- বইয়ের নামঃ পীর ও পুলিশ
- লেখকের নামঃ এনায়েতুল্লাহ আলতামাশ
- প্রকাশনাঃ বাড কম্প্রিন্ট এন্ড পাবলিকেশন্স
- বিভাগসমূহঃ অনুবাদ বই, উপন্যাস
পীর ও পুলিশ
ঈমানের প্রদীপ্ত স্পর্শে
ঈমানের প্রদীপ্ত স্পর্শে
হিন্দু জাট এলাকার এক থানার দায়িত্বে ছিলাম আমি। জাটরা হিন্দুদের মধ্যে অনেকটা ব্যতিক্রম। লড়াই মারপিট ও দুঃসাহসিক কাজে এদের খুব নাম ডাক। ভারতীয় সেনাবাহিনীতে এদের আলাদা রেজিমেন্ট আছে। ইংরেজ আমলে বলা হতো জাট রেজিমেন্ট।
সৈনিকি ও জমিদারী পেশাতেই প্রধানত এদের আগ্রহ বেশি।
এক সকালে শহরের সরকারী হাসপাতাল থেকে খবর এলো, সেখানে একজন বিষ খাওয়া রুগী এসেছে। তখন এ ধরনের বিষ খাওয়া বা খুন খারাবির ঘটনা এতটা ঘটতো না।
হাসপাতাল গিয়ে জানতে পারলাম, রুগীকে অজ্ঞান অবস্থায় আনা হয়েছিলো। ডাক্তার বেশ অভিজ্ঞ লোক। রুগী অজ্ঞান অবস্থায়ও যেভাবে ছটফট করছিলো তা দেখেই ডাক্তার নিশ্চিত হয়ে যান ওটা বিষ খাওয়া বা খাওয়ানোর ফেস।
তবুও তাকে ইনজেকশন দেয়া হয়। এই ইনজেকশনের মাধ্যমে নিশ্চিত মৃত্যুপথের রুগীরও কয়েক মিনিটের জন্য জ্ঞান ফিরে। একেও সে ইনজেকশন দেয়া হয়, যাতে সে এতটুকুও বলে যেতে পারে যে, কে তাকে বিষ খাইয়েছে বা এ ব্যাপারে যদি কোন ইংগিতও দিয়ে যায় তাহলেও মামলা অনেকটা সহজ হয়ে যাবে।
কিন্তু ইনজেকশনে তেমন কোন প্রতিক্রিয়াই হয়নি। অজ্ঞান থাকাবস্থায় মারা যায় সে।
উপশহর থেকে প্রায় চার মাইল দূরের এক গ্রামের বিরাট এক জমিদার ছিলো এ লোক। এ ধরনের জমিদারকে ঠাকুর বলা হয়। ঠাকুররা ধনে মানে খুব প্রভাবশালী হয়।
এমন একজন ঠাকুরের নিহত হওয়ার ঘটনা খুব মামুলি নয়। ডাক্তার পোষ্টমর্টেমের জন্য লাশ হাসপাতালেই রেখে ছিলেন। সেখানে ঠাকুরের বড় ছেলে ছিলো। তাকে আমি থানায় নিয়ে এলাম।
ঠাকুর হত্যার রিপোর্টের ওপর প্রথমে এফ. আই. আর লেখানোর ব্যবস্থা করলাম। তারপর ঠাকুরের ছেলেকে হালকা কিছু জিজ্ঞাসাবাদ করলাম। প্রশ্নের উত্তরে সে যা বললো এ থেকে আরো কতগুলো প্রশ্নের জন্ম দিলো। অর্থাৎ তার উত্তরগুলো পরিষ্কার হলো না।
শুধু স্পষ্ট করে এতটুকু বুঝা গেলো, ঠাকুরের সঙ্গে কারো এমন কোন শত্রুতা ছিলো না যে, বিশ খাইয়ে প্রতিশোধ নেবে।
গ্রাম থেকে বেশ কিছু দূরে তার একটি ছোট বাগান বাড়ি আছে। বাগানে সজির ফলনই বেশি হয়।
ঠাকুর সেখানে মাঝে মধ্যে রাত কাটাতো। গতকাল রাতে বাগান বাড়িতে গিয়েছিলো। মাঝ রাতের অনেক আগেই সেখান থেকে চলে আসে। ঘরের সবাই তখন ঘুমে। সে তার স্ত্রীকে ঘুম থেকে জাগায়। শব্দ পেয়ে জেগে উঠে তার বড় ছেলেও।
