বিভাগীয় বিপনির পাঠ্যসূচী বহুমুখী। কোন উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠান হয়ত বা মেয়েদের জীবনের লক্ষ্যে পৌঁছবার এতখানি উপযুক্ত করে তুলতে সক্ষম হয় না। কি সে লক্ষ্য? লক্ষ্যটি হচ্ছে, বিয়ের লটারিতে পুরস্কারটা হস্তগত করা। বিপনিতে তার কাজের জায়গাটা গানের ঘরের লাগোয়া হওয়ায় সে অনায়াসেই শ্রেষ্ঠ সুরকারদের গান শুনে শুনে সেগুলো আয়ত্ত করে নিল।
ন্যান্সির এ উচ্চাকাঙ্খার ব্যাপারটা বিপনির অন্য কর্মী-মেয়েরা ধরে ফেলে। এবার থেকে বরমাল্য পরাবার মত কোন যুবককে তার কাউন্টারের দিকে এগোতে দেখলেই তারা অনুচ্চকণ্ঠে বলত—ন্যান্সি, তোমার বাঞ্ছিত টাকার কুমীর আসছে, দেখ।
পুরুষদের একটা স্বভাব, সঙ্গী মেয়েরা যখন কেনাকাটায় মেতে যায়। তখন তারা রুমালের কাউন্টারের সামনে বারবার চক্কর মারে আর ক্যাস্ত্রিকের চৌকোণা চুকরো হাতে নিয়ে নাড়াচাড়ায় মেতে ওঠে।
ন্যান্সির মেকী বড়লোকী ভাবসাব আর তার সত্যিকারের রূপের জৌলুসের আকর্ষণ আছে যার ফলে তার সামনে দিয়ে বহু যুবকই ঘুরঘুর করে। তাদের মধ্যে কেউ টাকার কুমীর হওয়া তো অসম্ভব নয়। আর অবশিষ্ট্ররা ধনীদের অনুকরণকারী ভদ্রবেশীবাদরের মতই। ন্যান্সি উভয় দলের মধ্যে পার্থক্যটুকু বোঝার ক্ষমতা রপ্ত করে ফেলেছে।
রুমালের কাউন্টারের একদম শেষে একটা জানালা রয়েছে। সেটা দিয়ে ন্যান্সি দেখতে পায় বিপনির ক্রেতাদের নিয়ে যাওয়ার জন্য সারিবদ্ধভাবে গাড়ি দাঁড়িয়ে। সেগুলো দেখে সে বুঝতে শিখল গাড়িগুলোর আকৃতি যেমন স্বতন্ত্র, ঠিক তেমনই গাড়ির মালিকগুলো স্বতন্ত্রতা বজায় রাখছে, ছোট-বড় যাকে বলে।
একদিন এক সুদেহী ভদ্রলোক চার-চার ডজন রুমাল কিনে ফেলল। আর কাউন্টারের সামনে দাঁড়িয়েই হাসিমাখা মুখে কথা বলে ন্যান্সির সঙ্গে আলাপ জমিয়ে ফেলল। সে কাউন্টার ছাড়তেই একটা মেয়ে গভীর স্বরে বলে উঠল—ন্যানস। এটা কেমন হল, লোকটাকে আমলাই দিলে না। তুমি? দেখে তো মনে হল লোকটা রীতিমত একজন ধনকুবের।
তাচ্ছিল্যের সঙ্গে হেসে ন্যান্সি জবাব দিল—। কার কথা বলছ? ওই যে—ওই লোকটা? তাকে তোয়াক্কা করার কোন মানেই হয় না। আমি নিজের চোখে দেখেছি, নিজেই গাড়ি চালিয়ে এসেছে। একটা বারো অশ্বশক্তি সম্পন্ন যন্ত্র আর এক আইরিশ বদমাইস। লক্ষ্য করেছিলে কি, তাও আবার কিনেছে কতগুলো রেশমী রুমাল, গায়ে চাপিয়েছে। নকল কাপড়ের পোশাক পরিচ্ছদ। খাঁটি ভদ্র ও মালদার না হলে আমার মন গলে না, বুঝলে?
