“তাকে গতকাল রাত থেকে দেখছি না” এক সালার জবাবে বলে। এ সময় দূর থেকে একটি ঘোড়ার ঘণ্টির আওয়াজ শোনা যায়। আওয়াজ ক্রমে নিকটবর্তী হচ্ছিল। একটু পরেই আরোহীসহ ঘোড়া হযরত খালিদ রাযিয়াল্লাহু আনহু-এর তাঁবুর নিকটে এসে থামে।
“মুসান্না বিন হারেছা এসেছেন” বাইরে থেকে এক ব্যক্তি হযরত খালিদ রাযিয়াল্লাহু আনহু-কে অবগত করায়।
হযরত মুসান্না রাযিয়াল্লাহু আনহু-ঘোড়া থামিয়ে একপ্রকার লাফিয়ে নেমে ছুটে গিয়ে হযরত খালিদ রাযিয়াল্লাহু আনহু-এর তাবুতে প্রবেশ করেন।
“আল্লাহ্ আপনার প্রতি রহম করুন জনাব খালিদ!” হযরত মুসান্না রাযিয়াল্লাহু আনহু অত্যন্ত আবেগঝরা কণ্ঠে বলেন এবং বসার পরিবর্তে তাঁবুতে পায়চারি করতে থাকেন।
“খোদার কসম, ইবনে হারেসা!” হযরত খালিদ রাযিয়াল্লাহু আনহু স্মিত হেসে বলেন “তোমার হাব-ভাব এবং খুশির উত্তেজনা বলছে যে, নিশ্চয়ই তুমি কোন গুপ্ত ধনভাণ্ডারের সন্ধান পেয়েছ।”
“ধন-ভাণ্ডারের চেয়েও দামী তথ্য নিয়ে এসেছি আমি” মুসান্না বিন হারেসা রাযিয়াল্লাহু আনহু বলেন “আমার গোত্রের ইহুদীরা একটি ফৌজ তৈরি করে উলাইয়িসে সমবেত হতে রওয়ানা হয়েছে। তাদের নেতৃবৃন্দ রুদ্ধদ্বার বৈঠকে আমাদের বিরুদ্ধে যে পরিকল্পনা গ্রহণ করেছে আমি তা অন্তরে অন্তরে অবগত।”
“এই তথ্য লাভ করতেই কি তুমি গত রাত থেকে হাওয়া হয়ে গিয়েছিলে?” হযরত খালিদ রাযিয়াল্লাহু আনহু জানতে চান।
“হ্যাঁ” মুসান্না জবাব দেন “তারা আমার গোত্রীয়। আমি জানতাম আমার গোত্রের লোকেরা প্রতিশোধ না নিয়ে স্বস্তিতে বসে থাকবে না। বেশ বদল করে আমি তাদের পিছু নিয়েছিলাম। যে স্থানে বসে তারা আমাদের বিরুদ্ধে পরিকল্পনা তৈরি করে আমি তার পার্শ্বস্থ কক্ষে বসে ছিলাম। আমি সেখান থেকে পুরো খবর সংগ্রহ করে রওয়ানা হয়েছি।… দ্বিতীয় গুরুত্বপূর্ণ খবরটা হলো, তাদের নেতৃত্বাধীন একটি প্রতিনিধিদল আমাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করতে সেনাসাহায্য চাইতে মাদায়েনে উরদূশেরের দরবারে গিয়েছে।”
“তাহলে তো এর অর্থ এটাই যে, আমার সৈন্যদেরকে বিশ্রামের সুযোগ দিতে পারব না।” হযরত খালিদ রাযিয়াল্লাহু আনহু বলেন “এ মুহূর্তে এটা করলে ভাল হয় না যে, যেভাবে আমরা ওলযায় ইরানীদের পূর্ণ প্রস্তুতি গ্রহণের সুযোগ দিই নি, ঠিক তেমনি এখানেও আমরা ইহুদী ও ইরানীদের সমবেত হওয়ার পূর্বেই তাদের উপর আক্রমণ করব?”
