ধূর্তামিপূর্ণ আচরণে আইউবী নাজির প্রতি কিছুটা দুর্বল হয়ে পড়লেন। নাজি আইউবীকে বোঝাতে চেষ্টা করলেন যে, স্পেশাল বাহিনীর প্রতিটি সৈনিক খেলাফতের জন্যে জীবন দিতে প্রস্তুত। সুদানী ফৌজ আপনার নির্দেশের অপেক্ষায় আছে। তারা আপনাকে পেয়ে খুবই গর্বিত। আপনার সম্মানে তারা একটি সংবর্ধনার আয়োজন করার জন্যে আমার কাছে আবেদন করেছে। ওরা আপনাকে সম্মান জানাতে চায়; আপনাকে নিজেদের মতো করে কাছে পেতে ওরা খুব-ই উদগ্রীব।
সালাহুদ্দীন আইউবী নাজির প্রস্তাবে সম্মতি দিলেন। বললেন–আমি আপনার ফৌজের দেয়া সংবর্ধনায় যাবো।
কিন্তু দাফতরিক কাজের ঝামেলায় আইউবী নাজির অনুষ্ঠানের জন্যে সময় বের করতে পারছিলেন না। তাই সংবর্ধনা অনুষ্ঠানটি পিছিয়ে গেলো কয়েক দিনের জন্য।
***
নিঝুম রাত। নাজি তার খাস কামরায় অধীন দুই কমাণ্ডার নিয়ে সুরাপানে বিভোর। গায়ে হালকা কাপড়, পায়ে নুপুর, চোখে-মুখে প্রসাধনী মেখে অস্পরা সেজে কামোদ্দীপক ভঙ্গিতে নাচছে দুই সুন্দরী নর্তকী।
নাজির খাস কামরায় যে কারোর প্রবেশাধিকার নেই। যারা নাজির ঘনিষ্ঠ ব্যক্তি আর একান্ত সেবিকা, নর্তকী, সাকি একমাত্র তাদেরই সিডিউল মতো নাজির ঘরে প্রবেশের অধিকার আছে। দারোয়ান জানতো, কখন কাদের প্রবেশের অনুমতি রয়েছে।
হঠাৎ নাজির ঘরে প্রবেশ করে কানে কানে কি যেনো বললো দারোয়ান। নাজি দারোয়ানের পিছনে পিছনে উঠে এলো সঙ্গে সঙ্গে। দারোয়ান নাজিকে পার্শ্বের কক্ষে নিয়ে গেলো।
কক্ষে উপবিষ্ট এক পৌঢ়। সাথে এক তরুণী। যৌবন যেন ঠিকরে পড়ছে মেয়েটির দেহ থেকে। নাজিকে দেখেই তরুণী উঠে দাঁড়িয়ে অভিবাদন জানালো। চোখের চাহনিতে গলে পড়লো, মায়াবী আকুতি। তরুণীর রূপের জৌলুসে তন্ময় হয়ে দীর্ঘক্ষণ অপলক তাকিয়ে রইলো নাজি।
তরুণীর গায়ে ফিনফিনে হালকা পোশাক। খুব দামী না হলেও বেশ আকর্ষণীয়।
নাজি অভিজ্ঞ নারী শিকারী। নিজের ভোগের জন্যই শুধু নয়, নারীকে তিনি ব্যবহার করেন অন্য বহু কাজে। বড় বড় অফিসার, আমীর-উমরাকে নারীর ফাঁদে ফাঁসিয়ে ব্ল্যাকমেইল করা নাজির অন্যতম কৌশল। সুন্দরী তরুণীদের গোয়েন্দা কাজে ব্যবহার করেও নাজি সৃষ্টি করে রেখেছে নিরাপদ এক জগৎ। এ জগতে আধিপত্য শুধুই নাজির।
কসাই জন্তু দেখেই যেমন বলতে পারে এতে কত কেজি গোশত হবে, নাজিও নারী দেখলেই বলতে পারে, ও কী কাজের হবে, কোন্ কাজে একে ব্যবহার করলে বেশী ফায়দা পাওয়া যাবে।
