“আমরা কখনও অপেরা দেখি নি, মাদাম,” ভ্যালেন্টাইন বললো।
“কখনও অপেরা দেখো নি!” অবাক হয়ে বললো জারমেঁই। “অসম্ভব! তোমাদের পরিবার তোমাদেরকে কোথায় রেখেছিলো এতোদিন?”
“একটা কনভেন্টে, মাদাম,” ভদ্রভাবেই জবাব দিলো মিরিয়ে।
জারমেঁই এমনভাবে চেয়ে রইলো তাদের দিকে যেনো এই জীবনে সে কনভেন্ট কাকে বলে শোনে নি। এরপর তয়িরাঁর দিকে ফিরলো মহিলা। মনে হচ্ছে কিছু বিষয় আপনি আমাকে বলেন নি, বন্ধু। আমি যদি জানতাম ডেভিডের পোষ্য হিসেবে যারা আছে তারা কনভেন্টে বড় হয়েছে তাহলে কোনোক্রমেই টম জোন্স অপেরাটি বেছে নিতাম না।” মিরিয়ের দিকে ফিরে আরো বললো সে, “আশা করি তোমরা ভড়কে যাও নি। এটা এক অবৈধ সন্তানের ইংলিশ গল্প…”
“অল্প বয়সে নৈতিকতা সম্পর্কে শিক্ষা দেয়াটাই বেশি ভালো,” হেসে বললো তয়িরাঁ।
“একদম সত্যি কথা, আস্তে করে বললো জারমেঁই। “তারা যদি আঁতুয়ার বিশপকে নিজেদের মেন্টর হিসেবে রাখে তাহলে এটা বেশ ফলপ্রসূ হিসেবেই প্রমাণিত হবে।”
মঞ্চের পর্দা উঠতে শুরু করলে মহিলা সেদিকে ফিরলো।
.
“আমার বিশ্বাস এটা আমার জীবনে সবচাইতে সুন্দর অভিজ্ঞতা,” ভ্যালেন্টাইন বললো, অপেরা থেকে ফিরে তয়িরাঁর স্টাডিরুমের ভারি কার্পেটের উপর বসে আছে তারা। ফায়ারপ্লেসের আগুনের শিখা দেখছে।
তয়িরাঁ বসে আছে নীল রঙের সিল্কের একটা চেয়ারে, তার পা দুটো কুশনের উপর রাখা। কয়েক ফুট দূরে দাঁড়িয়ে আগুনের দিকে চেয়ে আছে মিরিয়ে।
“এই প্রথম আমরা কগন্যাগও পান করলাম,” ভ্যালেন্টাইন যোগ করলো।
“তোমাদের বয়স মাত্র ষোলো,” বললো তয়িরাঁ, তার হাতে ব্র্যান্ডির গ্লাস, সেটাতে একটা চুমুক দিলো সে। “আরো অনেক অভিজ্ঞতা নেবার যথেষ্ট সময় পড়ে আছে এখনও।”
“আপনার বয়স কতো, মঁসিয়ে তয়িরাঁ?” জানতে চাইলো ভ্যালেন্টাইন।
“এটা তো কোনো ভদ্র প্রশ্ন হলো না,” ফায়ারপ্লেসের কাছ থেকে বললো মিরিয়ে। “কাউকে তার বয়সের কথা জিজ্ঞেস করতে নেই।”
“আর দয়া করে আমাকে মরিস বলে ডাকবে,” বললো তয়িরাঁ। “আমার বয়স সাইত্রিশ তবে তোমরা যখন আমাকে মঁসিয়ে’ বলে ডাকো তখন মনে হয় আমার বয়স নব্বই। এবার বলো, জারমেঁইকে তোমাদের কেমন লাগলো?”
