“আর এই ওষুধ অমরত্ব দান করে?” জানতে চাইলেন রয়সন।
“পৌরাণিক কাহিনি অনুযায়ী উত্তরটা হল, হ্যাঁ।”
“অমৃত সম্পর্কে আরো কিছু বলতে পারবে?” আবারো জানতে চাইলেন রয়সন। “বিজ্ঞানসম্মত ব্যাখ্যা। আমি জানি, তুমি আমাকে বলেছ যে, এই অভিযানের উদ্দেশ্য ছিল প্রকৃত ব্যাকটেরিয়া আর রেট্রোভাইরাসকে খুঁজে বের করা। যে প্রোফেজটা আমরা ক্লিনিক্যাল ট্রায়ালের সাবজেক্টদের শরীরে পেয়েছি। কিন্তু ওষুধটা খেলে আসলেই কী হয় তা জানতেই আমার বেশি কৌতূহল হচ্ছে। ওরা তোমাকে একথা বলেছে?”
মাথা নাড়ল বিজয়, “বৈজ্ঞানিক শব্দগুলোর সবকয়টা মনে নেই।” স্বীকার করে জানাল, “কিন্তু যেটুকু মনে আছে বলছি। বস্তুত মানব শরীরে প্রবেশ করার পর রেট্রোভাইরাস পরিবর্তনের হোস্ট পেয়ে যায়। আর তখনই মানুষের জিনে নিজের ডিএনএ ঢুকিয়ে দেয়। আর এভাবেই নির্দিষ্ট কিছু জিনে স্থানান্তরিত হয়ে এমন সব প্রোটিন উৎপন্ন করে যা বয়স বাড়ার সাথে সাথে বৃদ্ধ হবার প্রক্রিয়া আর রোগ-বালাইয়ের সাথে লড়াই করতে সক্ষম।”
“মজার তো।” মন্তব্য করলেন গ্যালিপস, “এই জেনেটিকস আর প্রোটিন সম্পর্কে আর কোনো বিস্তারিত ব্যাখ্যা মনে আছে?”
চেষ্টা করতে গিয়ে ভ্রু-কুঁচকে ফেলল বিজয়। “ভ্যান ক্লক বলেছে যে বৃদ্ধ হবার পেছনে বেশ কিছু কারণ আছে। উদাহরণস্বরূপ বলা যায় টেলোমারেস কমে যাওয়া। যার কারণে কোষ মরে যায় আর টিস্যু কুঁচকে যায়। আরো বলেছিল, টেলোমারেস ক্রোমোজমের তথ্য সরবরাহ করে।”
মাঝখানে বাধা দিলেন, গ্যালিপস, “ডিএনএ অণুর এক বিশাল কুন্ডলি হল ক্রোমোজোম। প্রতিটা ক্রোমোজোমের শেষে পুনরাবৃত্তি ঘটে যা জিনগত দিক থেকে অর্থহীন বলে মনে হয়। এটাই হল টেলোমার। যেমন প্রতিটা জুতার ফিতার শেষে অ্যাথলেট থাকে যেন তন্তুটার ক্ষয় রোধ হয়। কিন্তু প্রতিবার ক্রোমোজোমের নকল হবার সময় খানিকটা করে টেলোমার ঝরে পড়ে। তারমানে এরকম বহুবার ঘটার পর টেলোমার এত কমে যায় যে অর্থহীন সব জিন কেবল টিকে থাকে। আর তখনই ঘটে যখন কোষ বিভক্ত হওয়া থেমে যায়। মজার ব্যাপার হল, বৃদ্ধ হওয়া আর কোষ হারানো ছাড়াও যেসব কোষ বিভক্ত হওয়া থামিয়ে দিলেও মৃত্যুবরণ করে না সেগুলোই সুস্থ দেহী কোষের উপর ক্ষতিকর প্রভাব ফেলে।”
“ইয়েস।” বিজয়ও সম্মত হয়ে জানাল, “তো, যে জিনটা স্থানান্তরিত হয় সেটাই আবার টেলোমারেসের উৎপাদনকে নিয়ন্ত্রণ করে যা টেলোমারেসের মেরামত করতেও সক্ষম। তার ফলে কোষের পুনরাবৃত্তি প্রক্রিয়া বন্ধ না হয়ে সচল থাকে অর্থাৎ কোষ না হারানোর ফলে বৃদ্ধ হবার প্রক্রিয়াও থেমে যায়।” এবার মাথা নেড়ে গ্যালিপস জানালেন, “ইন্টারেস্টিং। কিন্তু টেলোমারেসের উৎপাদন তো আরো অসংখ্য কোষ বিভক্তি আর পুনরাবৃত্তির প্রক্রিয়াকে বাড়িয়ে দেবে, বিশেষ করে টিউমার। অথবা এটার আরেকটা নাম হল ক্যাসার। তখন কী হবে?”
