অগাস্তার পরিকল্পনা সফল হয়েছে দেখে নিশ্চুপ হয়ে গেলেন দুই দর্শক। জেটের তীব্র গর্জন শোনা গেলেও শত্রু যে পালিয়ে গেছে তাতে কোনো সন্দেহই নেই।
.
মরণের ছোঁবল
সিঁড়ির কিনারে হোঁচট খাওয়ার সময় মরিয়া হয়ে দুই হাত দিয়েই সিঁড়ি আঁকড়ে ধরল বিজয়। এক হাত খানিকক্ষণের জন্য কিছু পেলেও আরেকবার চেষ্টার সাথে সাথে পিছলে গেল।
তবে এবার এক হাত দিয়েও শক্ত করে ধরে আরেক হাত দিয়ে হন্যে হয়ে পাথর ধরার চেষ্টা করল।
কিন্তু জানে এভাবে বেশিক্ষণ টিকতে পারবে না। সিঁড়ি বেয়ে উঠার সময় পাথরে ঘসা খাওয়ায় জ্বালা করছে আঙুলের চামড়া। বড়সড় একটা পাথরের টুকরা আঘাত করায় কোমরে গভীর ঘা হয়ে গেছে আর উরুতেও তীব্র ব্যথা।
তাই অনিচ্ছা সত্ত্বেও কয়েক মুহূর্ত থামতেই হল।
কিন্তু যেন ওকে সচল করে ভোলার জন্যই থর থর করে কেঁপে উঠল সিঁড়ি আর কানে এলো একের পর এক চিড় ধরার গুরুগম্ভীর আওয়াজ।
নিচের অন্ধকার গহ্বরের দিকে তাকাল বিজয়। ওখানে কিছু একটা ঘটছে। কম্পন আগের চেয়েও বেড়ে সিঁড়ি পর্যন্ত চলে এলো ফাটল।
এবারে বুঝতে পেরেছে কেন সাপগুলো ওভাবে পড়িমড়ি করে ছুটছিল। ষষ্ঠ ইন্দ্রিয়ের অনুসরণ করেছে। মানুষের যা নেই প্রতিটি জন্তুর আছে বিপর্যয় বোঝার মৌলিক সেই ক্ষমতা। আর সে সময়ে বিজয় যেটা টের পায়নি সাপগুলো সেটাই বুঝে গেছে।
মাথার উপর ভেঙে পড়ছে উপরের চূড়া।
.
দুই ভ্রাতা
হেলিকপ্টার নিয়ে পাথরের উপর দিয়ে উড়ে বেড়াচ্ছে কাজাক পাইলট। দলটার হাতে বন্দী ছিল টাস্ক ফোর্সের এক সদস্য। শয়তানগুলো তার কমরেডর্কেও গুলিকরে মেরে ফেলেছে। তবে পালিয়ে যাওয়া দুটো হেলিকপ্টারের যে কোনো একটাতে লোকটার বন্দী থাকার জোর সম্ভাবনা হলেও তাকে উদ্ধারের আশায় হেলিকপ্টার নিয়ে পুরো এলাকা চক্কর মারার সিদ্ধান্ত নিল পাইলট।
কিন্তু ভূপাতিত কাজাক হেলিকপ্টার আর শীর্ষ চূড়ার উপর ভেঙে পড়া মিসাইলের কালো ধোয়ার পুচ্ছ ছাড়া চারপাশে আর কিছুই দেখা যাচ্ছে না।
অনর্থক কষ্ট করছে। লোকটা হয় মারা গেছে; কিংবা চলে গেছে। যাই হোক না কেন তার মিশন ভেস্তে গেছে। সাথে দুজন কমরেডকেও হারিয়েছে। ওরা আসলেই ভাল লোক ছিল।
দীর্ঘশ্বাস ফেলে হেলিকপ্টার ঘুরিয়ে পশ্চিমে বিমান বাহিনির ঘাঁটির দিকে রওনা হল পাইলট।
হঠাৎ করেই চিৎকার দিয়ে উঠল তার কো-পাইলট। কৌতূহল মেটাতে শীর্ষচূড়ার ভগ্নাংশের মধ্যে উঁকি দিতেই দেখল পাথরের কিনারে ঝুলছে একজন লোক।
পবর্তচূড়ার ঠিক মাথার উপর দাঁড়িয়েই বাইরের হাইড্রলিক হয়েস্ট সিস্টেম চালু করে দিল পাইলট।
.
সে কি পারবে?
