লাওজি আর বুদ্ধদেব দুজনেই পুরাতন পুরাণগুলো লোকদের নতুন ধারণা বোঝাবার কাজে ব্যবহার করতে চেয়েছিলেন। পশু উৎসর্গ করা কেবল অর্থহীনই না নিষ্ঠুর বলেও বিশ্বাস করতেন এবং বুদ্ধ সনাতন বৈদিক আচার অনুষ্ঠানের নির্মম সমালোচনা করেছেন যদিও সনাতন পুরাণের ব্যাপারে তিনি সহনশীল ছিলেন। দেবতাদের উপযোগিতা অবশিষ্ট আছে বলে তিনি মোটেই বিশ্বাস করতেন না এবং নিরবে তাদের একপাশে সরিয়ে দিয়েছিলেন এবং তাদের বিরুদ্ধে কোনো আদর্শগত সংগ্রাম পরিচালনা করার প্রয়োজন বোধ করেননি। তিনি দেবতাদের একটা নতুন প্রতীকী গুরুত্ব দান করেছেন। তার জীবনের কিছু কিছু গল্পে, দেবতাদের রাজা ব্রহ্মা বা মৃত্যুর দেবতা মরা, তার নিজের মনের অবস্থার প্রতিফলন ঘটিয়েছে বলে মনে হয় বা মানসিক শক্তির টানাপোড়েনে ব্যক্তিরূপ আরোপিত হয়েছে।[৮২]
কিন্তু ইসরাইলের পয়গম্বরেরা এমন নমনীয় মনোভাব দেখাননি। যুগান্তকারী সংস্কারের সাথে অসঙ্গতিপূর্ণ যা কিছুই তারা দেখেছেন পুরান পুরাণে তাকে নাকচ করতে তাদের সর্বশক্তি নিয়োগ করেছেন। কয়েক শতাব্দী যাবৎ ইসরালাইটসরা, নিকট প্রাচ্যের আচার অনুষ্ঠান আর পৌরাণিক জীবনযাপন করছিল আশেরাহ্ রাআল, এবং ইশতার সাথে সাথে নিজস্ব দেবতা ইয়াহ্ওয়েহ্-এর অর্চনা করে। কিন্তু এখন ইয়াওয়েকে দূরাগত স্মৃতি মনে হতে থাকলে, হোসা, জেরেমিয়াহ্ এবং এজিকিয়েলের ন্যায় পয়গম্বরের দল, দেবতাদের লক্ষণযুক্ত পুরাতন পুরাণসমূহের মৌলিক সংশোধনের কাজ হাতে নেন। পুরাতন কাহিনীগুলোকে মূল্যহীন মনে হওয়ায় তারা এসবকে মিথ্যে বলে ঘোষণা করেন। তাদের দেবতা ইয়াওয়ে যার মহান ব্যাপ্তির কাছে এসব পুরাতন গল্পের অসারত্ব প্রমাণিত হয়েছে বিধায় সেই একমাত্র দেবতা। পুরাতন ধর্মের বিরুদ্ধে তারা বিপ্রতিপত্তিক অবস্থান গ্রহণ করেন। ইয়াহ্ওয়েহ্কে, দিব্য সঙ্ঘের নেতৃত্ব গ্রহণের জন্য মরিয়া এমনভাবে চিত্রিত করা হয়, কারণ দেখানো হয় তার সমকক্ষ অন্য দেবতারা করুণা এবং ন্যায়বিচারের অ্যাক্সিয়াল গুণাবলী অবহেলা করেছে এবং সে কারণে তাদের মরণশীল মানুষের ন্যায় মৃত্যু হবে।[৮৩] স্থানীয় পৌত্তলিক দলগুলোকে জওয়া, ডেভিড এবং রাজা জোশিয়ার ন্যায় সাংস্কৃতিক বীরের দল প্রবলভাবে দমন করেন,[৮৪] এবং বাআল আর মারডুকের মূর্তিগুলোকে মানুষের তৈরি বলে উপহাস করা হয় যা ছিল পুরো সোনা আর রূপা নির্মিত এবং কয়েক ঘণ্টার ভিতরে শ্রমিকের দল তাদের গুঁড়িয়ে দেয়।[৮৫]
