ইউগেলিস! আবেগ ও উন্মাদনা থেকে বেরিয়ে এসো। আমি জেনে গিয়েছি তুমি এক একজন করে মুসলমানকে হত্যা করতে চাও। তাদের বিরুদ্ধে সম্মুখ যুদ্ধে নামতে চাও। কিন্তু এভাবে চিন্তা করলে তুমি কখনো সফল হবে না। আমাদের আসল উদ্দেশ্য হলো, আমাদের মহান ধর্মের শত্রুরা যেন ইউরোপ ছেড়ে পালায়। তাই ওদেরকে মারতে হলে ওদের দুর্বল লোকদেরকে আগে টার্গেট করে এদেরকে ওদেরই বিরুদ্ধে ব্যবহার করো।
এটা কিভাবে এবং কোন পদ্ধতিতে বাস্তবায়ন করা হবে? আবদুর রহমানকে কেন হত্যা করা হবে না?। ইউগেলিস জিজ্ঞেস করলো।
***
শাহ লুই তার প্রধানমন্ত্রীর দিকে তাকালেন। তারপর দুজনই হেসে উঠলেন।
আমাদের প্রিয় বন্ধু! শাহ লুই এর প্রধানমন্ত্রী বললেন, তুমি এক আবদুর রহমানকে হত্যা করলে দেখবে আরেক আবদু রহমান সিংহাসনে বসেই কয়েক হাজার খ্রিষ্টানকে হত্যা করেছে। কারণ, হত্যাকারী যে একজন খ্রিষ্টান এতে কারো সন্দেহ না থাকায় এতগুলো খ্রিষ্টানকে হতা করাও বৈধতা পেয়ে যাবে।…..
তা ছাড়া তাকে হত্যার পর হতে পারে তার স্থলে এমন আরেক বাদশাহ আসবে যে সবদিক দিয়েই পাক্কা ও খাঁটি মুসলমান। আবদুর রহমানের মধ্যে যে দুর্বলতা ছিলো সে দুর্বলতাও তার মধ্যে হয়তো থাকবে না। আমি তোমাকে যে কৌশল ও পদ্ধতি গ্রহণ করতে বলবো, সেটা হলো, আবদুর রহমান সুন্দরী নারীদের প্রতি এতই দুর্বল যে, সে তার এক সুন্দরী কানীয-পরিচারিকাকে বিয়ে করে নিয়েছে। তার হেরেমে এমন এমন মেয়ে আছে যাদেরকে দেখলে তুমি চকচকে হীরা ছাড়া অন্য কিছু বলবে না। তবে ওরা তার মতোই মুসলমান এবং তার ভক্তও।…..
তাকে আসলে এমন এক নারীর জালে ফাঁসাতে হবে, যে তার ওপর নিজের রূপের কারিশমা বিস্তার করতে পারবে এবং তার বিবেক-বুদ্ধিকে নিজের হাতের মুঠোয় পুরে নেবে। এমন একটি মেয়ের তালিকা আমাদের হাতে আছে।
সে কি মুসলমান না খ্রিষ্টান? ইউগেলিস ও বাদশাহ ব্রেন হার্ট একই সঙ্গে জিজ্ঞেস করলেন।
নামে কেবল মুসলমান। প্রধানমন্ত্রী বললেন, আসলে এ ধরনের মেয়েদের কোন ধর্ম হয় না। তোমরা কেউ কেউ হয়তো জানো, উন্দুলুসের এক জায়গায় তরূব নামে একট জায়গীর আছে। জায়গীরদার মুসলমান ছিলো। মারা গেছে। তার এক মেয়ে রেখে গেছে। নাম সুলতানা। নিজেকে সে মালিকায়ে তরূব বলে। অর্থাৎ তরূব-এর সম্রাজ্ঞী।…….
আমার গুপ্তচররা আমাকে জানিয়েছে, সে তার জায়গীরের পরিধি বাড়ানোর জন্য নিজের রূপের জাদু প্রয়োগ করে আসছে। অসম্ভব চতুর, ধূর্ত, তীক্ষ্ণ ছল-চাতুরীর অধিকারী। এতই বেশি যে, অঙ্গুলি হেলনে শাহজাদাদেরকে নাচিয়ে তারপর আস্তকুড়ে ফেলে দিতে পারে। সে নাকি এতই সুন্দরী এবং তার দৈহিক গঠন এতই আগুন ঝরানো যে, তাকে এ দুনিয়ার নয়, আসমানী কোন মাখলুক মনে হয়।…..
