ও হেনরি রচনাসমগ্র
দ্য ট্রিমড ল্যাম্প
প্রশ্নটার তাৎপর্য দুরকম আছে। অন্যটার কথাই আলোচনা করা যাক। প্রায়ই টশপ-গার্ল কথাটি কানে আসে। প্রকৃতপক্ষে শপ-গার্ল বলে কারো অস্তিত্বই নেই। বহু মেয়ে আছে যারা দোকানের কাজে লিপ্ত। এর মাধ্যমেই তারা পেটের ভাত জোগাড় করে। তা-ই যদি হয় তবে তাদের জীবিকাই কেন তাদের পরিচয় হবে? আমাদের উচিত উপযুক্ত বিচার করা। ফিফথ এভিনিউর মেয়েদের তো আমরা বিবাহিতা মহিলা বলে আখ্যা দেই না। এ স্বীকার করতেই হবে যে, শপ-গার্ল বলে আমরা তাদের সুবিচার করি না।
ন্যান্সি আর লু যথার্থই অভিন্ন হৃদয়া বান্ধবী। বাড়িতে প্রয়োজনীয় খাবারের অভাব থাকায় তাদের কাজের ধান্ধায় শহরে পাড়ি জমাতে হয়েছিল। লুতখন বিশ বছরের যুবতী আর ন্যান্সির চলেছে উনিশ। উভয়েই অজ পাড়াগায়ের মেয়ে, সুদৰ্শন। নাট্যশালার খাতায় নাম লেখানোর ইচ্ছা! আন্দেী কারো ছিল না। বরাতগুণে সস্তা ও মার্জিত রুচির একটা বোর্ডিংয়ে তাদের মাথা গোঁজার ঠাঁই জুটে গেল। উভয়ের চাকরিও জুটে গেল। বেতন পেত মাস গেলে। তাদের বন্ধুত্বও অটুট রয়ে গেল।
মাস ছয়েক পরের কথা-লু একটা লণ্ড্রীতে জাম-কাপড় ইন্ত্রি করার কাজ করে। তার গায়ে আলখাল্লা গোছের ঢিলেঢালা একটা লাল জামা, মাথায় বে-মানান, প্রয়োজনের চেয়ে অনেক বড়সড় আর চার ইঞ্চি লম্বা পালকের একটা টুপি আর সাদা পশমের তৈরী পাঁচশ ডলার দামের একটা স্কার্ফ ও মাফলার। চোখের মণি দুটো হাল্কানীল আর দুগালে লালচে আভা। খুশী যেন তার সর্বাঙ্গে টলমল করছে, উপচে পড়ছে।
আর ন্যান্সি? পাঠক-বন্ধু, ন্যান্সিকে তো আপনি শপ-গার্ল আখ্যাই দেবেন। কারণ, আপনি তো এতেই অভ্যস্ত। পৃথিবীতে ধরণ ধারণের কোন সুস্পষ্টব্যাখ্যা নেই। কিন্তু সবযুগে ও সবকালেই নিত্য নতুন ধরন-ধারণের তল্লাশ করে থাকে। ধরন ধারণের একটা নমুনা তুলে ধরছি।–সামনের দিকটা চুড়োর মত তুলে দিয়ে চুলের গোছাটাকে পিছনের দিকে কষে বেঁধে দেওয়া। সম্ভা দামের তৈরী হলেও স্বল্কার্টটা বাহারী বটে। বসন্তের দমকা বাতাসের হাত থেকে অব্যাহতি পাবার জন্য পোশাকে পশমের সুরক্ষার কিছুমাত্রও ব্যবস্থা নেই। তার মুখমণ্ডলেশপ-গার্লের ছাপই যেন সুস্পষ্ট হয়ে ফুটে উঠেছে। আর তার চোখের তারায় বঞ্চিত নারীদের বিরুদ্ধে ঘূণিত নীরব বিদ্রোহ স্পষ্ট হয়ে দেখা দিয়েছে। আর তাতে অচিরেই ভ্ৰাতৃশোধ নেবার বাসনার ছাপও স্পষ্ট। সে সরবে। হেসে ওঠার সময়ও সে ছাপটুকু মিলিয়ে যায় না। ঠিক এরকমই চাহনি লক্ষিত হয়রাশিয়ার চাষাভুষোদের চোখের তারায়। আর গেব্রিয়েল যেদিন আমাদের সংহার করতে আসবে সেদিন যারাটিকে থাকবে সেদিন তাদের চোখে মুখেও একই দৃষ্টি নজরে পড়বে। সে দৃষ্টি প্রত্যক্ষ করে পুরুষদের লজ্জিত হওয়া উচিত। কিন্তু তার বদলে তারা মস্করায় লিপ্ত হয় সুতোয় বাঁধা ফুলের তোড়া তাদের লক্ষ্য করে ছুড়ে মারে, লাভ করে আত্মপ্রসাদ।
