কাজে কাজেই, যে মূল্য সমীকরণে কোট হচ্ছে ছিটের সমার্ঘরূপ, যেখানে মূল্যের রূপ নিয়ে কোটি এসে দাঁড়ায়। ছিট–এই পণ্যের মূল্য প্রকাশিত হচ্ছে কোট-এই পণ্যের দৈহিক রূপের মাধ্যমে; একটার মূল পরিচিত হচ্ছে আর একটার মূল্য দ্বারা। ব্যবহার-মূল্য স্বরূপ ছিট হচ্ছে স্পষ্টতঃ কোট থেকে ভিন্ন; মূল্য হিসেবে তা কোটের সমার্ঘ, এবং এখন তা কোটের অনুরূপ। এইভাবে ছিট এমন একটি মূল্য রূপ ধারণ করছে, যা তার দৈহিক আকাল থেকে ভিন্ন। সে যে মূল্য এ তথ্য উদঘাটিত হচ্ছে কোটের সঙ্গে তার সমতা থেকে-ঠিক যেমন একজন খ্রীস্টধর্মীর মেষ-প্রকৃতি বোঝা যায় ঈশ্বরের মেষের সঙ্গে তার সাদৃশ্য থেকে।
তাহলেই আমরা দেখতে পাচ্ছি যে পণ্যের মূল্য বিশ্লেষণ করে আমরা যা কিছু জানতে পেরেছি, ছিট তা নিজেই আমাদের বলেছে, যে মূহুর্তে সে আর একটি পণ্য, কোটের সঙ্গে সম্বন্ধযুক্ত হয়েছে। কেবল, যে-একটিমাত্ৰ ভাষার সঙ্গে সে পরিচিত সেই ভাষায়, অর্থাৎ পণ্যের ভাষায় সে তার মােনর কথা ফাঁস করে দিয়েছে। মানুষের শ্রমের অমূর্তান্বিত অবদানম্বরূপ শ্ৰমই যে তার নিজের মূল্য সৃষ্টি করেছে। এই কথাটি বলবার জন্য ছিট বলছে যে তার সমান মূল্যবান বলেই তো কোট হচ্ছে মূল্য, আর সেই হিসেবে ছিটের ভিতর যে পরিমান শ্রম আছে, তার ভিতরও তাই আছে। মূল্য নামক তার মহিম বাস্তবটি এবং নিরেট দেহটি যে এক নয় এই সংবাদ আমাদের দেবার জন্য ছিট বলছে যে, মূল্য কোটের আকার ধারণ করেছে এবং যে হিসেবে ছিট হচ্ছে মূল্য সেই হিসেবে ছিট আর কোট হলো দুটো মটরদানার মতো একই রকম। আমরা এখানে মন্তব্য করতে পারি। যে পণ্যের ভাষার মধ্যে হিব্রু ছাড়া আরো অনেক কমবেশি শুদ্ধ কথ্য ভাষা আছে। উদাহরণ স্বরূপ, জার্মান শব্দ “Wertsein” মানে মূল্যবান হওয়া, এই কথাটা রোমান ক্রিয়াপদ “Valere”, “Valler”, “Valoir”-এর চেয়ে সাদা-সিধে ভাবে এই কথায় বোঝায়। যে ‘খ’ পণ্যের সঙ্গে ‘ক’ পণ্যের সমীকরণ হচ্ছে ‘ক’ পণ্যের নিজ মূল্য প্রকাশের নিজস্ব ভঙ্গি। Paris vaut bien une messe.
