হযরত খালিদ বিন ওলীদ রাযিয়াল্লাহু আনহু-এর পরিচয়, ইসলামের প্রতি তার অবদান এবং বর্তমান মুসলমানরা তার থেকে কি আদর্শ গ্রহণ করতে পারে-বক্ষমান উপন্যাসে পাঠক তা মর্মে মর্মে অনুধাবন করতে পারবেন।
ইসলামের ইতিহাস অধিকাংশ ক্ষেত্রে বাড়াবাড়ির সম্মুখীন হয়ছে। বিভিন্ন ঐতিহাসিক এবং জীবনীকার কোন কোন ঘটনায় পদখলনের শিকার হয়েছেন। একই ঘটনা একাধিকরূপে চিত্রিত হয়েছে। ফলে তা হতে সত্য ও বাস্তব তথ্য আহরণ পাঠকের জন্য গলদঘর্মের বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে।…
এ উপন্যাসের প্রত্যেকটি ঘটনা সত্য-সঠিকরূপে পেশ করতে আমরা বহু গ্রন্থের সাহায্য নিয়েছি। সম্ভাব্য যাচাই-বাছাই করেছি এবং অনেক পরীক্ষা-নিরীক্ষার পর তা লিখেছি। মাঝে মাঝে এমন স্থানে এসে হোচট খেয়েছি যে, কোনটা বাস্তবভিত্তিক আর কোনটা ধারণা নির্ভরতা শনাক্ত করা প্রায় অসম্ভব ছিল। সেক্ষেত্রে নির্ভরযোগ্য তথ্যসূত্রের উপর ভিত্তি করে বাস্তবতা উদ্ধারের প্রয়াস পেয়েছি। এ কারণে মতান্তর ঘটবে; আর তা ঘটাই স্বাভাবিক। তবে এ মতবিরোধ ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র এবং অপ্রসিদ্ধ ঘটনায় গিয়ে প্রকাশিত হবে মাত্র।
যে ধাঁচে এ বীরত্বগাঁথা রচিত, তার আলোকে এটাকে কেউ উপন্যাস বললে বলতে পারে, কিন্তু এটা ফিল্মি স্টাইল এবং মনগড়া কাহিনী ভরপুর বাজারের অন্যান্য ঐতিহাসিক উপন্যাসের মত নয়। এর পাঠক উপন্যাসের চাটনিতে ‘ঐতিহাসিকতার পথ্য’ গলধঃকরণ করবেন গোগ্রাসে। এতে ঐতিহাসিকতা বেশী, ঔপন্যাসিকতা কম।
এটা কেবল ইতিহাস নয়, ইসলামী ঐতিহ্যের অবয়ব। মুসলমানদের ঈমানদীপ্ত ঝাণ্ডা। পূর্বপুরুষের গৌরব-গাঁথা এবং মুসলিম জাতির জিহাদী জযবার প্রকৃত চিত্র। পাঠক মুসলিম জাতির স্বকীয়তা জানবেন, সাহিত্যরস উপভোগ করবেন এবং রোমাঞ্চ অনুভব করবেন।
বাজারের প্রচলিত চরিত্রবিধ্বংসী উপন্যাসের পরিবর্তে সত্যনির্ভর এবং ইসলামী ঐতিহ্যজাত উপন্যাস পড়ুন। পরিবারের অপর সদস্যদের পড়তে দিন। নিকটজনদের হাতে হাতে তুলে দিন মুসলিম জাতির এ গৌরবময় উপাখ্যান।
এনায়েতুল্লাহ্ আলতামাশ
লাহোর, পাকিস্তান
প্রকাশকের মিনতি
▶ সম্মানিত পাঠকবৃন্দের প্রতি এটি আমাদের একটি আনন্দঘন আয়োজন। মজাদার পরিবেশনা। ইতিহাসের উপাদান, সাহিত্যের ভাষা আর উপন্যাসের চাটনিতে ভরপুর এর প্রতিটি ছত্র। শাসরুদ্ধকর কাহিনী ঝরঝরে বর্ণনা আর রুচিশীল উপস্থাপনার অপূর্ব সমন্বয় আপনার হাতের এই নাঙ্গা তলোয়ার।
▶ পাঠক অবশ্যই মুগ্ধ হবেন। লাভ করবেন অনাবিল আনন্দ। তুলবেন তৃপ্তির ঢেকুর। নাঙ্গা তলোয়ারের ১ম ও ২য় খণ্ডের আত্মপ্রকাশের এ শুভ মুহূর্তে আমরা এ ব্যাপারে গভীর আশাবাদী।