টুপিটা মাথা থেকে নামিয়ে বিদায় নেবার মুহুর্তে লুঠোটের কোণে হাসির রেখা ফুটিয়ে বলে উঠবে।-তোমার সঙ্গে আবার দেখা হবে। আর ন্যান্সি? সে-ও মিষ্টি হাসির প্রলেপে তার রসিকতার ভাবটাকে আড়াল করে দেবে।
তারা উভয়েই ড্যাম-এর প্রতীক্ষায় মোড়ে দাঁড়িয়ে। সে ছিল লুর বাধা ক্রেতা। বিশ্বাসীও? না, এমন কথা জোর দিয়ে বলা যায় না। যাকে বলে, যখন যেমন হাতের মুঠোয় আসে।
লু ন্যান্সি-র দিকে ঘাড় ঘোরাল। ছোট্ট করে বলল-ন্যান্সি, তোমার গীত লাগছে না? আচ্ছা, তুমি কেমন ধারার মেয়ে বল তো! হণ্ডায় মাত্র আট ডলার পেয়ে পুরনোসে দোকানটাতে চাকরি করছি। গত হাপ্তায় আমি কত কামিয়েছি, জানা? সাড়ে আঠারো ডলার। তবে দোকানে ফিতে বেচার মত ইস্ত্রি করার কাজটা সোজা নয়। হ্যাঁ, এ কাজে পয়সা আছে, স্বীকার করতেই হবে। আমরা যে কজন ইন্ত্রির কাজে লেগে রয়েছি। কারো রোজগারই দশ ডলারের কম নয়। আর কাজটাকে সম্মানের দিক থেকে কমতি বলেও আমি অন্ততঃ জ্ঞান করি না।
–হোক গে! ন্যান্সি বলল–তুমি যা-ই পাও, হাপ্তায় আটটা ডলার আর শোবার। হলঘরই যথেষ্ট। মোদা কথা, সজন এবং সুপরিবেশেই থাকতে আমি বেশী পছন্দ করি। আর এরকমই আমাব পছন্দ মাফিক সুযোগ আমি পেয়েছি। মাত্র দিন কয়েক আগেই তো আমাদের দস্তানা বিভাগের এক যুবতী পিটুসবার্গের এক ইস্পাতের কারিগর, বা ওরকমই একটা লোককে বিয়ে করল। দেখবি, একদিন আমিও একজনকে গোথে ফেলব। সঙ্গতি সম্পন্ন কাউকে পেলেই লটিকে যাব। বিভাগীয় কাজে লেগে থাকা এক মেয়ের বরাতে এর বেশী আর কি জুটবে, বল তো?
–ডান-এর সঙ্গে ওখানেই তো আমার প্রথম দেখা ও আলাপ পরিচয় হয়।-গর্বের সঙ্গে লু বলল। জামার কলার ইন্ত্রি করাতে রবিবার সে এসেছিল। আমি তখন ইন্ত্রি করে চলেছি। সেদিন এলা ম্যাগিনিস অসুস্থ ছিল। তার জায়গাতে-প্রথম বোর্ডে আমি ইন্ত্রিকরছিলাম। আমাদের সবারই ইচ্ছা প্রথম বোর্ডে কাজ করি। উচ্ছসিত আবেগের সঙ্গে লু এবার বলল-সে বলেছে, আমার হাত দুটোর ওপরই নাকি প্রথম প্রথম তার নজর যায়, বেলনের মত গোলগাল হাত দুটো কী সুন্দর! আমার জামার হাত দুটো গোটানো ছিল। আসলে তাদের হাবভাব দেখলেই চেনা যায়। স্যুটকেসে জামা কাপড় নিয়ে এসে দুম করে ধাক্কা দিয়ে আচমকা দরজা খুলে ফেলে।