এবং যদি তোমরা ঈশ্বরকে জেনে থাকো তাহলে কখনও ধাঁধার সমাধানকারী হতে যেয়ো না বরং তোমরা চারপাশের ঘটনাবলি পর্যবেক্ষণ করো এবং তোমরা দেখবে তিনি তোমাদের শিশুর সঙ্গে খেলা করছেন।
এবং মহাশূন্যের দিকে তাকাও, তোমরা দেখতে পাবে তিনি মেঘের ভেতরে হাঁটছেন, বজ্রের ভেতরে তাঁর বাহুদুটি প্রসারিত এবং তিনি অবতরণ করছেন বৃষ্টির সঙ্গে সঙ্গে।
তোমরা দেখতে পাবে তিনি ফুলের ভেতরে হাসছেন, তারপর বেড়ে উঠছেন এবং তাঁর হাত বৃক্ষের পত্রপল্লবের ভেতরে দুলছে।
.
তারপর আলমিতরা বলল, আমরা এখন মৃত্যু সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করছি।
এবং তিনি বললেন :
তোমরা মৃত্যুর গোপনীয়তা সম্পর্কে জানতে চাও।
কিন্তু কীভাবে তোমরা তাকে খুঁজে পাবে যদি জীবনের অন্তঃস্থলে তোমরা তাকে অন্বেষণ
না করো।
যে প্যাঁচার রাতজাগা চোখ দিনের আলাতে অন্ধ সে উন্মোচন করতে পারে না আলোর রহস্য।
যদি তোমরা প্রকৃতঅর্থেই মৃত্যুর উদ্দীপনা সম্পর্কে জানতে চাও তাহলে তোমাদের হৃদয়কে উন্মোচিত করো এবং প্রসারিত করো তাকে জীবনের শরীরের দিকে।
কারণ জীবন এবং মৃত্যু হচ্ছে একজন, যেমন নদী ও সমুদ্র হচ্ছে একজন।
ঊর্ধ্বলোক সম্পর্কে তোমাদের শব্দহীন জ্ঞান তোমাদের প্রত্যাশা ও আকাঙ্ক্ষার গভীরতার ভেতরে শুয়ে আছে।
এবং বরফের নিচে পড়ে থাকা বীজের স্বপ্ন দেখার মতো তোমাদের হৃদয়ও বসন্তের স্বপ্ন দেখে।
স্বপ্নগুলিকে বিশ্বাস করো, কারণ তাদের ভেতরেই লুকিয়ে আছে অনন্তকালের দরজা।
তোমাদের মৃত্যুভয় হচ্ছে মেষপালকের ভীতি, যখন সে রাজার সম্মুখে দাঁড়ায়, যে রাজা শ্রদ্ধার সঙ্গে তার মাথায় হাত রাখে।
মেষপালক কি আনন্দে পরিপূর্ণ নয় তার ভীতির অন্তরালে, যা সে পরিধান করবে তা হচ্ছে রাজার চিহ্ন?
সে কি তার ভীতি সম্পর্কে অধিক মনোযোগী নয়?
কারণ এটা কি, যা মরে যাবার জন্য নগ্ন হয়ে বাতাসে দাঁড়িয়ে থাকে এবং সূর্যালোকে গলে যায়?
এবং এটা কি, যা শ্বাসপ্রশ্বাস থামিয়ে দেয় কিন্তু তার ক্লান্তিহীন স্রোত থেকে শ্বাসপ্রশ্বাস মুক্তিলাভ করে, যা বেড়ে উঠতে পারে, বিস্তৃত হতে পারে এবং অন্বেষণ করতে পারে। ভারমুক্ত ঈশ্বরকে?
শুধুমাত্র তোমরা যখন নীরবতার নদী থেকে পান করো তখন প্রকৃতঅর্থেই তোমরা গান গাইবে।
এবং যখন তোমরা পাহাড়চূড়ায় পৌঁছেছ তখন তোমরা অবশ্যই পাহাড়ে চড়তে শুরু করবে।
এবং যখন মাটি দাবি করবে তোমাদের অঙ্গপ্রত্যঙ্গ তখন তোমরা সত্যিই নাচতে থাকবে।
.
