ফৌজেও কি উৎসব পালনের প্রস্তুতি চলছে? যারিয়াব জিজ্ঞেস করলো।
ফৌজে প্রস্তুতি চলছে পরবর্তী অভিযানে যাওয়ার জন্য। হাজিব বললেন, শহরে যে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টিকারী গুজব চলছে ফৌজের নজর তার ওপর রয়েছে। বিদ্রোহের আগুন এখানেও উস্কে দেয়া হচ্ছে।
আমীরে মুহতারাম! উবাইদুল্লাহ বললেন, আমরা এ হুকুমও নিতে এসেছি যে, ফৌজ কি উৎসব পালনের প্রস্তুতি নিবে না টয়টা যাওয়ার প্রস্তুতি নিবে? আজ না হয় কাল ওখান থেকে পয়গাম আসবেই যে, দ্রুত সেনাসাহায্য পাঠাও।
কিন্তু উৎসবে আর কয়দিন সময় লাগবে! কয়েক দিনের প্রস্তুতি আর এক রাতের উৎসব! যারিয়াব বললো।
উড়ন্ত ঝান্ডা গড়িয়ে পড়তেও সময় লাগে না যারিয়াব! উবাইদুল্লাহ তির্যক কণ্ঠে বললেন।
আর সেই সালতানাতের ঝান্ডা গড়িয়ে পড়তে তো কোন সময়ই লাগে না যার শাসকের উপদেষ্টা হয় কোন দরবারী গায়ক! যারিয়াব! তোমার জানা নেই, শহরে কী হচ্ছে? হাজিব যারিয়াবকে ধমকে উঠে বললেন।
যারিয়ার মাথা নিচু করে ফেললো।
আমীর আব্দুর রহমানের চোখে-মুখে বিদ্রুপের ছায়া ফুটে উঠলো। তিনি অস্থির হয়ে উঠলেন। বলেলেন,
আমাকে আসল পরিস্থতি সম্পর্কে বলা হচ্ছে না কেন? যারিয়াব তো আমাকে বলেছে পরিস্থিতি শান্তই আছে। তিনি কিছুটা রাগত কণ্ঠে বললেন।
***
শহরে প্রায় প্রতিদিনই একটা না একটা খ্রিষ্টানের লাশ ঝুলে থাকতে দেখা যাচ্ছে। হাজিব আব্দুল করীম বললেন, এসব আত্মহত্যাকারীরা যে ইসলামের অবমাননা করে ফাঁসির কাষ্ঠে ঝুলছে এতে তাদের ব্যক্তি-বিচ্ছিন্ন কোন ঘটনা নয়। এটা এক চক্রান্ত। যার ওপর আমাদের নিয়ন্ত্রণ নেই। এটাই তো এক সময় বিদ্রোহের রূপ নেবে।
আমরা তো খুব দ্রুতই বিদ্রোহ দমন করে ফেলবো। যারিয়াব বললো।
বিদ্রোহ নাচ-গান আর অপ্রয়োজনীয় উৎসব দিয়ে দমন করা যায় না যারিয়াব। সালার আলা উবাইদুল্লাহ বললেন, তোমার ভোগ প্রিয় মাথা হয়তো এটা বুঝবে না যে, বিদ্রোহ আর নাশকতামূলক কাজের পেছনে কি হয়? আমীরে মুহতারাম! উন্দলুসের মাটি এখন বিদ্রোহীদের পদভারে কাঁপছে।
আর এ ধরণের বিদ্রোহের উদ্দেশ্য তো শুধু এটাই যে, আমরা উন্দলুসের মধ্যে ব্যস্ত থাকি। আব্দুর রহমান বললেন, এবং ফ্রান্স বড় ধরনের যুদ্ধ শক্তিতে পরিণত হয়। তারপর ওরা উন্দলুসের ওপর হামলা করে আমাদেরকে ধ্বংস করার চমৎকার সুযোগ পেয়ে যাবে। আমার মাথা থেকে এখনো এটা দূর হয়নি যে, ফ্রান্সের ওপর হামলা এবং সে দেশটাকে উন্দলুসের সালতানাতে অন্তর্ভুক্ত করা আমার ওপর একটা ঋণের মতো চেপে বসে আছে। এখন আমাকে তা পরিশোধ করতেই হবে।
কিন্তু….. তিনি কিছুটা ভেবে নিয়ে বললেন, উৎসব পালন করলে কী এমন হবে?
