নতুন Higher Criticism, আধুনিক বৈজ্ঞানিক নিয়মসংক্রান্ত বিজ্ঞানের পদ্ধতি স্বয়ং বাইবেলের উপর আরোপ করে দেখিয়েছে যে অক্ষরে অক্ষরে বাইবেল পাঠ করা একটা অসম্ভব ব্যাপার। এর কিছু কিছু দাবী প্রত্যক্ষ প্রমাণজনিত কারণে অসত্য। Pentateuch মোটেই মূসা (আঃ) রচনা করেন নাই, অনেক পরে একাধিক লেখকের দ্বারা এটা লিখিত; স্তুতিগানগুলো কিং ডেভিডের রচনা না; অলৌকিক গল্পগুলোর বেশির ভাগই সাহিত্যের আলঙ্কারিক প্রয়োগ। বাইবেলীয় ভাষ্যগুলো ‘পুরাণ’ এবং প্রচলিত বাচনভঙ্গিতে রচিত যার মানে সেগুলো সত্য না। প্রটেষ্ট্যান্ট মৌলবাদীরা Higher Criticism-কে এখনও জুজুর মতো ভয় করে, তারা দাবী করে যে বাইবেলের প্রতিটা অক্ষর সাহিত্যের দৃষ্টিতে, বৈজ্ঞানিক দৃষ্টিকোণ থেকে আর ঐতিহাসিকভাবে সত্য- সমর্থনের অযোগ্য একটা অবস্থান যা ব্যপনয়ন / অপহ্নব আর রক্ষণাত্মক তর্কের সূচনা করে।
উনিশ শতকের শেষ নাগাদ, লোগোস আর মিথোসের মাঝে বিচ্ছেদ সম্পূর্ণ হয়। টমাস এইচ. হাক্সলির (১৮২৫-৯৫) মতো ধর্মযোদ্ধারা বিশ্বাস করতেন এটা তাদেরই দায়িত্ব। পুরাণ আর যুক্তিবাদী বিজ্ঞানের মধ্যে থেকে একটা বেছে নিতে হবে এবং এতে কোনো আপোস চলবে না। যুক্তিই কেবল সত্যি আর ধর্মীয় পুরাণ সত্যরহিত। কিন্তু সত্যের মানে এখন ‘প্রদর্শিত আর প্রদর্শনযোগ্য’[১০৫] এর মধ্যে সীমাবদ্ধ হয়ে পড়েছে, ধর্মকে পাশে রেখে, যা সঙ্গীত আর চিত্রকলা দ্বারা কথিত সত্যকে বর্জন করবে। পুরাণকে যৌক্তিক ভেবে নিয়ে, আধুনিক বিজ্ঞানী আর দার্শনিকের দল একে অবিশ্বাস্য করে তুলেছেন। ১৮৮২ সালে, ফ্রেডারিক নিশে (১৮৪৪-১৯০০) ঘোষণা করেন যে ঈশ্বর মৃত। এক দিক দিয়ে দেখতে গেলে তার কথাই ঠিক। পুরাণ, কৃত্যানুষ্ঠান, প্রার্থনার প্রথা, নৈতিক জীবনযাপন ব্যতীত, দিব্যচেতনা মারা যাবে। “ঈশ্বর’কে পুরোপুরি নিদর্শনমূলক সত্যে পরিণত করে, যা কেবল সমালোচনামূলক বুদ্ধিবৃত্তি দ্বারা বোঝা যায়, আধুনিক নারী ও পুরুষ তাদের জন্য একে হত্যা করেছে। নিটশের রূপক কাহিনী The Gay Science-এর পাগল লোকটা বিশ্বাস করে যে ঈশ্বরের মৃত্যুতে মানবতা তার মূল থেকে বিচ্যুত হয়েছে। ‘উপর বা নিচ বলে কিছু কি এখনও আছে?’ সে জানতে চায়। “অনন্ত অসারতার মধ্যে দিয়ে আমরা কি পথভ্রষ্ট হইনি?”