বিপনিতে দুটো রুচিশীলা মহিলা কর্মচাকরি করে। তাদের কয়েকটি পয়সাওয়ালা বন্ধু আছে। তারা মাঝে মধ্যে তাদের সঙ্গেই নৈশভোজ সারিতে যায়। একদিন তারা ন্যান্সিকেও সঙ্গে করে নিয়ে গেল। নববর্ষের সন্ধ্যার জন্য সেখানকার টেবিলগুলো এক বছর আগেই সংরক্ষিত হয়ে যায়। দুজন ভদ্রলোক বন্ধুসঙ্গে রয়েছে। একজনের মাথা জুড়ে টাকা। চুলের চিহ্নমাত্র নেই। আমরা চোখে আঙুল দিয়ে প্রমাণ করে দিতে পারি, যারা অগাধ সুখ-বিলাসের মধ্যে দিন কাটায় তাদের মাথার চুল উঠে যায়। আর দ্বিতীয়জন এক যুবক। ধনী আর সৌখিন রুচিসম্পন্ন। দুটো ব্যাপারে এটা ধরা যায়। সে বেশ দৃঢ়তার সঙ্গেই বলল, সবগুলি মদের বোতলই ছিপি আঁটা। সেই সঙ্গে তার সার্টের কাফ লিংক দুটো হীরের। যুবকটা ন্যান্সির প্রতি অদম্য আকর্ষণ বোধ করল। তার প্রকৃতি আর রুচিবোধ শপ-গার্লদের দিকে তাকে যেতে উৎসাহিত করল।
পরদিনই সে বিভাগীয় বিপনিতে হাজির হল। সরাসরি চলে গেল ন্যান্সির কাউন্টারে। আইরিস রুমাল বাছতে বাছতে তাকে সরাসরি বিয়ের প্রস্তাব করে বসল।
ন্যান্সি আগন্তুক যুবকের প্রস্তাবে সম্মতি দিল না। ফুট দশেক দূরে দাঁড়িয়ে ঝলমলে পোশাকে সজ্জিতা একটা মেয়ে আড়চোখে তাকিয়ে আর উৎকৰ্ণ হয়ে ব্যাপারটা লক্ষ্য করল।
যুবক ক্রেতাটা বিদায় নেবার পর সে গল্প ছেড়ে গালমন্দ করে ন্যান্সিকে একেবারে নাজেহাল করতে লাগল।
ধুৎ! তুমি কেমন বোকা হাঁদা মেয়ে হে! ওই যুবকটা রীতিমত এক ধনকুবের। বুড়ো ভ্যান স্কিটলস-এর আপনি ভাগ্নে, জান? কথাবার্তাও তো সেভাবেই বলল। তোমার মাথাটাথা বিগড়ে গেছে নাকি ন্যানস? ভেবে পাচ্ছিনে, তুমি এটা করলে কি করে। ঠোঁটের কোণে বিদ্রুপের হাসি ফুটিয়ে তুলে ন্যান্সি বলল—তই নাকি? তার কথায় রাজি হইনি বলে? লোকটা যে ধনকুবের নয় এটা কিন্তু তোমার বোঝা দরকার ছিল। বছরে বিশ হাজার ডলার। পারিবারিক ভাতা সে পায়। ব্যস, কেবলমাত্র সেটাই তার খরচ করার অধিকার আছে। সেদিন নৈশভোজ সারিতে সারিতে এই লোকটার কথা সে বলছিল।
পোশাক আশাকে কেতাদুরন্ত মেয়েটা আর কয়েক পা এগিয়ে এসে ভ্রা কুঁচকে ন্যান্সির দিকে জিজ্ঞাসু দৃষ্টি মেলে তাকাল। কৰ্কশ স্বরে ন্যান্সিকে লক্ষ্য করে কথাটা ষ্টুড়ে দিল—তুমি কেমনটা চাও, জানতে পারি কি? এটাই কি তোমাৱ পক্ষে যথেষ্ট কলে মনে কর না? সলমোন হওয়ার সাধ হয়েছে নাকি তোমার? তুমি কি গ্লাডস্টেন ডোরি, স্পেনের অধিপতি। রকফেলার বা তাদেরই সমগোত্রীয় কারো গলায় বরমাল্য পরাবার বাসনা করেছ?
ন্যান্সি ভেতরে ভেতরে ফুসতে থাকলেও নিজেকে সামলে নিয়ে বলল-ব্যাপারটা পুরোপুরি বিত্তসম্পদকে কেন্দ্র করে নয়, সে রাত্রে নৈশভোজী সারিতে সারাতে তার বন্ধু তার মিথ্যে ভাষণ ধরে ফেলেছিল। এক মেয়েকে কথা দিয়েও তাকে নাকি দেখাতে নিয়ে যায় নি। আসলে মিথ্যাবাদীকে আমি বরদাস্ত করতে পারি না। মোদা কথা, লোকটা আমার অপছন্দ। সত্যিকারের একজন মানুষকেই আমি অন্তর থেকে চাইছি, যাকে বলে সত্যিকারের একজন কর্মী-পুরুষ, বুঝলে এবার?