–মাদাম সুজান নেকার
জার্মেইন দ্য স্তায়েলের মা
.
প্যারিস সেপ্টেম্বর ২, ১৭৯২
কেউই বুঝতে পারে নি এটা কি ধরণের দিন হবে। অ্যাম্বাসির কর্মকর্তাদের বিদায় জানানোর সময় জার্মেইন দ্য স্তয়েলও জানতো না। আজ সেপ্টেম্বরের ২ তারিখে কূটনৈতিক সুরক্ষায় ফ্রান্স ত্যাগ করবে সে। জ্যাক-লুই ডেভিড অ্যাসেম্বলির জরুরি সেশনে যোগ দেবার জন্যে তাড়াহুড়া করে জামাকাপড় পরার সময়ও জানতেন না, আজ ২রা সেপ্টেম্বর অগ্রসরমান শত্রুবাহিনী প্যারিস থেকে মাত্র ১৫০ মাইল দূরে অবস্থান করবে। প্রুশিয়ানরা হুমকি দিয়েছে তারা প্যারিস শহরটাকে মাটির সাথে মিশিয়ে দেবে।
মরিস তয়িরাঁ এবং তার ব্যক্তিগত সহকারী কর্তিয়াদি যখন স্টাডিরুমে চামড়ায় বাধানো বইপুস্তকগুলো নামাচ্ছিলো তখনও এটা জানতো না। আজ সেপ্টেম্বরের ২ তারিখে সে পরিকল্পনা করেছে তার মহামূল্যবান লাইব্রেরিটা ফরাসি সীমান্তের কাছাকাছি নিয়ে যাবে, কারণ খুব শীঘ্রই সে ফ্রান্স ছাড়ছে।
ডেভিডের স্টুডিওর পেছনে ফুলের বাগানে ঘুরে বেড়ানোর সময় ভ্যালেন্টাইন আর মিরিয়েও জানতো না। একটু আগে তারা যে চিঠিটা পেয়েছে তাতে বলা হয়েছে মন্তগুেইন সার্ভিসটা নাকি ভয়ঙ্কর বিপদের মধ্যে পড়ে গেছে। তারা ধারণাও করতে পারে নি ফ্রান্সকে লণ্ডভণ্ড করে দেবে যে টর্নেডো তার কেন্দ্রে অবস্থান করতে যাচ্ছে তারা দুজন।
মাত্র পাঁচ ঘণ্টা আগেও কেউ জানতো না সেপ্টেম্বরের দ্বিতীয় দিন বেলা দুটোর সময় আতঙ্কটি ছড়িয়ে পড়বে।
সকাল : ৯টা
ডেভিডের স্টুডিওর পেছনে যে বাগানটা আছে তার মাঝখানে ছোট্ট একটা ফোয়ারার সামনে বসে আছে ভ্যালেন্টাইন। হাত দিয়ে পানি নাড়ছে সে। বিশাল একটি গোন্ডফিশ তার আঙুলে ঠোকর মারলো। সে যেখানে বসে আছে তার বুব কাছেই মন্তগেইন সার্ভিসের দুটো খুঁটি লুকিয়ে রাখা হয়েছে মাটির নীচে। এখন হয়তো ওখানে আরো কিছু অংশ যোগ দেবে।
মিরিয়ে তার পাশে দাঁড়িয়ে চিঠিটা পড়ে শোনালো। শরৎকালের আগমনে গাছের পাতার রঙ হলুদ হয়ে উঠেছে। শীঘ্রই পাতা ঝরে পড়তে শুরু করবে।
“এই চিঠির একটাই ব্যাখ্যা হতে পারে,” কথাটা বলেই পড়ে শোনাতে শুরু করলো মিরিয়ে :
আমার প্রাণপ্রিয় সিস্টাররা,
আপনারা হয়তো জানেন কায়েন-এর অ্যাবিটা বন্ধ করে দেয়া হয়েছে। ফ্রান্সের রাজনৈতিক অস্থিরতার কারণে আমাদের দাইরেক্তিস আলেক্সাদ্রিয়ে দ্য ফবোয়া সিদ্ধান্ত নিয়েছেন ফ্রান্ডার্সে তার পরিবারের কাছে চলে যাবার। অবশ্য সিস্টার মেরিশালোত্তে করদে, যাকে আপনারা হয়তো চেনেন, তিনি কায়েন-এ থেকে গেছেন ওখানে অপ্রত্যাশিত কোনো ঘটনা ঘটে গেলে সামাল দেবার জন্য।