“মাদাম দ্য স্তায়েল খুবই চার্মিং,” বললো মিরিয়ে, তার লালচুল ফায়ারপ্লেসের আগুনের আভায় জ্বলজ্বল করছে।
“উনি নাকি আপনার প্রেমিকা, কথাটা কি সত্যি?” ভ্যালেন্টাইন জানতে চাইলো।
“ভ্যালেন্টাইন!” আর্তনাদ করে উঠলো মিরিয়ে কিন্তু অট্টহাসিতে ফেটে পড়লো মরিস।
“তুমি আসলেই অসাধারণ,” ভ্যালেন্টাইনের চুলে আলতো করে হাত বুলিয়ে বললো সে। মেয়েটা তার কাছে হাটু মুড়ে বসে আছে। মিরিয়েকে সে আরো বললো, “তোমার খালাতো বোনের মধ্যে কোনোরকম ভণ্ডামি আর কপটতা নেই, যেমনটি প্যারিসের সোসাইটিতে খুব বেশি পাওয়া যায়। তার প্রশ্ন শুনে আমি মোটেও রাগ করি না। বরং আমার কাছে সেগুলো ভালোই লাগে। বিগত কয়েক সপ্তাহ ধরে আমি তোমাদের সাথে আছি, ব্যাপারটা বেশ ভালোই বুঝতে পারি। যাইহোক, তোমাকে কে বললো মাদাম দ্য স্তায়েল আমার প্রেমিকা?”
“বাড়ির কাজের লোকদের কাছ থেকে আমি শুনেছি, মঁসিয়ে-মানে, আঙ্কেল মরিস। কথাটা কি সত্য নয়?”
“না, মাই ডিয়ার। কথাটা সত্যি নয়। একদমই না। এক সময় আমরা প্রেমিক-প্রেমিকা ছিলাম তবে সেটা অতীতের কথা। এখন আমরা দুজন খুব ভালো বন্ধু।
“হয়তো আপনি ধোঁড়া বলে উনি আপনাকে প্রেমিক হিসেবে বাদ দিয়েছেন?” ভ্যালেন্টাইন জানতে চাইলো।
“হায় হায়!” আর্তনাদ করে উঠলো মিরিয়ে। তুমি এক্ষুণি মঁসিয়ের কাছে ক্ষমা চাইবে। দয়া করে আমার বোনকে ক্ষমা করে দিন, মঁসিয়ে। ও আপনাকে আহত করার জন্য কথাটা বলে নি।”
তয়িরাঁ নিশ্চুপ বসে রইলো, যেনো হতভম্ব হয়ে গেছে। যদিও একটু আগেই বলেছে ভ্যালেন্টাইনের কথায় রাগ করে নি, কিন্তু এটাও ঠিক ফ্রান্সে কেউ তার। শারিরীক ত্রুটি নিয়ে প্রকাশ্যে কথা বলে না। আবেগে কাঁপতে শুরু করলো সে। আস্তে করে ভ্যালেন্টাইনের হাতটা ধরে তাকে নিজের পাশে বসালো। আস্তে করে তাকে জড়িয়ে ধরলো মরিস তয়িরাঁ।
“আমি খুব দুঃখিত, আঙ্কেল মরিস,” বললো ভ্যালেন্টাইন। আলতো করে তার গালে হাত বুলিয়ে হাসলো সে। “এর আগে কখনই শারিরীক ত্রুটি আছে। এমন কাউকে স্বচক্ষে দেখি নি। আপনি যদি পাটা আমাকে দেখান তাহলে আমার জন্যে সেটা খুবই শিক্ষণীয় ব্যাপার হবে।”
আবারো আর্তনাদ করে উঠলো মিরিয়ে। তয়িরাঁ এবার এমন অবাক হয়ে ভ্যালেন্টাইনের দিকে তাকালো যে মনে হলো সে নিজের কানকেই বিশ্বাস করতে পারছে না। অনুরোধের ভঙ্গিতে ভ্যালেন্টাইন তার হাতটা চাপতে লাগলো। কিছুক্ষণ পর গম্ভীরকণ্ঠে বললো মরিস তয়িরাঁ, “বেশ। তুমি যখন চাইছো।” পা থেকে স্টিলের বুটটা খুলে ফেললো সে। এটা পরে থাকার কারণেই তার পক্ষে হাটা সম্ভব হয়।
ফায়ারপ্লেসের মৃদু আলোতে ভ্যালেন্টাইন তার পা’টা ভালো করে দেখে নিলো। পায়ের পাতা এমনভাবে বেঁকে আছে যে গোড়ালীর বলটা প্রায় নীচে চলে গেছে। সেই পা’টা নিজের হাতে তুলে নিলো ভালেন্টাইন তারপর উপুড় হয়ে আলতো করে চুমু খেলো তাতে। চেয়ারে বসে থাকা তয়িরাঁ যারপরনাই অবাক। বাকরুদ্ধ হয়ে গেলো সে।