ইমরান। প্রতিটা মুহূর্তই অত্যন্ত দামি। আলোচনা করার মত সময় নেই, “আই এস পি’কে ব্যাখ্যা করার মতন যথেষ্ট সময়ও নেই। দিস ইজ অ্যান ইমারজেন্সি।”
হা হয়ে গেল তার এজেন্ট, “আপনি কি আইএসপি’র ডাটাবেইজ হ্যাঁক করার কথা বলছেন?”
“ঠিক তাই। আর এর সকল দায়দায়িত্ব আমার।” ইমরান ভালভাবেই জানেন যে কতটা ক্ষমতার অপব্যবহার করছেন। কিন্তু অতশত ভেবে লাভ নেই। বিপদে পড়েছে আনোয়ার। দীর্ঘ ক্যারিয়ারের কখনোই এমনটা না। করলেও আজ রাতে সব নিয়ম ভেঙে ফেলবেন।
বিস্ময়ে একে অন্যের দিকে তাকিয়ে কাজে লেগে গেল পুরো টিম। নিজের চেয়ারে হেলান দিয়ে বসে ফুস করে দম ফেললেন ইমরান। শুধু এটুকুই আশা করছেন যে, তারা সময়মতই সবকিছু খুঁজে পাবে।
৫. শিকার ধরার অভিযান
শকওয়েভ ব্লাস্টের ঠিক পরের সেকেন্ডেই এলিসের কানে এলো বিস্ফোরণের গর্জন। প্রচণ্ড জোরে ঝাঁকি খেলো গাড়ি। কাদামাটির রাস্তা ছেড়ে হাইওয়েতে পৌঁছাবার জন্য অ্যাসফাল্ট রোডে উঠে পড়েছে ল্যান্ডক্রুজার। অনিচ্ছাসত্ত্বেও গলা চিরে বের হল আর্তচিৎকার।
চোখের পানির ভেতর দিয়েও রিয়ার ভিউ মিররে দেখতে পেল খনন সাইটের ঊর্ধ্বাকাশে উঠে যাওয়া আগুনের বল। কিছুতেই বিশ্বাস হচ্ছে না যে তারা সমাধিটাকে ধ্বংস করে দিয়েছে। ভাগ্য ভালো যে ও সবকিছুর ছবি তুলে রেখেছিল। ক্যামেরার মেমোরি স্টিক এখনো ওর সাথেই আছে। নিজেকে এই বলে সানা দিল যে সমাধিটা ধ্বংসের মাধ্যমে ইতিহাস আর প্রত্নতত্তের অপূরণীয় ক্ষতি হয়ে গেলেও কিছুটা তো অন্তত বাঁচাতে পেরেছে।
তখনই মাথায় এল চিন্তাটা। এই লোকগুলো যারাই হোক না কেন যদি সমাধিটাকেই এভাবে উড়িয়ে দিতে পারে তাহলে এর সাথে জড়িত কোনোকিছুই আর টিকতে দেবে না।
আর সমাধিস্থানে যা পাওয়া গেছে তার একমাত্র জীবিত সাক্ষী হল এলিস। তাই ওকে মেরে না ফেলা পর্যন্ত এরা ক্ষান্ত হবে না।
হঠাৎ করেই ল্যান্ড ক্রুজারের ছাদের উপর কিছু একটা বাড়ি খেলো। হেলিকপ্টারের ধাতব শরীর দিয়ে ছাদটাকে সমানে আঘাত করছে পাইলট। নিজের সিটে লাফিয়ে উঠল এলিস। সারা সন্ধ্যার ঘটনায় সহ্যের শেষ সীমায় পৌঁছে গেছে নার্ভ। আতঙ্কে চিৎকার করলেও বুঝতে পারছে এক্ষুনি ধরে ফেলবে ওকে।
গিয়ার শিফট করে আবারো এক্সিলেটারে চাপ বাড়াল। কপালে যাই থাকুক না কেন এত সহজে হাল ছাড়বেনা। সবশেষে হয়ত ওরাই জয়ী হবে; কিন্তু তার আগে কিছুতেই সারেন্ডার করবে না ও।
হেলিকপ্টারের পাইলটও এই নারীর জেদ টের পেয়ে হঠাৎ করেই গতি বাড়িয়ে সামনে চলে গেল। তারপর ডানদিকে খানিকটা কাৎ হয়ে সোজা ল্যান্ডক্রুজারের উপর নামতে চাইল যেন।
হেলিকপ্টারটাকে সোজা ওর দিকেই উড়ে আসতে দেখে আতঙ্কে বোবা হয়ে গেল এলিস। বুঝতে পারল পাইলটের অভিপ্রায়। রাস্তার উপর ল্যান্ড করার পাশাপাশি লোকটার প্ল্যান হল এলিসকে ভয় পাইয়ে দেয়া। যেন হেলিকপটারের অজেয় শক্তিকে সে বিশ্বাস করতে বাধ্য হয়।