“তুমি কি জানতে পেরেছে কে সে?” স্থিরচোখে অ্যাবিসের দিকে চেয়ে বললেন ক্যাথারিন।
“হ্যাঁ, পেরেছি, শান্তকণ্ঠে বললেন অ্যাবিস। “মাই ডিয়ার ফিগচেন, তুমি।”
.
“তুমি যদি সব জেনেই থাকো,” পরদিন সকালে বরফ আচ্ছাদিত পথ দিয়ে হার্মিটেজের দিকে যেতে যেতে অ্যাবিসকে বললেন জারিনা, “তাহলে পিটার্সবার্গে কেন এলে সেটা আমি বুঝতে পারছি না।”
তাদের দু’জনের থেকে বিশ কদম দূরে একজন রাজকীয় রক্ষী তাদেরকে অনুসরণ করছে। অবশ্য তাদের কথাবার্তা সে শুনতে পাচ্ছে না।
“তার কারণ এতোকিছু জানার পরও আমি তোমাকে বিশ্বাস করি, অ্যাবিস চোখেমুখে হাসি হাসি ভাব নিয়ে বললেন। “আমি জানতাম ফরাসি সরকারের পতন নিয়ে তুমি শংকিত, দেশটা অরাজকতায় নিপতিত হবে বলে আশংকা করছিলে। তুমি চাইছিলে মন্তগ্লেইন সার্ভিসটা যেনো ভুল কোনো হাতে না পড়ে, আর তুমি এও সন্দেহ করেছিলে আমি হয়তো তোমার কথামতো কাজ করছি না। কিন্তু আমাকে বললো তো ফিগচেন, ফরাসি সৈন্যেরা যাতে মন্তগ্লেইন থেকে সার্ভিসটা তুলে নিয়ে না যেতে পারে তারজন্যে তুমি কি পরিকল্পনা করেছিলে? রাশিয়ান সৈন্য দিয়ে ফ্রান্স আক্রমণ করতে?”
“মন্তগ্লেইনের পার্বত্য অঞ্চলে একদল সৈন্য লুকিয়ে রেখেছিলাম আমি, ফরাসি সৈন্যরা যাতে ঐ জায়গায় যেতে না পারে তার জন্যে, হেসে বললেন। ক্যাথারিন। “তারা ইউনিফর্মে ছিলো না।”
“বুঝতে পেরেছি,” বললেন অ্যাবিস। “এরকম কঠিন পদক্ষেপ নেবার কথা কেন ভাবলে?”
“আমি যা জানি তা তোমাকে বলব,” সম্রাজ্ঞি বললেন। “তুমি তো জানোই আমি ভলতেয়ারের মৃত্যুর পর তার লাইব্রেরিটা কিনে নিয়েছি। তার ঐ লাইব্রেরিতে কার্ডিনাল রিশেলুর লেখা একটি জার্নাল ছিলো। সাংকেতিক ভাষায় মন্তগ্লেইন সার্ভিসের ইতিহাস লিপিবদ্ধ করা ছিলো তাতে। ভলতেয়ার সেই সাংকেতিক ভাষার মমোদ্ধার করেছিলেন। এভাবে আমি জানতে পারি তিনি কি আবিষ্কার করেছিলেন। এই পাণ্ডুলিপিটা হার্মিটেজের একটা সিন্দুকে তালা মেরে রাখা হয়েছে। তোমাকে এখন সেখানেই নিয়ে যাচ্ছি ওটা দেখাবো বলে।”
“এই দলিলটার বিশেষত্ব কি?” জানতে চাইলেন অ্যাবিস, মনে মনে ভাবলেন তার বান্ধবী তাকে কেন এ কথাটা আগে বলে নি।
“রিশেলু সার্ভিসটার খোঁজ পান এক মুর ক্রীতদাসের কাছ থেকে, তাকে শার্লেমেইনের জন্যে উপহার হিসেবে দেয়া হয়েছিলো। তুমি তো জানোই স্পেন আর আফ্রিকায় মুরদের বিরুদ্ধে অনেক ক্রুসেড লড়েছিলেন শার্লেমেইন। তবে একবার সে দোভা আর বার্সেলোনা রক্ষা করেছিলেন খৃস্টান বাস্কদের বিরুদ্ধে। লড়াই করে, যারা মুরিশদের ক্ষমতাচ্যুত করতে চেয়েছিলো। বাস্করা খৃস্টান হলেও শত শত বছর ধরে ফ্রাঙ্কিশ সাম্রাজ্যকে ধ্বংস করে পশ্চিম ইউরোপের নিয়ন্ত্রণ নিতে উদগ্রীব ছিলো। বিশেষ করে আটলান্টিক উপকূল অঞ্চলটি।”