সম্ভবতঃ শাহ উন্দলুস আবদুর রহমান ছানী এখনও তাকে দেখেননি। তোমার বুদ্ধির জোর থাকলে তুমি তা প্রয়োগ করে সুলতানাকে হাত করে নাও। আর তাকে বলো, আমাদের কাজ করে দিলে শাহে ফ্রান্স তাকে একটি প্রদেশই দিয়ে দেবেন।………।
তুমি ওর দুর্বলতাও ব্যবহার করো। সেটা হলো, সে এক জায়গীরদারের কন্যা ছাড়া কিছুই নয়। অথচ নিজেকে সে মালিকা বা সম্রাজ্ঞী বলে। অর্থাৎ সে সম্রাজ্ঞী হতে চায়। আমরা ওকে সম্রাজ্ঞী বানিয়ে দেবো।….তুমি কি এ কাজ করতে পারবে?
ব্যবসায়িক চুক্তি? ইউগেলিস হেসে বললো, আমি অবশ্যই করবো। ওর সঙ্গে আগে আলাপ করে নিই।
আমরা আরেকটা ব্যাপার জানতে পেরেছি, আবদুর রহমান সঙ্গীতের প্রতি অন্ধ ভক্ত। শাহ লুই বললেন, যারিয়াব নামক এক সঙ্গীতজ্ঞকে তার দরবারে রেখেছে। সুলতানা মালিকায়ে তরূব যদি এই যারিয়াবকে হাত করে নেয় তাহলে আমাদের কাজ সহজ হয়ে যাবে।
আপনি যদি মনে করেন এমনটি করলে কাজ আরো সহজ হয়ে যাবে তাহলে সে ব্যবস্থাও করবো আমি। ইউগেলিস বললো, কিন্তু আমি একে কাপুরুষতা মনে করি যে, আমরা মুসলমানদের তলোয়ারের ভয়ে চোরের মতো পর্দার আড়ালে এভাবে তৎপরতা চালিয়ে যাবো।
আমাদের উদ্দেশ্য কি ইউগেলিস? বাদশাহ ব্রেন হার্ট বললেন, ইউরোপ থেকে মুসলমানদেরকে তাড়িয়ে দিয়ে সারা দুনিয়ায় খ্রিষ্টীয় মতবাদকে ছড়িয়ে দেয়া। মুসলমানদের চিন্তা-চেতনাকে আমাদের পাল্টে দিতে হবে। যাতে তাদের অন্তর থেকে নিজেদের ধর্ম ও জাতীয়তাবাদের আত্মসম্মানবোধ দূর হয়ে যায়।……….
আমাদের মেয়েরা গর্বের সঙ্গে মুসলমানদের শিকড় মাটির নিচ থেকে কাটতে থাকবে। ওরা সব ধরনের ত্যাগ স্বীকার করবে। দুশমনকে ধ্বংস করতে সব ধরনের কৌশল প্রয়োগ করা বৈধ। আমরা যদি ইসলামের এই অপ্রতিরোধ্য গতির টুটি চেপে না ধরি তাহলে ইসলামের ঝাণ্ডা বিশ্বের প্রতিটি আনাচে কানাচে পতপত করে উড়তে থাকবে খুব শিগগিরই।
মনে রেখো, আমরা মুসলমানদেরকে মুসলিম বাদশাহদের হাতেই দুর্বল করে তুলবো। ইসলামকে ভিত্তিহীন ধর্ম বানিয়ে ছাড়বো। শাহ লুই বললেন, আবদুর রহমানের ওপর যদি আমরা নারী ও সঙ্গীতের নেশা চাপিয়ে দিতে পারি। তাহলে আমাদের বন্ধু ব্রেন হার্ট উন্দুলুসের সীমান্ত এলাকায় বিশৃংখলা সৃষ্টি করতে পারবে, সঙ্গে সঙ্গে গেরিলা হামলাও চালাতে পারবে।
ইউগেলিস! তুমি উন্দলুসে বিদ্রোহ সৃষ্টির সব ব্যবস্থা গড়ে তোলো। এই গোপন তৎপরতায় তুমি একা নও, আমাদের লোকজনও তোমার সঙ্গে থাকবে।