যখন আলো জ্বলে উঠলো দেখা গেলো মহিলা গণক আর নেই। হ্যারি তার চেয়ারের পাশে দাঁড়িয়ে আছে। কয়েক মুহূর্ত আগে মহিলা যেখানে বসেছিলো সে জায়গাটা এখন ফাঁকা। আমরা সবাই বিস্ময়ে একে অন্যের দিকে তাকালাম। হ্যারি অট্টহাসি হেসে উপুড় হয়ে আমার গালে চুমু খেলো।
“হ্যাপি নিউ ইয়ার, ডার্লিং,” আমাকে আন্তরিকভাবে জড়িয়ে ধরে বললো সে। “দুবোধ্য ভাগ্যসহকারে। আমার মনে হয় আমার পুরো আইডিয়াটা মাঠে মারা গেছে। এজন্যে আমাকে ক্ষমা করে দিও।”
টেবিলের ওপর পাশে বসে থাকা ব্লাঁশে আর লিউলিন একে অন্যেকে জড়িয়ে ধরে ফিসফিস করে কথা বলছে।
“আরে আমো তো তোমরা,” হ্যারি বললো। “এই যে শ্যাম্পেইনগুলো পড়ে আছে টেবিলে এগুলোর সদ্ব্যবহার করি, নাকি? ক্যাট, তোমারও একটু পান করা দরকার।” লিউলিন উঠে এসে আমার গালে আলতো করে চুমু খেলো।
“ক্যাট ডিয়ার, আমিও হ্যারির সাথে একমত। তোমাকে দেখে মনে হচ্ছে এইমাত্র যেনো ভুত দেখেছো।” আমার খুব ক্লান্ত লাগছে।
“কী সাংঘাতিক মহিলা,” লিউলিন বললো। “আপদ-বিপদ নিয়ে আবোলতাবোল বলে গেলো। যদিও সে যা বলে গেলো তাতে মনে হয় তোমার কাছে কিছু একটা বোধগম্য হয়েছে। নাকি এটা আমার নিছক অনুমাণ?”
“আমার মনে হয় না,” বললাম তাকে। “দাবাবোর্ড আর সংখ্যাগুলো…আচ্ছা এই আট জিনিসটা কি? আমি তো এসবের মাথামুণ্ডু কিছুই বুঝতে পারছি না।” হ্যারি আমাকে একগ্লাস শ্যাম্পেইন দিলো।
“সমস্যা নেই,” আমাকে একটা ককটেল রুমাল দিয়ে বললো ব্লাঁশে। রুমালটায় কিছু লেখা আছে। “লিউ সব লিখে রেখেছে তোমাকে দেবার জন্যে। হয়তো পরে কোনো এক সময় এটা তোমার কোনো স্মৃতি উসকে দিতে পারবে। তবে আশা করি সেটা না হলেই ভালো! পুরো ব্যাপারটাই হতাশাজনক।”
“আহা, এটা নিছক মজা,” বললো লিউলিন। “আমি দুঃখিত ব্যাপারটা শেষ পর্যন্ত কী রকম জানি হয়ে গেলো। তবে মহিলা দাবার কথা উল্লেখ করেছে, তাই
? মেটা অর্থাৎ রাজার চাল দেয়ার কথাও বলেছে। খুবই ভুতুরে ব্যাপার স্যাপার। মেট’ শব্দটার অর্থ তুমি কি জানো-চেকমেট,’ এটা এসেছে পারস্যের শাহমাত থেকে। এর মানে ‘রাজার মৃত্যু। মহিলা বলেছে তুমি বিপদে আছো তুমি কি নিশ্চিত এসবের কোনো মানে নেই তোমার কাছে?” লিউলিন জানতে চাইলো।
“আরে বাদ দাও তো এসব,” বললো হ্যারি। “লিলির সাথে তোমার ভাগ্য জড়িয়ে আছে এটা বলাটাই ভুল হয়ে গেছে। পুরো ব্যাপারটাই একেবারে অর্থহীন প্রলাপ। এটা ভুলে যাও, তা না হলে রাতের বেলায় দুঃস্বপ্ন দেখবে।”
“লিলি ছাড়াও আমার চেনাজানা আরো একজন আছে যে দাবা খেলে থাকে, তাকে আমি বললাম। “সত্যি বলতে কি, আমার এক বন্ধু প্রতিযোগীতামূলক দাবা খেলে থাকে…”
“তাই নাকি?” চট করে বললো লিউলিন। “আমি তাকে চিনি?”
