হঠাৎ সে খাটের সঙ্গে ধাক্কা খেয়ে ইউগেলিসের খাটের ওপর পড়ে গেলো। তার দেহের অর্ধেক পড়লো ইউগেলিসের ওপর। ইউগেলিস ধড়মড় করে উঠে বসলো। ফ্লোরা ইউগেলিসের মুখটি হাতে ধরে নিজের দিকে আকর্ষণ করলো।
কে? ফ্লোরা? ইউগেলিস ফিস ফিস করে জিজ্ঞেস করলো।
হ্যাঁ, ফ্লো।
কেন এসেছ।
তোমার কুরবানীর স্থলে নিজের কামনা বাসনা কুরবানী দিতে। ফ্লোরা ব্যকুল কণ্ঠে বললো, তোমাকে আমি এভাবে তৃষ্ণায় ছটফট করতে করতে মরতে দেবো না ইউগেলিস!
আমি যেই হই তোমার প্রেম-ভালোবাসা পাওয়ার জন্য ছটফট করবো না। তোমার পায়ের শিকল হবো না। নিজের গোলাম বানাবো না তোমাকে। আমাকে ক্ষণস্থায়ী এক মনযিল মনে করে একটু বিশ্রাম করে নাও।
ইউগেলিস ওকে দুবাহু দিয়ে জড়িয়ে ধরলো। তখনই সে অনুভব করলো, যে জিনিসের তৃষ্ণায় সে ছটফট করে, যার গোপন সন্ধানে সে ব্যকুল হয় এ সেই রক্ত মাংসের অপরূপ হীরক খন্ড।
দাঁড়াও। ঘরে আগে আলো জ্বালাই। তোমাকে দুচোখে দিয়ে ভালো করে দেখতে চাই। ইউগেলিস বলে উঠে পড়লো।
কামরা প্রদীপের আলোয় আলোকিত হয়ে উঠলো।
এক ইংরেজ ঐতিহাসিক এসপিস্টাক দুই ঐতিহাসিক আরবাসী ও কুন্ড এর উদ্ধৃতিতে লিখেছেন,
ইউগেলিস ও অপরূপা ফ্লোরার প্রথমবার সাক্ষাত হয় নির্জন এক ঘরে এবং প্রথম সাক্ষাতেই ফ্লোরা নিজেকে ইউগেলিসের কাছে সমর্পণ করে দেয়। সে বড় এক ত্যাগের উদ্দেশ্যে ইউগেলিসের শয়ন কক্ষে ঢুকেছিলো। কিন্তু তার মনে ইউগেলিসের জন্য এমন প্রেমের ঝড় উঠলো যার উদাহরণ সে যুগে খুব একটা পাওয়া যায়নি। ওরা বিয়ে করেনি। কিন্তু পরস্পরের অস্তিত্ব অনুভব করে ওরা বাঁচার মন্ত্রণা পেতো।
ফ্লোরা নিজের প্রাণ, যৌবন এবং কুমারিত্ব এক ইউগেলিস ও খ্রিষ্টবাদের জন্য ওয়াকফ করে দিলো।
ওরা তিন চার দিন সেই বাড়ির একই কামরায় রইলো। প্রতিদিনই নেতৃস্থানীয় কিছু খ্রিষ্টান ও পাদ্রী ইউগেলিসের কাছে আসলো। নতুন এক পরিকল্পনা যখন চূড়ান্ত তখন ওরা দুজন একদিন ছদ্মবেশে কর্ডোভা থেকে বেরিয়ে গেলো।
***
এর পরের রবিবারে খ্রিষ্টানরা যে গির্জাতেই গেলো পাদ্রীদের মুখে একই বক্তৃতা শুনলো। সব পাদ্রী একই কথা বললো। হযরত ঈসা (আ.) কে শূলিতে ঝুলানো হয়েছিলো এখন এখানে প্রত্যেক খ্রিষ্টানকে শূলিবিদ্ধ করার ব্যবস্থা করা হচ্ছে।
এক খ্রিষ্টান মেয়ে ফ্লোরাকে বন্ধি করা হয়েছে। সে আদালতে ইসলামের বিরুদ্ধে মন্তব্য করায় তাকে কয়েদখানায় বন্দি না করে এক বাড়িতে বন্দি করে।
