রেভারেন্ড মাদার, ভ্যালেন্টাইন মুখ ফসকে বলে ফেললো। আমি চাই আপনি জানুন, আমি আপনাকে খুব মিস্ করবো। আমি বুঝতে পারছি আমি আপনার কাঁধে বিরাট বোঝা হয়ে ছিলাম এতো দিন। আমি একজন ভালো নান। হতে পারলে আর আপনার জন্যে কম সমস্যা তৈরি করতে পারলে ভালো হতো
“ভ্যালেন্টাইন,” মিরিয়ে কঁনুই দিয়ে গুতো মেরে ভ্যালেন্টাইনকে চুপ করতে বললে অ্যাবিস মুচকি হেসে বললেন, “তুমি আসলে কি বলতে চাচ্ছো? তুমি আসলে ভয় পাচ্ছো তোমার খালাতো বোন মিরিয়ে থেকে আলাদা হয়ে যাবার-এই বিলম্ব উপলব্ধির উদ্রেক কি সেজন্যে হয়েছে?” ভ্যালেন্টাইন বিস্ময়ে চেয়ে রইলো। অবাক হয়ে ভাবলো অ্যাবিস কি করে তার মনের কথা পড়ে ফেলতে পারলেন।
“এ নিয়ে আমিও চিন্তিত,” বলতে লাগলেন অ্যাবিস। মিরিয়ের কাছে একটা কাগজ বাড়িয়ে দিলেন তিনি। এখানে তোমার তত্ত্বাবধান যিনি করবেন সেই গার্ডিয়ানের নাম-ঠিকানা লেখা আছে। এর নীচে লেখা আছে তোমাদের দুজনের ভ্রমণ সংক্রান্ত যাবতীয় নির্দেশনা।”
“আমাদের দুজনের!” ভ্যালেন্টাইন অনেকটা চিৎকার করে বললো। পারলে নিজের চেয়ার থেকে উঠে দাঁড়ায়। “ওহ্, রেভারেন্ড মাদার, আপনি আমার কাঙ্খিত ইচ্ছেটা পূরণ করলেন!”
অ্যাবিস হেসে ফেললেন। “আমি ভালো করেই জানি তোমাদের দু’জনকে যদি একত্রে না পাঠাই তাহলে তোমরা আমার কথার অবাধ্য হয়ে আমার পরিকল্পনা নস্যাৎ করে দিয়ে একত্রিত হয়ে যাবে কোনো না কোনোভাবে। তাছাড়া তোমাদের দুজনকে একত্রে পাঠানোর অন্য আরেকটা কারণও আছে। ভালো করে শোনো। এই অ্যাবির প্রত্যেক নানের জন্যেই টাকাপয়সা আসে। যেসব নানদেরকে তাদের পরিবার পুণরায় ফিরিয়ে নিয়েছে তারা চলে গেছে নিজেদের বাড়িতে। কিছু কিছু নানকে তাদের দূরসম্পর্কিয় আত্মীয়স্বজন আশয়। দিয়েছে। তারা যদি অ্যাবিতে ভরণপোষনের জন্যে টাকা-পয়সা নিয়ে আসে আমি সেসব টাকা তাদের কাছে পাঠিয়ে দেবো তাদের ভালোমতো থাকাখাওয়ার জন্য। আর যদি কোনো তহবিল না পাওয়া যায় তাহলে অন্য কোনো দেশে ভালো। কোনো অ্যাবিতে ঐসব তরুণীদের পাঠিয়ে দেবো। আশা করি সেখানে তারা নিরাপদেই থাকবে। আমার সব মেয়েদের নিরাপদ ভ্রমণ আর বেঁচে থাকার জন্যে। যা যা করা দরকার আমি তা করবো।” অ্যাবি তার হাত দুটো ভাঁজ করে আবার বলতে লাগলেন। “তবে অনেক দিক থেকেই তোমরা দু’জন বেশ ভাগ্যবতী, ভ্যালেন্টাইন। তোমার নানা তোমার জন্য বিশাল পরিমাণের সম্পদ রেখে গেছেন। তা থেকে বছরে যে আয় হয় সেই টাকা দিয়ে আমি তোমার এবং তোমার বোন মিরিয়ের ভরণপোষণ করি। আর যেহেতু তোমাদের কোনো পরিবার-পরিজন নেই তাই তোমাদের তত্ত্বাবধানের জন্য একজন গডফাদার আছেন। তিনিই তোমাদের সব কিছু দেখভাল করবেন। এই কাজ করতে তিনি রাজি হয়েছেন। আমার কাছে তার লিখিত সম্মতিপত্র রয়েছে। আর এটাই আমাকে দুশ্চিন্তায় ফেলে দিয়েছে।”
