ঐতিহাসিক ধর্মের এই পৌরাণিক মাত্রার কারণে, ইহুদি, খ্রিস্টান আর মুসলমানেরা তাদের অন্তজ্ঞান ব্যাখ্যা করতে বা কোনো সংকটের সমাধান খুঁজে পেতে আজও পুরাণের দ্বারস্থ হয়। তাদের সব মরমীবাদীরাই পুরাণের স্মরণাপন্ন হয়েছেন। মরমীবাদ পুরাণ এবং রহস্যময়তা সবই গ্রীক শব্দ Musteion-এর সাথে সম্পর্কিত : ‘মুখ বা চোখ বন্ধ করে’। সবই সেইসব অভিজ্ঞতার প্রতি আমাদের মনোযোগ আকর্ষিত করে যা অস্পষ্ট আর অবর্ণনীয়, কারণ তারা বাক্যালাপের অতীত এবং বাইরের জগতের চেয়ে অন্তর্জগতের সাথে বেশি সম্পর্কযুক্ত। অন্তরাত্মার গভীরে মরমীবাদী ঋষিরা অবগাহন করেন মনঃসংযোগের বিধিবদ্ধ নিয়ম পালন করে যা সব ধর্মীয় মতবাদেই বিকশিত হয়েছে এবং বীরের পৌরাণিক অভিযানের একটা ভাষ্যে পরিণত হয়েছে। পৌরাণিকতা যেহেতু এই গোপন, গুহ্য প্রেক্ষাপট সম্পর্কে অনুসন্ধান করে মরমীবাদী ঋষিরা তাই স্বাভাবিক কারণে নিজেদের অভিজ্ঞতাকে পৌরাণিক আঙ্গিকে ব্যাখ্যা করেন যা প্ৰথম দর্শনে মনে হবে তাদের সনাতন প্রথার অনুমোদিত ধারার বৈরী। এটা কাবালাহ্, ইহুদিদের মরমী সাধনার ধারায় বিশেষভাবে স্পষ্ট। আমরা দেখেছি বাইবেলীয় লেখকরা ব্যাবিলনীয় আর সিরিয়ান পুরাণের প্রতি বৈরী মনোভাব পোষণ করতেন। কিন্তু কাবালীয়রা ঐশ্বরিক বিপ্লবের এমন একটা পদ্ধতির কল্পনা করতো যা এনুমা এলিশে বর্ণিত দেবতাদের উৎপত্তির ক্রমিকতার সাথে সঙ্গতিপূর্ণ। দুর্বোধ এবং অজ্ঞাত স্বৰ্গীয় প্রকৃতি (godhead) থেকে, মরমীবাদীরা যাকে বলতেন এন ‘সফ’ (যার কোনো শেষ নেই), দশ সেফ্রিয়টের উৎপত্তি হয়েছে দশটা প্রবাহ যার দ্বারা এন ‘সফ’-এর প্রক্রিয়া বোঝানো হয়েছে, নিজের নিঃসঙ্গ একাকিত্ব থেকে অবতরণ করে মানুষের কাছে নিজেকে প্রকাশ করেছে।[৯৯] প্রতিটা সেফিরাহ ক্রমশ প্রকাশিত এই প্রক্রিয়ার একেকটা মঞ্চ এবং প্রত্যেকের নিজের প্রতীকী নাম রয়েছে। প্রত্যেকে স্বর্গীয় প্রকৃতির রহস্য সীমিত মানব মনে বেশি করে প্রবেশে সাহায্য করে। প্রতিটাই ঈশ্বরের শব্দ এবং একই সাথে অনুষঙ্গ যার দ্বারা ঈশ্বর পৃথিবী সৃষ্টি করেছে। শেষ সেফিরাকে বলা হয় সেকিনাহ্ (shekhinah), পৃথিবীতে ঈশ্বরের দিব্য উপস্থিতি। সেকিনাকে প্রায়শই একজন নারী হিসাবে কল্পনা করা হয়, ঈশ্বরের মানবী প্রকৃতি। কোনো কোনো কাবালীয়রা ঐশ্বরিকতার মানব এবং মানবী অনুষঙ্গের মাঝে যৌন মিলন কল্পনা করে, সম্পূর্ণতা আর পুনরায় অঙ্গীভূতকরণ। কাবালাহ্র কিছু কিছু তরিকায় সেকিনাহ্ পৃথিবীতে একা একা ঘুরে বেড়ায়, বধূ বেশে যে হারিয়ে গেছে এবং