কারণ, সে অপরূপ সুন্দরী। তাকে ব্যবহার করছে মুসলিম নেতারা। এখন বিশ্বস্ত সূত্রে জানা গেছে, এই মেয়ে নিখোঁজ। ওকে কোথাও গায়েব করে দেয়া হয়েছে। ওদের সব অপকর্ম ফাঁস করে দেবে এ আশংকায় মনে হয় ফ্লোরাকে মেরে ফেলা হয়েছে।
গির্জায় যারাই উপাসনা করতে এলো এমন বিকৃত বক্তৃতার মাধ্যমে তাদেরকে মুসলমানদের বিরুদ্ধে উস্কে দেয়া হলো।
পাদ্রীরা এও বললো, প্রত্যেক খ্রিষ্টানের ওপর ফরজ হলো, ফ্লোরার পথে চলা এবং সে যে অপরাধ করে কয়েদির শাস্তি পেয়েছে প্রত্যেককে একই অপরাধ করে দেখিয়ে দেয়া যে, আমরা ওদের নির্যাতনকে ভয় পাই না। এটাই এখন একমাত্র প্রতিবাদের ভাষা।
গির্জার এসব গুজব সত্য খবরের মতো সারা শহরে ছড়িয়ে পড়লো। ভয়ংকর একটা গুজব ছড়িয়ে দেয়া হয় যে, যে বাড়িতে ফ্লোরাকে রাখা হয়েছিলো সে বাড়িতে প্রতি রাতে বড় বড় হাকিমরা যাতায়াত করতো।
এ গুজবও ছড়ানো হয় যে, ফ্লোরাকে আমীরে উন্দলুস তার হেরেমে নিয়ে এখন ব্যবহার করছে।
অসত্য ও অবান্তর গুজব ছড়ানো খ্রিষ্টান সন্ত্রাসী দলের একটা মিশন ছিলো। কর্ডোভার প্রত্যেক খ্রিষ্টানদের ঘরে এসব গুজব পৌঁছে যায়।
এরপর আন্দোলকারীদের দ্বিতীয় কর্মসূচী বাস্তবায়ন শুরু করে পারফেকটিস নামক এক পাদ্রী। সে বাজারে কিছু একটা কিনতে যায়।
ফ্লোরার ব্যাপারে ছড়ানো গুজব এত দিনে মুসলমানদের কানেও পৌঁছেছে। কয়েকজন মুসলমান পাদ্রী পারফেকটিসের কাছে এসব গুজব সম্পর্কে জানতে চায়। তারা বলে, ইসলামে কোন নারীকে এমন শাস্তি দেয়ার বিধান নেই যে, তাকে পৃথক কোন বাড়িতে আটকে রেখে হাকিমরা তার কাছে যাবে।
পাদ্রী উত্তরে খ্রিষ্টবাদের ব্যাপারে প্রশংসা ও ইসলামের বিরুদ্ধে কুৎসা রটাতে শুরু করলো। ঐতিহাসিকরা লিখেছেন, তার কথাগুলো ছিলো এরকম,
হযরত ঈসা আ. কে আমরা খোদা ও খোদার পুত্র মনে করি। হযরত ঈসা (আ.) বলেছেন, আমার পরে যত নবী আসবে তারা সবাই (নাউযুবিল্লাহ) মিথ্যাবাদী হবে।
পারফেকটিস রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে স্পষ্টতই মিথ্যা নবী (নাউযুবিল্লাহ) বলে চরম ধৃষ্টতা প্রদর্শন করে।
এমন কথা শোনার পর কোন মুসলমান তো সেটা সহ্য করতে পারে না। মুসলমানরা তার ওপর ঝাঁপিয়ে পড়লো। কিন্তু বয়োজৌষ্ঠ কিছু মুসলমান এই বলে তাকে ছাড়িয়ে নেয় যে, এর অপরাধের বিচার করবে আইন। কেউ নিজের হাতে আইন তুলে নেবে না।
তাকে প্রথকে কতোয়ালে নিয়ে যাওয়া হলো। সেখান থেকে আদালতে।
আদালতে বিচারক তাকে জিজ্ঞেস করলো, সে নিজের পক্ষে কিছু বলতে চায় কিনা? সে মিথ্যা বললো, এ ধরনের কোন কথা সে বলেনি। অসংখ্য সাক্ষী তার অপরাধ প্রমান করে দিলো।
আদালত তাকে ৪০৯ ধারা মোতাবেক মৃত্যুদন্ড দিলো।