৮৫০ খ্রিষ্টাব্দের ১৭ এপ্রিল ঈদগাহে ঈদের নামাজ আদায়ের পর পাদ্রী পারফেকটিসের ফাঁসি দেয়া হলো।
এর একদিন পর জানইট নামের এক ব্যবসায়ী একই আচরণ করলো। সে বাজারে দাঁড়িয়ে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ও পবিত্র কুরআনের নামে কসম খাচ্ছিলো। মুসলমানরা তাকে বাধা দিয়ে বললো, সে যেহেতু মুসলমান নয় তাই তাদের রাসূল ও কুরআন নিয়ে সে কসম খেতে পারে না। জবাবে সে বললো,
কুরআন ও তোমাদের রাসূল মিথ্যা। তাই আমি মিথ্যা ধর্মের কসম খাচ্ছি।
তাকেও আদালতে পেশ করা হলো। আদালতের কাছে সে ক্ষমা প্রার্থনা করলো। তাই তাকে কয়েক মাসের কারাদন্ডের সাজা দেয়া হলো।
ইউগেলিস ছদ্মবেশে একদিন জান ইট এর সাথে সাক্ষাৎ করতে কয়েদ খানায় যায়। সেখানে এমন গুজব ছড়িয়ে দেয়, কয়েদখানায় জানকে শিকল দিয়ে বেঁধে রেখেছে এবং তাকে সারাক্ষণই মারপিট করছে।
প্রতিটি গির্জায়ও ইউগেলিস এই প্রোপাগান্ডা ছড়িয়ে দেয়। খ্রিষ্টানরা মুসলমানদের বিরুদ্ধে আরো তেলেবেগুনে জ্বলে উঠলো।
ইসহাক নামে আরেক পাদ্রী একই পথ ধরলো। সে আদালতের অনুমতি নিয়ে বিচারকের কাছে আবেদন করলে তাকে যদি প্রমাণাদি দ্বারা বুঝাতে পারে ইসলাম সত্যধর্ম তাহলে সে মুসলমান হয়ে যাবে। তবে সেও তার প্রমাণাদি পেশ করতে পারবে। আদালত তার আবেদন মঞ্জুর করলো।
বিচারক তার সামনে অকাট্য এবং সর্বজন বিদিত প্রমাণাদি পেশ করতে লাগলেন। বিচারক বলা শেষ করতেই ইসহাক ইসলামের ব্যাপার উল্টা-পাল্টা বকতে লাগলো। এ উদ্দেশ্যেই সে আদালতে এসেছে।
বিচারক তাকে গ্রেফতারের নির্দেশ দিলেন। কিন্তু তার বিরুদ্ধে কোন শাস্তি শোনালেন না। বিচারক আব্দুর রহমানের কাছে চলে গেলেন।
খ্রিষ্টান পাদ্রী ও ধর্মগুরুরা তো ইসলামের অবমাননাকর নতুন পদ্ধতি চালু করেছে। এদের শাস্তি কুরআন হাদীসের দৃষ্টিতে কী হওয়া উচিত?
