তাদের ওপর অকথ্য নির্যয়াতন চালায়। অসংখ্য লোককে গ্রেফতার করে নিয়ে যয়। তাদের সবকিছু ছিনিয়ে নিয়ে যায়। এখন বার্সেলোনা থেকে হামলার সমূহ আশংকা রয়েছে।
তোমরা এ ব্যাপারে কি চিন্তা ভাবনা করেছো? আবদু ররহমান জিজ্ঞেস করলেন, আগে ওখান থেকে ভালো করে খোঁজ খবর নিয়ে নাও। দেখো, এ খবরগুলো কতটা সঠিক? সংবাদ ভুলও তো হতে পারে।
আমার ও হাজিব আবদুল করীমের নিরাপত্তা আপনার হুকুম বাস্তবায়ন করার মধ্যেই নিহিত রয়েছে। উবাইদুল্লাহ বললেন, আপনার বর্তমান হুকুম তো এমনই হবে যে, গোয়েন্দা দূত পাঠিয়ে দিয়ে নিজেরা এখানে মন্ত্রী আর সেনাপতির গদিতে আরামে বসে থাকো। আমাদের অধীনস্ত লোকেরা আমাদেরকে সালাম করতে থাকবে।
কিন্তু আমীরে মুহতারাম! আমরা আমাদের দায়িত্ব পালনে মোটেও কার্পণ্য করবো না আমাদেরকে কেউ থোকাও দিতে পারবে না। শত্রুর ব্যাপারে আপনি যদি এমন শিথিল মনে চিন্তা ভাবনা করেন তাহলে আমরা আপনার হুকুম না নিয়েই দুশনের বিরুদ্ধে এমন ব্যবস্থা নেবো, যা ইসলাম ও উন্দলুসের স্বাধীনতা অক্ষুণ্ণ রাখার জন্য জরুরি মনে করা হবে।
আপনি আমাদেরকে আপনার শাহী মহল ও সিংহাসনের সুরক্ষার জন্য ব্যবহার করবেন না…..শত্রু সবসময়ই শত্রু। তার বন্ধুত্বও শক্রতা।…..আমরা সীমান্ত এলাকায় সৈন্য তৎপরতা শুরু করতে চাই। এর নেতৃত্ব থাকবে আমার হাতে। আমরা আপনার কাছে যা চেয়েছি তা আমাদেরকে দিয়ে দিন।
কাল সকালে আমি তোমাদেরকে বিস্তারিত জানাবো। আবদুর রহমান বলরেন, আজ একটু ভাবতে দাও।
কাল সকালে আমরা রওয়ানা হয়ে যাবো। আবদুর রহমান বললেন, অর্ধেক ফৌজ কর্ডোভায় থাকবে। এর নেতৃত্বে থাকবে হাজিবের হাতে। আপনি তো জানেন হাজিবও একজন দক্ষ সালার। আমার অনুপস্থিতিতে এখানে বিদ্রোহ মাথাচাড়া দিয়ে উঠলে এর বিরুদ্ধে হাজিব ফৌজকে ময়দানে নামাবে।
আমি আমীরে মুহতারামকে এটা জানিয়ে রাখা জরুরি মনে করছি যে, আমার ব্যবস্থাপনা কিন্তু খুব ভদ্রোচিত হবে না। হাজিব আবদুর রহমানকে বললেন, আমি বাতিলের সেই পূজারীদের খতম করে দেবো, যারা তোক দেখানো মুসলমান হয়ে পর্দার আড়ালে ইসলামের বিরুদ্ধে সশস্ত্র বিদ্রোহ করে দেশকে ধ্বংসের মুখে ঠেলে দিচ্ছে। এরা মুআল্লিদীন-দুমুখী সাপ। আমি এদেরকে রক্তে গোসল করিয়ে এদের লাশ ও ঘরবাড়ি জ্বালিয়ে দেবো।
সুলতানা তখনো দরজায় কান লাগিয়ে রেখেছে। তার কানে আবদুর রহমানের আওয়াজ পৌঁছালো।
তোমরা দুজনে প্ল্যান প্রোগ্রাম-পরিকল্পনা ঠিক করো। এজন্য যত সেনা প্রয়োজন তাদেরকে প্রস্তুত করে নিয়ে যাও।
উবাইদুল্লাহ ও আবদুল করীম কোন জবাব না দিয়ে চলে গেলো।
