খানিকটা দ্বিধা করলেও মাথা নেড়ে সম্মতি দিলেন ডা. শুক্লা, “আমার মনে হয় এদেশের আমার বন্ধুরা সবাই এটা জানে। আমি তাহলে ইউ এস বন্ধুদের উদ্দেশ্যে বলছি; মহাভারত অনুযায়ী, দেবতারা-ঈশ্বর-আর-দানব কিংবা অসুর-শয়তানেরা মিলিত হয়ে অমৃতের জন্য সবেগে ঘুরিয়েছিল দুধেল মহাসমুদ্র-এমন এক তরল যা পান করলে অমরত্ব প্রাপ্তি লাভ ঘটবে। দড়ি হিসেবে ব্যবহার করে ভাসুকী অর্থাৎ সাপ আর লাঠি হিসেবে মাউন্ট মান্দারা। কয়েক বছর সবেগে ঘোরানোর পর দুধেল মহাসমুদ্র অন্যান্য জিনিসের সাথে অমৃতও উৎপন্ন করে দেয়।
ভ্রুকুটি করলেন গ্যালিপস! “এই কাহিনি আমিও শুনেছি। এর সাথে ব্যাকটেরিয়া আর ভাইরাসের কী সম্পর্ক?”
“ভ্যান ক্লকের কাছ থেকে শোনা অনুবাদ অনুযায়ী” উত্তরে বিজয় জানাল, “পদ্যগুলোর ঐতিহাসিক ব্যাখ্যার চেয়ে শ্লোকের কাহিনি একেবারে ভিন্ন। হাজার হাজার বছর আগে এমন এক তরল ওষুধের সন্ধান করা হয় যা অমরত্ব দান করতে পারবে। হিন্দুকুশের গুহাকক্ষে ভূগর্ভস্থ এক বিশাল লেক আছে যা আর্য ল্যাবরেটরিতে পাওয়া ব্যাকটেরিয়ার আবাসস্থল। এ ধরনের জীবাণু অত্যন্ত লবণাক্ত পরিবেশে বেঁচে থাকতেও সক্ষম। লেকের পানি দুনিয়ার সমস্ত মহাসমুদ্রের চেয়েও বেশি লবণাক্ত। আর ব্যাকটেরিয়ার কলোনির কারণে লেকের পানি রূপালি সাদা রঙ ধারণ করেছে। যার কারণে পানিটা দুধের মত দেখায়। তার মানে এই দুধেল মহাসমুদ্রের কথাই পৌরাণিক কাহিনিতে বলা হয়েছে।”
“যেমন হালোফিলিক আর্চাইয়া।” বিড়বিড় করলেন রয়সন। কিন্তু প্যাটারসনের কোঁচকানো ভ্রু দেখে তাড়াহুড়ো করে বললেন, “ডেডসী’র লাল ফুল।”
“তো প্রাকৃতিকভাবে এসব ব্যাকটেরিয়ার উৎপন্ন বিষ মানবদেহের জন্য অত্যন্ত ক্ষতিকর।” আবার শুরু করল বিজয়। “কিন্তু, অতশত বছর আগেও কেউ একজন এমন এক রেট্রোভাইরাস আবিষ্কার করে যা ব্যাকটেরিয়াকে সংক্রমণ করে।”
“একটা ব্যাকটেরিওফেজ।” বাধা দিলেন রয়সন।
“ঠিক তাই। ধন্যবাদ ডাক্তার। এই শব্দটাই ভুলে গিয়েছিলাম। রেট্রোভাইরাস সম্পর্কে মজার ব্যাপার হল এটি লবণাক্ত পানিতে জন্মানো ব্যাকটেরিয়ার মাঝে সংক্রামিত হয়ে এগুলোর ডিএনএ ও উৎপাদিত প্রোটিনকেও বদলে ফেলে। তার মানে বিষাক্ত উপাদানের জায়গায় প্রোটিন বসে যায় যা মানুষের জন্য হিতকর। যাই হোক, ভাইরাস লবণাক্ত পানিতে টিকতে পারে না আর ব্যাকটেরিয়া লবণ পানি ছাড়া বাঁচতে পারে না। তাই নির্দিষ্ট কিছু লতাপাতা, ঔষধি গাছ ও খানিকটা রত্নপাথরের গুঁড়া মিশিয়ে এই সংক্রমণ তৈরি করতে হয়। আমি জানিনা কিভাবে কিন্তু তাতে করে ভাইরাসের উপর লবণ পানি আর কোনো খারাপ প্রভাব ফেলতে পারে না। এই মন্থনের কথাই মহাভারতে লেখা আছে। এটা সবেগে ঘোরানো নয় বরঞ্চ সব উপকরণ একসাথে মেশানো। একবার এই প্রক্রিয়া শেষ হলেই অমৃত পান করার জন্য উপযুক্ত হয়ে যায়।”
“তুমি বলেছিলে যে গুহাকক্ষ থেকে নমুনা হিসেবে অর্ডার সাপ সংগ্রহ করেছিল।” মন্তব্যে জানালেন প্যাটারসন, “আমার ধারণা তাদের বিশ্বাস সাপের দেহে এই ভাইরাসের সংক্রমণ আছে।”
কাঁধ ঝাঁকিয়ে বিজয় জানাল, “এই ব্যাপারে আমার কোনো ধারণাই নেই। ওরা আমাকে কিছুই বলেনি। তবে সেসময় আমারও একই কথাই মনে হয়েছিল। যদিও আমিও বুঝতে পারিনি। মানুষকে সংক্রমণ করে এমন একটা ভাইরাস সাপ কিভাবে বহন করবে?”
