ঈশ্বর আমাদের সহায় হোন
ইসি সিগনাম,
আরমান্দ আঁ দুপ্লেসিস,
দুক দ্য রিশেলু, লুকোন, পইতু এবং প্যারিসের যাজক,
রোমের কার্ডিনাল
ফ্রান্সের প্রধানমন্ত্রী
১৬৪২ খৃস্টাব্দ
“এই মেমোয়া থেকে,” পড়া শেষ করে নিশ্চুপ হয়ে থাকা অ্যাবিসকে বললেন ক্যাথারিন, “আমরা জানতে পারি ‘আয়রন কার্ডিনাল’ মন্তগ্লেইন দেখার জন্যে খুব শীঘ্রই ভ্রমণ করার পরিকল্পনা করেছিলেন। তবে ঐ বছরের ডিসেম্বরেই তিনি মারা যান রুজিয়ে’তে বিদ্রোহ দমন পরিত্যাগ করার পর। আমরা কি এক মুহূর্তের জন্যেও সন্দেহ করতে পারি, তিনি এইসব সিক্রেট সোসাইটিগুলোর অস্তিত্ত্বের ব্যাপারে অবগত ছিলেন, কিংবা অন্য কারোর হাতে পড়ার আগেই মন্তগ্লেইন সার্ভিসটি হস্তগত করতে চেয়েছিলেন? তিনি যা কিছুই করেছেন ক্ষমতা লাভের উদ্দেশ্যেই করেছেন। তাহলে তিনি কেন পরিপক্ক হবার পর বদলে যাবেন?”
“মাই ডিয়ার ফিগচেন,” মুচকি হেসে বললেন অ্যাবিস। তবে এইসব কথা শুনে তার মনে যে প্রতিক্রিয়া হচ্ছে সেটা এই হাসিতে প্রকাশ পেলো না। “তোমার কথা মেনে নিলাম। কিন্তু এইসব লোকজন এখন মৃত। তারা তাদের জীবকালে হয়তো এটা খুঁজেছে, কিন্তু পায় নি। তুমি নিশ্চয় বলতে চাচ্ছো না মৃতলোকগুলোর ভুত নিয়ে তুমি ভয়ে আছো?”
“ভুত কিন্তু পুণরায় জেগে উঠতে পারে!” দৃঢ়ভাবে বললো ক্যাথারিন। “পনেরো বছর আগে আমেরিকার বৃটিশ কলোনিটি উচ্ছেদ করেছে এক অপশক্তি। এতে যারা জড়িত ছিলো তারা কারা? জর্জ ওয়াশিংটন, জেফারসন, বেঞ্জামিন ফ্রাঙ্কলিন নামের কিছু লোক-তারা সবাই ম্যাসন! আর এখন ফ্রান্সের রাজা জেলে বন্দী হয়ে আছেন, তার মুকুটের সাথে সাথে মুণ্ডুটাও কাটা যাবে খুব শীঘ্রই। এসবের পেছনে কারা আছে? লাফায়েত, কোদোর্সে, দাঁতোয়াঁ, দেমোলাঁ ব্রিসোয়ে, সিয়ে, আর রাজার নিজের ভায়েরা, যার মধ্যে দুইদোর্লিও আছে-তারাও সবাই ফ্রম্যাসন!”
“একটা কাকতালীয়-” অ্যাবিস পুরো কথাটা বলতে পারলেন না, মাঝখানে তাকে থামিয়ে দিলেন ক্যাথারিন।
“এটাও কি কাকতালীয় ঘটনা, বিল অব সিজার পাস করার জন্য আমি যাদেরকে নিয়োগ করতে চেয়েছিলাম তাদের মধ্যে একজনই আমার প্রস্তাবে রাজি হয়েছিলো আর সেই লোকটা ছিলো মিরাবু-সেও একজন ফ্রম্যাসন? সে যখন ঘুষটা নিয়েছিলো তখন অবশ্য জানতো না আমি তাকে সম্পদটা করায়ত্ত করতে বাধা দেবার পরিকল্পনা করেছিলাম।”
“আঁতুয়ার বিশপ ঘুষ নিতে অস্বীকৃতি জানিয়েছিলেন?” মুচকি হেসে বললেন অ্যাবিস। “তিনি কি কারণ দেখিয়েছিলেন?”
