জোকের গাল থেকে টোল পড়া হাসি উধাও হয়ে গেলো। “তুমি নিশ্চয় আমার সাজেশন অগ্রাহ্য করার কথা বলছো না?”
“এটা যদি আদেশ না হয়ে নিছক কোনো সাজেশন হয়ে থাকে তাহলে আমি সেটা গ্রহণ করবো না।”
“আর আমি যদি আদেশ করি তাহলে?” বাঁকাভাবে বললেন জোক। “এই ফার্মের একজন সিনিয়র পার্টনার হিসেবে আমি-”
“তাহলে আমি বলতে বাধ্য হচ্ছি, এই প্রজেক্ট থেকে আমাকে পদত্যাগ করতে হবে, স্যার। কাজটা অন্য কাউকে দিয়ে করিয়ে নিন। অবশ্য আমি আমার কাজের একটা কপি নিজের কাছে রাখবো, পরবর্তীতে এ নিয়ে কোনো প্রশ্ন উঠলে আমি সেটা প্রমাণ হিসেবে দেখাতে পারবো।”
জোক বুঝতে পারলেন এর মানেটা কি। সিপিএ ফার্ম নিজেরা নিজেদেরকে অডিট করে না। শুধুমাত্র আমেরিকান সরকারের উচ্চপদস্থ লোকজনই এসব ব্যাপারে জবাবদিহিতা চাইতে পারে। আর সেটা কেবল তখনই ঘটে যখন তারা মনে করে বে-আইনী কিংবা অনিয়ম করা হয়েছে।
“বুঝতে পেরেছি,” বললেন জোক। “বেশ, আমি তাহলে তোমাকে কাজ থেকে ছাড়িয়ে নেবো, ভেলিস। এটা পরিস্কার, এই সিদ্ধান্তটি আমি নিজেই নিচ্ছি।” ঝট করে ঘুরে হনহন করে চলে যান তিনি।
পরদিন সকালে আমার ম্যানেজার, ত্রিশোর্ধ বয়সের নাদুসনুদুস শরীর আর সোনালি চুলের লিসেল হোমগ্রেন আমার কাছে আসে। লিসেলকে ক্ষিপ্ত মনে হয় আমার। তার মাথার চুল এলোমেলো, গলার টাইটাও আলগা হয়ে ছিলো।
“ক্যাথারিন, আপনি জোকের সাথে কি করেছেন?” এসেই এ কথা বলে সে। “আরে উনি তো ভেজা মুরগির মতো ক্ষেপে আছেন। আজ ভোরবেলায় আমাকে ফোন করেছিলেন। আমি শেভ করার সময়টাও পাই নি। আমাকে বললেন তিনি। আপনাকে কাজ থেকে বিরত রাখতে চাচ্ছেন। ভবিষ্যতে কোনো ক্লায়েন্টের কাছে আপনাকে এক্সপোজ করতে চান না। আরো বলেছেন, আপনি নাকি বিগবয়দের সাথে খেলার জন্যে এখনও প্রস্তত হন নি।”
লিসেলের জীবন এই ফার্মকে কেন্দ্র করেই আবর্তিত। তার এমন একটা বউ। আছে যার শখ আহ্লাদ মেটাতে গিয়ে তাকে রীতিমতো হিমশিম খেতে হয়। মহিলার আবার পার্টিপ্রীতি রয়েছে। সেটার ফি তাকেই বহন করতে হয়। ব্যাপারটা তার ভালো না লাগলেও সে খুবই নিরুপায়।
“আমার মনে হয় গতরাতে আমার মাথা এলোমেলো হয়ে গেছিলো, একটু ঠাট্টাচ্ছলে বলি। আমি একটা দরপত্র পাল্টে দিতে অস্বীকৃতি জানিয়েছি। তাকে আমি বলেছি তিনি চাইলে কাজটা অন্য কাউকে দিয়ে করিয়ে নিতে পারেন।”
আমার পাশের চেয়ারে হাত-পা ছেড়ে বসে পড়ে লিসেল। কয়েক মুহূর্ত সে কিছুই বলে নি।
“ক্যাথারিন, ব্যবসায়িক জগতে এমন অনেক বিষয় আছে যা আপনার মতো অল্পবয়সীদের কাছে অনৈতিক বলে মনে হতে পারে। তবে দেখতে যেমনটি মনে হয় আসলে সেগুলো ওরকম না।”
“কিন্তু এটা ওরকমই।”