পৌরাণিক চিন্তা আর আচরণ মানুষকে অসারতা আর বিলুপ্তির সম্ভাবনা মোকাবেলা করতে সাহায্য করতো এবং এর মধ্যে দিয়ে একটা পর্যায় পর্যন্ত গ্রহণযোগ্যতা তৈরি হতো। এই ধারাটা ছাড়া অনেকের পক্ষেই হতাশার থাবা এড়ানো অসম্ভব ছিল। বিংশ শতাব্দী আমাদের একের পর এক নাস্তিবাদী স্মারক উপহার দিয়েছে এবং আধুনিকতার অনেক অসংযত আশা মিথ্যা হিসাব প্রকাশ পেয়েছে। ১৯১২ সালে টাইটানিকের সলিল সমাধি হওয়াটা প্রযুক্তির নশ্বরতা আমাদের সামনে তুলে ধরে, প্রথম বিশ্বযুদ্ধের সময় দেখা যায় যে, আমাদের বন্ধু, বিজ্ঞানকে, আয়ুধের ধারণ ক্ষমতা বৃদ্ধিতে নিয়োগ করা সম্ভব, অসউইচ, গুলাগ আর বসনিয়ায় আমরা দেখি ঐশ্বরিকতার সব বোধ নষ্ট হলে কি ঘটতে পারে। আমরা জেনেছি যে যৌক্তিক শিক্ষা মানবতাকে বর্বরতা থেকে মুক্তি দেবে না, এবং বিখ্যাত বিশ্ববিদ্যালয়ের আশেপাশে কনসেনট্রেশন ক্যাম্পের অস্তিত্ব নাকচ করা যাবে না। হিরোশিমা নাগাসাকির উপরে প্রথম আণবিক বোমার বিস্ফোরণ আধুনিক সংস্কৃতির মূলে আত্মনাশী নাস্তিবাদী জীবাণু উন্মোচিত করেছে; ২০০১ এর ১১ সেপ্টেম্বর ওয়ার্ল্ড ট্রেড সেন্টারে হামলা দেখিয়েছে যে আধুনিকতার সুবিধাসমূহ– প্রযুক্তি, অনায়াস ভ্রমণ আর বিশ্বব্যাপী যোগাযোগ ব্যবস্থা–আতঙ্কের অনুষঙ্গে পরিণত হতে পারে।
লোগোস অনেকভাবে আমাদের জীবন পরিবর্তিত করে তাকে উন্নত করেছে, কিন্তু এটা কোনো নিরঙ্কুশ অর্জন না। আমাদের পৌরাণিকতারহিত পৃথিবী আমাদের অনেকের জন্য আরামপ্রদ, আমরা যারা প্রথম বিশ্বে বাস করার মতো ভাগ্যবান কিন্তু বেকন আর লক যে পার্থিব স্বর্গের কল্পনা করেছিলেন সেটা আর যাই হোক এটা না। আমরা বিংশ শতাব্দীর নানা অশুভ আগমন বার্তা যখন বিবেচনা করি, তখন দেখি যে আধুনিক দুশ্চিন্তা কেবল আত্মপ্রশ্রয়ী খেপাটে স্বভাবের মামুলি ফলাফল না। নজিরবিহীন কিছু একটার প্রথমবারের মতো আমরা মুখোমুখি হয়েছি। অন্যান্য সমাজে মৃত্যুকে অস্তিত্বের একটা ধরন থেকে অন্য একটা ধরনে রূপান্তর হিসাবে দেখা হয়। পরকাল সম্বন্ধে কোনো ধরনের অবিমিশ্র, স্থূল ধারণা তারা লালন করে না, কিন্তু পরিকল্পিত কৃত্য আর পুরাণ মানুষকে অবর্ণনীয়ের মুখোমুখি হতে সাহায্য করে। অন্য কোনো সংস্কৃতিতে কেউ অতিক্রমণের বা দীক্ষাদানের মাঝপথে আতঙ্কের শেষ না দেখে থামবে না। কিন্তু টেকসই পুরাণের অনুপস্থিতিতে আমরা ঠিক সেটাই করছি। পুরাণের বর্তমান বর্জনের মাঝে একটা মর্মস্পর্শী ও বীরোচিত সন্ন্যাস রয়েছে। কিন্তু একেবারে যৌক্তিক, রৈখিক আর ঐতিহাসিক চিন্তার ধরন আমাদের অনেককেই উপশম আর মাধ্যমের সাহায্য থেকে বঞ্চিত করছে যা নারী পুরুষ নির্বিশেষে সবাইকে তাদের মানবতার পূর্ণ সম্পদের উপর নির্ভর করে অগ্রহণযোগ্যতার সাথে বাস করতে সাহায্য করে।