“এই অংশটাই হচ্ছে সবচেয়ে মজার। ভাইরাস প্রোটিন উৎপাদনের উপর এমন এক প্রভাব ফেলে যাতে কোষগুলো আত্মহত্যা করতে বাধ্য হয়। এই প্রোটিন ক্ষতিকর কোষসমূহ আর সেন্সসেন্টকে নিশানা করে। অর্থাৎ শরীরে ক্যান্সারের বৃদ্ধি নষ্ট হয়ে যায়।”
শিষ দিয়ে উঠলেন, গ্যালিপস, “শুনে তত মনে হচ্ছে পিফিফটি থ্রি। এমন এক প্রোটিন যা কোষের চক্রকে থামিয়ে স্থবির করে দেয় অথবা আত্মহত্যার জন্য কোষকে ইশারা দেয়। জিনগত ক্ষতসমৃদ্ধ কোষগুলোকে টার্গেট করে যার বেশির ভাগই ক্যান্সার আর সেসব কোষকে স্থবির করে দেয়। তার মানে এই ভাইরাস কোষের বহির্গমন প্রক্রিয়াকেও নিয়ন্ত্রণ করে। বেশ মজা তো।”
“এছাড়াও কুক আরো কিছু জিনের কথা বলেছিল যেগুলোর উৎপাদিত প্রোটিন কার্ডিওভাসকুলার রোগ-বালাই, ডায়াবেটিস, হাইপারটেনশন আর অ্যালজেইমারকেও প্রতিরোধ করে। এসব জিন শরীরের পেশিসমূহের কার্যক্রমকে সচল রাখে আর টিস্যুর পুনর্গঠনকে বাড়িয়ে তোলে। আর এ সমস্ত কিছুই ঘটে রেট্রোভাইরাসের কারণে। কিন্তু সেগুলোর নামগুলো স্মরণ করতে পারছি না। এছাড়া ভ্যান কুক আরো বলেছে যে তাদের ক্লিনিক্যাল ট্রায়ালগুলোর কারণ হল ভাইরাসের কার্যক্রম সম্পর্কে আরো ভালোভাবে জানা। এ কারণেই প্রকৃত ভাইরাসটা এত বেশি জরুরি। প্রোফেজটা একই কাজ না করলেও ফলাফল নিয়ে সে খুবই আশাবাদী।”
“মনে হচ্ছে একেবারে কাকতালীয় কিছু ঘটবে।” এতক্ষণে কথা বলল কলিন।
“সত্যিই তাই।” সমবেদনার স্বরে জানালেন রয়সন। এই কারণেই তারা এত মরিয়া হয়ে চাইছে…এই মিশ্রণ।” তারপর এমনভাবে মাথা ঝাঁকালেন যেন কিছুতেই বিশ্বাস করতে পারছেন না।
“আমার কথায় প্লিজ কেউ রাগ করবেন না।” বলে উঠল কলিন, “আমি জানি এ রুমে কয়েকজন শ্রদ্ধাভাজন বিজ্ঞানী আছেন আর এ সবকিছু বিচার করার জন্য আমার কোনো দক্ষতাও নেই। কিন্তু সত্যি কথা বলতে, বামন হয়ে আকাশের চাঁদে হাত বাড়াবার মত মনে হচ্ছে। মানে অত্যাশ্চর্য এক ভাইরাস যা বয়স বৃদ্ধির প্রক্রিয়াকে থামিয়ে দেয়ার মত প্রোটিন উৎপাদন করবে আর ব্যাকটেরিয়ার প্রকৃতি পরিবর্তনের পাশাপাশি ক্যানসারের কোষগুলোকেও টার্গেট করবে। বিশ্বাস করাটা একটু শক্ত বৈকি। অনেকটা যেন বৈজ্ঞানিক কল্প-কাহিনির মতন!”