দুজনের চিন্তার সার কথা এটাই, রূপের এই আগুনে সেই আবদুর রহমানই বেঁচে থাকতে পারবেন যিনি শাহে উন্দলুস ও নারী অন্ত প্রাণ। সুলতানার এমন মাখন নরম ও ঝলমলে পূর্ণ মুখাবয়ব ও চিবুক স্পর্শে আপাদমস্তক ডুবে গিয়ে সে আবদু রহমান জীবিত থাকতে পারেন না যিনি ছিলেন উন্দলুসের স্বাধীনতার গর্ব ও ইসলামের অতন্দ্র প্রহরী।
আমরা আপনাকে এ সময় কষ্ট দিতাম না। প্রধানমন্ত্রী আবদুল করীম কথা বলতে শুরু করলেন, কিকু খ্রিষ্টানরা এমন ভয়াবহ এক অবস্থা সৃষ্টি করেছে যে, আমাদের রাতেও শোয়া উচিত নয়। ওরা এমন ভেল্কিবাজি ও ভাওতাবাজি শুরু করেছে যে, আমাদের ইসলাম ধর্মেও এর মন্দ প্রভাব ছড়িয়ে পড়ছে। শুধু খ্রিষ্টানদেরকেই নয়, মুসলমানদেরকেও তারা হুকুমতের বিরুদ্ধে উস্কিয়ে দিচ্ছে।
বিশেষ কিছু কি ঘটেছে? আবদুর রহমান হাই তুলতে তুলতে জিজ্ঞেস করলেন, নাকি আপনারা আপনাদের গোয়েন্দাদের পাঠানো রিপোর্ট আমাকে শোনাতে এসেছেন?
আমীরে উন্দলুস! হাজিব বললেন, রাতে বিশেষ এক ঘটনা ঘটেছে। যেটা কয়েক রাত ধরেই ঘটছে। গতরাতে আমরা ভয়ংকর ষড়যন্ত্র-অপতৎপরতা ও ভেল্কিবাজি ধ্বংস করে দিয়েছি। বাইরে আমাদের কয়েকজন সিপাহীর লাশ পড়ে আছে। আর কয়েকজন খ্রিষ্টান সন্ত্রাসীদের,যারা এসব নাটক খেলেছে। দুজনকে আমরা জীবন্ত ধরে এনেছি।
লাশ? আবদুর রহমান চমকে উঠে জিজ্ঞেস করলেন, ব্যাপার এতটাই সঙ্গীন ছিলো যে, খুন খারাবি পর্যন্ত ঘটে গেছে?
প্রধানমন্ত্রী আবদুল করীম ও সালার রউফ তাকে বিস্তারিত শোনালেন। পাহাড়ের ওই পরিত্যক্ত গির্জায় কি কি নাটক রচনা করে লোকদেরকে এ কয়দিন দেখানো হয়েছে।
এর মধ্যে যারিয়াবও এসে গেলো। সে মনোযোগ দিয়ে রাতের ঘটনা শুনতে লাগলো। আবদু ররহমান ঝিমুচ্ছিলেন। হাজিব ও সালার রউফ এক এক করে সব শোনালেন।
আমরা আপনার হুকুমের অপেক্ষায় আছি আমীরে মুহতারাম! সালার আবদুর রউফ বললেন, এই দুই কয়েদীকে ভালো করে জিজ্ঞাসাবাদ করা উচিত। এই নাটকের আসল রচয়িতা কে? কাদের ছত্রছায়ায় এসব হচ্ছে?
এসব ছোটখাটো কয়েদীকে কারাদন্ড দেয়া কিংবা তাদেরকে জল্লাদের কাছে সোপর্দ করে দেয়া কোন প্রতিকার নয়। এদের মাথাগুলোকে আমাদের পাকড়াও করতে হবে। সে মাথাগুলোকে আমাদের থেঁতলে দিতে হবে যারা এই সন্ত্রাস আর ফ্যাসিবাদের জন্মদাতা।
গোস্তাখী মাফ শাহে উন্দলুস! আবদুর রহমানের স্থলে যারিয়াব বলে উঠলো, মান্যবর প্রধানমন্ত্রী ও সালার যে পদক্ষেপ নিয়েছেন এটা খ্রিষ্টানদের ধর্মীয় ব্যাপারে হস্তক্ষেপের নামান্তর।………
ওরা যদি ধর্মীয় ব্যাপারে ভেল্কিবাজি বা কোন কৌশলের আশ্রয় নেয় সেটার অধিকার তাদের আছে। আমাদের ধর্ম-কর্ম তো এতে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে না। ওদেরকে এসব নাটকীয় খেলা খেলতে দিন যাতে খ্রিষ্টানরা বুঝতে পারে, খ্রিষ্টবাদ ও ইসলামের মধ্যে পার্থক্য কি?
