কোনো কিছুতে প্রথম মহিলা হওয়াটা পিকনিকের মতো ব্যাপার নয় মোটেও। তুমি প্রথম নারী নভোযাত্রি হও কিংবা চায়নিজ লন্ড্রিতে কাজ করা প্রথম নারী শ্রমিকই হও না কেন তোমাকে কটুক্তি, মশকরা আর তীর্যক মন্তব্য মেনে নিতেই হবে। অন্য যে কারোর চেয়ে তোমাকে অনেক বেশি পরিশ্রম করে পেতে হবে অপেক্ষাকৃত কম প্রতিদান।
তারা যখন আমাকে ‘আমাদের জগতে একমাত্র মহিলা, মিস ভেলিস’ হিসেবে পরিচয় করিয়ে দিতো তখন আমি খুব মজা পেতাম। এরকম কথা শুনে লোজন হয়তো ভাবতো আমি হলাম একজন গায়নোকলজিস্ট।
সত্য হলো আমি একজন কম্পিউটার বিশেষজ্ঞ, নিউইয়র্কের ট্রান্সপোর্টেশন ইন্ডাস্ট্রির সবচাইতে সেরা লোক। এজন্যেই তারা আমাকে নিয়োগ দিয়েছিলো। ফুষ্প্রাইট, কোন, কেইন অ্যান্ড আপহাম-এর পার্টনারশিপ যখন আমার খোঁজ করছিলো তখন তাদের রক্তলাল চোখে ভেসে উঠেছিলো ডলারের প্রতীকটি। তারা শুধু একজন নারীকেই দেখে নি, দেখেছে একজন বু-চিপ একাউন্টের জ্বলজ্যান্ত পোর্টফোলিওকে। দৃষ্টিগ্রাহ্য করার মতো যথেষ্ট তারুণ্যময়, মুগ্ধ করার জন্যে যথেষ্ট আনাড়ি, আমার ক্লায়েন্টদের হাঙ্গর সদৃশ্য মুখ হা করার মতো যথেষ্ট নিষ্কলুস-একজন নারীর মধ্যে যা যা খুঁজছিলো তারা তার সবটাই আমার মধ্যে ছিলো। কিন্তু এই মধুচন্দ্রিমাটা একেবারেই সংক্ষিপ্ত হয়।
ক্রিসমাসের কয়েক দিন আগে আমার এক ক্লায়ে বিশাল একটি শিপিং কোম্পানির কম্পিউটার হার্ডওয়্যার ক্রয়-পূর্বক ইকুইপমেন্ট খতিয়ে দেখার কাজ করছিলাম তখন আমাদের কোম্পানির সিনিয়র পার্টনার জোক আপহাম আমার অফিসে এসে উপস্থিত হন।
জোকের বয়স ষাটেরও বেশি, লম্বা, হালকাঁপাতলা আর বেশ তারুণ্যময় একজন ব্যক্তি। প্রচুর টেনিস খেলে থাকেন, পরে থাকেন মাড় দেয়া ব্রুস ব্রাদার্স সুট, চুলে ডাই করেন সব সময়। তার হনহন করে হাটা দেখে মনে হতে পারে তিনি টেনিস খেলার শট মারতে যাচ্ছেন।
আমার অফিসে সেভাবেই এসে উপস্থিত হন জোক।
“ভেলিস, উচ্ছ্বাসের সাথে বলেছিলেন তিনি। “তুমি যে স্টাডিটা করছো সেটা নিয়ে আমি ভাবছিলাম। এ নিয়ে আমি নিজের সাথে অনেক তর্ক করেছি। অবশেষে বুঝতে পেরেছি কেন এ নিয়ে আমার মধ্যে খচখচানি হচ্ছে। এটা হলো জোকের কথা বলার একটি পরিচিত ভঙ্গি। এর মানে যতোই যুক্তি থাক, তার সাথে এ নিয়ে দ্বিমত প্রকাশ করা যাবে না।
“আমি প্রায় শেষ করে ফেলেছি, স্যার। আগামীকাল ক্লায়েন্টকে এটা দেবার কথা, সুতরাং আশা করবো আপনি আর কোনো পরিবর্তন করতে চাইবেন না।”