পর্বত শিখরের পাথুরে দেয়াল আর সিঁড়িটা যখন ছোট টুকরায় পরিণত হল তখন ঠিক মাথার উপরেই হেলিকপ্টারের রোটরের আওয়াজ শুনতে পেল বিজয়।
চোখ তুলে তাকাতেই দেখে যে একটা দড়ি নেমে এসেছে ওকে নিয়ে যাবার জন্য।
এদিকে আরেকটু হলেই ভেঙে পড়বে গোটা সিঁড়ি।
দড়িটা আরেক ইঞ্চি নিচে নেমে এলো। তীক্ষ্ণ চোখে তাকিয়ে আছে বিজয়।
আর মাত্র কয়েক ইঞ্চি।
প্রায় পৌঁছে গেছে।
এখনই।
বজ্রগর্জনে ভেঙে পড়ল পুরো পবর্তশিখর। চূর্ণ-বিচূর্ণ হয়ে গেল সিঁড়ি। বড় একটা পাথর ধরে যেন মাঝ আকাশে ভেসে রইল বিজয়।
ঠিক সে সময়ে কাঁধের কাছে কপিকলের রশির স্পর্শ পেল। টান দিয়ে ধরে ফেলল বিজয়। বিশাল এক ধুলার মেঘ ছড়িয়ে ভেঙে পড়ল পুরো চূড়া। কপিকল ধরে রাখতে গিয়ে কাশতে কাশতে দম বন্ধ হবার জোগাড়। ধুলা পড়ে চোখও জ্বালাতন করছে।
একটু পরেই কপিকল তাকে উপরে নিয়ে এলে হেলিকপ্টারের ভেতরে টেনে নিল দুটো শক্ত হাত। কেবিনের দরজা বন্ধ হতেই বিজয়কে নিয়ে নিরাপদে উপরে উঠে গেল হেলিকপ্টার।
.
৭৬. ইন্টেলিজেন্স ব্যুরো হেডকোয়ার্টাস, নিউ দিল্লি
“এর মানে হচ্ছে শত্রুপক্ষের ক্ষমতা সম্পর্কে আমাদের কোনো ধারণাই নেই।” সূচনা টানলেন প্যাটারসন। উসিয়র্ত মালভূমিতে অপারেশন আর মৃত্যুর হাত থেকে বিজয়ের কোনো মতে বেঁচে যাওয়ার ঘটনাগুলো খতিয়ে দেখছে টাস্ক ফোর্স।
কাজাক বিমান বাহিনির ঘাঁটিতে চিকিৎসা শেষে মাত্র গতকালই ভারতে ফিরে এসেছে বিজয়। ভাগ্য ভাল যে বড় ধরনের কোনো ক্ষত কিংবা হাড়গোড় ভাঙ্গা ছাড়াই পালিয়ে আসতে পেরেছে। খানিকক্ষণ বিশ্রাম নিয়ে আবার দিল্লি ছুটল। উদ্দেশ্য কলিন আর ডা. শুক্লাকে নিয়ে প্যাটারসনের সাথে মিটিং করা। যদিও যাত্রার একেবারে আগ মুহূর্ত পর্যন্ত যার যার কামরায় বন্দী হয়েছিলেন বিজয় আর ডা. শুক্লা; কেউ কারো সাথে দেখা করতে আগ্রহী ছিলেন না।
ইন্টেলিজেন্স ব্যুরোর কনফারেন্স রুমে বসে একেবারে গোড়া থেকে সবকিছু আলোচনা করা হল। সেই গ্রিসের খননকাজ থেকে শুরু করে কাজাকাস্তান আর রাধাকে উদ্ধারের বিফল মিশনসহ সবকিছু। সর্বশেষ আলোচনার পর কয়েক মুহূর্ত চুপচাপ বসে রইল সবাই। দল একজন সদস্য হারিয়েছে। নিজ জীবনের পরিবর্তে টাস্ক ফোর্সের উদ্দেশ্য পূরণের জন্য সাহস আর সংকল্প দেখাতে গিয়ে চলে গেছে রাধা।
এই মিটিঙে যোগদানের জন্য হাসপাতালের বিছানা ছেড়ে এসেছেন ইমরান। ব্যক্তিগতভাবে উপস্থিত থাকার জন্য অবশ্য তিনিই জেদ করেছেন। ইউ এসের পক্ষে রয়সনের সাথে এসেছেন টাস্ক ফোর্সের জিনবিদ্যা বিশেষজ্ঞ পার্সি গ্যালিপস।