খেলেছিলো সেটি দিয়ে দেয়া হয় গরিয়াঁকে। এরপর থেকে এটাকে মন্তগ্লেইন সার্ভিস নামে ডাকা হতে থাকে।
.
“এই হলো মন্তগ্লেইন অ্যাবির গল্প, নিজের গল্পটা শেষ করে অ্যাবিস বললেন। নিশ্চুপ বসে থাকা নানদের দিকে তাকালেন তিনি। “অনেক বছর পর গরিয়াঁ দ্য মন্তগ্লেইন যখন মৃত্যুশয্যায় উপনীত হলো তখন সে দূর্গসহ পুরো সম্পত্তিটা চার্চকে দান করে দেয়। এরফলে দূর্গটি হয়ে ওঠে একটি অ্যাবি, যা এখন আমরা ব্যবহার করছি। সেইসাথে চার্চের কাছে চলে আসে মন্তগ্লেইন সার্ভিস নামে পরিচিত দাবাবোর্ডটি।”
একটু থামলেন অ্যাবিস, যেনো এরপরের কথাগুলো কিভাবে বলবেন ঠিক করে উঠতে পারছেন না। অবশেষে বলতে আরম্ভ করলেন তিনি।
“তবে গরিয়াঁ সব সময়ই বিশ্বাস করতো এই মন্তগ্লেইন সার্ভিসটায় রয়েছে ভয়ঙ্কর এক অভিশাপ। দাবাবোর্ডটি তার হাতে আসার অনেক আগে থেকেই। গুজব শুনেছিলো এটাতে নাকি শয়তানের আছর আছে। বলা হয়ে থাকে, চ্যারিয়ট নামের শার্লেমেইনের এক ভাতিজা এই দাবাবোর্ডে খেলার সময় নিহত হয়েছিলো। এই দাবাবোর্ডে খেলার সময় নাকি অনেক অদ্ভুত ঘটনা ঘটেছে-যুদ্ধ বিগ্রহ আর রক্তপাতের মতো ভয়ঙ্কর সব ঘটনা।
“বার্সেলোনা থেকে শার্লেমেইনের কাছে এই দাবাবোর্ডটি যে আটজন কৃষ্ণাঙ্গ দাস বয়ে নিয়ে এসেছিলো তারা অনেক অনুনয় করেছিলো মন্তগ্লেইনে ওটা স্থানান্তরের সময় যেনো তাদেরকেও ওখানে নিয়ে যাওয়া হয়। রাজা তাই। করেছিলেন। কিন্তু গরিয়াঁ কিছুদিনের মধ্যেই জানতে পারলো রাতের বেলায় দুর্গে। রহস্যময় আচার পালন করা হয়। আর কাজটি করে ঐসব কৃতদাসেরা। গরিয়াঁ তার উপহারটি নিয়ে ভয় পেতে শুরু করলো, যেনো এটা শয়তানের কোনো হাতিয়ার। দূর্গের ভেতরে সার্ভিসটাকে মাটি চাপা দিয়ে রেখে দিলো সে। শার্লেমেইনকে অনুরোধ করলো দেয়ালে যেনো একটা অভিশাপ বাণী লিখে রাখা। হয় যাতে করে জিনিসটা কেউ সরাতে না পারে। রাজার কাছে অনুরোধটি হাস্যকর শোনালেও তিনি গরিয়াঁর কথামতো কাজ করলেন। এভাবেই আমাদের। অ্যাবির দরজার উপরে যে বাণীটা আছে সেটা আমরা পেয়ে যাই।”
অ্যাবিস থেমে গেলে তাকে দেখে মনে হলো অনেক বেশি ক্লান্ত আর ফ্যাকাশে, নিজের চেয়ারে বসতে গেলে আলেক্সান্দ্রিয়ে উঠে তাকে সাহায্য করলেন।
“মন্তগ্লেইন সার্ভিসের কি হবে, রেভারেন্ড মাদার?” সামনের বেঞ্চে বসা এক বৃদ্ধ নান জানতে চাইলো।
অ্যাবিস হেসে ফেললেন। “আমি তোমাদেরকে ইতিমধ্যেই বলেছি এই অ্যাবিতে থাকলে বিরাট বিপদে পড়তে হবে। ফ্রান্সের সৈন্যেরা চার্চের সম্পত্তির খোঁজে বেরিয়ে পড়েছে। আমি তো বলেছিই, এখানে মাটির নীচে লুকিয়ে রাখা হয়েছে মহামূল্যবান একটি জিনিস, সম্ভবত সেই জিনিসটা অশুভশক্তিও হতে পারে। এখানে অ্যাবিস হিসেবে ঢোকার সময় আমাকে জানানো হয়েছিলো ঠিক কোথায় দাবার প্রতিটি অংশ লুকিয়ে রাখা হয়েছে। এখন শুধুমাত্র আমিই এই সিক্রেটটা জানি। আমাদের মিশন হলো শয়তানের অস্ত্রটা যথা সম্ভব ছড়িয়ে ছিটিয়ে দেয়া যাতে করে পুরো জিনিসটা কখনও ক্ষমতালোভী কারোর হস্তগত না হয়। এই জিনিসটার রয়েছে অতিপ্রাকৃত ক্ষমতা, প্রকৃতির নিয়মকানুন এর কাছে অসহায়।