“তেমন কিছু না,” খুব দ্রভাবে বললেন তিনি। “আমি ঠিক করেছি আমাদের ক্লায়েন্টের জন্যে ডিস্ক-ড্রাইভের চেয়ে প্রিন্টারই বেশি উপযুক্ত হবে। আমি বলি কি, তুমি সিলেকশন ক্রাইটেরিয়াটা একটু চেঞ্জ করে দাও।”
কম্পিউটার বিজনেসে এটা হলো ‘নাম্বার ফিক্স’ করে দেবার আদেশ। আর এটা একেবারেই বে-আইনী কাজ। এক মাস আগে ছয়জন হার্ডওয়্যার সাপ্লায়ার তাদের সিল করা দরপত্র আমাদের ক্লায়েন্টের কাছে সাবমিট করেছে। এইসব দরপত্রগুলো নিরপেক্ষ অডিটর হিসেবে সিলেকশন ক্রাইটেরিয়ার উপর ভিত্তি করে প্রস্তুত করেছি আমরা। তাদেরকে বলেছি আমাদের ক্লায়েন্টের দরকার শক্তিশালী ডিস্ক-ড্রাইভ। একজন সাপ্লয়ার এরজন্যে সর্বনিম্ন দরদামও জমা দিয়েছে। দরপত্র আহ্বানের পর আমরা যদি এখন ঠিক করি ডিস্কড্রাইভের চেয়ে প্রিন্টারই বেশি গুরুত্বপূর্ণ তাহলে অন্য একজন সাপ্লায়ারের পক্ষে পুরো ব্যাপারটা চলে যাবে। আর সেই সাপ্লয়ারটা কে সেটা আমি খুব সহজেই অনুমাণ করতে পারছিলাম : যে সাপ্লায়ার সেদিন দুপুরে জোককে লাঞ্চ করাতে নিয়ে গিয়েছিলো।
আমি পরিস্কার বুঝতে পারছিলাম টেবিলের নীচ দিয়ে মহামূল্যবান কিছু বিনিময় করা হয়েছে। সম্ভবত ভবিষ্যতে আমাদের ফার্মের জন্যে কাজ করা, কিংবা জোকের জন্যে দামি কোনো ইয়ট অথবা স্পোর্টসকার। ডিলটা যাই-ই হোক না কেন, আমি তার অংশ হতে চাই নি।
“আমি দুঃখিত, স্যার,” তাকে বলেছিলাম। “ক্লায়েন্টর অনুমতি ছাড়া এখন কোনো রকম পরিবর্তন করা সম্ভব নয়। সেই সময়ও আমাদের হাতে নেই। আমরা ফোন করে ক্লায়েন্টকে বলতে পারতাম, সাপ্লায়ারদেকে তাদের আসল দরপত্রের সাথে আরেকটি সাপ্লিমেন্ট দিতে হবে কিন্তু সেটা করলে তারা নতুন বছরের আগে যন্ত্রপাতিগুলো অর্ডার দিতে পারবে না।”
“তার কোনো দরকার নেই, ভেলিস,” বললেন জোক। “আমি আমার ইনটুইশনকে অবজ্ঞা করে এই ফার্মের সিনিয়র পার্টনার হই নি। অনেকবারই আমি আমার ক্লায়েন্টদের না জানিয়ে তাদের হয়ে কাজ করেছি, চোখের পলকে বাঁচিয়ে দিয়েছি তাদের মিলিয়ন মিলয়ন ডলার। তারা কখনও ব্যাপারটা জানতেও পারে নি। এরকম দ্রুত সিদ্ধান্ত নেবার ক্ষমতার কারণেই আমাদের বিগ এইট ফার্ম বছরের পর বছর ধরে শীর্ষে অবস্থান করছে।” গালে টোল পড়া হাসি দিলেন তিনি।
পুরো কৃতিত্ব নেয়া ছাড়া জোক আপহাম একজন ক্লায়েন্টের জন্যে কিছু করবেন এটা একেবারেই অসম্ভব ব্যাপার, একটা সূচের ছিদ্রের ভেতর দিয়ে বিশাল আকৃতির উটকে ঢুকিয়ে দেয়ার মতোই অবাস্তব।
“স্যার, আমাদের ক্লায়েন্টের পক্ষ হয়ে সিল করা দরপত্র নিরপেক্ষভাবে মূল্যায়ণ করার দায়িত্বটা কিন্তু আমাদের। হাজার হলেও আমরা হলাম অডিট ফার্ম।”