“তারা নান ছিলো না, নান হিসেবে শপথ নেয় নি এখনও। যেমনটা তুমি করেছিলে?” ইঙ্গিতপূর্ণভাবে বললেন ডেভিড। “মনে হচ্ছে ঐ অ্যাবিসই তাদেরকে তোমার ব্যাপারে সতর্ক করে দিয়ে বলেছিলো তুমি হলে শয়তানের পূণর্জন্ম হওয়া একজন।”
“ঐ অ্যাবিস যে আমার ব্যাপারে এরকম কথা বলেছে তাতে আমি খুব একটা। অবাক হই নি।”
“তুমি একজন যাজক ছিলে, সুতরাং তোমার পরবর্তী কার্যকলাপে তারা অখুশি হবে সেটাই তো স্বাভাবিক।”
“আমাকে কখনও যাজক হবার জন্যে জিজ্ঞেস করা হয় নি,” তিক্ত কণ্ঠে বললো মরিস। “উত্তরাধিকারসূত্রেই সেটা হয়েছি। তবে যেদিন আমি যাজকের। আলখেল্লাটা খুলে রাখলাম সেদিন সত্যিই নিজেকে প্রথমবারের মতো মুক্ত বলে মনে হয়েছিলো।”
ঠিক এই সময় ডাইনিংরুমে ঢুকলো ভ্যালেন্টাইন আর মিরিয়ে। তারা দু’জনেই একই রকম পোশাক পরে আছে, যে পোশাকে পরে তারা অ্যাবি ছেড়ে এখানে এসেছিলো। পার্থক্য শুধু মাথার চুলগুলো রঙ্গিন ফিতা দিয়ে বেধে রাখা। দু’জন পুরুষই উঠে দাঁড়িয়ে তাদের অভ্যর্থনা জানালো, দুটো চেয়ার টেনে তাদেরকে বসতে দিলেন ডেভিড।
“আমরা প্রায় পনেরো মিনিট ধরে অপেক্ষা করছি তোমাদের জন্যে,” মৃদু ভর্ৎসনার সুরে বললেন তিনি। “আশা করি এখন আমরা সবাই ভালো ব্যবহার করবো। মঁসিয়ের সাথে ভদ্র ব্যবহার করার চেষ্টা কোরো। ওর সম্পর্কে তোমরা যা-ই শুনে থাকো না কেন, সেটা যদি পুরোপুরি সত্যিও হয়ে থাকে, মনে রাখবে ও এখন আমাদের অতিথি।
“তারা কি এও বলেছে, আমি একজন ভ্যাম্পায়ার?” মরিস ভদ্রভাবেই জানতে চাইলো। “বাচ্চাদের রক্ত পান করি?”
“ওহ্ হ্যাঁ, মঁসিয়ে,” ভ্যালেন্টাইন জবাব দিলো। “আপনি শয়তানের চিহ্ন, মানে ঘোড়ার খুঁড়ের মতো পা নিয়ে জন্মেছেন। হাটেনও খুঁড়িয়ে খুঁড়িয়ে, সুতরাং এটা অবশ্যই সত্যি!”
“ভ্যালেন্টাইন,” বললো মিরিয়ে, “এভাবে বোলো না!”
ডেভিড মাথায় হাত দিলেও কিছু বললেন না।
“ঠিক বলেছো,” বললো মরিস। “ব্যাপারটা আমার বুঝিয়ে বলা দরকার।”
গ্লাসে কিছু মদ ঢেলে ভ্যালেন্টাইন আর মিরিয়ের বিপরীতে বসে কথা বলতে শুরু করলো সে। “আমি যখন খুব ছোটো ছিলাম আমার পরিবার আমাকে দুধমা’র কাছে রেখেছিলো কয়েক দিনের জন্য, একদিন মহিলা আমাকে একটা আলমিরার উপর রেখে চলে গেলে আমি সেটা থেকে পড়ে যাই, আমার পা ভেঙে যায় তখন। ঐ মহিলা ছিলো অশিক্ষিত আর গ্রাম্য। সে ভয়ে ব্যাপারটা আমার বাবা-মাকে জানায় নি। এ কারণে আমার পাটা আর ঠিক হয় নি। আমার মা যখন টের পেলো আমার পাটা একটু বেঁকে বড় হচ্ছে তখন ঠিক করার জন্য অনেক দেরি হয়ে গেছে। এ হলো আসল গল্প। কোনো রহস্য-টহস্য নেই, বুঝলে?”
