* * *
গোমশতগীন আর খৃস্টান কর্মকর্তা মুখোমুখি উপবিষ্ট। গোমশতগীন বলল, আমি এই তরুণীদ্বয় ও যোদ্ধাদের দু এক দিনের মধ্যেই হিরন নিয়ে যেতে চাই। ইতোমধ্যে তাদের কক্ষে প্রবেশ করল তেরেসা। তেরেসা জানাল, এবার কমান্ডার আমাদের জালে ধরা দিয়েছে। লিজা কিভাবে এই কমান্ডারকে জয় করে নিয়েছে সবিস্তারে সব জানাল তেরেসা। তেরেসা আরো বলল, এদেরকে আইয়ূবী হত্যায় ব্যবহার করতে হবে। এখন দেখার ব্যাপার হলো আইয়ূবীর প্রশিক্ষণ বিস্মৃত হতে কত সময় লাগে।
আমি দুএক দিনের মধ্যেই চারজনকে হিরন নিয়ে যেতে চাই, তোমরা দুজন কিংবা লিজা একাকী কি আমার সাথে যাবে? তেরেসার উদ্দেশ্যে বলল গোমশতগীন। আইয়ূবীকে হত্যা করতে এদের তৈরী করতে লিজার প্রয়োজন।
মেয়েদেরকে আমি সাথে নিয়ে যাচ্ছি। বলল কর্মকর্তা। আমি এখানে বেশীদিন থাকতে পারছি না। শীঘ্রই কর্তাদের কাছে আমার সংবাদ গৌছাতে হবে যে, আলেপ্পো, হিরন ও মৌসুলের যৌথ বাহিনী সম্পূর্ণ ব্যর্থ হয়েছে। যৌথ বাহিনীর কমান্ডার সাইফুদ্দীন পালানো ছাড়া আর কিছুই করতে জানে না। আমি কর্তাদেরকে বর্তমান কৌশল পাল্টিয়ে আইয়ূবী হত্যায় নতুন কৌশলের প্রস্তাব করব। এতে এমনও হতে পারে যে, আমাদের পক্ষ থেকে আপনারা যেসব সহযোগিতা পাচ্ছেন, এখন থেকে সব বন্ধ হয়ে যাবে।
না, এমনটি বলবেন না। অনুরোধের স্বরে গোমশতগীন বলল-আমাকে আরেকটু সময় দিন। আমি অল্পদিনের মধ্যেই আইয়ূবীকে খতম করে দিব। এরপর দেখবেন, কেমন বিজয়ীবেশে দামেস্কে প্রবেশ করি আমি। এই দুই তরুণী না হয় অন্ততঃ লিজাকে আমার কাছে রেখে যান। কারণ লিজাই পারবে এদেরকে আইয়ূবী হত্যায় প্ররোচিত করতে। কেননা, নাসের আইয়ূবীর প্রশিক্ষিত যোদ্ধা। সে অনায়াসে আইয়ূবীর কাছে যেতে সক্ষম হবে। তারপক্ষেই আইয়ূবীকে হত্যা করা সম্ভব। এ ব্যাপারটিও বুঝতে হবে, লিজা ছাড়া এরা আমার কোন কাজে আসবে না।
অনেক আলোচনা পর্যালোচনার পর খৃস্টান কর্মকর্তা বলল, হিরন যাওয়ার পরিবর্তে আমরা কদিন এখানেই অপেক্ষা করব, এখানে থেকেই মেয়েরা ওদের তৈরী করে ফেলতে পারবে। এমনও হতে পারে যে, এর মধ্যে এরা তার তিন সাথীকেও তৈরী করে ফেলবে এবং এদের মনে আইয়ূবীর ঘৃণা জন্ম দেবে।
নাসেরকে আমার কাছে খুব আনাড়ীই মনে হলো। লিজা তাকে এমনই কজা করে ফেলেছে যে, আর হয়তো দুই তিনবার সাক্ষাৎ করলে সে লিজার ইশারায় নাচতে শুরু করবে।
আজ এদেরকে একসাথে বসিয়ে ভোজের ব্যবস্থা করো।
খাবারের সময় হলে নাসেরও সাথীদেরকেও খাবার কক্ষে নিয়ে আসা হলো।
সাদর অভ্যর্থনা জানাল এরা নাসের ও তার সাথীদের। খাবার তাদের সামনে রাখা হয়েছে মাত্র ঠিক সেই সময়ে সিনানের বিশেষ শাস্ত্রী এসে খৃস্টান কর্মকর্তাকে খবর দিল, শেখ সিনান আপনাকে জরুরী তলব করেছে। খবর পেয়ে কর্মকর্তা চলে গেল।
সেই মেয়েটি সম্পর্কে তুমি কি সিদ্ধান্ত নিয়েছো?