তারা তখন দেখলো, ঠাকুর ব্যথায় কাতরাচ্ছে। ঠাকুর জানালো, তার পেট জ্বলছে এবং সারা দেহ মুচড়ে মুচড়ে আসছে।
কেন এমন হচ্ছে? কি হয়েছে? পেরেশান হয়ে ঘরওয়ালারা জিজ্ঞেস করলো। কিন্তু ঠাকুর কাতরানির শব্দ ছাড়া কোন উত্তর দিতে পারলো না। ইংগিতে কিছু একটা বুঝাতে চাইলো। কেউ কিছু বুঝলো না।
ঠাকুরের ছেলে দৌড়ে গায়ের দুজন উঝা বদ্যিকে নিয়ে এলো। তারা এসে বললো, বিষাক্ত কোন কিছু ঠাকুর সাবকে কেটেছে।
তারা ঠাকুরের হাত পা পরীক্ষা করে দেখলো, কিন্তু কাটা-ছেঁড়ার কোন লক্ষণ পাওয়া গেলো না। দুজনে পরামর্শ করে ঠাকুরকে কি এক ঔষধ খাইয়ে দিলো। ঠাকুর কয়েক মহূর্ত পর বেহুশ হয়ে গেলো।
ঠাকুর সাব এখন কিছুটা আরামবোধ করছেন। এজন্য শান্ত হয়ে ঘুমিয়ে পড়েছেন। সকালে উনাকে আরো ঔষধ দেয়া হবে। একথা বলে উঝা দুজন চলে গেলো।
এক দেড় ঘন্টা পর ঠাকুর সে অবস্থাতেই বুকে পেটে খামচে খামচে হাত ফেরাতে লাগলো। সঙ্গে সঙ্গে ছটফট করতে লাগলো। সকাল পর্যন্ত তার এভাবেই কাটলো।
কিন্তু সূর্য উঠতেই তার অবস্থা আরো বিগড়ে গেলো। বয়স্ক কয়েকজন লোক তখন বললো, ঠাকুর সাহেবকে তাড়াতাড়ি হাসপাতাল নিয়ে চলো। সেই অর্ধ মৃত অবস্থায় তখন ঠাকুরকে হাসপাতাল আনা হয়।
***
আমি জানতে চাচ্ছিলাম, ঠাকুরের চালচলন কেমন ছিলো আর গ্রামের লোকদের সঙ্গেই বা তার সম্পর্ক কোন পর্যায়ের ছিলো। কারো ছেলে তো আর বাপ সম্পর্কে বলতে পারে না যে, সে খারাপ লোক ছিলো। তবুও ঠাকুরের ছেলেকে এ সম্পর্কে জিজ্ঞেস করলাম।
সে জানালো, না তিনি ভালো মানুষ ছিলেন। জমিটমি নিয়েও কারো সঙ্গে বিরোধ ছিলো না। আত্মীয় স্বজনের সঙ্গেও সম্পর্ক ছিলো সহজ।
তুমি বলেছো ঠাকুর মাঝে মধ্যে বাগান বাড়িতে রাত কাটাতেন। তিনি সেখানে কি করতেন? আমি হঠাৎ করেই প্রশ্নটি করলাম।
ঠাকুরের ছেলে চুপসে গেলো একেবারে।
পানটান চলতো? তাশ খেলা হতো? না গান বাজনা হতো? আমি জিজ্ঞেস করলাম।
আমি দেখিনি কখনো। মনে হয় উনার দোস্ত ইয়ারদের নিয়ে গল্পগুজব করতেন।- সে বললো আমতা আমতা করে।
ওর দ্বিধান্বিত অবস্থা দেখে বুঝলাম, নিজের বাপ সম্পর্কে সে বেফাঁস কিছু বলতে চায় না।
আরেকটা সন্দেহ হলো, সে হয়তো তার বাপকে বিষ দিয়ে মারতে পারে। এ ধরনের ঘটনাও খুব বিরল নয়। এ সন্দেহটা মাথায় রেখে তার কাছ থেকে আমি জেনে নিলাম, তার মা জীবিত আছে কিনা।
ছেলে বললো, তার মা জীবিত আছে। হতে পারে এটা তার সতালো মা। আপন মা মারা যাওয়ার পর ঠাকুর যুবতী কোন মেয়েকে বিয়ে করেছে। যার সঙ্গে এই ছেলের অবৈধ সম্পর্ক ছিলো।