“আল্লাহ আপনাকে দীর্ঘজীবি করুন জনাব খালিদ!” হযরত মুসান্না বলেন “শত্রু মাথা উঁচু করার পূর্বেই তার ঘাড় মটকে দেয়াই সর্বোত্তম।”
হযরত খালিদ রাযিয়াল্লাহু আনহু উপস্থিত অন্যান্য সালারদের থেকে পরামর্শ চাওয়ার ভঙ্গিতে এক এক করে সকলের দিকে তাকান।
“এমনটিই হওয়া উচিত” সালার হযরত আছেম বিন আমর রাযিয়াল্লাহু আনহু বলেন “তবে সৈন্যদের শারীরিক অবস্থার প্রতিও নজর রাখা চাই। সৈন্যদেরকে কমপক্ষে দুটি দিন বিশ্রামের সুযোগ দিলে কি ভাল হয় না।?”
“হ্যাঁ, জনাব খালিদ!” অপর সালার হযরত আদী ইবনে হাতেম রাযিয়াল্লাহু আনহু বলেন “যেন এমনটি না হয় যে, প্রথম তিন বিজয়ের নেশায় সার্বিক দিক বিবেচনা না করে যুদ্ধে জড়িয়ে পড়লাম, অতঃপর পরাজয়ের শিকার হতে হল।”
“ইবনে হাতেম!” হযরত খালিদ রাযিয়াল্লাহু আনহু বলেন “সুন্দর এ পরামর্শ দানের জন্য তোমাকে ধন্যবাদ। কিন্তু এটাও ভাবতে হবে যে, সৈন্যদের বিশ্রামের উদ্দেশে দু‘টো দিন ব্যয় করলে এরই মধ্যে ইরানী বাহিনী ইহুদীদের সাথে এসে মিলিত হবে না তো?”
“এমনটি হতে পারে” হযরত আদী রাযিয়াল্লাহু আনহু বলেন “ইরানী বাহিনীর আসতে দেয়াই আমার মতে ভাল। কেননা, এর আগেই বকর বিন ওয়ায়েলের সাথে যুদ্ধে জড়িয়ে পড়লে হতে পারে ইতোমধ্যে ইরানী বাহিনী এসে পশ্চাৎ হতে আমাদের উপর ঝাঁপিয়ে পড়বে। যে রণাঙ্গনে যারা যারা আমাদের বিরুদ্ধে লড়তে ইচ্ছুক তাদেরকে সেখানে সমবেত হওয়ার সুযোগ দেয়াকেই আমি ভাল মনে করি।”
“জনাব খালিদ!” হযরত মুসান্না রাযিয়াল্লাহু আনহু বলেন “ইহুদীদের বিরুদ্ধে প্রথম আক্রমণ রচনার অনুমতি প্রার্থনা করছি আমি।”
“এ পরিকল্পনার ফায়দা কি?” হযরত খালিদ রাযিয়াল্লাহু আনহু জানতে চান।
“ফায়দা হলো তাদেরকে আমি যেভাবে চিনি আর কেউ এমন চেনে না।” হযরত মুসান্না রাযিয়াল্লাহু আনহু জবাবে বলেন, “আর এ জন্যও অগ্রবর্তী হয়ে আমি তাদের উপর আক্রমণ করতে চাই যে, তাদের পরিকল্পনার মধ্যে এটিও একটি বিশেষ দিক ছিল যে, তাদের গোত্রের যারা মুসলমান হয়েছে তাদেরকে তারা হত্যা করবে। তাই আমি আক্রমণের অগ্রভাগে থেকে তাদের বলতে চাই যে, দেখ কারা কাদের হত্যা করছে।
“বর্তমানে আমাদের সৈন্য সংখ্যা কত?” হযরত খালিদ রাযিয়াল্লাহু আনহু জানতে চান। “আঠারো হাজারের কিছু বেশী এক সালার জানান।”
“পারস্যের সীমানায় পা রাখার সময় আমাদের সৈন্যসংখ্যা আঠারো হাজারই ছিল।” হযরত খালিদ রাযিয়াল্লাহু আনহু বলেন “এই এলাকার মুসলমানরা আমার সৈন্যসংখ্যা হ্রাস পেতে দেয়নি।”
ঐতিহাসিকগণ লেখেন, ইতোপূর্বে সংঘটিত তিন যুদ্ধে প্রচুর মুসলমান শহীদ এবং অনেকে মারাত্মক আহত হয়েছিলেন। কেউ কেউ এটাও লিখেছেন, তিন যুদ্ধের পর সৈন্যদের সংখ্যা অর্ধেকে নেমে গিয়েছিল। কিন্তু হযরত মুসান্না রাযিয়াল্লাহু আনহু-এর গোত্র নিজেদের জনবল দিয়ে এই কমতি পূরণ করে দিয়েছিল।