“মেয়ের কথা আর কী বলবো? এখানে আমার নৈতিক সাপোর্ট দরকার। আমি আমার শ্যালকের সাথে আজকের পার্টিতে আঁটকে আছি।”
“ঠিক আছে, আমি আসছি,” তাকে বললাম।
“দারুণ। আমি জানতাম তুমি রাজি হবে। তাহলে নীচে নামলেই সলকে দেখতে পাবে। এখানে আসার পর বিশাল একটা অভ্যর্থনা পাবে, বুঝলে।”
ফোনটা রাখার পর আমি আরো বিষণ্ণ হয়ে উঠলাম। আমার দরকার হ্যারির অর্থহীন প্রলাপ আর তার বিরক্তিকর পরিবারের সঙ্গ। তবে হ্যারি আমাকে সব সময়ই হাসাতে পারে। হয়তো এর ফলে আমার নিজের সমস্যা থেকে কিছুক্ষণের জন্যে মুক্তও হতে পারবো।
টেপ ভল্টে ঢুকে দেখতে পেলাম অপারেটররা সেখানে বসে ছোট্ট গ্লাসের টিউবে সাদা পাউডার ভরে কী যেননা করছে। আমার দিকে অপরাধী চোখে তাকালো তারা। বোঝাই যাচ্ছে কাপড় বোনার কাজ না, কোকেন সেবন করার জন্য তারা এখানে এসেছে।
“আমি চলে যাচ্ছি,” বললাম তাদেরকে। “তেষট্টি নাম্বার ড্রাইভে টেপ বসানোর মতো শক্তি কি আপনাদের আছে, নাকি আজকের রাতের জন্যে এয়ারলাইন বন্ধ করে দেবো আমরা?”
তারা একে অন্যের দিকে ফ্যালফ্যাল করে তাকালো। আমি আর কিছু না বলে আমার কোট আর ব্যাগ তুলে নিয়ে চলে এলাম লিফটের কাছে।
নীচের তলায় এসে দেখি বিশাল কালো রঙের লিমোজিনটা অপেক্ষা করছে আমার জন্যে। গাড়ির জানালার কাঁচের ভেতর দিয়ে সলকে দেখতে পেলাম। আমাকে দেখতে পেয়ে সে গাড়ি থেকে বের হয়ে বিশাল কাঁচের দরজাটা খুলে দিলো।
সল লম্বায় ছ’ফুটের বেশি। হালকা-পাতলা গড়নের। দেখতে একেবারে হ্যারির মতো। শুধু ওজনে তার চেয়ে কম। সলের ইউনিফর্মে সাদা সাদা তুষার লেগে রয়েছে। চওড়া হাসি দিয়ে আমাকে গাড়ির পেছনের সিটে বসতে দিলো সে।
“হ্যারির কথা না রেখে উপায় রইলো না তাহলে?” বললো সে। “তাকে না। বলাটা খুব কঠিন।”
“একেবারে নাছোরবান্দা,” আমি একমত পোষণ করলাম। “‘না’ শব্দটার মানে সে বোঝে কিনা বুঝতে পারছি না। তার এই আধ্যাত্মিক কাজকারবার কোথায় হচ্ছে?”
“ফিফথ এভিনু হোটেলে,” দরজা বন্ধ করতে করতে বললো সল। ড্রাইভিং সিটে বলে ইঞ্জিন স্টার্ট করে দিলে আস্তে আস্তে আমাদের গাড়িটা জমে থাকা তুষার ভেদ করে এগোতে লাগলো।
নিউইয়ার্স ইভের দিন নিউইয়র্কের বড় বড় সব রাস্তাই কর্মব্যস্ত দিনের মতো জনাকীর্ণ থাকে। লোকজন এক বার থেকে আরেক বারে ছুটে যায়। আবর্জনা আর কনফেত্তিতে ভরে থাকে পথঘাট।
আজ রাতটাও এর ব্যাতিক্রম নয়। কয়েকজন মাতাল পথচারি আরেকটু হলে সলের লিমোজিনের সামনে পড়ে যেতো। একটা গলি থেকে বালি শ্যাম্পেইনের বোতল উড়ে এসে পড়লো আমাদের গাড়ির ছাদে।
“এরকম পরিস্থিতিতে গাড়ি চালানো সহজ কাজ নয়,” সলকে বললাম।
“আমি এতে অভ্যস্ত হয়ে গেছি,” জবাব দিলো সে। “আমি মি: র্যাড আর তার পরিবারকে প্রত্যেক নিউইয়ার্স ইভের দিন বাইরে ঘুরাতে নিয়ে যাই। এ সময়টাতে এমনটাই থাকে সব সময়। আমাকে ড্রাইভিংয়ের জন্যে পারিশ্রমিক না দিয়ে যুদ্ধ করার জন্য দেয়া উচিত।”
“হ্যারির সাথে কতো দিন ধরে আছো?”
