“খুশিমনেই বলবো।” হেসে বললেন অ্যাবিস। “যিনি আমার হাতের এই রেখাটা এঁকে দিয়েছেন। আর এই সাইন বলছে আমিই নিরঙ্কুশ রাজত্ব করবো। তুমি হতে পারো রাশিয়ানদের শাসক, মাই ডিয়ার ফিগচেন, তবে দয়া করে ভুলে যেও না আমি কে। আর কে আমাকে মনোনীত করেছেন। মনে রেখো, ঈশ্বর হলেন সবচাইতে বড় দাবা খেলোয়াড়।”
কুইনের চতুর্থ সৈন্য
P-Q4 দিয়ে অর্থাৎ কুইনের চতুর্থ সৈন্য দিয়ে খেলা শুরু করা মানে ক্লোজ ওপেনিং। এর অর্থ উভয় পক্ষের ট্যাক্টিক্যাল কন্ট্যাক্ট খুব ধীরগতিতে ত্বরান্বিত হবে। কৌশল খাটানোর জন্য প্রচুর সুযোগ আছে এখানে তবে শত্রুর সাথে হাতে হাতে সম্মুখযুদ্ধে অবতীর্ণ হতে বেশ সময় লাগে…এখানে পজিশনাল দাবা হলো আসল কথা।
–কম্পিট বুক অব চেস ওপেনিং
ফ্রেড রিনফিল্ড
এক চাকর বাজারে গিয়ে লোকমুখে শুনতে পেলো যম তাকে খুঁজে বেড়াচ্ছে। সঙ্গে সঙ্গে নিজের বাড়িতে ছুটে এসে তার মনিবকে বললো পাশের শহর সামারায় পালিয়ে যাবে সে যাতে করে যম তাকে খুঁজে না পায়।
সেই রাতে খাবারের পর পরই দরজায় কড়াঘাতের শব্দ হলো। মনিব দরজা খুলতেই দেখতে পেলো কালো রঙের আলখেল্লা পরিহিত যম দাঁড়িয়ে আছে তার সামনে। চাকরের খোঁজ করলো যম।
“সে খুবই অসুস্থ, বিছানায় শুয়ে আছে,” ঝটপট মিথ্যেটা বললো মনিব। “তার অবস্থা খুবই খারাপ, তাকে বিরক্ত করা ঠিক হবে না।”
“আজব কথা,” বললো যম। “তাহলে সে নিশ্চিত ভুলে গেছে। কারণ আজ মধ্যরাতে সামারাতে তার সাথে আমার অ্যাপয়েন্টমেন্ট রয়েছে।”
–অ্যাপয়েন্টমেন্ট ইন সামারা’র কিংবদন্তী
.
নিউইয়র্ক,
ডিসেম্বর ১৯৭২
আমি সমস্যায় পড়ে গেছি। বিরাট সমস্যায়।
এটা শুরু হয়েছে নিউইয়ার্স ইভ, মানে ১৯৭২ সালের শেষ দিন আর নববর্ষের আগের দিন থেকে। এক গণকের সাথে আমার দেখা করার কথা ছিলো। কিন্তু অ্যাপয়েন্টমেন্ট ইন সামারা’র সেই লোকটার মতো আমি আমার নিয়তি এড়ানোর জন্যে পালানোর চেষ্টা করেছিলাম। আমি চাই নি কেউ আমার হাত দেখে আমার ভবিষ্যত বলে দিক। ইতিমধ্যেই আমার জীবনে বিরাট সমস্যার আর্বিভাব ঘটে গেছে। ১৯৭২ সালের শেষ দিনটাতে আমি আমার জীবনটাকে নিয়ে একেবারে বিতিকিচ্ছিরি অবস্থায় পড়ে যাই। অথচ আমার বয়স তখন মাত্র তেইশ।
সামারার বদলে আমি ম্যানহাটনের প্যান অ্যাম ভবনের উপরতলার ডাটা সেন্টারে চলে আসি। এটা সামারার চেয়েও অনেক কাছের, নিউইয়ার্স ইভের দিন রাত দশটা বাজে পর্বতশীর্ষের মতোই বিচ্ছিন্ন আর নির্জন।
