না, শান্ত হয়ে কথা বলার মতো অবস্থায় নেই আমি। উবাইদুল্লাহ প্রায় ধমকে উঠলেন, যেদিন আমার চিন্তা ভাবনা থেকে লড়াই দূরে সরে যাবে সেদিন আপনার সিংহাসনের নিচ থেকে মাটি সরে যাবে। উন্দলুসের আকাশ থেকে খসে পড়বে ইসলামী ঝাণ্ডা। নীরব-নিস্তব্ধ হয়ে যাবে আযানের পবিত্র সুরধ্বনি।….
সালাররা দরবারী লোক হয় না। সালার সিংহাসন ও রাজমুকুটের জন্য মোহগ্রস্ত থাকেন না।…..সালারের জায়গা হলো রণাঙ্গন।…..কুফুরের বিরুদ্ধে রণাঙ্গন।
রণাঙ্গন বাতিলের বিরুদ্ধে,…..আপনিও এক সালার-সেনাপতি। রণাঙ্গনের সিংহ আপনি। কিন্তু আপনাকে জাগাতে হয়েছে আমাদের এসে। শুধু এ কারণে যে, আল্লাহর তলোয়ার আপনি সিংহাসনের নিচে ছুঁড়ে দিয়েছেন।…..
গান, নৃত্য আর নারীর রূপযৌবনে গড়ে উঠা বেহেশতে মগ্ন হয়ে পড়েছেন আপনি। আপনি তো মেধা, বুদ্ধি ও বিচক্ষণতা এবং বিজ্ঞতায় অতুলনীয় ছিলেন। কিন্তু এক রূপসী ও সুরতরঙ্গকে আনি আপনার ওপর চুম্বকের মতো লেপ্টে রেখেছেন। যা আপনাকে এই বাস্তবতা থেকে দূরে সরিয়ে দিচ্ছে যে, যে বেহেশতে আপনি মজে আছেন সেটাই দোযখের প্রধান দরজা।
কিন্তু ঘটনা তো এ পর্যন্তই সীমাবদ্ধ থাকে না। হাজিব আবদুল করীম বললেন, যে জাহান্নামের দিকে উবাইদুল্লাহ ইংগিত করেছে তাতে বাদশাহ একাই যান না। বাদশাহর পাপ পুরো জাতিকে সেই জাহান্নামে নিক্ষিপ্ত করে। বাদশাহর অপরাধের শাস্তি ভোগ করতে হয় পুরো জাতিকে। শত্রুর ব্যাপারে যে বাদশাহ অসচেতন থাকেন সে বাদশাহর অধীনস্থ জাতির ভাগ্য লিখে দেয়া হয় শত্রুর গোলামি।
আপনার মাথা থেকে সিংহাসন ও রাজমুকুট দূরে সরিয়ে রাখুন আমীরে মুহতারাম! সালারে আলা উবাইদুল্লাহ বললেন, এখন তো সাধারণ মানুষ আপনার বিরুদ্ধে বিদ্রোহী হয়ে উঠতে যাচ্ছে। কিন্তু কাল আপনার ফৌজই আপনার বিরুদ্ধে বিদ্রোহ করে উঠবে।
বিদ্রোহ? আবদুর রহমান হয়রান ও হতভম্ব হয়ে জিজ্ঞেস কররেন, কিসের বিদ্রোহ? কোন ফৌজ বিদ্রোহী হয়ে উঠবে? আমি তো জানি না কিছুই। আমাকে বলো। খুলে বলল।
আপনি এজন্য জানেন না যে, আপনার চোখ ও কান এই দরবারীরা বন্ধ করে রেখেছে। হাজিব বললেন, আপনার চোখে তাকেই দেখেন যে আপনাকে তোষামোদ করে এবং বাস্তবতা থেকে আপনার চোখ অন্য দিকে সরিয়ে রাখে।
ঐ সুন্দরী পরিচারিকারা, এই নয়া রক্ষিতা, আর আপনার সুকণ্ঠী যারিয়াব আপনার ভেতরের সিংহ পুরুষকে হত্যা করে ফেলেছে। এটা বীর বিক্রম আর অদম্য সিংহ পুরুষদের পবিত্র ভূমি। আপনি শুধু এর আমীর নন, আমীন-বিশ্বস্ত রক্ষকও।
না হাজিব! আবদু রহমান ঘাবড়ানো গলায় বললেন, সুলতানা আমাকে ধোকা দিতে পারে না। যারিয়াব আমার অকৃতজ্ঞ হতে পারে না।