সুতরাং আমাদের সমীকরণে যে মূল্য-সম্বন্ধ প্ৰকাশিত হয়েছে তার সাহায্যে ‘খ’ পণ্যের দৈহিকরূপ ‘ক’ পণ্যের মূল্যরূপ হয়ে দাড়িয়েছে, অথবা ‘খ’ পণ্যের দেহটা ‘ক’ পণ্যের মূল্যের দর্পণের কাজ করছে।(৩) ‘ক’ পণ্য নিজেকে স্থাপন করলে ‘খ’ পণ্যের সঙ্গে সম্বন্ধযুক্ত ক’রে যেন ‘খ’ পণ্য হ’লো সশরীরে বর্তমান মূল্য, যে পদাৰ্থ দিয়ে মচুন্যশ্ৰম গঠিত হয় ‘খ’ যেন সেই পদার্থ এবং এইভাবে ব্যবহারমূল্য-রূপী ‘খ’ কে সে পরিণত করল তার নিজ মূল্য প্রকাশ করবার সামগ্ৰীতে। ‘খ’-এর ব্যবহার-মূল্যের মাধ্যমে প্ৰকাশিত ‘ক’-এর মূল্য এইভাবে আপেক্ষিক মূল্যের রূপ ধারণ করেছে।
(খ) আপেক্ষিক মূল্যের পরিমাণগত নির্ধারণ
যার মূল্য প্ৰকাশ করতে চাই এমন যে-কোনো পণ্যই হচ্ছে একটি নিদিষ্ট পরিমাণ উপযোগী বা ব্যবহারযোগ্য বিষয়, যথা, ১৫ বুশেল শস্য, অথবা ১ ও ০ পাউণ্ড কফি। এবং কোন নির্দিষ্ট পরিমাণ যে-কোনো পণ্যের মধ্যে আছে নির্দিষ্ট পরিমাণ মনুষ্যশ্ৰম সুতরাং মূল্য-রূপকে কেবল সাধারণভাবে মূল্য প্ৰকাশ করলেই চলবে না, তাকে নির্দিষ্ট পরিমাণেও তা প্ৰকাশ করতে হবে। কাজেই খ পণ্যের সঙ্গে কি পণ্যের কোটের সঙ্গে ছিটের, মূল্যজনিত সম্বন্ধের ভিতর কোটি কেবলমাত্র সাধারণ মূল্য হিসেবে ছিটের সমগুণ লাভ ক’রে ক্ষান্ত হয়নি, একটি নিদিষ্ট পরিমাণ কোট (১টি কোট) একটি নির্দিষ্ট পরিমাণ (২০ গজ) ছিটের প্রতিরূপ হয়ে দাড়িয়েছে।
২০ গজ ছিট = ১ কোট অথবা ২০ গজ ছিট ১টি কোটের সমান মূল্যবান এই সমীকরণের ভিতর নিহিত সত্যকথা হচ্ছে এই যে মূল-বস্তুটি (সংহত শ্রম) সমপরিমাণে উভয়ের মধ্যে মূর্ত হয়ে আছে; আর দুটো পণ্যই তৈরী কবিতে লেগেছে সমপরিমাণ সময়ব্যাপী সমপরিমাণ শ্ৰম। কিন্তু ২০ গজ ছিট অথবা ১ টি কোট তৈরী করবার জন্য প্ৰয়োজনীয় শ্ৰম-সময় তাঁতের এবং দরজীর কাজের উৎপাদকতার পরিবর্তনের সঙ্গে পরিবতিত হয়। আমাদের এখন বিচার করতে হবে যে, তার দ্বারা মূল্যের আপেক্ষিক প্রকাশের পরিমাণের দিকটা কি ভাবে প্রভাবিত হয়।
১। ছিটের মূল্যের হ্রাস-বৃদ্ধি করা যাক(৪), কোটের মূল্য ধরা যাক স্থির আছে। ধরা যাক তুলোর জমি খারাপ হয়ে যাবার ফলে, ছিট তৈরীর জন্য যে শ্ৰম-সময় লগত তা দ্বিগুণ হ’য়ে গেল, তা হ’লে ছিটের মূল্যও দ্বিগুণ হয়ে যাবে; তখন ২০ গজ ছিট = ১ কোটি এই সমীকরণের পরিবর্তে, আমরা পাব ২০ গজ ছিট-২ কোট, যেহেতু ১ কোটের ভিতর এখন আছে। ২০ গজ ছিটের মধ্যে যে শ্ৰম-সময় মূর্ত হয়েছে, তার অর্ধেক। কিন্তু যদি তাঁতের উন্নতির ফলে এই শ্ৰম-সময় অর্ধেক কমে যায়, তবে ছিটের মূল্যও অর্ধেক কমে যাবে; ফলে আমরা পাব ২০ গজ ছিট = অর্ধেক কোট। ‘খ’ এর মূল্য যদি স্থির থাকে তাহলে কি পণ্যের আপেক্ষিক মূল্য, অর্থাৎ তার যে মূল্য খ পণ্যের দ্বারা প্রকাশিত হয় তার হ্রাস-বৃদ্ধি ক-এর মূল্যের হ্রাস-বৃদ্ধির সঙ্গে সরাসরিভাবে হয়।
২। ছিটের মূল্য স্থির আছে ধরে নেওযা যাক, কোটের মূল্যের হ্রাস-বৃদ্ধি হচ্ছে; এ হেন অবস্থায় যদি উদাহরণ স্বরূপ, পশম উৎপাদন কম হওয়ার ফলে, কোটি তৈরীর জন্য প্রয়োজনীয় শ্ৰম-সময় দ্বিগুণ হয়ে যায়, আমরা তাহলে পাব ২০ গজ ছিট= ১ কোটের পরিবর্তে ২০ গজ ছিট = অর্ধ কোট। কিন্তু যদি কোটের মূল্য অর্ধেক কমে যায়, তাহলে ২০ গজ ছিট = ২ কোট। অতএব, যদি ক পণ্যের মূল্য স্থির থাকে, তবে খ পণ্যের মারফৎ প্রকাশিত তার আপেক্ষিক মূল্যের হ্রাস-বৃদ্ধি হবে খ-এর মূল্যের হ্রাস বৃদ্ধির বিপৰীত দিকে।