“পঁচিশ বছর ধরে,” বললো সে। “লিলির জন্মের আগে থেকেই আমি মি: র্যাডের সাথে কাজ করে যাচ্ছি। সত্যি বলতে কি তার বিয়েরও আগে থেকে।”
“তার সাথে কাজ করতে তুমি নিশ্চয় খুব পছন্দ করো,” আমি বললাম।
“এটাই তো আমার কাজ,” বললো সল। “মি: র্যাডকে শ্রদ্ধা করি। তার সাথে আমার কিছু বাজে সময়ও গেছে। এমনও সময় গেছে যখন আমাকে বেতনের টাকা দিতে পারতেন না। তারপরও যেভাবেই হোক জোগার করে দিতেন। তার কাছে একটা লিমোজিন আছে এটা ভাবতে তিনি খুব পছন্দ করেন। প্রায়ই বলেন, একজন শফার থাকাটা নাকি স্ট্যাটাসের পরিচয় দেয়। এক সময় আমরা লিমোজিনে করেই ফারকোট ডেলিভারি দিতাম। নিউইয়র্কে আমরাই প্রথম এ কাজ করেছি।” একটু থেমে আবার বললো সে, “এখন বেশিরভাগ সময় আমি মিসেস র্যাড আর তার ভাইকে শপিংয়ে নিয়ে যাবার কাজ করি। মাঝেমাঝে লিলি যখন ম্যাচ খেলতে যায় তখন তাকেও নিয়ে যাই।”
এরপর ফিফথ এভিনু আসা পর্যন্ত আমাদের মধ্যে তেমন কোনো কথা হলো না।
“লিলি আজ রাতে আসছে না, তাই না?”
“হুম,” সল বললো।
“এজন্যেই আমি কাজ ছেড়ে আসতে রাজি হয়েছি। এমন কি জরুরি কাজ আছে যার জন্যে বাপ-মায়ের সাথে নিউইয়ার্স ইভের দিনও থাকা যাবে না?”
“আপনি তো জানেনই সে কি করছে,” সল যখন এ কথা বললো তখন ফিফথ এভিনু হোটেলে ঢুকছে গাড়িটা। হয়তো আমার কল্পনা, তবে মনে হলো সলের কণ্ঠে ভিতর আভাস রয়েছে। তার যা করার সে তাই করছে। দাবা খেলছে।”
.
ওয়াশিংটন পার্কের পশ্চিম দিকে ফিফথ এভিনু হোটেলটা অবস্থিত। তার ঠিক পাশেই বিখ্যাত গ্রিনউইচ ভিলেজ। যেখানে কবি-সাহিত্যিক আর শিল্পীদের আচ্ছা চলে দিনরাত। ইদানিং অবশ্য ভিয়েতনাম যুদ্ধবিরোধী আন্দোলন আর নেশা করার জন্যে জায়গাটার খ্যাতি ছড়িয়ে পড়েছে।
১৯৭২ সালে, তখনও পাবলিক বারগুলোর আধুনিকায়ন ঘটে নি। নিউইয়র্কের অনেক বার দেখতে সেই ওয়েস্টার্ন সিনেমার বারের মতোই রয়ে গেছে। ভেতরে ঢুকলে মনে হবে বাইরে ঘোড়া রেখে আপনি ঢুকেছেন। পার্থক্য হলো, ঘোড়ার বদলে এখন আমি লিমোজিন নিয়ে এসেছি।
হোটেলের ভেতরে জানালার পাশে একটা রাউন্ড টেবিলে বসে আছে হ্যারি। আমাকে দেখেই হাত নাড়লো সে। লিউলিন আর ব্লাঁশে বসে আছে তার মুখোমুখি। একে অন্যের সাথে ফিসফিস করে কথা বলছে বত্তিচেল্লির এক জোড়া সোনালি চুলের অ্যাঞ্জেলদের মতো।