আমরা আপনার ব্যক্তিকে নিয়ে কথা বলছি না আমীরে মুহতারাম! আপনাকে কেউ ধোকা দিক, আর কেউ আপনার অকৃতজ্ঞ হোক, এতে আমাদের কোন আগ্রহ নেই। আমরা ইসলামী সালতানাত উন্দলুসের কথা বলছি। আমরা বাতিলের সেসব নষ্ট পূজারীদের কথা বরছি যারা সালতানাতে ইসলামিয়া উন্দলুসকে ধোকা দিচ্ছে। আর যারা আল্লাহর সেই পবিত্র শাসন ব্যবস্থার সঙ্গে বেঈমানী করছে তাদের কথা বলছি। কথাগুলো একটু মনযোগ দিয়ে শুনুন আমীরে মুহতারাম।
উবাইদুল্লাহ দুই গোয়েন্দা কমান্ডারকে ভেতরে ডেকে পাঠালেন। তারা এলে তাদেরকে বললেন, আমীরে উন্দলুসকে বিস্তারিত রিপোর্ট শোনাও। তারা বিস্তারিত শোনালো। হাজিব ও উবাইদুল্লাহ সেই রিপোর্টে আরো বর্ধিত অংশ যোগ করলেন।
আবদুর রহমান অনেকটাই জেগে উঠলেন।
***
পাশের কামরায় সুলতানা ও যারিয়াব বসে রাগে-ক্রোধে দাঁতে দাঁত পিষছিলো। সুলতানা বেশ কিছুক্ষণ আবদুর রহমানের খাস কামরায় কান লাগিয়ে ভেতরের কথাবার্তা শুনে ফেলে।
ঐ গোঁয়ার লোক দুটি তো ওকে জাগিয়ে তুলছে। সুলতানা যারিয়াবকে বললো, ওরা যদি একবার ওকে যুদ্ধের ময়দানে নিয়ে যেতে পারে তাহলে আমাদের হাত থেকে ছুটে যাবে। আমরা ব্যর্থ হয়ে যাবো।
ইউগেলিস বলেছিলো, বিদ্রোহ করার সবকিছুই প্রস্তুত হয়ে গেছে। ওদিকে ফ্রান্সের শাহ লুই-এর মদদে বার্সেলোনা ও গোথাক মার্চের দিক থেকেও হামলার দিনক্ষণ করা ঠিক হয়ে গেছে। এটা ওরা টের পেয়ে গেছে। তাই ময়দানে নামার হুকুম নিতে এসেছে।
ইউগেলিসকে সতর্ক করে দিতে হবে যে, উন্দলুসের সৈন্যরা তৎপর হয়ে উঠেছে। যারিয়াব বললো, সঙ্গে যে দুজন লোক এসেছে এরা মনে হয় গোয়েন্দা।
হ্যাঁ, এরা বড় বড় গোয়েন্দা। ওদেরকে খতম করে দেয়া জরুরী। সুলতানা বললো।
যারিয়াব বুদ্ধিমান লোক। সে বাধা দিয়ে বললো
কতল করে কোনই লাভ হবে না। ওদের স্থলে আরো দুজন এসে যাবে। এদের চেয়ে ভালো ও যোগ্যরাও তাদের শূণ্যস্থান পূরণ করতে পারে। এদেরকে আমরা লোভ দেখিয়ে এমনভাবে ব্যবহার করবো যে, প্রকাশ্যে এরা সরকারি গুপ্তচর হয়ে থাকবে, আর গোপনে ইউগেলিসের হয়ে কাজ করবে। এরা সেনাপতি ও প্রধানমন্ত্রীকে ধোকা দিতে পারবে অনায়াসে।
ওদেরকে রাজি করানো গেলে পুরস্কারস্বরূপ হেরেম থেকে সুন্দরী দুটি মেয়েও ওদেরকে দিতে পারবো। এ পুরস্কার ওদেরকে গোলাম বানিয়ে রাখবে। সুলতানা বললো।
সুলতানা আবার দরজায় কান লাগালো। তার চেহারা ফ্যাকাশে হয়ে গেলো।
ফ্রান্সীস কাউন্ট এ্যবলুস ও কাউন্ট ইসনিয়ারস পাম্পালুনার ওপর ফৌজি হামলা চালিয়েছে। উবাইদুল্লাহ আবদুর রহমানকে বলছিলেন আর সুলতানা তার যারিয়াব কান লাগিয়ে শুনছিলো, আপনাকে বলা হয়েছিলো, এই ফৌজ ফিরে যাচ্ছিলো। সংকীর্ণ উপত্যকা দিয়ে যাওয়ার সময় সেখানকার স্থানীয় মুসলমান ও মুসলমানদের যে ছোট সেনা ইউনিট ছিলো তার ওপর হামলা চালায় ওরা।…..