“এটার ব্যাপারে কি ভাবছো তুমি?” লিউলিন জানতে চাইলো। “জিনিসটা অসাধারণ না?”
“তোমার কি অন্যরকম অনুভূতি হচ্ছে?” বললাম আমি। লিউলিন মাথা ঝাঁকালো শুধু। আমার দিকে চেয়ে আছে ব্লাঁশে।
লিউলিন বলতে লাগলো, “এটা হাতির দাঁতে তৈরি ভারতীয় একটি জিনিসের আরবীয় কপি। প্যারিসের ন্যাশনেইল বিবিলিওথেক-এ আছে এটা। ইউরোপে গেলে একবার দেখে আসতে পারো। তবে আমার বিশ্বাস অনেক পুরনো একটা খুঁটি থেকে এটা কপি করা হয়েছে। আসল জিনিসটা এখনও পাওয়া যায় নি। এটাকে বলে শার্লেমেইন কিং’।”
“শার্লেমেইন কি হাতির পিঠে চড়তো নাকি? আমি তো হ্যাঁনিবাল ভেবেছিলাম।”
“এটা শার্লেমেইনকে খোদাই করে করা হয় নি। এটা হলো শার্লেইেনের দাবাবোর্ডের রাজার দুটি। এটা কপি থেকে কপি করা। আসল দুটিটা কিংবদন্তীতুল্য। আমার জানামতে কেউ এটা চোখে দেখে নি।”
“কিন্তু তুমি কি করে জানলে ওটা এখনও আছে?” আমি জিজ্ঞেস করলাম। জানতে আগ্রহী হয়ে উঠলাম কিছুটা।
“ওটা আছে,” বললো লিউলিন। “পুরো দাবাবোর্ডটিকে বলা হয় লিজেন্স অব শার্লেমেইন। আমার ঐ কাস্টমার ভদ্রলোক ইতিমধ্যেই বেশ কয়েকটি পিস সংগ্রহ করেছে, সে চাইছে পুরো সেটটা কম্পিট করতে। এরজন্যে প্রচুর পরিমাণে টাকা খরচ করতেও রাজি আছে সে। তবে নিজের পরিচয় আড়ালে রাখতে চায় ভদ্রলোক। পুরো ব্যাপারটা খুবই গোপন রাখতে হবে, ডার্লিং। আমার বিশ্বাস আসল জিনিসটা চব্বিশ ক্যারেটের সোনা আর দামি দামি সব হীরা-জহরত দিয়ে তৈরি।”
লিউলিনের দিকে তাকালাম, বুঝতে পারছি না ঠিকঠিক শুনছি কিনা। তারপরই বুঝতে পারলাম সে আমাকে দিয়ে এ কাজটা করাতে চাইছে।
“লিউলিন, কোনো দেশ থেকে স্বর্ণ আর হীরা-জহরত নিয়ে আসতে গেলে কিছু আইন-কানুন মেনে তা করতে হয়। আর ঐতিহাসিক বিরল কোনো বস্তুর বেলায় তো এইসব নিয়মকানুন আরো বেশি কড়া। তুমি কি আমাকে আরব দেশের কোনো জেলখানায় পচিয়ে মারতে চাও নাকি?”