কিছুই হবে না। হাজিব বললেন, কোষাগারের কিছু অংশ খালি হয়ে যাবে। লোকদের ওপর উৎসবের উন্মাদনা কিছু দিন সওয়ার হয়ে থাকবে। এতো জানা কথাই। হরমে যেহেতু নারী আছে তাই ওদের থেকে বাচ্চা ভূমিষ্ট হবেই।
কিন্তু এভাবে চলতে থাকলে একদিন উৎসব আর বখশিশের এ প্রথা আমাদেরকে ডুবাবে। সময় ও অর্থের প্রয়োজন এখন এমন হয়ে দেখা দিয়েছে, আর কখনো এতটা অনুভূত হয়নি।
এধরণের উৎসব পালন তো আমাদের জন্য কোনোভাবেই শোভনীয় নয়। সিপাহসালার উবাইদুল্লাহ বললেন। আমাদের চরিত্র ও ধর্মীয় অবস্থানের বিবেচনায়ও তো এ উৎসব পালন কোনো মতেই আমাদেরকে মানায় না। আমাদের অনাগত সন্তানদের জন্য তো আমাদের এমন ইতিহাস রেখে যেতে হবে যা উন্দলুসের সীমানাকে দূর দিগন্তে প্রসারিত করবে। কিন্তু আমরা কোন কীর্তি রেখে যাচ্ছি?
আমীরে মুহতারাম! এ বাচ্চা ভূমিষ্ট হয়েছে সেই নারীর পেট থেকে যে আপনার বিবাহিতা নয়। হেরেমে যেহেতু অবিবাহিত নারীদের রাখার বিষয়টি প্রথায় পরিণত হয়েছে তাই এটা শহী মহলের বৈধ সংস্কৃতিতের অংশ হয়ে গেছে।
এটা যদি আমাদের ধর্মের দৃষ্টিতে দেখা হয় তাহলে ভেবে দেখুন বিধর্মীরা একে কী বলবে? এটাই বলবে যে, আমীরে উন্দলুস তার অবৈধ সন্তানের জন্মোৎসব করছেন। আমাদের পরবর্তী প্রজন্ম কী বলবে?
আমীরে মুহতারাম! হাজিব বললেন, সঠিক পরিস্থিতি তো আমরাই বলতে পারি এবং আমারাই বলে থাকি। যদি আপনার পছন্দের এক গায়ক উপদেষ্টার কথা ও পরামর্শ ভালো লাগে তাহলে ওকেই আপনার কাছে বসিয়ে রাখুন। কিন্তু আমাদেরকে আমাদের দায়িত্ব স্বাধীনভাবেই পালন করতে দিন। আমরা এ ব্যাপারে কোন ত্রুটি করতে পারি না। আমাদের ঈমান থেকে আমরা মুখ ফিরিয়ে থাকতে পারি না।
স্বাধীনতা আমাদেরকে অন্যরকম চেতনায় উজ্জীবিত করে।
***
সিপাহসালার উবাইদুল্লাহ ও হাজিব আব্দুল করিমের মুখে এ ধরণের কথা শুনে আব্দুর রহমান খুট একটা বিচলিত হলেন না। কারণ, এসব কথা শোনা তার জন্য নতুন কিছু নয়। এদের দুজনের চেয়ে তিনি অনেক অসম সাহসী, বিজ্ঞ এবং অভিজ্ঞও। কিন্তু সুলতানা ও যারিয়াব তার সব প্রতিভা-গুণকে এবং তার ভেতরের অসম সাহসী রণাঙ্গণীয় জযবাকে ঘুম পাড়িয়ে রাখে।
সিপাহসালার ও ওযীরসহ অন্যান্য সালাররাও জেনে গেছেন, এ ধরণের তিক্ত ও জোশেলা কথা বলেই আব্দুর রহমানকে জাগাতে হয়। এভাবেই তারা তার ভেতরের ঘুমন্ত নির্ভীক মুজাহিদকে অচেতনের নিদ্রা থেকে জাগিয়ে তুলতেন।
তারা কয়েকবার এটাও ভেবে দেখেছেন যে, যারিয়াব ও সুলতানাকে গুম করে ফেলবে। কিন্তু এ আশংকাও তাদেরকে ভাবিয়ে তুললো যে, ওদের ব্যাপারে আমীরের যে নেশা গড়ে উঠেছে সেটা যদি তিনি না পান তাহলে নেশাভঙ্গ মানুষের মতো বিকারগ্রস্ত হয়ে পড়বেন। তখন তো তিনি কারো কথাই শুনবেন না। আর এটা উন্দলুসের ধ্বংসের কারণ হয়ে উঠবে।