▶ শমশীরে বে-নিয়াম-এর ভাষান্তর নাঙ্গা তলোয়ার, মূল লেখক এনায়েতুল্লাহ আলতামাশ। পাকিস্তানের জনপ্রিয় এই লেখকের সাথে বাংলাদেশের পাঠকবৃন্দকে নতুন করে পরিচয় করানোর কোন প্রয়োজন আছে বলে আমাদের মনে হয় না। ইতোমধ্যে তার জ্ঞানদীপ্ত হাতের একাধিক উপন্যাস বাংলা ভাষায় অনূদিত হয়ে সারাদেশে আলোড়ন সৃষ্টি করেছে। বাংলার জনগণ এমন ঔপন্যাসিক পেয়ে বড়ই গর্বিত এবং আনন্দিত। এর জলন্ত প্রমাণ হলো – তার কোন উপন্যাস ছেপে বাজারে আসতে দেরী, ছাপা ফুরাতে দেরী না।
▶ এনায়েতুল্লাহ আলতামাশ-এর এমনি একটি অনবদ্য উপন্যাস শমশীরে বে-নিয়াম যা এখন বাংলায় অনূদিত হয়ে নাঙ্গা তলোয়ার নামে আপনার হাতে।
▶ সবটুকু মেধা, যোগ্যতা, অধ্যাবসায় সেঁচে পাঠকের রুচিসম্মত মুক্তা-মানিক্য উপহার দিতে আমরা একটুও কার্পণ্য করিনি। ভুল-ভ্রান্তি এড়িয়ে যাবার প্রাণান্ত প্রয়াস চালিয়েছি। পাঠক এ গ্রন্থ হতে জানতে পারবে মর্দে মুজাহিদ সাহাবী রাযিয়াল্লাহু আনহুদের ঈমানদীপ্ত চেতনা, হযরত খালিদ রাযিয়াল্লাহু আনহু-এর দুঃসাহসিক অভিযান ও বীরত্বগাঁথা। এবং লাভ করবেন মুসলিম মানসের দৃঢ়চেতা মনোবল। পাঠক সামান্যতম উপকৃত হলেও আমাদের শ্রম সার্থক হবে। অনুবাদের মূল উদ্দেশ্য পাবে বাস্তবতা। আল্লাহ আমাদের সকলকে কবুল করুন। আমীন!
নাঙ্গা তলোয়ার – ১ম খণ্ড
৬২৯ খ্রিষ্টাব্দ, ৮ম হিজরি। আরব মরুর বুক চিরে মুসাফির চলেছেন একাকী। মক্কা ও মদীনার মধ্যবর্তী বিশাল মরু অঞ্চলটি খুবই ভয়ঙ্কর। যে কোন মুহূর্তে বিপদের সম্ভাবনা। একে তো মরুভূমির স্বাভাবিক রুক্ষতা তার উপর আবার লুটেরাদের কবলে পড়ে সর্বস্ব খোয়াবার আশঙ্কা। এ জন্য একাকী সফর করতে কেউ সাহস করত না। লোকেরা দল বেঁধে এ পথে যাতায়াত করত। কিন্তু এ মুসাফির কিছুটা ব্যতিক্রম। তিনি একাকী চলছেন উন্নত জাতের ক্ষিপ্ত গতির অশ্বপৃষ্ঠে। অশ্বের জিনের সাথে তার বর্মটি বাঁধা। কটিদেশে ঝুলানো তরবারি, হাতে বর্শা। প্রাচীনকালে পুরুষেরা দৈহিক দিক দিয়ে উঁচু-লম্বা, প্রশস্ত বুক এবং ভারী শরীর বিশিষ্ট ছিল। এ নিঃসঙ্গ পুরুষ মুসাফিরও তাদের মতই। তবে তাঁর অশ্বপৃষ্ঠে বসার ভঙ্গিই বলছিল, তিনি একজন বীর যোদ্ধা। কোন সাধারণ ব্যক্তি নন। লুটেরারা হামলা করতে পারে এমন কোন আশঙ্কাই তার চেহারা দেখে মনে হচ্ছিল না। তাঁর মধ্যে এতটুকু ভীতিও ছিল না যে, তাঁর ঘোড়াটি লুট হয়ে যেতে পারে আর তাঁকে পায়ে হেঁটেই অবশিষ্ট পথ অতিক্রম করতে হবে। তাঁর চেহারাতে একটি অস্বাভাবিক অবস্থা উঠানামা করছিল। তিনি ছিলেন চিন্তাযুক্ত। মনে হয় অতীতের স্মৃতি আওড়িয়ে ফিরছিলেন অথবা কিছু স্মৃতি ভুলে যাবার আপ্রাণ চেষ্টা করছিলেন।