“মৃত্যু!”
সৈনিকের হাত থেকে নিজেকে ছাড়ানোর চেষ্টা করলো মিরিয়ে। টেবিলের সামনে ক্রন্দনরত ডেভিডের উদ্দেশ্যে কাঁদতে কাঁদতে চিৎকার করে বললো সে। ভ্যালেন্টাইনকে ঘাসের যে লনটা আছে সেখানে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। যে সৈনিক শক্ত করে তাকে ধরে রেখেছে তার হাত থেকে নিজেকে ছাড়িয়ে নেবার আপ্রাণ চেষ্টা করলো মিরিয়ে। ঠিক তখনই, হঠাৎ করে পাশ থেকে তাকে কিছু একটা আঘাত করলে সৈনিকসহ সে মাটিতে পড়ে গেলো। ভ্যালেন্টাইনের সাথে যে তরুণ যাজক লোকটি সিঁড়িতে হুমড়ি খেয়ে পড়েছিলো সেই লোকটা ধাক্কা মেরেছে সৈনিকটিকে। যাজক আর সৈনিকের সাথে ধস্তাধস্তি শুরু হয়ে গেলে মিরিয়ে ছুটে গেলো টেবিলের কাছে। বিচারকের নোংরা শার্ট খামচে ধরে চিৎকার করে বললো সে :
“থামতে বলুন!”
পেছন ফিরে দেখতে পেলো মোটাসোটা দু’জন লোক ভ্যালেন্টাইনকে ঘাসের উপর ফেলে কুড়াল দিয়ে শিরোচ্ছেদ করতে উদ্যত। আর এক মুহূর্তও দেরি করা যাবে না। “তাকে মুক্ত করুন!” চিৎকার করে বললো সে।
“অবশ্যই করবো,” বললো বিচারক, “তবে তোমার বোন যে কথাটা বলে নি সেটা যদি তুমি আমাকে বলো। এবার বলো মন্তগ্লেইন সার্ভিসটা কোথায় লুকিয়ে রাখা হয়েছে। তোমার বোন গ্রেফতার হবার আগে কার সাথে দেখা করে কথা বলেছে সেটা কিন্তু আমি জানি, বুঝলে…”।
“আমি যদি বলি,” ঝটপট বললো মিরিয়ে, আবারো পেছন ফিরে ভ্যালেন্টাইনের দিকে তাকালো সে, “তাহলে কি আমার বোনকে ছেড়ে দেবেন?”
“ওগুলো আমাকে পেতেই হবে!” রেগেমেগে বললো বিচারক। কঠিন-শীতল চোখে তাকালো তার দিকে। এই চোখ উন্মাদের, ভাবলো মিরিয়ে। দৃঢ়ভাবে লোকটার দিকে তাকালো সে।
“তাকে যদি ছেড়ে দেন তাহলে আমি বলবো কোথায় আছে ওগুলো।”
“বলো!” চিৎকার করে বললো বিচারক।
লোকটার মুখ থেকে বাজে গন্ধ টের পেলো মিরিয়ে, তারপরও তার দিকে ঝুঁকে এলো সে। তার পাশে থাকা ডেভিড আর্তনাদ করে উঠলেও সেদিকে ভ্রুক্ষেপ করলো না মেয়েটি। গভীর করে দম নিয়ে ভ্যালেন্টাইনকে রক্ষা করার জন্য শান্ত কণ্ঠে বললো, “আমার আঙ্কেলের স্টুডিওর পেছনে বাগানের মাটির নীচে লুকিয়ে রাখা হয়েছে ওগুলো।”
“আহা!” চিৎকার করে বললো লোকটা। অনেকটা লাফ দিয়ে উঠে দাঁড়ালো সে। তার দু’চোখে পৈশাচিকতা। “তুমি আমার সাথে মিথ্যে বলার আম্পধা দেখাবে না। যদি মিথ্যে বলো তাহলে আমি তোমাকে পৃথিবীর শেষ প্রান্তে গিয়েও খুঁজে বের করবো। ওগুলো আমার চাই-ই চাই!”
“মঁসিয়ে, আমি কসম খেয়ে বলছি,” কেঁদে কেঁদে বললো মিরিয়ে। যা বলেছি সত্যি বলেছি।”
“তাহলে তোমাকে আমি বিশ্বাস করলাম,” বিচারক তাকে বললো। হাত তুলে ভ্যালেন্টাইনের দুই জল্লাদকে থামতে নির্দেশ দিলো সে। বিচারকের জঘন্য মুখটার দিকে তাকালো মিরিয়ে। এই মুখটা সে কখনও ভুলবে না। যতো দিন বেঁচে থাকবে এই নরপিশাচটার কথা তার মনে থাকবে।
“আপনি কে?” লোকটাকে বললো মিরিয়ে।
“আমি জনগণের সুতীব্র ক্রোধ,” ফিসফিসিয়ে বলো সে। “অভিজাতরা পতিত হবে, যাজকেরা নিপাত যাবে, নিপাত যাবে বুর্জোয়ারা। তারা আমাদের পায়ের নীচে লুটিয়ে পড়বে। তোমাদের সবার মুখের উপর আমি থুতু ফেলবো। তোমাদের জন্যে যে দুর্ভোগ আমরা ভোগ করেছি সেটা তোমাদেরও এখন পোহাতে হবে। তোমাদের স্বর্গ তোমাদের সামনে লুটিয়ে পড়বে। আমি ঐ মন্তগ্লেইন সার্ভিসটা চাই! সেটা আমার হবে! শুধু আমার! তুমি যেখানকার কথা বললে সেখানে যদি ওটা না পাই তাহলে তোমাকে আমি ঠিকই পাকড়াও করবো-এরজন্যে তোমাকে পরিণাম ভোগ করতে হবে!”
তার বিষাক্ত কণ্ঠটা মিরিয়ের কানে বাজতে লাগলো।
“মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করো!” চিৎকার করে বললো সে, সঙ্গে সঙ্গে লোকজন উল্লাস প্রকাশ করতে শুরু করলো প্রাঙ্গনের ভেতরে। “তার শাস্তি হলো মৃত্যু!”।
“না!” চিৎকার করে বললো মিরিয়ে। একজন সৈনিক তাকে ধরে রাখলেও সে তার হাত থেকে ছুটে গেলো। পাগলের মতো ছুটে গেলো ঘাসের লনের দিকে। দৌড়ানোর সময়ই সে দেখতে পেলো দুই জল্লাদের ধারালো কুড়াল ভ্যালেন্টাইনের মাথার উপরে শূন্যে উঠে গেছে।
অসংখ্য মৃতদেহ টপকে ছুটে গেলো মিরিয়ে। কুড়াল দুটো নীচে নেমে আসতেই এক লাফে ঝাঁপিয়ে পড়লো ভ্যালেন্টাইনের উপর।