গজলের গুঞ্জন আস্তে আস্তে থেমে গেলো। তারপর সে চমকও নিভে গেলো যাতে হযরত ঈসা (আ)-কে দেখা গিয়েছিলো।
এই অস্থির-অতৃপ্ত আত্মা তোমাদের সবাইকে সতর্ক করছে, দূর থেকে একটি আওয়াজ ভেসে এলো, তোমাদেরকে সতর্ক করে দিচ্ছে, তোমরা যেন। নিজেদের ধর্ম না ছাড়ো। তোমরা কি জানো না, এই পাপের শাস্তি কি? যে মাটিতে গির্জা পরিত্যক্ত হয়ে যায় সে মাটিতে মানুষ আবাদ থাকতে পারে না। শুধু ধ্বংস হয়ে যায়।…..।
সবাই যার যার এলাকার গির্জায় যাও। সেখানে তোমাদেরকে বলা হবে, তোমাদের ওপর কি কি বিপদ আসছে। ঐক্য ও সংহতি দৃঢ় করো। তোমাদের ঐক্যের কাতার বিচ্ছিন্ন হয়ে গেছে। যারা মুসলমান হয়ে গেছে তারাও গির্জায় যাও। নিজেদের পাপ মোচনের জন্য ক্ষমা প্রার্থনা করো। নিজেদের পবিত্র মাটিতে ঈসা মসীহের নূর ছড়িয়ে দাও।
*****
৩. হামিদ আরাবী ও রহীম গাজ্জালী
হামিদ আরাবী ও রহীম গাজ্জালী রাতেই হাজি আবদুল করীমের দেউরীতে চলে গেলো। তারা কি দেখে এসেছে তা জানালো আবদুল করীমকে।
এটা ভেল্কিবাজি হতে পারে না। ওরা দুজনে বললো।
আবদুল করীম অতি বিচক্ষণ লোক। তিনি কিছুক্ষণ গভীর চিন্তায় ডুবে রইলেন। তারপর জিজ্ঞেস করলেন, তারা কি ঐ আলোর চমকই দেখেছো, না এদিক ওদিক তাকিয়ে দেখেছে এর আশেপাশের জায়গাটুকুও আলোকিত কিংবা আগুনের শিখার আভাও দেখা যেতে পারে।
তারা কিছু একটা চিন্তা করে জানালো, যখন আলোর চমক অদৃশ্য হয়ে গেলো তখন পরিত্যক্ত গির্জার সমনের দিকের জায়গা থেকে একটু দূরে ওদের চোখ পড়তেই সন্দেহ হয়েছিলো, এর নিচে কোথাও আগুন জ্বলছে। তারপর এক সময় এই প্রচ্ছন্ন আলোও মিলিয়ে গেলো।
এটা চরম ভাওতাবাজি ও ভেল্কিবাজি! হাজিব আবদুল করীম শতভাগ নিশ্চয়তার গলায় বললেন,
এটা কোন অলৌকিক ঘটনা নয় কিংবা জাদুরও কৃতিত্ব নয়। এর মাধ্যমে খ্রিষ্টানদেরকে আতংকিত করে আমাদের বিরুদ্ধে উস্কে দেয়া হচ্ছে। সঙ্গে সঙ্গে মুসলমানদেরকেও প্রভাবান্বিত করা হচ্ছে।…..
আমি এর ব্যবস্থা করবো এবং এই ভেল্কিবাজিকে তোমরা দুজন খতম করবে। তোমরা যে দূর থকে আওয়াজ শুনেছো যে, গির্জায় যাও এবং সেখানে তোমাদেরকে বলা হবে তোমাদের ওপর কোন বিপদ আসছে। এটা এই দুনিয়ারই কোন মানুষের আওয়াজ। কাল সন্ধ্যা পর্যন্ত আমি জেনে যাবো, গির্জায় যারা যাবে তাদেরকে কি বলা হবে?
