প্যাটারসনকে বেশ নিস্পৃহ দেখাচ্ছে। গত চব্বিশ ঘন্টা তাদের সবার জন্যই অত্যন্ত আতঙ্কজনক ছিল। আর শত চেষ্টা সত্ত্বেও পার পেয়ে গেছে শত্রু।
“কাজাকাস্তানে তারা যে ধরনের আক্রমণ ক্ষমতা দেখিয়েছে তা সত্যিই অভূতপূর্ব।” বললেন প্যাটারসন, “আর বিজয় তো বলেছে যে আফগানিস্তানে তারা নাকি মিশন শেষ না হওয়া পর্যন্ত তালিবানকেও ঠেকিয়ে রেখেছে। তার মানে অর্ডার আর আমাদের টাস্ক ফোর্স গঠনের মাঝে একটা যোগসূত্র আছে। গত বছরের মহাভারত সিক্রেট। যদিও যোগসূত্রটা এখনো জানি না। এমনকি অর্ডার কিংবা তাদের সদস্য সম্পর্কেও জানি না। ইতিহাসের পাতায়ও তাদের সম্পর্কে কোথাও কোনো রেকর্ড নেই। কোনো একভাবে শত শত বছর ধরে লুকিয়ে রেখেছে তাদের অস্তিত্ব। আমাদের কাছে কেবল কয়েকটা নাম আছে। আর কিছু নেই। তবে একটা ব্যাপারে কোনো সন্দেহ নেই যে তাদের ক্ষমতা আর প্রতিপত্তি অত্যন্ত শক্তিশালী। সরকারের একেবারে উচ্চ পর্যায় থেকে শুরু করে আপনার আমার দেশসহ বিভিন্ন দেশে ছড়িয়ে আছে তাদের সতীর্থ।”
“আর বয়স হিসেবেও তারা বেশ প্রাচীন।” যোগ দিল বিজয়, “খুব, খুব প্রাচীন। ভ্যান কুকের কথা যদি সত্যি হয় তাহলে হাজার হাজার বছর আগে অর্ডারই এই গুহাটা বানিয়ে রেখে গেছে। আর অমৃতের প্রস্তুতপ্রণালি নিয়ে অর্ডারের কোনো একটা লক্ষ্য ছিল।” হঠাৎ করেই মাথায় উদয় হল একটা চিন্তা, “উইল ইউ এক্সকিউজ মি? আমি একটা ফোন করতে চাই। এইমাত্রই একটা কথা মনে পড়ল।”
প্যাটারসন মাথা নেড়ে সম্মতি দিতেই রুম থেকে বেরিয়ে গেল বিজয়। আবার কয়েক মিনিট পরে ফিরেও এলো। উত্তেজনায় জ্বলজ্বল করছে পুরো চেহারা।
অন্যেরা উৎসুক দৃষ্টিতে তাকাল। স্পষ্ট বোঝা যাচ্ছে যে সে কিছু বলতে চায়।
“আপনি যা বললেন প্যাটারসনকে উদ্দেশ্য করে বলে উঠল বিজয়, “মানে ওদেরকে শত্রু হিসেবে উল্লেখ করেছেন; তখনই মাথার মধ্যে চিন্তাটা এলো, ইতিহাসে তাদের রেকর্ড অবশ্যই আছে। গত বছরের আবিষ্কৃত মহাভারতের রহস্যের সাথে তাদের যোগসূত্র।” ছোট্ট একটা নোটবই বের করল বিজয়। “এই মাত্র এলিসকে ফোন করে একটা ডায়েরি সম্পর্কে জিজ্ঞেস করলাম। এটা গত বছর পেয়েছিলাম। ব্রুনো বেগার নামে একজন জার্মানের ডায়েরি। গল্পটা আপনারা সবাই জানেন।”
সকলেই একযোগে মাথা নেড়ে সম্মতি প্রকাশ করল। আর যারা ওই অভিযানের অংশ ছিল না তাদেরকে সংক্ষেপে জানানো হল।
“ওয়েল, এই ডায়েরিতে, মহান সম্রাট অশোকের একজন সভাসদ সুরসেনের ডকুমেন্টের অনুবাদ পাওয়া গেছে। প্রথম প্যারাগ্রাফটা আপনাদেরকে পড়ে শোনাচ্ছি :