আমাদের মধ্যে কোনো দিন দেখা-সাক্ষাৎ হয় নি, তাই আমি। আমার পরিচয় দিচ্ছি, আমি সিস্টার ক্লদ, ভূতপূর্ব কায়েন-এর কনভেন্টের একজন নান। আমি সিস্টার আলেক্সান্দ্রিয়ের ব্যক্তিগত সেক্রেটারি, কয়েক মাস আগে ফ্লাডার্সের উদ্দেশ্যে রওনা দেবার পূর্বে তিনি আমার ইপার্নির বাড়িতে এসেছিলেন। সে সময় তিনি আমাকে কিছু তথ্য দিয়ে বলেন, আমি যেনো খুব শীঘ্রই প্যারিসে গিয়ে সিস্টার ভ্যালেন্টাইনকে সশরীরে সেটা দিয়ে আসি।
আমি বর্তমানে প্যারিসের কর্দেলিয়া কোয়ার্টারে অবস্থান করছি। দয়া করে আজ দুপুর দুটো বাজে লাবায়ে মনাস্টেরির গেটে এসে দেখা করুন, কারণ আমি জানি না এই শহরে আর কতোক্ষণ থাকতে পারবো। আশা করি এই অনুরোধের গুরুত্বটা আপনি অনুধাবন করতে পারছেন।
-আপনার বোন
কায়েন-এর অ্যাবি-অদেম-এর সিস্টার ক্লদ
“উনি ইপার্টি থেকে এসেছেন,” চিঠিটা পড়া শেষ করে বললো মিরিয়ে।
“এটা ফ্রান্সের পূর্বাঞ্চলীয় একটি শহর। মার্নে নদীর তীরে অবস্থিত। উনি দাবি করছেন, আলেক্সান্দ্রিয়ে দ্য ফবোয়া ফ্লভার্সে যাবার পথে ওখানে যাত্রা বিরতি করে তার সাথে দেখা করেছেন। তুমি কি জানো ইপার্নি আর ফ্লেমিশ সীমান্তের মাঝখানে কি আছে?”
ভ্যালেন্টাইন মাথা ঝাঁকিয়ে গোল গোল চোখে মিরিয়ের দিকে তাকালো।
“লঙ্গাই আর ভারদান দূর্গ। প্রশিয়ান সেনাবাহিনীর অর্ধেক ওখানে অবস্থান করে। সম্ভবত আলেক্সান্দ্রিয়ে ফোবোয়ার কাছ থেকে যে খবরের কথা বলছেন তারচেয়ে অনেক মূল্যবান কিছু বয়ে এনেছেন আমাদের সিস্টার কুদ। সম্ভবত উনি এমন কিছু নিয়ে এসেছেন যার কারণে সিস্টিার ফবোয়া মনে করেছেন যুদ্ধরত সেনাবাহিনীর মধ্য দিয়ে ফ্লেমিশ সীমান্ত অতিক্রম করাটা অনেক বেশি বিপজ্জনক হবে।”
“সার্ভিসের খুঁটিগুলো!” বললো ভ্যালেন্টাইন, ঝট করে উঠে দাঁড়ালো সে। “চিঠিতে বলা হয়েছে সিস্টার শালোত্তে করদে নাকি কায়েনে রয়ে গেছেন! কায়েন হয়তো উত্তরাঞ্চলীয় সীমান্তের কাছে কালেকশান পয়েন্ট হয়ে থাকবে।” একটু ভেবে আবার বললো সে, কিন্তু তাই যদি হয়, তাহলে আলেক্সান্দ্রিয়ে কেন পূর্ব সীমান্ত দিয়ে ফ্রান্স ছাড়বেন?”
“আমি জানি না,” কথাটা বলে মিরিয়ে তার চুলের রিবন খুলে ফোয়ারার কাছে বসে মুখে একটু পানি ছিটিয়ে নিলো। “সিস্টার ক্লদের সাথে দেখা না করা পর্যন্ত এই চিঠির মানে কি সেটা আমরা জানবো না। কিন্তু দেখা করার জন্য উনি কর্দেলিয়া বেছে নিলেন কেন? ওটা তো এ শহরের সবচাইতে বিপজ্জনক জায়গা। তুমি তো জানোই, লাবায়ে এখন আর কোনো মোনাস্টেরি নয়, ওটাকে জেলখানা হিসেবে রূপান্তরিত করা হয়েছে।”