১. বেলায়েত-ই ফাকিহ্’র তত্ত্ব আগে জুরিস্টগণ আলোচনা করেছেন, কিন্তু স্বল্প পরিচিত এবং বেশীরভাগ সময়ই বিদ্রোহী এমনকি ধর্ম বিরোধী বলেও বিবেচিত হয়েছে। খোমিনি একে তাঁর রাজনৈতিক চিন্তার মূল বিষয়ে পরিণত করেন এবং পরে তা ইরানে তাঁর শাসনের ভিত্তিতে পরিণত হয়।
২. কুরান ২:১৭৮; ৮:৬৮; 24:34; 47:5।
৩. কুরান ৪৮:১।
৪. জয়েস এম. ডেভিস, বিটুইন জিহাদ অ্যান্ড সালাম : প্রোফাইলস ইন ইসলাম (নিউ ইয়র্ক, ১৯৯৭) ২৩১।
৬. পরিশিষ্ট
৬. পরিশিষ্ট
উপসংহার
সেপ্টেম্বর ১১, ২০০১ উনিশজন মুসলিম চরমপন্থী চারটি যাত্রীবাহী জেট বিমান হাইজ্যাক করে নিউ ইয়র্ক শহরের ওঅর্ল্ড টেড সেন্টারে দুটি এবং ওয়াশিংটনস্থ পেন্টাগনে একটি বিমান চালিয়ে দেয়, এতে তিন হাজারেরও বেশী মানুষ প্রাণ হারায়। চতুর্থ বিমানটি বিধ্বস্ত হয় পেনসিলভেনিয়ায়। ছিনতাইকারীরা ছিল ওসামা বিন লাদেনের অনুসারী, যাঁর জঙ্গী ইসলাম সায়ীদ কুত্ত্বের দ্বারা গভীরভাবে প্রভাবিত
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের বিরুদ্ধে হামলার এই ভয়াবহতা আধুনিকতার বিরুদ্ধে মৌলবাদীদের যুদ্ধকে নতুন পর্যায়ে নিয়ে গেছে। এ বইটি যখন প্রথম ২০০০ সালে প্রকাশিত হয়েছিল, আমি ভবিষ্যৎবাণী করেছিলাম যে মুসলিমরা যদি তাদের ধর্মকে আক্রান্ত বলে ভাবতে থাকে তাহলে মৌলবাদী সহিংসতা আরও চরম আকার নিয়ে নতুন রূপ নিতে পারে। দুর্দশাগ্রস্ত বিমানে ওঠার আগে ছিনতাইকারীদের কেউ কেউ ঘনঘন নাইটক্লাবে যাতায়াত করত, অ্যালকোহলে আসক্ত ছিল তারা, যা ইসলামে নিষিদ্ধ। তারা সাধারণ মুসলিম মৌলবাদীদের একেবারেই বিপরীত, যারা কঠোরভাবে অর্থোডক্স জীবন যাপন করে, এবং নাইট ক্লাবকে প্রকৃত বিশ্বাসের চিরন্তন শত্রু জাহিলিয়া প্রতীক বলে মনে করে।
বিপুল সংখ্যাগরিষ্ঠ মুসলিম সেপ্টেম্বরের এই প্রলয়কাণ্ডে আতঙ্কে শিউরে উঠেছে এবং যুক্তি দেখিয়েছে যে এই ধরনের নৃশংসতা ইসলামের অধিকাংশ পবিত্র ধারণার পরিপন্থী। কুরান সব রকম আক্রমণাত্মক যুদ্ধবিগ্রহের নিন্দা করে এবং শিক্ষা দেয় যে আত্মরক্ষার লড়াইই একমাত্র ন্যায় যুদ্ধ। কিন্তু ওসামা বিন লাদেন এবং তার অনুসারীরা দাবী করেছে যে ইসলাম আক্রান্ত। তিনি সৌদী আরবের পবিত্র ভূমিতে আমেরিকান বাহিনীর উপস্থিতি, আমেরিকান ও ব্রিটিশ ফাইটার প্লেন থেকে ইরাকে অবিরাম বোমা বর্ষণ: ইরাকে আমেরিকার নেতৃত্বে আরোপিত অবরোধ, যার ফলে হাজার হাজার বেসামরিক নারী এবং শিশু প্রাণ হারিয়েছে– ইসরায়েলের হাতে শত শত প্যালেস্টাইনির মৃত্যু, মধ্যপ্রাচ্যে আমেরিকার প্রধান মিত্র এবং সৌদী আরবের রাজ পরিবারের মত যেসব সরকারকে বিন লাদেন দুর্নীতিবাজ ও নিপীড়ক বলে মনে করেন যেসব সরকারের পক্ষে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সমর্থন; ইত্যাদিকে দায়ী করেছেন। অবশ্য আমেরিকান পররাষ্ট্রনীতির আলোকে এগুলোর কোনওটাই এধরনের মারাত্মক আক্রমণকে যুক্তিযুক্ত প্রতিপন্ন করতে পারে না, কুরান বা শরিয়া যার কোনও বিধান নেই ৷ ইসলামী আইন কোনও দেশে মুসলিমরা স্বাধীনভাবে ধর্ম পালন করার অনুমোদন পেলে সেখানে যুদ্ধ ঘোষণা নিষিদ্ধ করেছে এবং জোরালভাবে নিরীহ বেসামরিক লোকের হত্যাকাণ্ডও নিষিদ্ধ করেছে। সব মৌলবাদীদের দর্শনের পেছনে ক্রিয়াশীল আতঙ্ক ও ক্রোধ সবসময়ই মৌলবাদীরা যে ট্র্যাডিশনকে রক্ষা করতে চায় তাকেই বিকৃত করতে বসে, সেপ্টেম্বর ১১-এর ঘটনার চেয়ে আর কোথাও তা এত স্পষ্ট নয়। ধর্মের এমন নিদারুণ অপব্যবহার খুব কমই দেখা গেছে।