এবং এটা ছিল সন্ধ্যা।
এবং ভবিষ্যদর্শী আলমিতরা বলল,
মহিমান্বিত হোক এই দিন ও স্থান এবং মহিমান্বিত হোক আপনার মূল বক্তব্য যা আপনি বলেছেন।
এবং তিনি উত্তরে বললেন, এটা কি আমি ছিলাম যে এইসব বলেছে?
আমি কি একজন শ্রোতাও নয়?
তারপর তিনি মন্দিরের সিঁড়ি বেয়ে নামলেন
এবং উপস্থিত প্রত্যেকেই তাকে অনুসরণ করল।
তিনি তার জাহাজে পৌঁছে ডেকের ওপর দাঁড়ালেন।
জনতা আবার তার মুখোমুখি হল এবং তিনি উদাত্ত কণ্ঠে বললেন :
হে অর্ষালিজবাসী, বাতাস আমাকে আহ্বান জানায় তোমাদেরকে পরিত্যাগ করতে। যদিও আমি বাতাসের চেয়ে কম গতিসম্পন্ন তবুও আমাকে যেতে হবে।
আমরা যারা পথভ্রষ্ট, চিরকাল অনুসন্ধান করছি নিঃসঙ্গদের পথ, আমাদের কোনো দিন শুরু হয়নি সেখান থেকে যেখানে আমরা অন্য দিন শেষ করেছি এবং সেখানে কোনো সূর্যোদয়ই আমাদেরকে খুঁজে পায় না যেখানে সূর্যাস্ত আমাদেরকে পরিত্যাগ করে যায়।
এমনকি যখন পৃথিবী ঘুমায় তখন আমরা ভ্রমণ করি।
আমরা হলাম মাটি আঁকড়ে ধরে রাখা বৃক্ষের বীজ এবং এই বীজ রয়েছে আমাদের হৃদয়ের পকৃতা ও পরিপূর্ণতার ভেতরে যা আমরা দান করেছি বাতাসকে এবং তারা এখন ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে।
খুবই সংক্ষিপ্ত ছিল আমার দিনগুলি তোমাদের মাঝে এবং আরও সংক্ষিপ্ত ছিল যা কিছু আমি বলেছি।
কিন্তু যদি আমার কণ্ঠস্বর তোমাদের কানে অস্পষ্ট হয়ে আসে এবং আমার ভালোবাসা তোমাদের স্মৃতিতে অদৃশ্য হয়ে যায়,
তখন আমি আবার আসব।
এবং অধিকতর সমৃদ্ধ হৃদয় ও ওষ্ঠ নিয়ে আমি যা বলব সেগুলিই অধিক উৎপন্ন হবে আত্মায়।
হ্যাঁ, আমি অবশ্যই জোয়ারের সঙ্গে ফিরে আসব, যদিও মৃত্যু আমাকে লুকিয়ে রাখতে পারে এবং ঢেকে রাখতে পারে বিশাল নৈঃশব্দ, তবুও আমি অনুসন্ধান করব তোমাদের উপলব্ধিকে।
যা-কিছু বলেছি আমি তা যদি সত্য মনে হয়, তবে সেই সত্য সুস্পষ্ট কণ্ঠে নিজেকে প্রকাশ করবে এবং কথার ভেতরে তা হবে তোমাদের চিন্তার নিকটাত্মীয়।
হে অর্ফালিজবাসী, আমি বাতাসের সঙ্গে যাচ্ছি কিন্তু শূন্যতার ভেতরে নেমে যাচ্ছি না এবং যদি আজকের দিন তোমাদের প্রয়োজন ও আমার ভালোবাসার পরিপূর্ণতার জন্য না হয়ে থাকে তাহলে তাকে প্রতিজ্ঞায় পরিণত হতে দাও অন্যদিন পর্যন্ত।
মানুষের প্রয়োজন বদলায় কিন্তু তার ভালোবাসা নয়, নয় তার আকাঙ্ক্ষাগুলি যা তার ভালোবাসা এবং ভালোবাসার উচিত তার প্রয়োজনকে পরিতুষ্ট করা।
অতএব, জেনে রাখো, অধিকতর বিশাল নৈঃশব্দের ভেতর থেকে ফিরে আসব আমি।