“আমার কথাটা মন দিয়ে শুনুন, জোক আপহাম যদি কোনো কিছু করতে বলেন তাহলে ধরে নেবেন তার একটা কারণ নিশ্চয় আছে।”
“আমিও বাজি ধরে বলতে পারি কারণ একটা আছে। আমার ধারণা কারণটা আর কিছু না, ত্রিশ থেকে চল্লিশ হাজার ডলার, তাকে কথাটা বলেই আমি আমার কাজে মনোযোগ দেই।
“আপনি যে নিজের পায়ে কুড়াল মারছেন সেটা কি বুঝতে পারছেন না?” আমাকে বলে সে। “জোক আপহামের মতো লোকজনের সাথে আপনি লাগতে পারেন না। তিনি ভদ্রছেলের মতো চুপচাপ মাথা নীচু করে এককোণে গিয়ে বসে থাকবেন না। আপনি যদি আমার উপদেশটা শোনেন তাহলে বলি, এক্ষুণি তার অফিসে গিয়ে তার কাছে ক্ষমা চেয়ে আসুন। তাকে বলবেন, এখন থেকে তিনি যা যা করতে বলবেন তাই করবেন। তার সাথে হাসিমুখে কথা বলে তাকে একটু পটিয়ে আসুন। আর যদি এটা না করেন তাহলে আপনার ক্যারিয়ার এখানেই শেষ।”
“বে-আইনী কোনো কিছু করতে চাই নি বলে তিনি আমাকে বরখাস্ত করতে পারেন না,” বলি আমি।
“আপনাকে তার বরখাস্ত করা লাগবে না। তিনি এমন একটা পজিশনে আছেন যে, আপনার জীবন এতোটাই বিষিয়ে তুলবে, আপনার কাছে মনে হবে এই জীবনে আর এই অফিসে না আসাই ভালো। আপনি খুব ভালো মেয়ে, ক্যাথারিন। আপনাকে আমি ভীষণ পছন্দ করি। আপনি আমার কথা শুনলেন, এখন নিজের এপিটাফ লিখবেন কিনা সেটা আপনার ব্যাপার।”
.
এটা এক সপ্তাহ আগের ঘটনা। আমি জোকের কাছে গিয়ে ক্ষমা চাই নি। আমাদের মধ্যে কি কথাবার্তা হয়েছে সেটাও কাউকে বলি নি। ক্রিসমাসের আগের দিনই আমি আমার ক্লায়েন্টের কাছে দরপত্রের রিকমেন্ডশন পাঠিয়ে দেই যথাযথ নিয়ম মেনে। জোকের পছন্দের লোক সেই দরপত্রে টিকতে পারে নি। তখন থেকেই ফুব্রাইট, কোন, কেইন অ্যান্ড আপহাম ফার্মে সব কিছু কেমন জানি শান্ত হয়ে ছিলো। অবশ্য আজকের সকালের আগপর্যন্ত।
আমার উপর কি ধরণের অত্যাচার করা হবে সেটা ঠিক করতে তাদের সাত দিন লেগে গেছে। আজ সকালে লিসেল আমার অফিসে আসে।
“আপনি কিন্তু বলতে পারবেন না আমি আপনাকে সাবধান করে দেই নি,” বলেছিলো সে। “মহিলাদের একটা সমস্যা কি জানেন, তারা কোনো কথা শোনে বা। আমার অফিসের পাশের টয়লেটে কেউ ফ্লাশ করলো। শব্দটা মিইয়ে যাওয়ার অপেক্ষা করলাম আমি।
“তার কাণটা কি জানেন?” বললাম আমি। “তার কারণ আমাদের যুক্তিবুদ্ধি।”
“আপনি এখন যেখানে যাচ্ছেন সেখানে গেলে প্রচুর সময় পাবেন যুক্তিবুদ্ধি খাটানোর জন্য,” বললো ম্যানেজার। “পার্টনাররা আজ সকালে মিটিংয়ে বসে কফি আর ডাগনাট খেতে খেতে আপনার ভবিষ্যত নির্ধারণ করে দিয়েছেন। কোলকাতা আর আলজিয়ার্সের মধ্যে একটা টস হয়েছে। আপনি জেনে খুশি হবেন, আলজিয়ার্স জয়যুক্ত হয়েছে। এক্ষেত্রে আমার ভোটটা ছিলো খুবই গুরুত্বপূর্ণ। আশা করি আপনি সাধুবাদ দেবেন আমাকে।”