“তবে এই জিনিসগুলো ধ্বংস করার মতো সময় যদি আমাদের হাতে। থাকেও তারপরেও আমি সে কাজ করবো না। এরকম মহাক্ষমতাধর জিনিস ভালো কাজেও ব্যবহৃত হতে পারে। এজন্যে আমাকে শুধু মন্তগ্লেইন সার্ভিসের গোপনীয়তা রক্ষা করার জন্যে শপথ করানো হয় নি, একে রক্ষা করার শপথও। করানো হয়েছিলো। সম্ভবত, ইতিহাসের কোনো এক সময়, যদি সব কিছু অনুকূলে থাকে, আমরা এর সবগুলো অংশ একত্রিত করে এর রহস্য উন্মোচন করবো।”
.
যদিও অ্যাবিস জানতেন মাটির নীচে ঠিক কোথায় মন্তগ্লেইন সার্ভিসের বিভিন্ন অংশ লুকিয়ে রাখা হয়েছে তারপরও সব নানেরা মিলে সবগুলো অংশ মাটি খুড়ে বের করে ধুয়েমুছে সাফ করতে দুই সপ্তাহ লেগে গেলো। মেঝের পাথর থেকে বোর্ডটা সরাতে প্রয়োজন হলো চারজন নানের। প্রতিটি দাবাবোর্ডের বর্গের নীচে সিম্বল আঁকা। বিশাল ধাতব বাক্সে রাখা হলো একটা কাপড়। তারপর বাক্সের এককোণে মোম দিয়ে সীলগালা করা হলো যাতে করে ছত্রাক কিংবা আদ্রতায় নষ্ট
হয়ে যায়। কাপড়টা মিডনাইট ব্লু রঙের ভেলভেট, স্বর্ণের এম্ব্রয়ডারি করে রাশিচক্রের প্রতীক আঁকা আছে তাতে। কাপড়টার মাঝখানে সাপের আকৃতিতে দুটো পেঁচানো বৃত্ত অঙ্কিত থাকলো যা দেখতে অনেকটা ইংরেজি ৪ সংখ্যার মতো। অ্যাবিস বিশ্বাস করলেন এই কাপড়ে মোড়ানো থাকলে মন্তগ্লেইন সার্ভিস পরিবহনের সময় ক্ষতিগ্রস্ত হবে না।
দ্বিতীয় সপ্তাহের শেষের দিকে অ্যাবিস সব নানকে রওনা হবার জন্য প্রস্তুত হতে বললেন। প্রত্যেক নানকে একান্তে ডেকে নির্দেশ দিতে শুরু করলেন ঠিক কোথায় তাকে পাঠানো হবে যাতে করে অন্যের অবস্থান কারো পক্ষে জানা না। যায়। এরফলে প্রত্যেকের ঝুঁকিও অনেকটা কমে আসবে। মন্তগ্লেইন সার্ভিসের অল্প সংখ্যক অংশ যখন বাকি তখন নানদের সংখ্যা তারচেয়ে বেশি রয়ে গেলো অ্যাবিতে, কিন্তু অ্যাবিস ছাড়া আর কেউ জানতো না কোন্ কোন্ নান সার্ভিসের অংশ বহন করবে আর কারা তা করবে না।
ভ্যালেন্টাইন এবং মিরিয়েকে অ্যাবিস তার স্টাডিতে ডেকে পাঠালেন। তারা কক্ষে ঢুকে দেখলো বিশাল ডেস্কে বসে আছেন তিনি। তাদেরকে সামনের চেয়ারে বসার আদেশ করলেন অ্যাবিস। ডেস্কের উপর মন্তগ্লেইন সার্ভিসের কয়েকটি অংশ নীল ভেলভেট কাপড়ে মোড়ানো অবস্থায় আছে। কলমটা ডেস্কের উপর রেখে অ্যাবিস তাকালেন তাদের দিকে। মিরিয়ে আর ভ্যালেন্টাইন একে অন্যের হাত ধরে উদ্বিগ্ন হয়ে বসে আছে।