“রাজি হবার জন্য সে যে পরিমাণ টাকা চেয়েছিলো তা ছিলো অনেক বেশি,” রাগে ফুঁসতে ফুঁসতে বললেন সম্রাজ্ঞি, আসন থেকে উঠে দাঁড়ালেন তিনি। “ঐ লোকটা যা জানে তারচেয়ে অনেক বেশি জানাতে চেয়েছিলো আমাকে। তুমি কি জানো, অ্যাসেম্বলিতে তাকে কি নামে ডাকা হয়?-আঙ্কারার বেড়াল। মেনি বেড়ালের মতো সে মিউমিউ করে ঠিকই কিন্তু তার রয়েছে। শক্তিশালী থাবা। তাকে আমি বিশ্বাস করি না।”
“তুমি যে লোককে ঘুষ দিতে সক্ষম হয়েছে তাকে বিশ্বাস করেছে, কিন্তু যাকে দিতে পারো নি তাকে অবিশ্বাস করছো?” বললেন অ্যাবিস। বিষণ্ণ দৃষ্টিতে বান্ধবীর দিকে চেয়ে থেকে উঠে দাঁড়ালেন তিনি, যেনো চলে যাবেন এক্ষুণি।
“তুমি কোথায় যাচ্ছো?” জারিনা আর্তনাদ করে উঠলেন। “তুমি কি বুঝতে পারছো না আমি কেন এসব করেছি? আমি তোমার কাছে আমার সুরক্ষা চাইছি। এই পৃথিবীর সবচাইতে বিশাল সাম্রাজ্যের একমাত্র শাসক আমি। আমি আমার ক্ষমতা তোমার হাতে অর্পণ করেছি…”
“সোফিয়া, শান্তকণ্ঠে বললেন অ্যাবিস, “তোমার প্রস্তাবের জন্যে তোমাকে ধন্যবাদ, তবে তুমি এইসব লোকদের যতোটা ভয় পাচ্ছো আমি ততোটা পাচ্ছি না। তুমি যেমনটি দাবি করেছে, আমিও তাই বিশ্বাস করি, এই লোকগুলো আধ্যাত্মবাদী, হয়তো বিপ্লবীও হতে পারে। এই যে সিক্রেট সোসাইটিগুলো তুমি এতো গভীরভাবে পর্যবেক্ষণ করেছে, তাদের আসল উদ্দেশ্যটা কিন্তু তোমার দিব্যদৃষ্টিতে ধরা পড়ে নি।”
“তুমি কি বলতে চাচ্ছো?” বললেন সম্রাজ্ঞি। “তাদের কাজকারবারে এটা তো একদম পরিস্কার, তারা রাজতন্ত্রকে ধূলোয় মিশিয়ে দিতে চায়। এই পৃথিবীর নিয়ন্ত্রন করা ছাড়া আর কি চাইতে পারে তারা?”
“সম্ভবত তাদের লক্ষ্য হলো এ বিশ্বকে মুক্ত করা।” হেসে বললেন অ্যাবিস। “এ মুহূর্তে আমার কাছে খুব বেশি প্রমাণ নেই যে অন্য কিছু বলবো, তবে এ কথা বলার মতো যথেষ্ট কারণ রয়েছে : তোমার হাতের রেখায় যে নিয়তি লেখা রয়েছে সেটার দ্বারা পরিচালিত হচ্ছো তুমি-তোমার হাতে রয়েছে তিনটি রাজমুকুট। তবে আমাকেও আমার নিজের নিয়তি অনুযায়ী কাজ করতে হবে।”
অ্যাবিস তার হাতটা বান্ধবীর দিকে তুলে ধরলেন। তার হাতের তালুতে, কব্জির কাছে আয়ুরেখা এবং ভাগ্যরেখা ইংরেজি ৪ সংখ্যার মতো পেচিয়ে আছে। শীতল আর নির্বাক হয়ে তাকালেন ক্যাথারিন, তারপর সেই রেখা দুটোর উপর। আলতো করে আঙুল বুলালেন।
“তুমি আমার সুরক্ষা দিতে চাইছে,” আস্তে করে বললেন তিনি। কিন্তু তোমার চেয়ে বড় কোনো শক্তি আমার সুরক্ষা দিচ্ছে।”
“আমি জানতাম এটা!” কর্কশস্বরে বলে উঠলেন ক্যাথারিন। “তোমার এতোসব কথা বলা কারণ একটাই : আমাকে না জানিয়ে তুমি অন্য আরেকজনের সাথে আঁতাত করেছে! কে সে, যার প্রতি তুমি বিভ্রান্ত হয়ে আস্থা রেখেছো? তার নামটা আমাকে বলো! আমাকে সেটা বলতেই হবে!”