যেমন আদালতের বোনকে দেখেই সারমুদ বলে দেয়, শ্বশুর বাড়ি থেকে বিতাড়িত হয়ে বাপের বাড়ি বসে আছে সে। অবশ্য আদালতের বাড়ি থেকে গুপ্তধনের আবিস্কারের পরিকল্পনা তার নিজের ছিলো।
আমি জানতাম, মানুষ পীর পূজারী- সারমুদ জবানবন্দিতে বললো- কোন বিপদে পড়লেই লোকজন খোদার দরবারে না গিয়ে পীরের সামনে সিজদা করে। কিন্তু আমি এটা জানতাম না যে, পীরের ইশারায় তারা নাচতেও পারে এবং নিজেদের যুবতী মেয়েদেরকে পীরের কাছে হাওলা করে দেয়।…..
অবশ্য এটা আমার বোকামি ছিলো যে, আমি খাযানার বুজরুকি ও কূপ থেকে পানি উঠানোর ধোকা দিয়ে বসলাম। এটা না করলে সারা দেশ ঘুরে আমি এত টাকা কামাতাম, যা রাখার জায়গা পেতাম না কোথাও। খোদার কসম! যে মেয়ের প্রতিই আমার দৃষ্টি গিয়েছে সেই আমার বুকে লুটে পড়েছে।
আদালতের স্ত্রী তাজের কাছ থেকে যে আমি জবানবন্দি নিয়েছি এটা ওকে বললাম না। আমি শুধু জিজ্ঞেস করলাম। আদালতের ঘরেও কি মেয়ে শিকার করেছো?
ইনস্পেক্টর সাহেব! সে গম্ভীর সুরে বললো- আমি আমার অপরাধ স্বীকার করে নিয়েছি। আমার আরজ হলো, যেখানে সব কথাই আপনি পরম ধৈর্য নিয়ে শুনেছেন, এটাও তাই গোপন রাখবো না……. আদালতের ঘরের মেয়ে দুটিকেই আমার ভালো লেগেছে। প্রথমে আমি আদালতের বোনকে পটাতে চাইলাম। কিন্তু ঐ মেয়ের আত্মসম্মান বোধ এত প্রখর যে, আমাকে সরাসরি প্রত্যাখ্যান করলো…….
আদালতের স্ত্রীকে আমার বেশি ভালো লাগলো। আদালতের অনুমতি ক্রমে তাজ আমার সঙ্গে তিন রাত কাটালো। প্রথম রাতে ইশারা করতেই সে নিজেকে আমার কাছে সপে দিলো……. এই তিন রাত আমার ও তাজের মধ্যে কি কথা হয়েছে সেটা শুনিয়ে বিরক্ত করবো না আপনাকে……….
আমি আপনাকে শুধু বলতে চাই, সুন্দরী মেয়েদের সবসময় আমি খেলনা মনে করেছি। একটি খেলনা ভেঙ্গে গেলে আরেকটা হাতে চলে আসতো। আপনি তো জানেন, শয়তানের জগতে প্রেমে ভালোবাসা নেই। স্বার্থপরতা আর যৌন ক্ষুধা মেটানোই এখানকার প্রধান কাজ। কিন্তু তাজের ব্যাপার ছিলো ভিন্ন।
এই সুন্দরী মেয়ে আমার ওপর জাদুর মতো সওয়ার হলো। মনে মনে ভালো লাগা এক জিনিস। যে মেয়ের সঙ্গেই আমার সম্পর্ক ছিলো তাকে আমার ভালো লেগেছে। কিন্তু মনের ওপর কেউ আধিপত্য বিস্তার করেনি। তাজ যেন আমার মন-আত্মার ভেতর বাসা বেঁধে ফেললো..
