এতে কী লাভ হবে? জনসন জিজ্ঞেস করলো।
এদেরকে যখন ধর্মীয় কারণে শাস্তি দেয়া হবে তখন খ্রিষ্টানদের মধ্যে প্রতিশোধের এক নতুন স্পৃহা জেগে উঠবে। ইউগেলিস বললো, আমরা গির্জাগুলো থেকে গুজব ছড়িয়ে দেবো, গ্রেফতারকৃত খ্রিষ্টানদেরকে এমন কঠিন শাস্তি দেয়া হচ্ছে যা কোন মানুষ সহ্য করতে পারবে না।
এভাবে আমরা খ্রিষ্টান জাতির মধ্যে এমন আগুনের অঙ্গার উস্কে দেবো যে, সেটা এক ঝড় আর মহাপ্লাবন হয়ে দেখা দেবে। এই প্লাবন মুসলিম মহল ও হুকুমতকে ভাসিয়ে নিয়ে যাবে। আমাদেরকে সব ধরনের ফেতনা-ফাসাদ ছড়িয়ে দিতে হবে।
তবে হুকুমতের বিরুদ্ধে লাগাটাও সহজ কাজ নয়। ফ্লোর বললো, মারীদর লোকেরা বিদ্রোহ করে কি পরিমাণ ক্ষয়-ক্ষতির স্বীকার হতে হয়েছে ওদের? অধিকাংশ খ্রিষ্টানদের ঘর বাড়ি জ্বালিয়ে দিয়েছে। আমরা কি নিয়মিত ফৌজ বানিয়ে লড়তে পারি না?
***
এখনই নয়। ইউগেলিস বললো, যদিও আমরা অনেক প্রাণ বিসর্জন দিয়েছি, তবুও বিদ্রোহের ধারাবাহিকতা অক্ষুণ্ণ রাখবো। আমরা যদি বিদ্রোহকে আমাদের জন্য ক্ষতিকর মনে করে মুসলমানদেরকে নিশ্চিন্তে ভাববার সুযোগ দিই তাহলে এরা ফ্রান্সের ওপর হামলা করে আমাদের আসল শক্তি শেষ করে দেবে।…….
তারপর সারা ইউরোপে ইসলামের বিজয় আর কেউ রুখতে পারবে না। উন্দলুসের ইতিহাস দেখো। কিছু দিন আগেও ফ্রান্সের ওপর হামলা হয়েছিলো। প্রথম আব্দুর রহমান ফ্রান্স প্রায় জয় করে নিয়েছিলো। দ্বিতীয়বার সেটা আর ঘটতে দেবো না।
ফ্রান্স কি এখন আমাদেরকে সাহায্য করছে? ফ্লোরা জিজ্ঞেস করলো।
ফ্রান্সের একক সাহায্যে সব ধরনের বিদ্রোহ সংঘটিত হচ্ছে। ইউগেলিস বললো, বর্তমান আমীর যে নিজেকে শাহে উন্দলুস বলে থাকেন, ফ্রান্সের বিরুদ্ধে অভিযানে বের হচ্ছিলেন। আমরা মারীদায় বিদ্রোহ করে আমীর ও তার সালারদের বাধ্য করলাম রাস্তা থেকে যেন মারীদা চলে যায়। ফ্রান্সকে এভাবে আমরা বাঁচিয়ে নিলাম। ফ্রান্স আমাদের যুদ্ধশক্তি এবং ধর্মের কেন্দ্রী উৎস।
এখন আমাদের কাজ কী হবে? জনসন জিজ্ঞেস করলো।
এ উদ্দেশ্যেই আমি কর্ডোভা এসেছি। ইউগেলিস বললো, কিছু লোকজন আছে, ওদেরকে কাজ বুঝিয়ে দিতে হবে। এখন আমরা টলয়টায় বিদ্রোহ করাচ্ছি। বরং এখান থেকেই আমাদের বিদ্রোহাত্মক যুদ্ধ শুরু হচ্ছে। আমাদের জানবাযরা কর্ডোভার ফৌজের কোন টহল দল বা ছোটখাট ইউনিট দেখলেই তাদের ওপর আচমকা গেরিলা হামলা চালিয়ে বন জঙ্গলে বা কোন উপত্যকায় অদৃশ্য হয়ে যাবে। ওখানে এটা শুরু হয়ে গেছে।
ওখানকার গভর্ণর মুহাম্মাদ ইবনে ওসীম। তিনি এসব গেরিলা হামলাকে এখন তেমন গুরুত্ব দিচ্ছেন না। তিনি হামলাকারীদেরকে ডাকাত বা লুটেরা মনে করছেন। আমাদের সামরিক দুর্বলতা হলো, টলয়টার শহরবাসী এখনো বিদ্রোহের জন্য পুরোপুরি প্রস্তুত হয়নি। এর কারণ হলো, মারীদার বিদ্রোহীদের মধ্যে যারা প্রাণ নিয়ে পালাতে পেরেছে তাদের অনেকেই টলয়টায় গিয়ে আশ্রয় নিয়েছে।…..