এটা অবশ্য মধ্যপ্রাচ্যের পৌত্তলিকতার একটা সরল উপস্থাপনা। কিন্তু ধর্মের ইতিহাস থেকে আমরা দেখি যে, একবার যদি কোনো পুরাণ মানুষের মাঝে ব্যাপ্তির অনুভূতি আরোপ করতে ব্যর্থ হয়, সেটা তখন ঘৃণিত বলে বিবেচিত হতে থাকে। একেশ্বরবাদ, কেবল একমাত্র ঈশ্বরে বিশ্বাস, এর শুরুটা ছিল সংগ্রামমুখর। ইসরালাইটসদের অনেকে এখনও পুরাতন পুরাণসমূহের প্রতি টান অনুভব করেন এবং এটা কাটাতে তাদের রীতিমতো যুদ্ধ করতে হয় নিজের সাথে। তারা মনে করে প্রতিবেশীদের পৌরাণিক জগৎ থেকে তাদের জোর করে বিচ্ছিন্ন করা হয়েছে এবং তারা বহিরাগতে পরিণত হয়েছেন। জেরেমিয়া দুর্দশার সময় আমরা এর রেশ বেশ অনুভব করতে পারি, যিনি ঈশ্বরকে ব্যথার মতো অনুভব করেছিল যা তার পুরা দেহকে কাঁপিয়ে ছেড়েছে, বা এজিকিয়েলের অদ্ভুত পেশা, যার জীবন ধারাবাহিকতা হীনতার মৌলিক স্মারকে পরিণত হয়েছে। ঈশ্বর এজিকিয়েলকে আদেশ করেছিলেন পশুবিষ্ঠা ভক্ষণ করতে; মৃত স্ত্রীর জন্য শোক প্রকাশ করতে তাকে বাধা দেয়া হয়েছিল। ভয়ংকর অনিয়ন্ত্রিত কাঁপুনি সে অতিক্রম করেছে। যুগান্তকারী পয়গম্বরের দল অনুভব করেছিলেন যে, তারা মানুষকে একটা অজানা জগতে নিয়ে চলেছে যেখানে কোনো কিছুই নিশ্চিত না এবং স্বাভাবিক প্রতিক্রিয়ার কোনো অবকাশ নেই।
কিন্তু একটা সময় পরে এই দুর্দশা প্রশান্ত আত্মবিশ্বাসে পরিণত হয় এবং আমরা এখন যাকে ইহুদি ধর্ম বলি সেটার জন্ম হয়। বিড়ম্বনা হলো এক বিশাল দুর্যোগের পরেই কেবল এই নতুন আত্ম-প্রত্যয়ের জন্ম হয়। ৫৮৬ সালে ব্যাবিলনের রাজা নেবুকাডনেজার জেরুজালেম শহর দখল করেন, এবং ইয়াওয়ের মন্দির গুঁড়িয়ে দেন, অধিকাংশ ইসরালাইটসকে ব্যাবিলোনিয়ায় নির্বাসনে পাঠানো হয়, নির্বাসিতেরা সেখানে বিশালাকার মিনারযুক্ত মন্দিরের মুখোমুখি হয় এবং শহরের সমৃদ্ধ বিধিবদ্ধ জীবন প্রথমবারের মতো দেখে আর দেখে ইসাগলিয়ার বিশাল মন্দির। কিন্তু পৌত্তলিকতা এখানেই তার আকর্ষণ হারায়। জেনেসিসের প্রথম অধ্যায়ে আমরা এই নতুন সত্তাকে দেখি, সম্ভবত তথাকথিত ঋষিদের কোনো সদস্যের লেখা, যা পুরাতন যুধ্যমান সৃষ্টি এবং বিবর্তন তত্ত্বের বিপরীতে একটা শান্ত, সমাহিত বিসংবাদ। সুস্থির শ্রেণীবদ্ধ গদ্যে, এই নতুন সৃষ্টি পুরাণ জিজ্ঞাসু দৃষ্টিতে ব্যাবিলোনীয় সৃষ্টি তত্ত্বকে প্রশ্নের মুখে এনে দাঁড় করায়। মারডুকের ন্যায়, ইসরাইলের ঈশ্বরকে পৃথিবী সৃষ্টির জন্য বেপরোয়াভাবে লড়াই করতে হয়নি; অনায়াসে সবকিছু সৃষ্টি করেছেন কেবল একটা আদেশের মাধ্যমে। চন্দ্র, সূর্য, গ্রহ, তারা কেউই আর ইয়াওয়ে প্রতি বিরূপ মনোভাবপূর্ণ দেবতা নন। তারা তার অধীন এবং কেবলমাত্র ব্যবহারিক কারণে তাদের সৃষ্টি করা হয়েছে। তিয়ামাত কোনো সমুদ্রদানব না কিন্তু ঈশ্বরের সৃষ্টি এবং তার আজ্ঞাধীন। মারডুকের তুলনায় ইয়াহ্ওয়েহ্র সৃষ্টি এতটাই মহিমান্বিত যে তাকে আর দ্বিতীয়বার কিছু করতে হয়নি বা কোনো পুনরাবৃত্তির প্রয়োজন পড়েনি। বিশৃঙ্খলার বিরুদ্ধে ব্যাবিলনের দেবতারা যখন যুদ্ধে রত এবং নবান্নের আচার অনুষ্ঠান জরুরী হয়ে পড়েছে তাদের শক্তি উজ্জীবিত করতে সেখানে ইয়াহ্ওয়েহ্ তার কাজ শেষ করে সপ্তম দিনে বিশ্রাম নিতে পারেন।