কখনো মনে হতো, কত জনম আগ থেকে আমরা পরস্পরকে চিনি। হারিয়ে গিয়েছিলাম। আবার মিলন হয়েছে। তার সামনেও অবশ্য আমি চিল্লা কাশির অভিনয় করেছি। তবে এও বলেছি, তাকে ছাড়া এক মুহূর্তও আমার জীবন কিভাবে কাটবে আমি জানি না। তারপও সে আমাকে অনেক বড় পীর মনে করতে থাকে। আবার আবেগ ভরেও আমার সঙ্গে কথা বলে যায়। আমি বুঝতাম এসব কথা তার অন্তর থেকেই বেরোচ্ছে ……
ওকে আমি আমার সঙ্গে পালিয়ে যাওয়ার প্রস্তাব দিই। সে তখন বলে, ভয় লাগে। পুরো খানের বেইজ্জতি হবে………
জনাব! তাজ আমার সামনে বসার পর আমার মনে হলো, আমার ভেতর যে তৃষ্ণার জ্বালা ছিলো সেটা ধুয়ে মুছে গেছে। কোন মেয়ের সঙ্গ আমাকে এভাবে আত্মিক প্রশান্তি দেয়নি।
এক রাতে কি হলো, ওর মুখটি আমার দু হাতের মাঝখানে নিয়ে তার চোখের দিকে তাকালাম। সে চোখ আমার শৈশবে মনে করিয়ে দিলো। ভেসে উঠলো আমার মা বোনের ছবি। আমার চোখে পানি এসে গেলো। তাজ জিজ্ঞেস করলো, আমার চোখে পানি কেন। মৃদু হেসে উত্তর এড়িয়ে গেলাম। সে চুপ করে গেলো। সে হয়তো ভেবেছে, এই পানি পীর ফকিরীর কোন রহস্য হবে……..
জানি না, তাজকে ওখানে রেখে আমি কি করে পালালাম। ওতো আমার পায়ের শিকল বনে গিয়েছিলো। আমার দেহই সেখান থেকে পালিয়েছে, মনটি রয়ে গেলো তাজদের গ্রামে। এর পরের গ্রামে যখন গেলাম তখন স্পষ্ট অনুভব করলাম, আমার উস্তাদি খতম হয়ে গিয়েছে। ভাবতে লাগলাম, এ খেলা এখন ছেড়ে দিতে হবে। কিন্তু কূপের কাহিনী হয়ে গেলো……
***
যা হোক, আদালতের ক্যপ্টেন ভাই আমার জারিজুরি ধরে ফেললো এবং পাকড়াও করলো আমাকে।
ভাগ্যের খেলা দেখুন- সারমুদ বলে গেলো- তাজের ঘরেই আমাকে পৌঁছে দিলো। লোকেরা সেখানে আমাকে মনের ঝাল মিটিয়ে মেরেছে। আদালতের বোন ও মা আমাকে গালি দিতে দিতে লোকদের বলতে থাকে, মারো, ঐ কাফেরকে মারো। ওর হাড়গোড় ভেঙ্গে দাও।
শুধু তাজ এক কোনে চুপচাপ দাঁড়িয়ে থাকে। তারপর আমাকে গুপ্তধন আবিষ্কারের কুঠুরীতে বন্দি করে। ওদের বেকুবির অবস্থা দেখুন। আমাকে না। বেঁধে এমনিই ছেড়ে রাখে। আমিও আমার সর্বশেষ উস্তাদি খাঁটিয়ে সেখান থেকে পালিয়ে মারদান শাহের ওখানে পৌঁছি। পরদিন সেখানে গা ঢাকা দিয়ে থাকি। রাতে নাপিত ডেকে চুল দাড়ি সাফ করা হয়।
কিভাবে বের হলে?
সে আমাকে পুরোনো কাহিনীই শোনালো। কুঠুরীর দ্বিতীয় দরজা দিয়ে বড় কামরায়, তারপর জানালা খুলে উঠোন পেরিয়ে প্রধান দরজা খুলে……
…….. আমি তাকে বললাম, ঐ জানালা দিয়ে যদি সে বের হয়ে দেখাতে পারে তাহলে নগদ পাঁচশ টাকা দেবো।
মিথ্যা বলছো কেন সারমুদ? তুমি সেখান থেকে কিভাবে বের হয়েছিলে আমি সব জানি।
কিভাবে?
তোমাকে কি তাজ বের করেনি?- সে কাহিনী তাকে শোনালাম।
সে আমার দু হাত জাপ্টে ধরে বড় অনুনা করে বললো, এই কেসে যেন তাজের নাম দেয়া না হয়।