আমি চলে যাওয়ার সময় ওদেরকে সাথে নিয়ে যাবো।
তুমি যাওয়া পর্যন্ত মেয়ে আমার কাছে থাকবে। বলল সিনান।
আজই চলে যাচ্ছি আমি।
যাও! তবে মেয়েটিকে এখানে রেখে যেতে হবে, ওকে তুমি বাইরে নিয়ে যেতে পারবে না।
শেখ সিনান। তুমি আমাকে ভয় দেখাচ্ছো। তুমি কি জানো, আমাদের সাথে দুর্ব্যবহার করার কারণে এই দুর্গের প্রতিটি ইট খুলে ফেলা হতে পারে। আমাকে শাসানোর ধৃষ্টতা দেখানোর জন্যে তোমার ভয়ংকর পরিণতি বরণ করতে হবে।
হু! মনে হয় তোমার দেমাগ ঠিক নেই। আজ রাতে তুমি নিজে মেয়েকে আমার কাছে নিয়ে আসবে, তুমি চলে যাও বা থাকো, তাতে আমার নির্দেশের অন্যথা হতে পারবে না। শোন, আমার কথার ব্যতিক্রম কিছু ঘটলে তোমার ঠিকানা হবে জিন্দান খানায় আর মেয়ে থাকবে আমার কাছে। যাও! কি করবে ঠাণ্ডা মাথায় চিন্তা কর। বলল সিনান।
খৃস্টান কর্মকর্তা খাবার ঘরে প্রবেশ করল। সবাই তার অপেক্ষায় উদ্বিগ্ন। কর্মকর্তা রাগে ক্ষোভে ফুঁসছিল। ঘরে ঢুকেই সে বলল, বন্ধুরা শোন! সিনান আমাকে এই বলে হুঁশিয়ার করে দিয়েছে যে, আজ রাতে লিজা যে কোন মূল্যে তার কাছে থাকবে। সে আমাকে একথাও বলে দিয়েছে, আমি নিজে যাতে লিজাকে তার ঘরে পৌঁছে দিই। যদি আমি এর ব্যতিক্রম করি তবে আমাদেরকে জেলখানায় পাঠিয়ে দিয়ে লিজাকে কজা করবে সে।
আপনি জেলখানায় বন্দী হলেও আমরা তো আর মরে যাইনি। আপনি নিশ্চিন্ত থাকুন, সে লিজাকে নিয়ে যেতে পারবে না।
কিন্তু এই মেয়ের সাথে তোমার কি সম্পর্ক নাসের? একে রক্ষার জন্যে তুমি ফ্যাসাদে জড়িয়ে যাচ্ছ কেন? নাসেরকে জিজ্ঞেস করল তার এক সাথী।
তোমরা নিজেদেরকে আমাদের বন্দী মনে করো না। এই বিপদ আমাদের সবার জন্যে। বলল গোমশতগীন।
তোমরা আমাদের নও শেখ সিনানের কয়েদী। তোমরা আমাদের সঙ্গ দাও, এখান থেকে বেরিয়ে যাওয়ার চিন্তা কর। বেরিয়ে যেতে পারলে আমরা তোমাদের মুক্ত করে দেবো।
আমাকে শেখ সিনান এই চারজনকে নিয়ে যাওয়ার অনুমতি দিয়েছে, আমি আজই রওয়ানা হয়ে যাবো, তোমরা তাড়াতাড়ি খাওয়া সেরে নাও। সন্ধ্যার আগেই আমি রওয়ানা হয়ে যাবো। বলল গোমশতগীন।
গোমশতগীনের মাথা ছিল কূটচালের ভাণ্ডার। আহার পর্বেই সে সবাইকে বলে দিলো এখান থেকে সবাইকে নিয়ে যাওয়ার কি পরিকল্পনা এঁটেছে সে। আহার শেষ করে তার দেহরক্ষীদের তলব করল গোমশতগীন। ওদের জানাল, সন্ধ্যার আগেই আমরা রওয়ানা হয়ে যাবো। তোমরা মালপত্র সবই বেঁধে তৈরী হয়ে নাও। গোমশতগীনের নিজের ঘোড়া ছাড়াও দীর্ঘ সফরের সামান পত্র, পানি, আহার সামগ্রী ও তাঁবু বহনের জন্যে চারটি উটও সাথে এনেছিল গোমশতগীন। ওইসব সামানপত্রের সাথে দুই তরুণী ও খৃস্টান কর্মকর্তাকেও কাপড়ে মুড়িয়ে উটের পিঠে তুলে দিল।