হামলার পরপরই পশ্চিমা দেশগুলোর মুসলিমদের বিরুদ্ধে তীব্র পাল্টা ব্যবস্থা নিতে দেখা যায়। পথঘাটে আক্রান্ত হয় মুসলিমরা, ওরিয়েন্টাল চেহারার লোকদের জন্যে বিমানে আরোহন নিষিদ্ধ করা হয়, মহিলারা হিজাব পরে ঘর থেকে বেরুনোর সাহস হারিয়ে ফেলে আর “স্যান্ড নিগার”দের দেশে ফিরে যাবার আহ্বান জানিয়ে দেয়ালে দেয়ালে গ্র্যাফিটি দেখা যায়। ব্যাপকভাবে মনে করা হয়ে যে ইসলাম ধর্মে এমন কিছু আছে যা মুসলিমদের নিষ্ঠুর ও সহিংস হতে বাধ্য করে এবং মিডিয়া বেশ ঘনঘন এই ধারণাকে উৎসাহিত করে থাকে। এ ধরনের প্রবণতার বিপদ বুঝতে পেরে প্রেসিডেন্ট জর্জ ডব্লু. বুশ দ্রুত ঘোষণা দিয়েছিলেন যে ইসলাম এক মহান শান্তির ধর্ম এবং বিন লাদেন ও হাইজ্যকারদের ধর্মবিশ্বাসের সাধারণ প্রতিনিধি হিসাবে দেখা ঠিক হবে না। ওয়াশিংটন ন্যাশনাল ক্যাথেড্রালের শোকানুষ্ঠানে একজন মুসলিমকে পাশে রাখতে ভোলেননি তিনি এবং আমেরিকান মুসলিমদের প্রতি সমর্থন দেখানোর জন্যে বিভিন্ন মসজিদ সফর করেছেন। সম্পূর্ণ নতুন এবং দারুণ আশাব্যাঞ্জক ব্যাপার ছিল এটা। সালমান রুশদী সঙ্কট বা সাদ্দাম হুসেইনের বিরুদ্ধে পরিচালিত ডেজার্ট স্টর্ম অভিযানের সময় তেমন কিছু ঘটেনি। আমেরিকানরা বইয়ের দোকানে ভীড় জমাচ্ছে, ইসলাম সম্পর্কে যতটা পারছে পড়ছে, এটা দেখাও প্রীতিকর; মুসলিম ধর্মবিশ্বাসকে বোঝার প্রয়াস পাচ্ছে তারা, যদিও এই সন্ত্রাসী হামলার আতঙ্কে কুঁকড়ে গিয়েছিল।
ইসলাম সম্পর্কে ন্যায় উপলব্ধি এবং জ্ঞান আহরণ পশ্চিমা জনগণের জন্যে আর কখনও এতটা জরুরি হয়ে ওঠেনি। সেপ্টেম্বর ১১-এ পৃথিবী বদলে গেছে। এখন আমরা বুঝতে পারছি যে সুবিধাপ্রাপ্ত পশ্চিমা দেশের বাসিন্দা হিসাবে আমরা আর এটা মনে করতে পারব না যে বাকি পৃথিবীর ঘটনাপ্রবাহে আমাদের কিছু আসে যায় না। আজ গাযা, ইরাক বা আফগানিস্তানে যা ঘটছে আগামীকাল নিউ ইয়র্ক, ওয়াশিংটন বা লন্ডনে তার প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হতে পারে। অচিরেই ছোট ছোট দলগুলো ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি সৃষ্টি করার ক্ষমতার অধিকারী হয়ে উঠবে যা অতীতে কেবল শক্তিশালী জাতি রাষ্টের পক্ষে সম্ভব ছিল। এখন সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে যে লড়াইতে পা দিয়েছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র সেখানে নির্ভুল তথ্য উপাত্ত গুরুত্বপূর্ণ। ইসলামের বিকৃত রূপ নির্মাণ, একে গণতন্ত্র ও জন্মগতভাবে শুভ মূল্যবোধের প্রতিপক্ষ হিসাবে দেখা এবং মধ্যযুগীয় ক্রুসেডারদের গোঁড়া দৃষ্টিভঙ্গি গ্রহণ করা হবে বিপর্যয়কর। এটা কেবল বিশ্বে আমাদের সহযাত্রী ১.২ বিলিয়ন মুসলিমকেই ক্ষিপ্ত করে তুলবে না, বরং তা সত্যের প্রতি নিঃস্বার্থ ভালোবাসা এবং অন্যের পবিত্র অধিকারের প্রতি শ্রদ্ধাকেও লঙ্ঘন করবে যা ইসলাম ও পশ্চিমা সমাজ উভয়ই সর্বোত্তম অবস্থায় বৈশিষ্ট্যায়িত করে।