“এটার সম্ভাবনা কিন্তু আছে।” আর কেউ কোনো মন্তব্য করার আগে কথা বললেন রয়সন, “অন্তত এক কথায় উড়িয়ে দেবার উপায় নেই। কয়েক বছর আগে, ক্যালিফোনিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষণায় সান ফ্রান্সিকো এরেনাভাইরাসেস নামক গোষ্ঠীর ভাইরাস আবিষ্কার করেছে। এগুলো স্তন্যপায়ী বিশেষ করে। তীক্ষ্ণদন্ত প্রাণীদেহে সংক্রামিত হতে পারে। এই ভাইরাসের সাপ থেকে মানবদেহে প্রবেশের কোনো প্রমাণ না থাকলেও ভাইরাসের একটা জিনের সাথে ইবোলা ভাইরাস পরিবারের বেশ সামঞ্জস্য আছে। মেহরোজিকে এই ভাইরাস মানুষকে সংক্রামিত করতে পারে। অভূতপূর্ব দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে এই আবিষ্কার। কে বলতে পারে যে আর কোনো ভাইরাস নেই যা মানুষ আর সাপকে একত্রে সংক্রামিত করতে পারে? আর হাজার হাজার বছর ধরে একটা ভাইরাসকে সংরক্ষণ করার জন্য এরচেয়ে আর ভালো কোনো উপায় নেই। জীবন্ত এক আশ্রয় দাতা।
“আর পদ্যের উল্লেখিত গাছগুলো?” জানতে চাইলেন ইমরান।
মাথা নেড়ে বিজয় জানাল, “কাজাকাস্তানে পৌঁছানোর পর ভ্যান ক্লক আমাকে বলেছিল যে তার দল ঔষধি গাছগুলোকেও খুঁজে পেয়েছে। কয়েকটা নাম মনে থাকায় আজ সকালে কেল্লা থেকে বেরোবার আগে দেখেও নিয়েছি। বেগুনি ফলঅলা গাছটা হল- আরো একবার নোটবুক দেখে জানাল, “প্রাণগোস পাবুলারিয়া লিন্ডি। এটা একটা ল্যাটিন নাম। কিন্তু কেন যেন উজবেকিস্তানকে নিজের আবাসস্থল হিসেবে বেছে নেয়ায় ফুলটার কোনো ইংরেজি নামও নেই। অন্য গাছ, গাঢ় বেগুনি ফল হল প্রভনাস স্যাডিয়ানা ভেসিলেজ। ইংরেজিতে স্যাডিয়ান আলুবোখরা। এই গাছের বয়স্ক শাখাগুলোর রঙ হয় গাঢ় ধূসর আর কাঁচা শাখাগুলোর রঙ বাদামি সবুজ, ফুলগুলো সাদা কিংবা সঙ্গে বেগুনি ছাপ থাকে- মানে “ধূসর কিংবা সাদা আর সবুজ কিংবা বাদামি পোশাক।” এ ফুলটাও উজবেকিস্তান আর কিরগিজস্তানের নির্দিষ্ট কিছু প্রদেশেই পাওয়া যায়। আর ইন্টারনেটে গবেষণা করে দেখেছি উভয় ফুলই কেবল উজবেকিস্তানের দুটো প্রদেশে একসাথে পাওয়া যায়: তাসকান্দ আর সুরখন্ডারিয়ো। আর বিশ্বাস হোক বা না হোক সুরখন্ডারিয়ো সগডিয়ান রক যেখানে ছিল তার প্রায় কাছাকাছি। যদিও রক’টাকেই কখনো পাওয়া যায়নি। কিন্তু দক্ষিণে যাত্রা করার আগে আলেকজান্ডার এদিকেও এসেছিলেন।”