“মানে পিরেনিজের কথা বলছো?” বললেন অ্যাবিস।
“নিশ্চয়,” জারিনা জবাব দিলেন। তারা এটাকে বলে জাদুর পাহাড়। তুমি তো জানোই, এই পার্বত্য অঞ্চলটি জিওর জন্মের সময় থেকে মিস্টিক্যাল কাল্ট হিসেবে পরিচিত একটি গোষ্ঠীর আবাসভূমি ছিলো। সেলটিক জাতি ওখান থেকেই ব্রিটানিতে এবং অবশেষে বৃটিশ আইলে এসে বসবাস করতে শুরু করে। এই অঞ্চল থেকেই মার্লিন দ্য ম্যাজিশিয়ান এসেছিলো, বর্তমানে দ্রুইদ নামে আমরা যে সিক্রেট কাল্টকে চিনি তারাও এসেছিলো ওখান থেকেই।”
“আমি অবশ্য এতোটা জানতাম না,” বললেন অ্যাবিস। নীচের ঠোঁট জোড়া। কামড়ে ধরে আছেন তিনি, চোখেমুখে একধরণের কাঠিন্যতা।
“তুমি এটা জার্নালে পাবে,” বললেন সম্রাজ্ঞি। “রিশেলু দাবি করেছেন মুররা নাকি এই অঞ্চলটা দখল করে নেবার পর শতশত বছর ধরে সেল্ট আর বাস্কদের। সুরক্ষিত করে রাখা ভয়ানক একটি সিক্রেট সম্পর্কে জেনে যায়। এইসব মুরিশ বিজয়ীরা এক ধরণের কোড আবিষ্কার করে সেটাকে লিপিবদ্ধ করে রাখে। এই সিক্রেটা তারা মন্তগ্লেইন সার্ভিসের বিভিন্ন খুঁটির স্বর্ণ আর রূপার নক্সার মধ্যে লুকিয়ে রেখেছে। মুররা যখন বুঝতে পারে ইবারিয়ান দ্বীপপুঞ্জে তাদের ক্ষমতা হাতছাড়া হতে যাচ্ছে তখন তারা দাবাবোর্ডটি শার্লেমেইনের কাছে পাঠিয়ে দেয়, তাকে তারা খুব শ্রদ্ধা করতো। তারা মনে করেছিলো সভ্যতার ইতিহাসে সবচাইতে ক্ষমতাবান শাসক হিসেবে শার্লেমেইনই পারবেন এটার সুরক্ষা দিতে।”
“তুমি এই গল্পটা বিশ্বাস করো?” হার্মিটেজের বিশাল প্রাঙ্গনে আসতেই জিজ্ঞেস করলেন অ্যাবিস।
“তুমি নিজেই সেটা বিচার করে দেখো,” বললেন ক্যাথারিন। “আমি জানি সিক্রেটটা মুর কিংবা বাস্কদের চেয়েও প্রাচীন। দ্রুইদদের চেয়েও সেটার বয়স অনেক বেশি। বন্ধু, তোমাকে কি আমি জিজ্ঞেস করতে পারি ম্যাসন নামের পুরুষদের একটি সিক্রেট সোসাইটির নাম শুনেছো কিনা?”
অ্যাবিসের চেহারা ফ্যাকাশে হয়ে গেলো। দরজা দিয়ে ঢুকতে যাবে এমন সময় তিনি থমকে দাঁড়ালেন। “তুমি কি বললে?” ক্ষীণকণ্ঠে বললেন তিনি, খপ করে ধরে ফেললেন বান্ধবীর হাতটা।
“আহ,” বললেন ক্যাথারিন। “তাহলে তুমি জানবে এটা সত্যি। পাণ্ডুলিপিটা পড়ার পর আমি তোমাকে আমার গল্পটা বলবো।”
সম্রাজ্ঞির গল্প
আমার বয়স যখন চৌদ্দ তখন আমি আমার জন্মস্থান পোমারানিয়া ছেড়ে চলে আসি, যেখানে তুমি আর আমি একসাথে বেড়ে উঠেছি। তোমার বাবা সেসময় আমাদের পাশে যে এস্টেটটা ছিলো সেটা বিক্রি করে দিয়ে তার মাতৃভূমি ফ্রান্সে ফিরে গেছেন। আমি যে খুব শীঘ্রই রাণী হতে চলেছি সেই সুখবরটা তোমার সাথে ভাগাভাগি করে নেবার আনন্দ লাভ করতে পারি নি। এটা আমি কোনোদিনও ভুলতে পারবো না।