ওরা খুব দ্রুতই বুঝতে পারবে, ইসলামই একমাত্র ধর্ম এবং একে ভেল্কিবাজির মাধমে কেউ ক্ষতিগ্রস্ত করতে পারবে না।
যারিয়াব। প্রধানমন্ত্রী হাজিব গর্জে উঠে বলরেন, আমরা আমীরে উন্দলুসকে কথা বলছি, আপনাকে নয়। আমাদের হুকুম নিতে হবে আমাদের আমীরের কাছ থেকে। কোন দরবারী গায়কের কাছ থেকে নয়…..আমীরে মুহতারাম! এসব নাটকীয় তৎপরতা একমাত্র ইসলামের বিরুদ্ধে চালানো হচ্ছে।
আবদুল করীমের গর্জন শাহে উন্দলুসকে তন্দ্রলুভাব থেকে জাগিয়ে দিলো। তিনি যারিয়াবকে মাথা ঘুরিয়ে দেখলেন। সুলতানা যারিয়াবকে ডাকিয়ে এনেছে এজন্য, যাতে যারিয়াব আবদুর রহমান প্রধানমন্ত্রী ও সালারের প্রভাব থেকে মুক্ত রাখে।
যারিয়াব! আবদুর রহমান বললেন, তুমি নিশ্চুপ বসে থাকো। এরা ঠিকই বলছে। তাদের হুকুম আমার কাছ থেকেই নিতে হবে।
***
যারিয়াব অতি সতর্ক লোক। প্রখর মেধার অধিকারী সে। যে কোন পরিস্থিতিতে মানিয়ে নিতে পারে নিজেকে। আর মুখের জাদুর জোর তো আছেই। তার মুখে সে অপ্রস্তুতের হাসি ঝুলিয়ে নিলো।
শাহে উন্দলুসের কাছে আমি মাফ চাচ্ছি। সে বললো, আমি মুহতারাম ওযীর ও মুহতারাম সালারের কাছেও মাফ চাচ্ছি। আমার গোস্তাখী হয়ে গেছে। আপনারা যে পদক্ষেপ নিয়েছেন আমি আসলে এর বিরুদ্ধে কিছু বলিনি। আপনাদের নৈতিক দায়িত্ব যা বলে তাই আপনারা পূর্ণ করেছেন। শাহে উন্দলুস আপনাদের যোগ্য প্রশংসাই করবেন।….
কিন্তু শাহে উন্দলুসকে তার প্রজাদের ধর্মীয় চেতনার প্রতিও লক্ষ্য রাখতে হয়। এই সিংহাসনে আপনারা বসলে আপনাদেরও চিন্তাভাবনা বদলে যাবে। শাহে উন্দলুসকে যদি সালার বানিয়ে দেয়া হয় তাহলে দুশমনের বিরুদ্ধে তার পদক্ষেপ আপনাদের চেয়েও রক্তক্ষয়ী হবে।
যারিয়াব তার নিজস্ব ভঙ্গিতে বলতে লাগলো।
যেভাবে বলে সে পুরো দরবারে আধিপত্য বিস্তার করে রাখে। তার কথার মধ্যে দর্শন ও যুক্তিবিদ্যার ঝলকও মাঝে মধ্যে ফুটে উঠতে লাগলো। যেটা ক্রমেই শাহ উন্দলুসের ওপর প্রভাব বিস্তার করে গেলো। আরেক প্রভাব বিস্তারী হলো সুলতানা। যে আবদুর রহমানের এত কাছ ঘেঁষে বসে ছিলো যে, তার দেহের উষ্ণতাও তিনি উপভোগ করছিলেন। সুলতানার দিকে তাকালেই দুজনের উত্তপ্ত নিঃশ্বাস একাকার হয়ে যেতে লাগলো।
তোমাদের দুজনের নেতৃত্বে যা করা হয়েছে তা খুব ভালো করা হয়েছে। ব্যাপারটি এখানেই শেষ করে দাও। আবদুর রহমান ফয়সালা শোনালেন।