ওরা চলে গেছে। সুলতানা যারিয়াবকে বললো, ওদেরকে শাহে উন্দলুস হুকুম দিয়ে দিয়েছেন, সীমান্ত এলাকায় সৈন্য নিয়ে যেতে।
আমরা তো আর ওদেরকে বাধা দিয়ে রাখতে পারবো না, যারিয়াব হতাশ গলায় বললো। আর খেয়াল রেখো সুলতানা! শাহ উন্দলুসকে এটা বুঝতে দিয়ো না যে, আমরা তার ফয়সালায় খুশি নই। কথা আমাকে বলতে দিয়ো।…..আগামীকাল ইউগেলিসকে খবর পাঠিয়ে দিয়ো। সেই ভালো জানে এ অবস্থায় তাকে কি করতে হবে।
এর দ্বারা এটাও জানা হয়ে গেলো, শাহে উন্দলুসের ওপর আমাদের প্রভাব এখনো পুরোপুরি কাজ দেয়নি। সুলতানা বললো, তার ভেতরের মুসলমানি সত্বা এখনো মরেনি।
আবদুর রহমান তাদেরকে ডেকে পাঠালেন। দুজনে সঙ্গে সঙ্গে কামরায় ঢুকে পড়লো। সুলতানা আবদুর রহমানকে জিজ্ঞেস করলো, সালারে আলা ও ওযীর কেন এসেছিলেন। আবদুর রহমান তাদেরকে সব কথা বলে দিলেন।
জিন্দাবাদ শাহে উন্দলুস! যারিয়াব বড় আওয়াজে বললো, আপনি ফৌজকে কোচ করার হুকুম দিয়ে অনেক বড় দূরদর্শিতার পরিচয় দিয়েছেন। ওরা সেই কাফেরের গোষ্ঠিকে পিষে মারবে। ইতিহাসে আপনার পবিত্র নাম সোনার হরফে লেখা থাকবে।
সুলতানা আবদুর রহমানের গলা দুহাতে জড়িয়ে ধরে গাল তার গালের সঙ্গে লাগিয়ে বললো,
আমাদের শাহে উন্দলুস মুমিন পুরুষ এবং স্বাধীনচেতা বীর পুরুষ। আপনার এই স্বাধীনচেতা ও পুরুষোচিত মনোভাবের কারণেই আমি আপনার শিষ্য হয়ে গেছি। আমি আপনার মতোই এক মুসলিম বাপের মেয়ে। আমার তো ইচ্ছে করে তলোয়ার হাতে নিয়ে আরবী ঘোড়ায় সওয়ার হয়ে জিহাদের ময়দানে চলে যেতে।
তুমি কেন যাবে? আবদুর রহমান তাকে নিজের কোলে বসিয়ে বললো, তোমার ওপর আমার পুরো ফৌজ কুরবানী করতে পারবো।
শাহে উন্দলুস আরেকবার বাস্তব দুনিয়া থেকে অচিন জগতে হারিয়ে গেলেন।
***
যার দেশের জন্য ভালোবাসা আছে। নিজের ধর্মের জন্য দায়িত্ববোধ আছে। সে নিজেকে যেমন চিনে তেমন তার শত্রুকেও চিনে। তারা নিজেরাও শান্তি ও নিশ্চিন্তে বসে থাকতে পারে না, শত্রুকেও দুদণ্ড শান্তিতে বসে থাকতে দেয় না। ইউরোপীয়ানদের অবস্থাও এমনই।
তাদের বুকে অর্থাৎ স্পেনে যখন মুসলমানরা ইসলামী ঝাণ্ডা গেড়ে বসেছে তখনই তারা শঙ্কিত হয়ে উঠে যে, ইসলাম সারা ইউরোপে না আবার ছড়িয়ে পড়ে। সেদিন থেকে তারা নিজেদের ওপর আরাম হারাম করে নেয়। তারা উন্দলুসের সীমান্ত এলাকাগুলোয় হামলা চালাতে শুরু করে। সীমান্তের মুসলিম জনপদগুলো তাদের ধ্বংসলীলার শিকার হতে থাকে।
উন্দলুসের সেনাবাহিনী তাদেরকে প্রতিরোধ করতে গিয়ে, জবাবী হামলা চালাতে গিয়ে নিজেদের সৈন্য সংখ্যা কমাতে থাকে। এসব দেখেও মুসলিম শাসক শ্রেণীর লোকেরা পরম আরামে হেরেমের জীবনে গা ভাসিয়ে দেয়। শত্রুকে বন্ধু ভাবতে শুরু করে।