দেখা মাত্রই লাফ দিয়ে পিছিয়ে এলো বিজয়। মাত্র মিলিমিটারের জন্য ওকে মিস করে গেল কোবরা। কিন্তু এবারও একই দিকে যেতে উদ্যত আরেকটা কোবরার উপর পড়ল। কুণ্ডলি পাকিয়ে ফণা তোলার জন্য প্রস্তুত হয়ে গেল দ্বিতীয় কোবরা।
সার্চলাইটের উপর কিছু পড়ে ভেঙে গেল নাকি দায়িত্ব শেষ করার জন্য ব্যাটারিটা এই মুহূর্তটাকেই বেছে নিল জানে না বিজয়। বাতি নিভে যেতেই গাঢ় অন্ধকার গ্রাস করে নিল চারপাশ।
আশে-পাশে কেবল সাপেদের পিছলে যাওয়ার শব্দ শোনা যাচ্ছে। অথচ পাথরের সিঁড়িটা যে কোনদিকে সে সম্পর্কে কোনো ধারণাই নেই।
.
৭৪. স্ট্রাইক ওয়ান
দ্বিতীয় রাউন্ড রকেটের ভাগ্যও প্রথম রাউন্ডের মতই হল। আরো একবার উপস্থিত বুদ্ধি খাঁটিয়ে পালিয়ে যেতে সক্ষম হল কাজাক গেলিকপ্টারদ্বয়।
এবারে ক্ষিপ্ত হয়ে উঠল ভ্যান ক্লক। “ধুত্তোরি, তোমরা কি চোখের মাথা খেয়েছ নাকি?” নিজের গোলন্দাজদের উদ্দেশ্যে চিৎকার করে বলল, “এ দুটোকে লেজ থেকে না খসানো পর্যন্ত তো আমরাও বের হতে পারব না।” পূর্বদিকে তাকিয়ে দেখে এরই মাঝে বিন্দুতে পরিণত হয়েছে তাদের দ্বিতীয় হেলিকপ্টার।
এমন সময়ে মেশিনগানের গুলি ছুঁড়তে ছুঁড়তে সোজা তাদের দিকে ধেয়ে এলো একটা কাজাক হেলিকপ্টার। এরপরে কী ঘটবে কুক তাও জানে। টুয়েন্টি এম এম কামান কিংবা সিক্সটি এইট এম এম রকেট লঞ্চার; যদি অবশ্য হেলিকপ্টারে কোনো এক্সিয়াল পড় থাকে, তো।
“এবার।” চিৎকার করে উঠল ভ্যান।
তৃতীয় বারের মত নিশানা ঠিক করে রকেট লঞ্চার ছুড়ল এক গোলন্দাজ।
এইবারে লেগে গেল রকেট।
আগুনে বলের মত বিস্ফোরিত হয়ে তিন ভ্রাতার দিকে ছুটল চপার। সবচেয়ে ছোট চূড়াটাকে আঘাত করে ঢালু বেয়ে গড়িয়ে নেমে মালভূমিতে এসে স্থির হল উত্তপ্ত আর্বজনা।
.
ফাঁদ
কয়েক মুহূর্ত চুপ করে দাঁড়িয়ে রইল বিজয়। কী করবে বুঝতে পারছে না। বাতি নিভে যাবার পর থেকে যেন বেড়ে গেছে চারপাশের হিসহিসানি। বুঝতে পারছে না কান কি দৃষ্টিশক্তির অক্ষমতা ঢাকার জন্য বেশি সক্রিয় হয়ে উঠল নাকি সাপেরাই সংখ্যায় বেড়ে গেল। কিন্তু যাই হোক না কেন প্রচন্ড ভয় লাগছে। আতঙ্কের চোটে মনে হচ্ছে দিশেহারা হয়ে যাবে।
জোর করে শান্ত করল নিজেকে। কয়েক কদম এগিয়ে অন্ধকারে কান পেতে রইল।
না কিছু নেই।
আগের জায়গাতে ফিরে যাওয়ার চেষ্টা করল। তাও কাজ হল না।
আস্তে আস্তে হতাশায় পেয়ে বসছে। সিঁড়ি দেখে মনে হয়েছিল বেরোবার বুঝি একটা সুযোগ পাওয়া গেল।
ভেতরের ভয় আর আতঙ্ককে চাপা দিয়ে ঠিক করল মনোযোগ দিয়ে সাপেদের আওয়াজ অনুসরণ করতে হবে। ওরা যেদিকে যাচ্ছে সে-ও কি পারবে?