মৃত্যুদন্ড। আব্দুর রহমান হুকুম দিলেন। এমন অপরাধ যেই করবে তাকে জন সম্মুখে ফাঁসি দেয়া হবে। আর তার লাশ কয়েকদিন ওখানে ঝুলিয়ে রাখতে হবে। কারণ, এ শুধু ইসলামের বিরুদ্ধে অবমাননা নয়, পুরো জাতিকে বিপথগামী করে ইসলাম ও ইসলামী সালতানাতের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ করতে উস্কে দেয়া। এজন্য তাদের লাশ তাদের পরিবারের কাছেও দেয়া হবে না। সমুদ্রে ভাসিয়ে দেয়া হবে।
ইসহাককে ফাঁসি দেয়া হলো। কিন্তু ইসলামের অবমাননার নতুন এই ধারা বন্ধ করা গেলো না। একদিন দুই দিন পর পর কোন এক খ্রিষ্টান বাজারের ভিড়ে দাঁড়িয়ে ইসলামের বিরুদ্ধে কুৎসা রটাতো আর তাকে জনসম্মুখে ফাঁসি দেয়া হতো। দুই মাসে এগারজন পাদ্রীকে এই অপরাধে শাস্তি দেয়া হলো।
***
৮. সুলতানা মালিকায়ে তরুবের সন্তান
সুলতানা মালিকায়ে তরুবের সন্তান ভূমিষ্ট হলো।
শাহে উন্দলুসের আরেকটি সন্তানের জন্য মোবারকবাদ! যারিয়াব আব্দুর রহমানকে মোবারকবাদ দিতে দিতে বললো,
বাচ্চা আপনার চেহারা এবং মায়ের রূপ নিয়ে দুনিয়ায় এসেছে। উৎসবের জন্য তো প্রস্তুতি নিতে হবে। আর উৎসব হতে হবে অতুলনীয়। মালিকায়ে তরূবেরও খাহেশ, তার প্রথম ছেলের জন্মের আনন্দ যেন উন্দলুসের মানুষ সারা জীবন মনে রাখে।
উৎসব হওয়া দরকার। তবে আমি কিছু চিন্তা ভাবনা করে নিই। আব্দুর রহমান বললেন।
আমি প্রস্তুতি নেয়া শুরু করে দিচ্ছি। যারিয়াব একথা বলে চলে গেলো।
মহলে খবর ছড়িয়ে পড়লো, সুলতানার ছেলের জন্মের উৎসব করা হবে। শাহী মহলের উৎসব তো শাহী মহলের মতোই হয়। বখশিশ আর উপহার-উপটৌকনের ছড়াছড়ি।
সরকারি ধনভান্ডার থেকে কোটি কোটি টাকা শুধু নাচ-গান, গায়ক, শিল্পী, নর্তকী ও আনন্দ বিনোদানকারীদেরকে দেয়া হয় বখশিশ আর নজরানা হিসাবে। আর চলে মদ আর শরাব পানের প্রতিযোগিতা। দরবার ও রাষ্ট্রের কার্যক্রম কয়েক দিন বন্ধ থাকে।
মুদ্দাসসিরা তার মহলে সালারে আলা উবাইদুল্লাহ ইবনে আব্দুল্লাহ ও ওযীর হাজিব আব্দুল করীমকে দাওয়াত করলো।
আমি নিজে যদি এ ব্যাপারে আমীরের সঙ্গে কথা বলি তাহলে তিনি মনে করবেন আমি হিংসা করে এসব বলছি। মুদ্দাসসিরা তাদের দুজনকে বললো, আপনারা নিশ্চয় শুনেছেন সুলতানার ছেলের জন্মকে উপলক্ষ্য করে বিশাল উৎসব করা হচ্ছে। আমীরের সঙ্গে কথা বলে তাকে কি এ থেকে আপনারা বাঁধা দিবেন?
আমরা নিজেরা এ বিষয়ে আলাপ-আলোচনা করেছি। সিপাহসালার বললেন, আমাদের কেউ এই উৎসবের পক্ষে নয়।
আর এটা উৎসব পালনের সময়ও নয়। হাজিব আব্দুল করিম বললেন, শহর জুড়ে অস্থিরতা আর বিশৃঙ্খলা দেখা দিচ্ছে। এক দুই দিন পর পর কোন না কোন খ্রিষ্টানের লাশ খোলা ময়দানে ঝুলন্ত দেখা যাচ্ছে।
আপনাদের যদি উনার সঙ্গে কথা বলার ইচ্ছা থাকে তাহলে আর এখানে কেন আমরা সময় নষ্ট করছি। আপনার এখনই আমীরে উন্দলুসের কাছে চলে যান। মুদ্দাসসিরা বললো।
সিপাহশালার উবাইদুল্লাহ ইবনে আব্দুল্লাহ ও হাজিব আব্দুল করীম যখন আমীর আব্দুর রহমানের কামরায় প্রবেশ করলেন তখন যারিয়াবও সেখানে বসা। সে আব্দুর রহমানকে বলছিলো, শহরের পরিস্থিতি খুবই শান্ত ও নিরাপদ। অন্যান্য প্রদেশেও কোন সমস্যা নেই।
আমীরে মুহতারাম! সালারে আলা বললেন, এক জন্মোৎসবের আয়োজনের কথা শুনছি আমরা এ ব্যাপারে কথা বলতে এসেছি।