এরা ওখানকার লোকদেরকে খুবই ভয়ংকর কাহিনী শুনিয়েছে। মুসলিম ফৌজকে দৈত্য-দানবের সাথে তুলনা করে লোকদের মধ্যে ভীতি ছড়িয়ে দিয়েছে। এমন কথাও বলেছে যে, কোন পাপ করতে চাও করে নাও, কিন্তু বিদ্রোহ করতে যেয়ো না। সাধারণ খ্রিষ্টানদের মানসিক এই দ্বিধা-দন্দ আমাদের জন্য একটা সমস্যা হয়ে দেখা দিয়েছে। ওখানে আমাদের কিছু লোক আছে যারা টহল ফৌজের ওপর নৈশ হামলা চালিয়ে পালিয়ে যাচ্ছে।…
এখন প্রয়োজন হলো, মারীদার মতো টলয়টার সব লোক একবারে বিদ্রোহে জ্বলে উঠা। সবাই কর ইত্যাদি দিতে অস্বীকার করে বসা এবং গভর্ণর ইবনে ওসীমকে তার বাসভবনে হামলা করে গ্রেফতার করে নেয়া। শহরের শাসন ক্ষমতা তখন সহজেই খ্রিষ্টানরা নিয়ে নিতে পারবে। এসব একবারে না ঘটলে আমাদের চক্রান্ত সফল হবে না।….
শাহলুই বলেছেন, তিনি তার ফৌজ শহরবাসীর ছদ্মবেশে টলয়টায় পাঠিয়ে দেবেন। কিন্তু তাকে এই নিশ্চয়তা দিতে হবে, মারীদার মতো এখানকার লোকজন অস্ত্র ফেলে পালাবে না। আমার এখন বড় সমস্যা হলো, টলয়টার লোকদের ব্যাপারে শাহলুইকে আমি কোন জামানত দিতে পারছি না।
হাশিম কামার তো ওখানে চলে গেছে। সে কি লোকদেরকে বুঝাতে পারছে না? জনসন জিজ্ঞেস করলো।
সে তার কাজ করে যাচ্ছে। গেরিলা বাহিনী তো সেই বানিয়েছে। সে বড় ধরনের কৃতিত্বের কাজ করছে ইউগেলিস বললো, তার নামও আমরা পরিবর্তন করতে দেয়নি। তাকে বলে দেয়া হয়েছে যারা তাকে মুসলমান মনে করে তাদের কাছে যেন সে মুসলমানই থাকে। খ্রিষ্টানরা তো জেনেই ফেলেছে সে অনেক বড় খ্রিষ্টান এবং নামে মাত্র মুসলমান।
এখানে আমি এবার অন্য কোন পরিকল্পনা নিয়ে এসেছিলাম। কিন্তু ফ্লোরা আমাকে নতুন এক পথ দেখালো। এটা আমি কাজে লাগাতে চাই। এতে সবচেয়ে বড় কাজ এটাই হবে যে, কর্ডোভার প্রশাসন তখন এখানে এটা নিয়েই পড়ে থাকবে। পুরোপুরি মনোযোগ তারা টলয়টায় দিতে পারবে না।
সন্ধ্যার পর জনসনের এই বাড়িতে এক এক করে তিনজন ঝান্ডা মার্কা লোক এলো। ইউগেলিসের সঙ্গে এরা দীর্ঘ সময় কথা বার্তা বলে চলে গেলো।
কয়েক দিনের মধ্যে এরা নতুন এক মিশন বাস্তবায়ন করতে যাচ্ছে।
***
জনসনের বাড়িটি মোটামুটি বড়। জনসন ইউগেলিসের জন্য এক কামরা এবং ফ্লোরার জন্য এক কামরা প্রস্তুত করে নিজে অন্য কামরায় গিয়ে শুয়ে পড়লো। ওরা দুজনে বসে কথা বলতে লাগলো।