নারী ব্যবসায়ী, চোরাচালানী, অপহরণকারীদের সাথে নাজির গভীর হৃদ্যতা। ওরা সবসময়ই নাজির জন্যে নিয়ে আসে সেরা চালান। নাজি অকাতরে অর্থ দিয়ে কিনে নেয় তার পছন্দনীয় মেয়েদের। এই পৌঢ় লোকটিও নারী ব্যবসায়ীর মতো। গায়ে আজানুলম্বিত সুদানী পোশাক। নাজিকে বললো, এই মেয়েটি নাচ-গানে বেশ পারদর্শী। মুখের ভাষা যাদুমাখা। কথার যাদুমন্ত্রে পাথর গলাতে পারে। যে কাউকে মুহূর্তের মধ্যে বশ করতে পারঙ্গম। আর রূপ-লাবণ্য তো আপনার সামনেই। আমি এমন সুন্দরী মেয়ে জীবনে কমই দেখেছি। আপনিই এর যোগ্য বলে সরাসরি আপনার কাছে নিয়ে এলাম।
তরুণীর সৌন্দর্যে নাজি মুগ্ধ । মেয়েটির বুদ্ধিমত্তা ও বিচক্ষণতা যাচাই করার জন্যে দু-চার কথায় তরুণীর ইন্টারভিউ নিয়ে নিলেন নাজি। তরুণীর সাথে কথা বলে নাজির মনে হলো, এ অনেক এক্সপার্ট। এ ধরনের মেয়েই তিনি তালাশ করছেন। সামান্য প্রশিক্ষণ দিলেই একে বিশেষ কাজে ব্যবহার করা যাবে।
দাম-দস্তর ঠিক হলো। মূল্য বুঝে নিয়ে চলে গেলো বেপারী। নাজি খাস কামরায় নিয়ে গেলেন মেয়েটিকে। কক্ষে তখন তুমুল নৃত্য-গান চলছে।
নাজি ঘরে প্রবেশ করতেই ওদের নাচ বন্ধ হয়ে গেলো। নাজি নতুন মেয়েটিকে নাচতে বললেন।
পরিধেয় কাপড়ের পাট খুলে দু পাক ঘুরে হাত-পা-কোমর দুলিয়ে নাচ শুরু করতেই ওর নাচের মুদ্রা ও মনকাড়া ভঙ্গি দেখে হ্যাঁ হয়ে তোলেন নাজি ও তার সহকর্মীরা। অনির্বচনীয় এই তরুণীর নাচ। এ যেন নাচ নয়, মরুর বুকে তীব্র ঝড়। সে ঝড়ে মানুষের কামভাব, দুশ্চিন্তা ও যন্ত্রণাকে শুধু একই তন্ত্রে পুঞ্জিভূত করে। মেয়েটির উর্বশী শরীর, কণ্ঠের সুরলহরী আর অঙ্গের পাগলকরা কম্পন মুহূর্ত মধ্যে মাতিয়ে তুললো নাজির কক্ষটিকে।
নাজি এবং তার সাথীরাই অবাক হলো না শুধু। দুই পুরাতন নর্তকীর চেহারাও পাণ্ডুর হয়ে গেলো ওর যাদুময়ী কণ্ঠ আর নাচের তালে। নাজির মনে হলো, খুব বেশী সস্তায় অনেক দামী জিনিস পেয়ে গেছেন তিনি। যোগ্যতা ও সৌন্দর্যের হিসেবে দাম অনেক বেশী হওয়া উচিত ছিলো মেয়েটির।
নাজির প্রতি ঝুঁকে নাচের ভঙ্গিতে কুর্নিশ করলো তরুণী। নাচের ঘুর্ণনে বার বার নাজির গায়ে বুলিয়ে দিচ্ছিলো কোমল অঙ্গের মোলায়েম পরশ। তরুণীর সৌন্দর্যে আনমনা হয়ে পড়লো নাজি।
আচমকা সবাইকে বিদায় করে দিলো নাজি। দরজা বন্ধ। কক্ষে শুধু নাজি আর তরুণী। কাছে ডাকলো তরুণীকে। বসাল নিজের একান্ত সান্নিধ্যে।
নাম কী তোমার?
জোকি।
বেপারী বললো, তুমি নাকি পাথর গলাতে পারো। আমি তোমার এই যোগ্যতার পরীক্ষা নিতে চাই।
কোন্ সে পাথর, যাকে পানি করে দিতে হবে বলুন?
নয়া আমীর ও সেনাবাহিনীর সর্বাধিনায়ক আইউবীকে। তাকে পানির মত গলিয়ে দিতে হবে তোমাকে। বললেন নাজি।