যে কুয়াশা ভোরবেলা বাতাসে ভেসে যায়, ফেলে যায় মাঠে মাঠে অজস্র শিশির, যা বেড়ে উঠবে ও জড়ো হবে মেঘের ভেতরে,
এবং তারপর ঝরে পড়বে বৃষ্টির সাথে ফোঁটায় ফোঁটায়।
এবং আমিও এই কুয়াশার মতো।
রাত্রির নীরবতার ভেতরে তোমাদের পথে পথে হেঁটেছি আমি
এবং আমার আত্মা প্রবেশ করেছে তোমাদের গৃহে,
এবং তোমাদের হৃদস্পন্দন ছিল আমার হৃদয়ে, তোমাদের নিঃশ্বাস পড়েছিল আমার মুখের ওপরে এবং আমি তোমাদের প্রত্যেককে জানলাম।
হ্যাঁ, আমি জানলাম তোমাদের আনন্দ ও বেদনা এবং তোমাদের ঘুমের ভেতরে তোমাদের স্বপ্নগুলি ছিল আমার স্বপ্ন এবং প্রায় সময়ই আমি ছিলাম তোমাদের ভেতরে একটি পাহাড়ি হ্রদ।
আমি প্রতিবিম্বিত করব তোমাদের ভেতরের পাহাড়চূড়া
এবং বাঁকানো ঢালগুলি, এমনকি তোমাদের চিন্তা ও আকাক্ষার অপসৃয়মাণ পাখির ঝাঁককেও।
এবং আমার নীরবতার ভেতরে স্রোতের সঙ্গে আসে তোমাদের শিশুর হাসি এবং নদীতে ভেসে ভেসে আসে তোমাদের যুবকদের আকুল আকাঙ্ক্ষাগুলি।
এবং যখন তারা আমার গভীরে পৌঁছায় তখন নদী এবং স্রোত কেউই থামায় না তাদের গান।
কিন্তু এখনও পর্যন্ত তা হাসির চেয়ে অধিকতর মধুর
এবং আমার ভেতরে যে আকাঙ্ক্ষার জন্ম হল তার চেয়েও বিশাল।
তোমাদের ভেতরে এই সীমাহীন আকাঙ্ক্ষা ছিল,
সেই বিশাল লোকটি যার ভেতরে তোমরা প্রত্যেকেই আছ শুধু তোমাদের কোষ এবং পেশিগুলি ছাড়া,
এবং শব্দহীন স্পন্দন ছাড়াই সে গায় তোমাদের সবগুলি গান।
এই সবকিছুই আছে সেই বিশাল লোকটির ভেতরে, তাই তোমরাও বিশাল।
এবং তাকে দেখার সময় আমি তোমাদের দেখেছিলাম
এবং ভালবেসেছিলাম।
কারণ সেই সীমা কি পৃথিবীতে নেই যতদূর ভালোবাসা যেতে পারে?
কোন্ দূরদৃষ্টি, কোন্ প্রত্যাশা এবং কোন্ দুঃসাহস উড়াল দিতে পারে আকাশের সীমানা ছাড়িয়ে?
তোমাদের ভেতরে সেই বিশাল মানুষটি হল ফুটন্ত আপেলে ঢেকে থাকা দৈত্যাকৃতির ওকগাছের মতো।
সে তোমাদেরকে বেঁধে ফেলতে পারে মাটির সঙ্গে, তার সুগন্ধ তোমাদেরকে উত্তোলন করতে পারে মহাশূন্যের ভেতরে এবং তার স্থায়িত্বের ভেতরে তোমারা হলে মৃত্যুহীন। তোমাদেরকে বলা হয়েছিল যে, শিকলের মতো তোমাদের দুর্বলতম সংযুক্তির চেয়েও তোমরা দুর্বল।
এটা হল অর্ধসত্য। তোমরা হলে তোমাদের সবচেয়ে শক্তিশালী সংযুক্তির মতোই শক্তিশালী।
তোমাদের ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র কর্মকাণ্ড দিয়ে তোমাদের পরিমাপ করার অর্থই হল দুর্বল ফেনার সাহায্যে সমুদ্রের ক্ষমতাকে গণনা করা।
তোমাদের ব্যর্থতা দিয়ে তোমাদেরকে বিচার করার অর্থই হল ঋতুগুলিকে নিন্দা করা তাদের অস্থিরতার জন্য।