“এটা কি আপনাকে খুব যন্ত্রণা দেয়?” জানতে চাইলো মিরিয়ে।
“পায়ের কথা বলছো? না।” তিক্তভাবে বললো মরিস। “শুধু পাটা বেঁকে গেছে। তবে এজন্যে আমি বড় সন্তান হিসেবে উত্তরাধিকার সূত্রে যা পাওয়ার কথা তা থেকে বঞ্চিত হয়েছি। আমার মা পর পর দুই ছেলের জন্ম দেন। সেই দুই ভাই, আৰ্চিমবদ আর বোসোনের কাছেই সমস্ত সম্পত্তি হস্তান্তর করে যান। তিনি চান নি একজন খোঁড়া প্রাচীনপদবী তয়িরাঁ-পেরিগোর্দের উত্তরাধিকারী হোক। বুঝলে? আমার মাকে আমি শেষ দেখি যখন তিনি আঁতুয়াতে এসেছিলেন আমার বিশপ হবার ব্যাপারে আপত্তি জানাতে। যদিও তিনি চেয়েছিলেন আমি যাজক হই, চিরটাকাল লোকচক্ষুর আড়ালে থেকে যাই। তিনি বলেছিলেন আমি নাকি বিশপ হবার মতো যথেষ্ট ধার্মিক নই। তিনি অবশ্য সত্যি কথাটাই বলেছিলেন।”
“কী বাজে ব্যাপার!” উত্তেজিত হয়ে বললো ভ্যালেন্টাইন। “তাকে আমার ডাইনী-বুড়ি বলে ডাকতে ইচ্ছে করছে!”
ডেভিড ছাদের দিকে তাকিয়ে কিছুক্ষণ চুপ থেকে লাঞ্চের জন্যে বেল বাজিয়ে দিলেন।
“তুমি আসলেই তাই করতে?” মরিস কণ্ঠে জানতে চাইলো। “তাহলে তো তোমাকেই আমার দরকার ছিলো। আচ্ছা করে তাকে ডাইনী-বুড়ি ডাকানো যেতো। স্বীকার করছি এটা করার জন্যে আমি মুখিয়ে ছিলাম দীর্ঘদিন।”
গৃহভৃত্য যখন সবার জন্য খাবার পরিবেশন করে চলে গেলো তখন ভ্যালেন্টাইন বললো, “আপনার আসল গল্পটা বলার পর আপনাকে আর আগের মতো খারাপ লোক বলে মনে হচ্ছে না, বঁসিয়ে। স্বীকার করছি আপনি দেখতে দারুণ হ্যান্ডসাম।”
ভ্যালেন্টাইনকে বিরত রাখার জন্য মিরিয়ে কটমট করে তাকালে ডেভিড হো হো করে হেসে ফেললেন।
“অ্যাবিটা যদি সত্যি সত্যি আপনিই বন্ধ করে দিয়ে থাকেন তাহলে মিরিয়ে আর আমি আপনাকে ধন্যবাদই দেবো,” হরবর করে বলে চললো ভ্যালেন্টাইন। “তা না হলে আমরা এখনও মাগ্লেইনেই পড়ে থাকতাম। আমাদের স্বাপের শহর প্যারিসের এই জীবন কখনই উপভোগ করতে পারতাম না…”
কাটাচামচ আর রুমাল টেবিলের উপর রেখে তাদের দু’জনের দিকে তাকালো মরিস।
“মন্তগ্লেইন অ্যাবি? বাস্ক-পিরেনিজে অবস্থিত? সেখান থেকেই কি তোমরা এসেছো? কিন্তু তোমারা সেখানে থাকলে না কেন? কেন ওখান থেকে চলে এলে?”
মরিসের অভিব্যক্তি আর প্রশ্নটা শুনে ভ্যালেন্টাইন বুঝতে পারলো একটা মারাত্মক ভুল করে ফেলেছে সে। মঁসিয়েকে দেখে যতোই ভদ্রলোক আর ভালো। মানুষ বলে মনে হোক না কেন তিনি তো আঁতুয়ার বিশপই। এই লোকটার ব্যাপারেই অ্যাবিস তাদের সবাইকে সাবধান করে দিয়েছিলেন। এই লোক যদি জানতে পারে তারা দু’বোন শুধুমাত্র মন্তগ্লেইন সার্ভিসের ব্যাপারেই জানে না, বরং ওটার বিভিন্ন অংশ অ্যাবি থেকে সরিয়ে ফেলতেও সাহায্য করেছে তাহলে পুরো জিনিসটা না জানা পর্যন্ত এই লোক থামবে না।