আমার মনে হচ্ছিলো আমি বুঝি কোনো পাহাড়ের উপরেই আছি। যে জানালাটা দিয়ে পার্ক এভিনু দেখা যায় সেটাতে গড়িয়ে গড়িয়ে তুষার পড়ছিলো। প্যান অ্যাম-এর ডাটা সেন্টারে কয়েক একর জায়গা জুড়ে অত্যাধুনিক যন্ত্রপাতি রয়েছে। ওগুলো থেকে বিপু করে শত শত বাতি জুলছিলো, নীচ ভলিউমে গুঞ্জনও হচ্ছিলো কারণ সারা বিশ্বের এয়ারপ্লেইন নিয়ন্ত্রণের রুটিন কাজ আর টিকেট বিক্রি হয় এইসব যন্ত্রের মাধ্যমে। পালিয়ে এসে চিন্তা-ভাবনা করার জন্য উপযুক্ত জায়গা এটি।
আমাকে অনেক চিন্তা-ভাবনা করতে হবে। তিন বছর আগে আমি নিউইয়র্কে চলে আসি এ পৃথিবীর অন্যতম বিশাল কম্পিউটার প্রতিষ্ঠান উপল-এম-এর হয়ে কাজ করার জন্য। সেই সময় থেকে দীর্ঘদিন পর্যন্ত প্যান অ্যাম আমার ক্লায়েন্ট ছিলো। তারা এখনও তাদের ডাটা সেন্টারটা ব্যবহার করতে দেয় আমাকে।
কিন্তু তখন আমি আমার কাজ পাল্টে ফেলেছি, আর সেটা আমার জীবনের সবচাইতে বড় ভুল হিসেবে পরিগণিত হতে যাচ্ছিলো। ফুষ্প্রাইট, কোন, কেইন অ্যান্ড আপহাম নামের বিখ্যাত সিপিএ ফার্মের প্রথম নারী হিসেবে নিযুক্ত হবার একটা সম্মান অর্জন করেছিলাম আমি। অবশ্য তারা আমার কাজের স্টাইল পছন্দ করে নি।
‘সিপিএ’ শব্দটার মানে যারা জানে না তাদেরকে বলছি, এর মানে হলো
সার্টিফাইড পাবলিক একাউন্টেড। ফুস্প্রাইট, কোন, কেইন অ্যান্ড আপহাম হলো এ বিশ্বের সবচাইতে বড় সিপিএ ফার্ম, এই ভ্রাতৃসংঘটাকে যথাযথভাবে ডাকা হয় দ্য বিগ এইট’ নামে।
একজন ‘অডিটর’কে ‘পাবলিক একাউন্টেন্ট’ নামে ডাকাটা অনেক বেশি ভদ্রোচিত। বিগ এইট এই সেবাটি সব ধরণের বড় বড় কপোরেশনের জন্যে দিয়ে থাকে। খুবই সম্মানজনক একটি অবস্থান তাদের রয়েছে। সোজা কথায় বলতে গেলে, তারা তাদের ক্লায়েন্টদের বিচি নিজেদের কজায় রাখে। বিগ এইট যদি তাদের কোনো ক্লায়েন্টের অডিট করতে গিয়ে সাজেস্ট করে তাদের ফিনান্সিয়াল সিস্টেমের জন্যে আরো আধ মিলিয়ন ডলার বেশি খরচ করতে হবে তাহলে সেই ক্লায়েন্ট এই সাজেশন মেনে না নিলে ধরে নিতে হবে তারা বোকার হদ্দ। অর্থনীতির উপরমহল এসব ব্যাপার-স্যাপার বেশ ভালোমতোই বোঝে। পাবলিক একাউন্টিংয়ে প্রচুর টাকা-পয়সা আছে। এমন কি জুনিয়র কোনো পার্টনারের আয়রোজগারও ছয় সংখ্যার ঘরে থাকে।
কিছু লোক হয়তো বুঝতে পারে না পাবলিক একাউন্টিং জগতটি কেবলমাত্র সার্টিফাইড পুরুষদের জন্যে, তবে ফুব্রাইট, কোন, কেইন অ্যান্ড আপহাম ঠিকই বোঝে আর সেজন্যেই আমাকে একটা কঠিণ অবস্থার মধ্যে নিপতিত করে তারা। যেহেতু সেক্রেটারির পদ ছাড়া আমার মতো কোনো নারীকে এ পদে দেখে নি, সেজন্যেই তারা আমার সাথে এমন ব্যবহার করে যেনো আমি কোনো বিরল প্রজাতির ডুডু পাখি-সম্ভাব্য বিপজ্জনক কিছু, যা কিনা সাবধানে সামলাতে হয়।