.
বড় ভাই
“মিসাইল ওয়ার্নিং!” চিৎকার করে জানাল পাইলট, “ইনকামিং! ইসি এম ছুঁড়েছে।”
“পিনাকলস্!” তীক্ষ্ণ কণ্ঠে চেঁচিয়ে উঠল ভ্যান ক্লক, “পিনাকলস্ ব্যবহার করো। আর তারপর এটাকে এখান থেকে বিদায় করো।” বুঝতে পারল কী ঘটেছে। কাজাক এয়ারফোর্স নিশ্চয় তাদের হেলিকপ্টারকে মনিটর করছে। এতটা দ্রুত প্রতিক্রিয়া হবে বলে ভাবেনি। তার মানে একেবারে ঠিক সময়ে কুকের আক্রমণের মনোবাঞ্ছা টের পেয়েছে। নতুবা এত দ্রুত ফাইটার প্লেন পাঠাবার পেছনে আর কোনো কারণ নেই।
“মিগ-টুয়েন্টিনাইন!” দ্রুত গতিতে ধেয়ে আসা এয়ার-টু-এয়ার হিট সিকিং মিসাইলকে ধোঁকা দেবার জন্য হেলিকপ্টার নিয়ে তিন ভাতার গভীরে ডাইভ দিয়ে সতর্ক করে দিল পাইলট। অগাস্তাতে আগে থেকেই মিসাইলের আক্রমণ টের পাবার ব্যবস্থা থাকায় সাবধান হয়ে গেল পাইলট। তবে চপারের মধ্যে কাউন্টার মেজার ডিসপেন্সিং সিস্টেমও আছে। যার মাধ্যমে ইলেকট্রনিক কাউন্টার মেজার ব্যবহার করে মিসাইল ছোঁড়া যায়।
তিন ভ্রাতার উপরে দাউ দাউ করে আগুন জ্বলে উঠতেই বুঝতে পারল যে তার পাইলট কোনো সুযোগ নিতে চায়নি। এর পাশাপাশি বিশেষ ক্ষমতা সম্পন্ন ফ্লোয়ার ডিকয় সক্রিয় করে দিল। যা বাতাসের সংস্পর্শে এসে এমন
এক ইনফ্রারেড রশ্মি উৎপন্ন করে যেন মিসাইল তার সগৃহে ফিরে যায়।
তিন ভ্রাতার ছায়ায় থেকে খানিকটা নিচে নেমে এলো হেলিকপ্টার। তারপর পূর্ণ বেগে পূর্ব দিকে ছুটল। এখান থেকে উজবেকিস্তানের সীমান্ত তেমন দূরে নয়। আর কাজাক জেট নিশ্চয় সীমান্তে কোনো ধরনের উত্তেজনা চাইবে না।
তার মানে মিশনের সফলতা আর কেউ ঠেকিয়ে রাখতে পারবে না।
.
স্বর্গের সিঁড়ি
উপুড় হয়ে চোখ দুটোকে বন্ধ করে একমনে কেবল সাপেদের আওয়াজ শোনার চেষ্টা করছে বিজয়। এমনকি নিশ্বাসও বলতে গেলে বন্ধ করে রেখেছে; যেন তাতেও টাকা না পড়ে বাকি শব্দ।
একেবারে পাশ দিয়ে একের পর এক সাপ পার হয়ে যাচ্ছে। কোনো কোনোটা তো পা পর্যন্ত ছুঁয়ে যাচ্ছে। শ্রবণ আর স্পর্শ ইন্দ্রিয় সজাগ করে বিজয় তাদের গন্তব্য নির্ণয় করতে চাইল। কয়েক মিনিট পার হবার পরে ঠিক করল সামনে এগোবে। প্রথমে এক পা মেঝেতে রেখে তারপর আরেকটা পা ফেলল। যেন আগের বারের মত হুমড়ি খেতে না হয়। মাথায় এলো আরেকটা চিন্তা। সিঁড়িটা কোথায় গেছে? মাথা ঝাঁকিয়ে বাদ দিল এসব ভাবনা। আগেই ভাবা উচিত ছিল। উপরের দিকে তাকাল। অনেক উপরে, অন্ধকার ভেদ করে চোখে পড়ছে উজ্জ্বল আলোর একটা বিন্দু। বাইরের দুনিয়ায় যাবার মুখ।