স্বর্গীয় প্রকৃতি থেকে বিচ্ছিন্ন হয়েছে, দিব্য রাজ্য থেকে নির্বাসিত এবং নিজের উৎসে ফিরতে আকুল। সুমায়ী আইন গভীরভাবে পর্যবেক্ষণ করে, কাবালীয়রা সেকিনাহ্ নির্বাসন শেষ করতে এবং ঈশ্বরের পৃথিবী আবার স্থাপন করতে পারে। বাইবেলীয় সময়ে, আনাট নামে এক ঈশ্বরের স্থানীয় প্রার্থনাকারী দলকে ইহুদিরা ঘৃণা করতো, সে পৃথিবীময় নিজের দিব্য সঙ্গীর খোঁজে ঘুরে বেড়িয়েছে এবং শেষে বাআলের সাথে নিজের যৌন পুনর্মিলন উদযাপন করেছে। কিন্তু ইহুদিরা যখন দিব্য সম্পর্কে নিজেদের মরমী উপলব্ধি প্রকাশ করার একটা পথ খুঁজতে চেষ্টা করে, তখন এই গালাগালির বদলে, পৌত্তলিক পুরাণ ইহুদিদের নিরব সম্মতি লাভ করে।
কাবালাহ্র সম্ভবত কোনো বাইবেলীয় ন্যায্যতা নেই, কিন্তু আধুনিক যুগের আগে সাধারণত এটা ধরে নেয়া হতো যে পুরাণের কোনো “সর্বজন স্বীকৃত” রূপ নেই। নতুন পুরাণ নির্মাণ ব্যাপারে কারো উপরে কোনো বিধিনিষেধ ছিল না এবং যে কেউ চাইলেই পুরাতন পৌরাণিক ভাষ্যের মৌলিক ব্যাখ্যা করতে পারত। কাবালীয়রা আক্ষরিক অর্থে বাইবেল পাঠ করতো না, তারা একটা ব্যাখ্যা তৈরি করেছিল যা বাইবেলীয় ভাষ্যের প্রতিটা শব্দকে কোনো না কোনো সেফ্রয়িটে অর্পণ করতো। যেমন সৃষ্টি পুস্তকের প্রথম অধ্যায়ের প্রতিটা শ্লোক একেকটা ঘটনার বর্ণনা করে যার প্রতিটার প্রতি ঘটনা ঈশ্বরের গোপন জীবনে আছে। কাবালীয়রা এমনকি একটা নতুন সৃষ্টি পুরাণও তৈরি করে যার সাথে জেনেসিসের কোনো ধরনের মিল নেই। ১৪৯২ সালে ক্যাথলিক সম্রাট ফার্দিনাণ্ড আর রানী ইসাবেলা স্পেন থেকে ইহুদিদের বিতাড়িত করার পরে, অনেকেই জেনেসিস I এর শান্ত শৃঙ্খলাবদ্ধ সৃষ্টি পুরাণের সাথে নিজেদের সম্পৃক্ত করতে পারতো না, তাই কাবালীয় ইসহাক লুরিয়া (১৫৩৪-৭২) একটা সম্পূর্ণ আলাদা সৃষ্টির গল্প ফাঁদেন, মিথ্যা সূত্রপাত, দিব্য ভ্রান্তি, আকস্মিক বৃদ্ধি, প্রচণ্ড বিপর্যয় এবং বিপর্যয়ের কারণে ক্রাটযুক্ত সৃষ্টির জন্ম হয় যেখানে সবকিছুই ভুল স্থানে রয়েছে। বাইবেলীয় গল্প থেকে ব্যত্যয়ী বিচ্যুতি ইহুদিদের ভিতরে কোনো ঘাতপ্রতিঘাত সৃষ্টির বদলে, লুরিয়ানিক কাবালাহ্ একটা ইহুদি গণআন্দোলনে পরিণত হয়। ষোড়শ শতকে ইহুদিদের মর্মান্তিক অভিজ্ঞতার কথা এতে ফুটে উঠেছে কিন্তু পুরাণটা কেবল একটা ভাষ্য না। লুরিয়া এর জন্য বিশেষ আচার অনুষ্ঠান, ধ্যানের পদ্ধতি আর নৈতিক শৃঙ্খলার পরিকল্পনা করেছেন যা পুরাণটির মাঝে প্রাণের সঞ্চার করে এবং সারা পৃথিবীর ইহুদিদের জীবনে এটা একটা আধ্যাত্মিক বাস্তবতায় পরিণত হয়।