পরদিন আবদুল করীমকে চার পাঁচজন লোক এসে বললো, আজ প্রতিটি গির্জায় এত ভিড় যে, ভেতরে পা ফেলার জায়গা পাওয়া যায়নি।
পাদ্রীরা ইসলামের বিরুদ্ধে রীতি মতো বিষ উদগীরণ করেছে। আর উউন্দলুসের শাসন ব্যবস্থার বিরুদ্ধে এমন এমন কথা বলেছে যার অর্থ হলো, তোমরা এই শাসন ব্যবস্থার বিরুদ্ধে বিদ্রোহ করে। পাদ্রীরা হযরত ঈসা (আ) এর আত্মপ্রকাশকে সত্য বলে ঘোষণা করেছে এবং লোকদেরকে খুব ভয় দেখিয়েছে।
লোকরো যখন গির্জা থেকে বের হলো তখন তাদের ওপর স্তব্ধতা নেমে এসেছিলো।
পরদিন আবদুল করীম সালার আবদুর রউফের সঙ্গে সলাপরামর্শ করে ঠিক করেন যে, শাহে উন্দলুসকে কোন কিছু না বলেই এই ভণ্ডামির মুখোশ ফাস করে দিতে হবে। তিনি তখনই রহীম ও হামিদকে ডেকে পাঠালেন। সালার আবদুর রউফ চারজন সেনাকে তলব করেন।
আমরা তোমাদেরকে কঠিন পরীক্ষার সম্মুখীন করছি। প্রধানমন্ত্রী হাজিব আবদুল করীম ঐ ছয়জনকে বললেন, আমরা জানতে পেরেছি হযরত ঈসা (আ)-এর এই আত্মপ্রকাশ ও অদৃশ্য থেকে আওয়াজ সম্পূর্ণ ভাওতাবাজি। এটা তখনই উৎখাত করতে হবে যখন সেখানে মানুষের ভিড় থাকবে এবং নক্ষত্রের চমক দেখা দেবে কিংবা হযরত ঈসা (আ)-কে দেখানোর নামে ভেল্কিবাজি দেখা যাবে।…..
তোমরা খেয়াল রাখবে, যেদিন জানতে পারবে, আজ রাতে আবার ঈসা (আ) এর আত্মপ্রকাশ ঘটবে সে রাতে তোমাদেরকে সে এলাকায় থাকতে হবে। কিন্তু লোকদের ভিড়ে নয়, বরং গির্জার কাছের পাহাড়ে যাবে। সেখানেই তোমরা দেখতে পাবে চমক কোথা থেকে আসে।…..
কোথাও না কোথাও অবশ্যই প্রজ্জলিত আগুন দেখতে পাবে। আর এটা এমন এক দৃষ্টির আড়াল করা জায়গায় জ্বলতে দেখবে যেখান থেকে আগুনের আভা লোকদের দৃষ্টিতে ধরা পড়ে না। সেখানে একাধিক মানুষও থাকতে পারে। তাদেরকে কাবু করে আগুন নিভিয়ে দেবে।…..
তোমাদের মধ্যে দুজন গির্জার কাছে গিয়ে লুকিয়ে থেকে সতর্ক চোখে দেখবে। কাউকে উঁচু আওয়াজে কথা বলতে দেখলে সেখানে তাকে পাকড়াও করবে। তোমাদের সঙ্গে বর্শা ও খঞ্জর থাকবে। হতে পারে ওদের সঙ্গে তোমাদের লড়াই করতে হতে পারে। আর লড়াই হলে কাউকে বাঁচিয়ে রাখবে না। সব কয়টাকে খতম করে দিবে।…..
তারপর তোমাদের কেউ উঁচু আওয়াজে ঘোষণা করে দিবে, এসব ভাওতাবাজি। এখানে ঈসা মাসীহের আসার পশ্নই উঠে না। তারপর সকাল বেলা আমরা লোকদেরকে পরিত্যক্ত গির্জা ও অন্যান্য জায়গা দেখাবো। আর তাও দেখাবো যা গাছের ওপর থেকে চমকে উঠতো।
প্রধানমন্ত্রী হাজিব ও সালার রউফ তাদেরকে ভালো করে বুঝিয়ে দিলেন কখন কিভাবে তাদের নির্দিষ্ট জায়গায় যেতে হবে এবং এই মিশন কিভাবে জয় করবে।
তোমরা তোমাদের দ্বীন-ধর্ম ও সালতানাতে উন্দলুসের অতন্দ্র প্রহরী। এই দেশ ঐ শাহী খান্দানের নয়। তোমাদের এই দেশ। তোমাদের ঘরে ডাকাত পড়েছে এবং তোমাদের বাপ ডাকাতদেরকে ঘর লুট করার অনুমতি দিয়ে দিয়েছে। তোমরা তো তোমাদের বাড়ি লুটপাটের হাত থেকে বাঁচাবে… এটা তোমাদের ঘর, এটা আমাদের ঘর।