“আমি সুরসেন, আমাদের প্রিয়তম মহান সম্রাট অশোক, দেবনামপ্রিয় পিয়দাসীর সৃষ্ট গৌরবময় ভ্রাতৃসংঘ, নয়জন অজানা ব্যক্তির গোপন গ্রন্থাগার আবিষ্কারের অংশ হিসেবে এই রেকর্ড রেখে যাচ্ছি। শহস্তে সমর্পিত হবার আশঙ্কায় সম্রাটের নির্দেশ মান্য করতে গিয়ে এই আবিষ্কার কিংবা কী পেয়েছি সে সম্পর্কে আমি কিছুই লিখব না। কেননা নয়জনের ভ্রাতৃসংঘ সৃষ্টির এটাই ছিল মূল কারণ।”
নোটবুক বন্ধ করে অন্যদের দিকে তাকাল বিজয়। “আমার বিশ্বাস অর্ডার’-ই এই ‘শত্রু’ যাদের হাত থেকে নিজ আবিষ্কারকে অশোক গোপন করতে চেয়েছেন। আর দুই হাজার বছর ধরে তাতে সফলও হয়েছেন। তাই এদের সম্পর্কে জানতে হলে পৌরাণিক আখ্যানের মাঝেই অনুসন্ধান করতে হবে। তবে এটা স্পষ্ট যে ভারত ভ্রাতৃসংঘ থেকে উৎপত্তি হয়ে অতঃপর বৈশ্বিক একটা প্রতিষ্ঠানে পরিণত হয়েছে।”
“তোমার কাছে সুরসেনের কথা শুনে ব্লেকের ফোন টেপের কথা মনে পড়ে গেল। সেখানেও বলা হয়েছিল যে মারফি ভারতেই অর্ডারের এক সদস্যের কাছে রিপোর্ট করবে।” স্মরণ করে জানালেন ইমরান। “আমরা আসলে এক অদৃশ্য দানবের সাথে লড়ছি। পৃথিবীর কোনো গোয়েন্দা সংস্থাই অর্ডারের অস্তিত্ব সম্পর্কে জানে না। তারপরেও অর্ডারের ক্ষমতা আর প্রতিপত্তির নজির তো চোখের সামনেই দেখলাম।”
“আর এখন তো তারা আদা-জল খেয়ে আমাদের পিছনে লাগবে।” শান্তভাবে জানালেন ডা. শুক্লা। “ওরা আমাদের পরিচয় জানে। জানে কোথায় থাকি। কী করি। এত সহজে ছাড়বে না। নিজেদেরকেও আমাদের সামনে প্রকাশ করে ফেলেছে। এই ভুল শোধরানোর জন্য নিশ্চয় চেষ্টা করবে। তার মানে আমরা কেউই নিরাপদ নই।”
“সত্যিই তাই।” স্বীকার করলেন প্যাটারসন। “কিন্তু ওরা তো টাস্ক ফোর্স সম্পর্কে জানে না। তাই ভুলে যাবেন না যে আমাদের ক্ষমতা আর প্রভাবও কম নয়। হয়ত এ লড়াইটা হেরে গেছি; কিন্তু যুদ্ধ তো কেবল শুরু হল। এবার আমরা অপ্রস্তুত ছিলাম। এখন যেহেতু তাদের সম্পর্কে খানিকটা জানতে পেরেছি, তাহলে প্রস্তুতি নিতে সুবিধা হবে।”
বিজয়ের দিকে তাকিয়ে বললেন, “আর তোমার কথা অনুযায়ী মহাভারতের একটা পৌরাণিক কাহিনির উপর ভিত্তি করেই অর্ডার এই মিশন পরিচালনা করেছে?”
মাথা নাড়ল বিজয়। তাহলে আমাদেরকে খুলে বলো।”
কোথা থেকে শুরু করবে ভাবতে গিয়ে খানিক চুপ করে রইল বিজয়। “মহাভারতের যেসব শ্লোক কাহিনিটাকে ব্যাখ্যা করেছে আমি সেগুলোর বিস্তারিত বর্ণনায় যাবো না। কিন্তু ভ্যান কুক আমাকে কয়েকটা শ্লোক অনুবাদ করে শুনিয়েছে। কাহিনির নাম সমুদ্রমন্থন।” তারপর ডা. শুক্লার দিকে তাকাল, “আমার মনে হয় এ সম্পর্কে আপনিই ভালো বলতে পারবেন।”