মাথা ঝাঁকালাম। ব্লাঁশে কিছু একটা বলার আগেই হ্যারি তার হাতে শ্যাম্পেইনের গ্লাস ধরিয়ে দিলো। মুচকি হেসে চুমুক দিতে শুরু করলো সে।
“যথেষ্ট হয়েছে,” বললো হ্যারি। নতুন বছর যা-ই বয়ে আনুক না কেন। আসো সবাই মিলে টোস্ট করি।”
আধঘণ্টার মধ্যেই আমরা শ্যাম্পেইনের বোতলগুলো শেষ করে ফেললাম। অবশেষে নিজেদের কোট গায়ে চাপিয়ে বাইরে এসে লিমোজিনে বসলাম সবাই। হ্যারি সলকে বললো সবার আগে আমাকে ইস্ট রিভারের অ্যাপার্টমেন্টে ড্রপ করে। দেবার জন্য। আমার বিল্ডিংয়ের সামনে গাড়িটা আসতেই গাড়ি থেকে নেমে আমাকে জড়িয়ে ধরলো হ্যারি।
“আশা করি তোমার নতুন বছরটি চমৎকার কাটবে,” বললো সে। “হয়তো তুমি আমার নাছোরবান্দা মেয়েটার জন্য কিছু একটা করবে। সত্যি বলতে কি, আমি জানি তুমি তা করবে। এটা আমি আমার গ্রহ-নক্ষত্রে দেখেছি।”
“দ্রুত বিছানায় না গেলে আমিও গ্রহ-নক্ষত্র দেখা শুরু করবো,” তাকে বললাম। “এগনগ আর শ্যাম্পেইনের জন্যে অসংখ্য ধন্যবাদ।”
হ্যারির সাথে করমর্দন করে অন্ধকারাচ্ছন্ন লবি দিয়ে এগিয়ে গেলাম আমি। হ্যারি চেয়ে চেয়ে দেখলো। দরজার পাশে দারোয়ান নিজের চেয়ারে বসে ঘুমাচ্ছে। বিশাল ফয়ারের লিফটের কাছে যে চলে গেলাম সেটা টেরই পেলো না। সে। পুরো বিল্ডিংটা কবরের মতোই নিস্তব্ধ হয়ে আছে।
বোতাম টিপলে ঘরঘর করে লিফটের দরজাটা বন্ধ হয়ে গেলো। লিফটা উপরে উঠতে শুরু করলে আমি কোটের পকেট থেকে রুমালটা বের করে আবারো পড়লাম। এবারো বুঝতে পারলাম না কিছু। ইতিমধ্যেই আমার অনেক সমস্যা তৈরি হয়ে গেছে, নতুন কোনো সমস্যা নিয়ে ভাবার অবকাশ নেই। কিন্তু লিফট থেকে বের হয়ে অন্ধকারাচ্ছন্ন করিডোর দিয়ে যেতে যেতে হুট করে মনে পড়ে গেলো, ঐ গণক মহিলা কি করে জানলে চতুর্থ মাসের চতুর্থ দিনটি আমার জন্মদিন!
ফিয়ানচেত্তো
বিশপরা হলো যাজক…তারা একটি পথই বেছে নেয়…প্রায় প্রত্যেক বিশপই জাগতিক লোভ লালসা চরিতার্থ করার জন্য নিজের ক্ষমতার অপব্যবহার করেন।
–কোয়ানডাম মোরালিটাস দ্য স্কাক্কারিও
পোপ তৃতীয় ইনোসেন্ট
(১১৯৮-১২১৬)
.
প্যারিস
১৭৯১ সালের গ্রীষ্মকাল
“ওহ্ মার্দে। মার্দে!” জ্যাক-লুই ডেভিড বললেন। রেগেমেগে হাতের ব্রাশটা মেঝেতে রেখে উঠে দাঁড়ালেন তিনি। “আমি তোমাদেরকে নড়াচড়া করতে মানা করেছিলাম। এখন তো কাপড়ের ভাঁজ নষ্ট হয়ে গেলো। সব শেষ!”
ভ্যালেন্টাইন আর মিরিয়ের দিকে তাকালেন তিনি, স্টুডিওর মাচাঙে পোজ দিয়ে দাঁড়িয়ে আছে তারা। বলতে গেলে নগ্নই, তবে পাতলা আর স্বচ্ছ কাপড় জড়িয়ে রেখেছে বুকের উপর, অনেকটা প্রাচীণ গ্রিসের ফ্যাশন অনুযায়ী, যা কিনা এখন প্যারিসের নতুন ফ্যাশন হিসেবে দারুণ চলছে এটা।