“আহ্। হ্যারি আসছে,” শান্তকণ্ঠে বললো ব্লাঁশে। উঠে দাঁড়ালো সে যেনো হাত-পা ম্যাজ ম্যাজ করছে বসে থাকতে থাকতে। লিউলিন দ্রুত ছবিটা ভাঁজ করে পকেটে রেখে দিলো।
“আমার বোন জামাইকে এ ব্যাপারে কিছু বোলো না,” ফিসফিস করে সে বললো। “তুমি দেশ ছাড়ার আগে আমরা এ নিয়ে আবার কথা বলবো। তুমি যদি আগ্রহী হও তাহলে আমরা দুজনেই প্রচুর টাকা পাবো।”
আমি মাথা ঝাঁকিয়ে উঠে দাঁড়ালাম হ্যারির হাত থেকে খাবারের ট্রে’টা নেবার জন্য।
“আরে দেখো দেখো,” বললো, লিউলিন উচ্চস্বরে, “হ্যারি তো দেখছি। আমাদের সবার জন্যেই এগনগ নিয়ে এসেছে! দারুণ একটা লোক সে।” আমার দিকে ঝুঁকে ফিসফিসিয়ে বললো, “আমি এগনগ একদম পছন্দ করি না। শূয়োরের হাগু ছাড়া আর কিছু না।” কিন্তু হ্যারির কাছ থেকে ট্রেটা নিয়ে টেবিলে খাবার রাখতে ব্যস্ত হয়ে গেলো সে।
“ডার্লিং,” হাতঘড়িটার দিকে তাকিয়ে বললো ব্লাঁশে, “এখন আমরা সবাই একসাথে আছি। তুমি কেন ভাগ্য গণনা করছে না। এখন পৌনে বারোটা বাজে, নতুন বছর আসার আগেই ক্যাটের ভাগ্যটা জানা উচিত।” লিউলিন মাথা নেড়ে সায় দিয়ে চলে গেলো। এগনগ খাওয়ার বিড়ম্বনা থেকে মুক্তি পেয়ে সে বরং খুশি।
তার দিকে সন্দেহের দৃষ্টিতে তাকালো হ্যারি। “জানো,” ব্লাঁশেকে বললো সে, “আমাদের বিয়ে হয়েছে পঁচিশ বছর হলো, প্রত্যেক বছর আমি ভাবি ক্রিসমাস পার্টিতে কে গাছের গোড়ায় এগনগ ফেলে রাখে।”
“এগনগ আমার খুব ভালো লাগে,” বললাম তাকে। জিনিসটার স্বাদ আসলেই ভালো লাগে।
“কাজটা করে তোমার ঐ ভাই…” হ্যারি বললো। “এতগুলো বছর ধরে তাকে আমি সাপোর্ট দিয়ে আসছি আর সে কিনা আমার প্রিয় এগনগ গাছের গোড়ায় ফেলে দেয়! এই ভবিষ্যত গণনাকারীকে আবিষ্কার করাটাই হলো তার প্রথম ভালো কোনো কাজ।
“আসলে,” বললো ব্লাঁশে, “লিলিই ঐ গণকের কথা বলেছিলো, ঈশ্বরই জানে মেয়েটা কিভাবে জানতে পারলো ফিফথ এভিনু হোটেলে একজন হস্তরেখা বিশারদ কাজ করে। সম্ভবত এখানে সে দাবা খেলার কোনো প্রতিযোগীতায় অংশ নিয়েছিলো, কাটাকাটাভাবে বললো। “আজকাল মনে হয় সবখানেই ঐ দাবা খেলা চলে।”
লিলির দাবা খেলা নিয়ে চুড়ান্ত বিরক্তি প্রকাশ করে ব্লাঁশেকে দায়ি করলো হ্যারি। ব্লাঁশেও পাল্টা তাকে অভিযুক্ত করলো তাদের একমাত্র সন্তানকে এরকম একটি অসামাজিক আর বিরক্তিকর খেলায় আসক্ত করার জন্যে।
লিলি যে শুধু দাবাই খেলে তা নয়, বরং দাবা ছাড়া আর কোনো কিছুর প্রতি মেয়েটার আগ্রহ নেই। ব্যবসা কিংবা বিয়েশাদি কোনোটাই না-হ্যারির জন্যে এটা দ্বিগুন আক্ষেপের বিষয়। ব্লাঁশে আর লিউলিনও লিলির আজেবাজে সব জায়গায় গিয়ে স্ট্যাটাসবিহীন লোকজনের সাথে মেলামেশা করাটা দারুণ অপছন্দ করে। সত্যি বলতে কি, এই খেলার প্রতি লিলির যে মোহগ্রস্ততা সেটা কোনোক্রমেই কাটানো যাচ্ছে না। মেয়েটা তার জীবনের সমস্ত মেধা আর সময় অপচয় করে যাচ্ছে একটা সাদা কালো চেক-চেক বোর্ডে কতোগুলো কাঠের টুকরো ঠেলে ঠেলে। তার পরিবারের লোকজনের প্রতি আমি সহমর্মি না হয়ে পারি না।
“লিলি সম্পর্কে গণক কি বলেছে তোমাকে বলছি,” ব্লাঁশেকে আমলে না। নিয়ে বললো হ্যারি। “ঐ মহিলা বলেছে আমার পরিবারের বাইরে এক তরুণী আমার জীবনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে।”