অ্যাবিস যখন গডফাদারের কথা উল্লেখ করছিলেন তখন মিরিয়ে তাকিয়েছিলো ভ্যালেন্টাইনের দিকে, এখন সে হাতে ধরা কাগজটার দিকে তাকালো। সেখানে অ্যাবিস গোটা গোটা অক্ষরে লিখে রেখেছেন : ‘এম জ্যাকলুই ডেভিড, চিত্রকর,’ এর নীচে প্যারিসের একটি ঠিকানা। ভ্যালেন্টাইনের যে একজন গডফাদার আছে এ কথা সে জানতো না।
“আমি বুঝতে পারছি,” অ্যাবিস আবার বলতে শুরু করলেন, “সবাই যখন। জানবে আমি অ্যাবিটা বন্ধ করে দিয়েছি তখন ফ্রান্সে অনেকেই বেজায় নাখোশ হবে। আমাদের অনেকেই তখন বিপদে পড়ে যাবে, বিশেষ করে আঁতুয়ার বিশপের মতোন লোকজনের কাছ থেকে। তিনি জানতে চাইবেন এখান থেকে। আমরা কি কি জিনিস সরিয়েছি। বুঝতেই পারছো, আমাদের কর্মকাণ্ডের খবর পুরোপুরি গোপন রাখা কিংবা আড়াল করা সম্ভব নয়। কিছু কিছু নানকে হয়তো খুঁজে বের করাও হবে। তাদের জন্যে হয়তো দেশ ছেড়ে পালানোরও প্রয়োজন পড়তে পারে। সেজন্যে আমি আমাদের মধ্য থেকে আটজনকে বেছে নিয়েছি, তাদের প্রত্যেকের কাছে সার্ভিসের কয়েকটি অংশ থাকবে তবে তারা সেইসাথে সম্মিলিতভাবে আরেকটা কাজও করবে, কেউ যদি দেশ ছাড়তে বাধ্য হয় তখন তার রেখে যাওয়া অংশটা কোথায় আছে সেটা তারা জানবে। অথবা কোথায় সেটা রাখা আছে সেটা খুঁজে বের করার ব্যাপারটা জানবে। ভ্যালেন্টাইন, তুমি এই আটজনের একজন।”
“আমি!” বললো ভ্যালেন্টাইন। ঢোক গিললো সে। তার গলা আচমকা শুকিয়ে গেলো। কিন্তু রেভারেন্ড মাদার, আমি…মানে আমি চাই না…”।
“তুমি বলতে চাচ্ছো এই গুরুদায়িত্ব নিতে তুমি অপারগ,” মুচকি হেসে বললেন অ্যাবিস। “আমি এ ব্যাপারে অবগত আছি। এই সমস্যার সমাধানের ক্ষেত্রে আমি তোমার ভদ্র খালাতো বোনের উপর নির্ভরশীল।” মিরিয়ের দিকে তাকালেন তিনি। মাথা নেড়ে সায় জানালো সে। “আমি যে আটজনকে বাছাই করেছি তাদের শুধু এ কাজ করার সক্ষমতাই আছে তা নয়, বরং তাদের কৌশলগত অবস্থানও এক্ষেত্রে বিরাট ভূমিকা রেখেছে। তোমার গডফাদার এম. ডেভিড থাকেন প্যারিসে, ফ্রান্সের দাবাবোর্ডের একেবারে কেন্দ্রে। একজন বিখ্যাত চিত্রকর তিনি, ফ্রান্সের উপরমহলে তাকে সম্মানিত ব্যক্তি বলে মনে করা হয়। তিনি অ্যাসেম্বলির একজন সদস্যও বটে। ভদ্রলোক বিপ্লবীদের সমর্থক হিসেবেও পরিচিত। প্রয়োজন পড়লে তিনি তোমাদের দু’জনকে রক্ষা করতে পারবেন। তোমাদের ভরণপোষণের জন্যে তাকে আমি উপযুক্ত খরচাপাতিও দেবো।”